নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত পড়া একটি মহান ইবাদত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্মান ও মর্যাদা। সালাতের শব্দাবলীর অন্যতম হলো صلّى اللهُ عليه وسلّم বলা (আল্লাহ তার ওপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন)। আর নূন্যতম বলা হলো (اللَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ) হে আল্লাহ মুহাম্মাদের উপর সালাত নাযিল করুন। আর উত্তম হলো সালাতে (দুরুদে) ইবরাহীমী। আর তা হলো এ কথা বলা, (للَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ، وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما صَلَّيْتَ على آل إبْراهِيمَ إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بارِك على مُحَمَّدٍ وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما بارَكْتَ على إِبْراهِيمَ، إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ) এ দরুদের আরও বর্ণনা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত (اللَّهمَّ صَلِّ عليه) এর অর্থ: হে আল্লাহ আপনি উর্ধ্বজগতে আপনার সম্মানিত মালায়েকাদের মাঝে তাঁর প্রশংসা করুন।
মুমিনদের মাতাগণ: সে সব নারী যাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহ করেছেন এবং তাদের সাথে সহবাস করেছেন। আর তারা হলো, খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ, সাওদাহ বিনত যামআহ, আয়েশা বিনতে আবূ বকর আস-সিদ্দীক, হাফসাহ বিনতে উমার ইবনুল খাত্তাব, যয়নব বিনতে খুযাইমাহ, উম্মে সালমা হিনদ বিনতে আবী উমাইয়া, যয়নব বিনতে জাহাশ, যুওয়ারিয়াহ বিনতুল হারিস, উম্মু হাবিবাহ রামলাহ বিনতে আবী সুফিয়ান, সাফিয়্যাহ বিনতে হুয়াই এবং মাইমুনাহ বিনতুল হারিস রাদিয়াল্লাহ আনহুন্না। তাদের মর্যাদা মায়ের মর্যাদার সমান এবং তাদের সাথে বিবাহ হারাম হওয়া মায়ের সাথে বিবাহ হারাম হওয়ার মতোই । তাজীম ও সম্মানের দিক বিবেচনায়ও তারা মায়েদের মতো। এ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে যেমন, তাদের দিকে তাকানো তাদের সাথে একাকি হওয়া ইত্যাদির ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য নারীদের মতোই।
শির্ক হলো, আল্লাহর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে তিনি ছাড়া তার কোনো মাখলুককে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা। যেমন, ইবাদতে, আল্লাহর নাম ও সিফাতসমূহে অংশীদার করা। শির্ক দুই প্রকার: প্রথম: এমন শির্ক যা আল্লাহর সত্ত্বা, নাম, সিফাত ও কর্মসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। এটি হলো রুবুবিয়্যাহর ভেতর শির্ক। দ্বিতীয়: আল্লাহর ইবাদত ও মুআমালায় শির্ক করা। এটি হলো, উলুহিয়্যাহ ও ইবাদতের ভেতর শির্ক।
রুকু থেকে ওঠার পর সোজা হয়ে দাড়ানোর সময় একজন মুসল্লির বলা যে, ربَّنا ولَكَ الحَمْدُ।
আউলিয়া: শব্দটি ওলী শব্দের বহুবচন। শরীআতের পরিভাষায় যার মধ্যে দুটি গুণ একত্র হয় তাকে ওলী বলে। আর তা হলো ঈমান ও তাকওয়া, যা ফরযসমূহ ও নফলসমূহ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভকে অর্ন্তভুক্ত করে। সাথে সে আল্লাহর আদেশের ইলম রাখে এবং যা জানে তদুনুযায়ী আমল করে। যার আকীদা পরিস্কার এবং আমল সহীহ সে আল্লাহর ওলী। একজন মানুষের ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী তার বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। যেমন ওলী হলো সে আল্লাহ যার যাবতীয় বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করল ও তার সংশোধনের জন্য তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিল। কারণ, আল্লাহ সালেহীনদের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন। তিনি মুমিনদের মহাব্বাত করেন ও তাদের থেকে প্রতিহত করেন। আল্লাহর ওলীগণ দুই প্রকার: 1- অগ্রগামী নৈকট্যলাভকারী। 2- মধ্যপন্থাবলম্বনকারী ডানপন্থী। নৈকট্য লাভকারী অগ্রগামীগণ হলো, যারা ফরযের পর নফলসমূহ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তারা ওয়াজিব, মুস্তাহাব সবই করেন এবং হারাম ও মাকরূহ থেকে বিরত থাকে। আর ডান পন্থী হলো, সেসব নেককার বান্দা যারা ফরয দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তারা আল্লাহ তাদের ওপর যা ওয়াজিব করেছেন তার ওপর আমল করেন এবং আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দেন। তারা মানদুব বিষয়গুলোর ওপর আমল এবং বৈধ অনর্থক বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে নিজেদের কষ্টের মধ্যে ফেলেন না। বান্দার ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী বন্ধুত্ব ব্যবধান হয়ে থাকে। ফলে প্রত্যেক মুমিনেরই আল্লাহর মুহাব্বত, বন্ধুত্ব ও নৈকট্যের অংশ রয়েছে। কিন্তু এ অংশটুকু দৈহিক ও অন্তরের নেক আমল যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় তা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। কারণ, যে নিজের ওপর যুলুম করে সে হলো গুনাহগার মুমিন। তার ঈমান ও আমলে সালেহ অনুযায়ী তার রয়েছে আল্লাহর বন্ধুত্ব। আল্লাহর অলীগণ নিষ্পাপ নন এবং তারা গায়েব জানেন না। সৃষ্টি ও রিযিক দানে তাদের কোনো ক্ষমতা নাই। তারা কখনোই মানুষকে তাদের সম্মান করা বা কোনো ধন সম্পদ তাদের জন্য খরচ করার প্রতি আহ্বান করে না। আর যে ব্যক্তি এ সব করে সে আল্লাহর ওলী নন। বরং সে মিথ্যুক, মিথ্যা রচনাকারী এবং শয়তানের বন্ধু। আর বেলায়েত অধ্যায়ে এটি ভুল বুঝ ও প্রচারিত গলদ। আরও কতিপয় ভুল হলো: 1- এ ছাড়াও আরও ভুল হলো, আল্লাহর বন্ধু নবী ও নেককারদের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা, যেমন, আল্লাহর কোন বৈশিষ্ট্যকে নবীদের জন্য সাব্যস্ত করা। যেমন, নেককার লোকদের বিষয়ে বাড়াবাড়ি, তাদের কবরসমূহের ওপর নির্মান করা, তাদের নিষ্পাপ হওয়া দাবী করা ইত্যাদি। 2- অনেক মানুষের বিশ্বাস করা যে, একজন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত কোন অলৌকিক কর্ম সম্পাদন না করবে ততক্ষণ সে ওলী হতে পারবে না। 3- ওলী হওয়ার দ্বারা কেউ নিষিদ্ধ কর্ম করা ও ওয়াজিবসমূহ ছেড়ে দেওয়ার মর্যদায় উপনীত হয়। এবং এ বিশ্বাস করা যে, ওলীগণ এমন এক পর্যায় পৌঁছে যায় যে পর্যায়ে পৌছলে তাদের থেকে মুকাল্লাফ হওয়ার বিষয়টি আর থাকে না। এটি হলো সু স্পষ্ট গোমরাহী। ওলী হওয়া কখনোই নিষিদ্ধ কর্ম করা এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত পৌছে দেয় না। 4- কতক মানুষ এ ধারণ পোষণ করে যে, ওলী হওয়া কেবল কতক মানুষের বৈশিষ্ট। কিন্তু বিশুদ্ধ হলো, ওলী হওয়া একটি দীনি মর্যদা। এটি প্রত্যেক মুত্তাকী মুমিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। এটি কোন ব্যক্তি, স্থান ও কালের সাথে খাস নয়। 5- ওলীদের ওপর কেউ কেউ আল্লাহর সাথী, আল্লাহর মানুষ প্রয়োগ করে। এ ধরণের নাম করণের ওপর তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। সূফীগণ ওলীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আকীদা পোষণ করে থাকেন। তাদের কেউ ওলীকে নবীর ওপর প্রাধান্য দেয়। আবার তাদের কেউ ওলীকে সব সিফাতে আল্লাহর বরাবর মনে করে। সে সৃষ্টি করে, রিযিক দেয়, জীবন দেয়, মৃত্যু দেয় এবং জগতকে সে পরিচালনা করে। তাদের নিকট বিলায়াতের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন, গাওস, আকতাব, আবদাল, নুজাবা। হিরা গুহায় তারা তাদের দপ্তরে প্রত্যেক রাত একত্র হয় এবং তারা তাকদীরের বিষয়ে দেখা শোনা করে। তাদের কেউ কেউ আছে যারা এ ধরনের বিশ্বাস করে না তবে তারা তাদের ও তাদের রবের মাঝে মাধ্যম সাব্যস্থ করে। চাই তা তাদের জীবদ্দশায় হোক বা মৃত্যুর পর হোক। আহলে সুন্নাত ওয়ালা জামাত ইসমত (নিষ্পাপ হওয়া) নবী ছাড়া আর কারো জন্য বিশ্বাস করে না। আর অপরদিকে সূফীগণ ওলী হওয়ার জন্য ইসমতকে শর্ত হিসেবে দেখেন। আবার তাদের কেউ আছে যদি কেউ পদস্খলনে পতিত হয় অথবা ভুলে পতিত হয় তখন তার থেকে বিলায়াতকে সম্পূর্ন না করে দেয়।
শরীআত: যে সব আকায়েদ, আহকাম ইত্যাদি আল্লাহ চালু করেছেন। আর তার রয়েছে সর্বসম্মত উৎস। আর তা হলো কিতাব ও সুন্নাহ এবং ইজমা ও কিয়াস। আর রয়েছে মত বিরোধী উৎস। যেমন, সাহাবীগণের কথা। আর তার রয়েছে প্রসিদ্ধ উদ্দেশ্য।
কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এটি জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান বা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। আর এটি হলো সে সব স্থান যেখানে মৃত ব্যক্তির দেহকে দাফন করা হয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মৃতের লাশকে ঢেকে দেওয়া, তার সম্মান অক্ষুন্ন রাখা যাতে তার দুর্গন্ধ দ্বারা অন্যরা কষ্ট না পায় এবং তাকে হিংস্র প্রাণি কর্তৃক খুলে ফেলা থেকে রক্ষা করা যাতে সে তাকে খেতে না পারে।
জিন আগুনের সৃষ্টি, তারা মুকাল্লাফ অর্থাৎ শরীআতের আদেশ-নিষেধ মান্য করতে আদিষ্ট। তাদের মধ্যে কেউ আছে মুমিন আবার কেউ কাফির। শয়তান তাদের থেকেই কাফের জিনের নাম। এটি (شَطن) থেকে নির্গত হওয়া বিশুদ্ধ, যার অর্থ হলো দূরীভুত হওয়া। কারণ, তার কুফর ও অবাধ্যতার কারণে সে হক থেকে দূরে সরে গেছে। আবার (شاطَ ) অর্থাৎ ধ্বংস হওয়া ও পুড়ে যাওয়া থেকে নির্গত হওয়াও বিশুদ্ধ। কারণ, শয়তান আগুনের তৈরি।
তাকফীর হলো, কোনো মুসলিমকে কুফরের দোষে দোষী করা এবং তার দীন থেকে বের হয়ে যাওয়া। এটি বলা হয় যখন কোন ব্যক্তি ইসলাম ভঙ্গকারী কোন একটিতে লিপ্ত হয়। তাকফীর এটি একটি শরয়ী বিধান যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। যেমন, হালাল করা, হারাম করা, ওয়াজিব করা। যত প্রকার কথা বা কর্মকে কুফর বলে আখ্যায়িত করা হয় তা সবই বড় কুফর নয়। আর যতজন কুফরে পতিত হয়, তাদের সকলের উপর কুফরের হুকুম বর্তায় না। তবে যদি তার মধ্যে কুফুরের কারণ, শর্তসমূহ পাওয়া যায় এবং তাকে কাফির বলতে কোনো বাঁধা-নিষেধ না থাকে তখন সে কাফির।সুতরাং এখানে কর্মের উপর কুফরের হুকুম দেয়া ও আমলকারীর ওপর কুফরের হুকুম দেয়ার মধ্যে প্রার্থক্য আছে। কোন ব্যক্তিকে কুফরের দোষে দোষারোপ করার অর্থ হলো, তার মধ্যে কাফেরের অন্তরের আবরণ রয়েছে। কারো ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কুফরের হুকুম দেয়াতে মারাত্মক ক্ষতি ও মহা হুমকি রয়েছে।
জিন হলো বিবেক সম্পন্ন, ইচ্ছা শক্তির অধিকারী, শরীয়াতের বিধান পালনে আদিষ্ট (মুকাল্লাফ), মানুষের সৃষ্টি ধাতু থেকে মুক্ত, যাদেরকে অনুভব করা যায় না, তাদের আসল আকৃতি দেখা যায় না এবং ধরণ জানা যায় না। তবে মানুষ অথবা অন্যান্য জীব জন্তুর আকৃতি ধারণ করার ওপর তার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। তারা খায়, পান করে, বিবাহ করে ও বংশ বিস্তার করে। তাদের সৃষ্টির মূল উপাদান হলো আগুন। জিন বিভিন্ন ধরনের হয় থাকে। তাদের কতক হলো শয়তান, তারা হলো কাফের জিন। তাদের কতক হলো বিতাড়িত, ইফরীত এবং মানুষের সাথী।
নিয়ত: আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে কোনো কাজের ব্যাপারে অন্তরের প্রতিজ্ঞা অথবা বলা যায়, এটি হলো, কোনো কর্ম করার ক্ষেত্রে আনুগত্য ও আল্লাহর নৈকট্য লাভের প্রতিজ্ঞা করা। তার স্থান হলো অন্তর। নিয়ত দুটি অর্থে ব্যবহার হয়: এক- ইবাদতগুলোর একটিকে অপরটি থেকে আলাদা করা। যেমন, যোহরের সালাতকে আছর থেকে পৃথক করা। দুই- আমলের দ্বারা উদ্দেশ্যকে আলাদা করা।
ই’তিকাদ হলো, যার প্রতি মানুষ বিশ্বাস স্থাপন করে এবং যাকে সে তার মাযহাব ও দীন হিসেবে গ্রহণ করে তার প্রতি এমনভাবে অকাট্য বিশ্বাস ও নিশ্চিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যে, অন্তর তাকে সত্যায়ন করে, তার প্রতি আত্মা পরিতৃপ্ত থাকে এবং তার জন্যে আত্মসমর্পণ করে। আর এই স্বীকৃতির সাথে কোনো প্রকার সন্দেহ অথবা দ্বিধার সংমিশ্রণ হয় না। এ কারণেই ঈমানকে আকীদা বলে নামকরণ করা হয়েছে। কারণ, ঈমানের ওপর মানুষ তার কালবকে এমনভাবে বেঁধে রাখে ও তার সঙ্গে তার অন্তরকে এমনভাবে সংযুক্ত রাখে যে, সেটি তার নিকট চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পরিণত হয় যা সন্দেহকে কবুল করে না। ই’তিকাদ দুই প্রকার: ১- বিশুদ্ধ ই’তিকাদ: আর তা হলো, আল্লাহ তাআলার রুবুবিয়্যাত, উলুহিয়্যাত, একত্ববাদ এবং তার সকল নাম ও সিফাতের ক্ষেত্রে তাঁর একক হওয়ার প্রতি ঈমান আনা। আরও ঈমান আনা তার মালায়েকাগণ (ফিরিশতা), কিতাবসমূহ, রাসূলগণ, আখিরাত দিবস ও ভালো-মন্দ তাকদীরের প্রতি এবং যাবতীয় গাইবি বিষয়, দীনের মৌলিক বিষয এবং যার ওপর সালাফে সালেহীণগণ একমত হয়েছেন তার প্রতি। ২- বাতিল ই’তিকাদ: আর তা হলো, সব বিকৃত দীনের আকীদাহ। যেমন, খৃষ্টানদের আকীদা হলো আল্লাহ তিনের তৃতীয় বা ত্রিত্ববাদ। ইয়াহুদীদের আকীদাহ হলো, উযাইর আল্লাহর পুত্র। অনুরূপভাবে বিভিন্ন গোমরাহ ফিরকার আকীদা যেমন, খারেজী, আশায়েরাহ, সূফিয়্যাহ ও অন্যান্যরা।
ইসমত হলো, শরয়ী নিরাপত্তা যা একজন মানুষের জন্য সাব্যস্ত হয়। যে কারণে তার রক্ত, মাল ও ইজ্জত হারাম হয়ে যায়, তবে হকের কারণে তা হালাল হয়ে যায়, যেমন কিসাস প্রভৃতি। আর তা হলো দুই প্রকার: 1- মুসলিমের নিরাপত্তা: আর তা হয়ে থাকে শাহাদাতাইন তথা দুই সাক্ষ্য মুখে উচ্চারণ করার ফলে। 2- যিম্মি কাফেরের নিরাপত্তা: তা সাব্যস্ত হয়, মুসলিমদের পক্ষ থেকে তাকে নিরাপত্তা প্রদান ও তার সঙ্গে চুক্তি করা দ্বারা। সুতরাং ইমামের ওপর দায়িত্ব হলো যে কেউ তাদের জান বা মাল বা ইজ্জতের ক্ষতি করতে চায় তাদের থেকে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কোনো কোনো ফকীহ এ নিরাপত্তাকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন: 1- মূল্য নির্ধারিত নিরাপত্তা: এটি হলো, এমন নিরাপত্তা বিধান যার দ্বারা একজন মানুষের জন্য, তার সম্পদের জন্য এবং তার ইয্যতের জন্যে মূল্য সাব্যস্ত হয়। ফলে যে ব্যক্তি এর কোনটি লঙ্ঘণ করবে তার কিসাস বা দিয়ত বা জরিমানা ওয়াজিব হবে। যেমন, মুসলিমকে হত্যা করা। 2- গুনাহগার হওয়ার নিরাপত্তা: আর তা হলো যে এগুলো লঙ্ঘন করবে তার গুনাহ সাব্যস্ত হবে। তার ওপর কোন কিসাস বা দিয়ত বা জরিমানা ওয়াজিব হবে না। যেমন, হারবীদের বাচ্চা, তাদের নারী ও বৃদ্ধ যাদের হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে তাদের কাউকে হত্যা করা।
সাম্প্রদায়িকতা : অন্যায়ের ওপর গোত্র বা বংশের সাহায্যের প্রতি আহ্বান করা অথবা যার বিষয়টি তোমার নিকট গুরুত্বপূর্ণ তাকে হক বা বাতিলের ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এর কতক ধরণ হলো, এক লোক অপর লোককে এ জন্য ঘৃণা করে যে, সে অমুকের বা অমুক বংশের সন্তান, যদিও তা শত্রুতার পর্যায়ে না পৌঁছে। এটি শরীআতকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। কারণ, এটি হলো অন্যায় ও অপরাধের ওপর সাহায্য করা। যেমনিভাবে এটি ইসলামী আকীদার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মূলনীতি পরিপন্থী। অতএব যে ব্যক্তি পক্ষপাতমূলক কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বন করল ও তাদের হয়ে মারামারি করল, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা বা তার দীনের প্রসারের জন্যে নয়, সে অন্যায়ে ওপর হবে এবং এ কারণে সে গুনাহগার হবে। এমনকি যদিও যার জন্য ক্ষুব্ধ হলো সে হকের ওপর থাকে। সব ধরণের এবং সব পদ্ধতির সাম্প্রদায়িকতা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন গোত্রের জন্য, জাতির জন্য, ভূমির জন্য এবং বর্ণ ইত্যাদির জন্য সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকের মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্য বলে গণ্য করা হয়েছে। যেমনিভাবে ইসলাম বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করাকে বাতিল করেছে। আর ইসলাম শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড করেছে তাকওয়া ও আমলে সালেহকে। ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন সাম্প্রদায়িকতা সাক্ষ্যের প্রতিবন্ধক। কারণ, সাম্প্রদায়িকতায় প্রসিদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে তার কওমের স্বার্থে বা অন্য কওমের ক্ষতি করার জন্য সাক্ষ্যকে বিকৃত করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
রুকু হলো, সালাতের কর্ম জাতীয় রুকন। তার রয়েছে দুটি গুণ: 1- পিঠ ঝুকানো। যাতে একজন মানুষ তার দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু ধরতে পারে। 2- দুই হাতকে দুই হাঁটুর ওপর টেক লাগানোর সাথে মাথা ঝুকানো, দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখা, দুই হাতকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখা এবং মাথা উঁচু বা নিচু করা ছাড়া পিঠকে বরাবর রাখা। আর এ পদ্ধতিটিই হলো, পরিপূর্ণ পদ্ধতি। আর রুকুর দুই অবস্থা: 1- রুকুর পূর্বে মুসল্লির দাঁড়ানো অবস্থায় থাকা। আর সাধারণভাবে রুকু দ্বারা এটিই উদ্দেশ্য হয়। 2- আর বসা অবস্থা থেকে রুকু করা। আর তা হলো পিঠ এমনভাবে নীচু করা যাতে কপাল দুই হাঁটু বরাবর এসে যায়।
ঈমানের মৌলিক বিষয় হতে একটি হলো, সমস্ত নবী ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনা, যাদেরকে আল্লাহ দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আর এ কথা বিশ্বাস করা যে, তারা তার সত্যিকার রাসূল এবং সত্যিকার নবী। আল্লাহ তাদেরকে মানুষের জন্য প্রেরণ করেছেন হিদায়াত ও সত্যাবানী সহকারে। তারা সুসংবাদ দাতা ও ভয় প্রদর্শকারী। আর এ কথা বিশ্বাস করা যে, তারা আমানত আদায় করেছেন এবং তাদের উম্মতের সদোপদেশ দিয়েছেন এবং আল্লাহ তাদের যা পৌঁছানোর আদেশ দিয়েছেন তা তারা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছিয়েছেন। যারা তাদের অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে যাবে আর যারা তাদের অবাধ্য হবে তারা জাহান্নামে যাবে। আরও বিশ্বাস রাখতে হবে তাদের ফযীলত, তাদের উচ্চ মর্যাদা এবং সম্মানের প্রতি এবং মহান আল্লাহ তাদের বাছাই ও পছন্দ করেছেন এবং তাদের অন্যান্য মানুষের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন, যেমন তাদেরকে তিনি তার রিসালাতের দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন এবং সমগ্র জগতের ওপর তাদের প্রাধান্য দিয়েছেন। আর তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের তারতম্যকে বিশ্বাস করতে হবে এবং নবীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো রাসূলগণ। আর রাসূলগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাদের মধ্যে যারা উলুল আযম তারা। আর উলুল আযমের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। নবী ও রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনয়নে চারটি জিনিস জরুরী: 1- এ কথা বিশ্বাস করা যে, তাদের রিসালাত আল্লাহর পক্ষ থেকে হক। 2- তাদের মধ্যে যার নাম আমরা জানি তাকে তার নামসহ বিশ্বাস করা। আর তাদের থেকে যাদের নাম আমরা জানিনা, তাদের প্রতি আমরা মোটের ওপর বিশ্বাস করবো। কারণ, আল্লাহর কতক নবী ও রাসূল আছে যাদের নাম আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। 3- তাদের সম্পর্কে যে সব সংবাদ, তাদের যে ফযীলত, বৈশিষ্ট্য এবং তাদের কাওমের সাথে তাদের যেসব ঘটনা বিশুদ্ধ তার প্রতি বিশ্বাস করতে হবে। যেমন, আল্লাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছেন। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বন্ধ রূপে গ্রহণ করেছেন। মুসা আলাইহিস সালামের সাথে কথা বলেছেন, দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য পাহাড়সমূহকে এবং সুলাইমান আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য বাতাসকে অনুগত করেছেন ইত্যাদি। 4- তাদের থেকে যাকে আমাদের নিকট প্রেরণ করেছেন, তাঁর শরীআত অনুযায়ী আমল করা। আর তিনি হলেন তাদের সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিনি সমগ্র মানবজাতির নিকট প্রেরিত।
কুফর হয়ত শুরু থেকে থাকবে, যেমন ইতোপূর্বে যে ইসলাম গ্রহণ করেনি তার কুফর অথবা কুফর পরবর্তীতে আসবে, যেমন যে আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে তার কুফর। আর উভয়টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। প্রথম: বড় কুফর। আর তা হলো এমনসব কথা বা কর্ম বা বিশ্বাস যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। এটি কখনো অন্তর দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়, অথবা অন্তরের আমল হয়, যেমন আল্লাহ তাআলা বা তার আয়াত বা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা। আবার কখনো তা প্রকাশ্য কথা দ্বারা হয়, যেমন আল্লাহকে গাল দেয়া। আবার কখনো প্রকাশ্য আমল দ্বারা হয়, যেমন মুর্তিকে সেজদা করা, গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করা। আর বড় কুফর বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, তন্মধ্যে কতক: 1- অস্বীকার ও মিথ্যারোপ করার কুফরী: এ প্রকারের কুফরী কখনো অন্তরের মিথ্যারোপ দ্বারা হয়, আর কখনো মুখ অথবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়। আর এটি হয় অন্তরে জানা ও ইলম থাকা সত্বেও হককে গোপন করা ও প্রকাশ্যে তার আনুগত্য না করার দ্বারা। যেমন, ইয়াহুদীদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করা। 2- অহংকারের কুফর: অর্থাৎ সত্যকে না শিখে ও তার ওপর আমল না করে ছেড়ে দেওয়া। চাই তা কথার মাধ্যমে হোক বা আমল করার মাধ্যমে হোক বা বিশ্বাসের মাধ্যমে হোক। যেমন, ইবলিশের কুফর। 3- নিফাকের কুফর: আর তা হলো, অন্তরে বিশ্বাস ও আমল না করে প্রকাশ্যে অনুগত করা। 4-সন্দেহ ও সংশয়ের কুফর: আর তা হলো, হকের অনুসরণে দ্বিধা-সংশয়ে থাকা বা তা হক হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হীনতায় থাকা। কারণ, ঈমানের দাবি হচ্ছে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়: ছোট কুফর, আর তা হলো এমন গুনাহ ও অপরাধ যাকে শরীআত কুফর বলে নাম করণ করেছেন। তা কোন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করবে না এবং সে বড় কুফর পর্যন্ত পৌঁছবে না। নেয়ামতের অস্বীকার করাও এ কুফরের অর্ন্তভুক্ত। একে কুফরের থেকে ছোট কুফর বলে। যেমন, একজন মুসলিমের তার অপর মুসলিমের সঙ্গে যুদ্ধ করা। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা।
উলুল আযম রাসূলগণ: তারা হলো সেসব নবী যারা মানবজাতির সর্বোৎকৃষ্ট ও আল্লাহর অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী। আল্লাহ কতক রাসূলকে কতকের ওপর পূর্ণতা দিয়েছেন এবং কতককে কতকের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আর এর কারণ হলো, আল্লাহ যাদের ফযীলত দান করেছেন, তাদের তিনি এমন কল্যাণ দিয়েছেন যা তিনি অন্য কাউকে দেননি বা তার মর্যাদাকে অন্যের মর্যাদার ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথবা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে, তার প্রতি দাওয়াত দেওয়াতে এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি অন্যদের চেয়ে অধিক পরিশ্রম করেছেন, ফলে তারাই উলুল আযম রাসূলগণ। আর তাদেরকে উলুল আযম বলা হয়, কারণ, তারা তাদের কাওমের যুলুম-নির্যাতনের ওপর সবর করেছেন। তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ ও গাল-মন্দ ইত্যাদির ওপর সবর করেছেন। অন্যদের তুলনায় তারা বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন। আর যে আযম (العزم ) দ্বারা আল্লাহ তাদের প্রসংশা করেছেন এবং তাদের ফযীলত বর্ণনা করেছেন তার অর্থ হলো, দৃঢ়তা, প্রত্যয়, শক্তি। আর সবর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রিসালাতের দায়িত্ব গ্রহণের ওপর ধৈর্যধারণ করা, আমানত আদায় ও তা বহন করার কষ্টের ওপর ধৈর্যধারণ করা। রিসালাতের দায়িত্ব আদায় ও তাবলীগ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা ও সর্ব শক্তি ব্যয় করা, সাথে যাদের কাছে তাদের প্রেরণ করা হয়েছে তাদের কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণ করা। এ ধরনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের নিদর্শন হলো, নূহ আলাইিহ সালাম অন্যদের থেকে অধিক মর্যাদাবান, কারণ, তিনি হলেন, সর্ব প্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আর তিনি হলেন, মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা। তার পর যত নবীগণ দুনিয়াতে এসেছেন সবাই তারই বংশধর। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ, তিনি রহমানের বন্ধু, আল্লাহ তাকে বিভিন্ন মুজিযা দ্বারা সম্মানিত করেছেন। ফলে তার বংশধরদের মধ্যে নবুওয়াত ও আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। মানুষের অন্তর তার মুহাব্বাতে এবং তাদের মুখ তার প্রসংশায় পরিপূর্ণ। মুসা আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ, তিনি কালীমুল্লাহ, তিনি বনী ইসলাঈলের মহান নবী। তার শরীআত ও কিতাব বনী ইসরাইলের নবীগণ ও তাদের আলেমদের মূল। আর তার অনুসারীদের সংখ্যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী ছাড়া সব নবীগণের থেকে অধিক। ঈসা আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্যতা প্রমাণে অনেক মুজিযা দিয়েছেন। তিনি সত্যিকারে আল্লাহর রাসূল। তিনি আল্লাহর হুকুমে অন্ধ এবং কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতেন। তিনি শৈশবে দোলনায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আল্লাহ তাঁকে রুহুল আমীনের মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত সব রাসূল থেকে সর্বোত্তম রাসূল। তিনি শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তনের সরদার, যে মাকামে মাহমুদের প্রতি আগের ও পরের সবাই আগ্রহ করবেন তিনি তার অধিকারী। তিনি হামদ ও হাউযে কাউসারের মালিক। কিয়ামতের দিন মাখলুকের সুপারিশকারী, তিনি ওসীলাহ ও ফযীলাহের মালিক, যাকে আল্লাহ সর্বত্তোম কিতাব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তার জন্য চালু করেছেন তার দীনের সর্বত্তোম শরীআতসমূহ। আর তার উম্মাতদের সবোর্ত্তম উম্মাত বানিয়েছেন যাদের মানুষের কল্যাণে বের করা হয়েছে।
কিতাবসূহের প্রতি ঈমান করা আকীদার উসূলসমূহের একটি অন্যতম উসূল এবং ঈমানের রুকনসমূহের একটি অন্যতম রুকন। যে সব কিতাবসমূহ আল্লাহ তার রাসূলদের ওপর নাযিল করেছেন সেগুলোর প্রতি ঈমান আনা ছাড়া কারো ঈমান শুদ্ধ হবে না। আর কিতাবসূহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, আল্লাহ মাখলুকের প্রতি দয়া করে এবং তাদের হিদায়াতের জন্য তার রাসূলদের ওপর যা নাযিল করেছেন তা, যাতে তারা তা দ্বারা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভ করতে পারে। কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান কয়েকটি বিষয়কে অর্ন্তভুক্ত করে: 1- এ কথা বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার রাসূলদের ওপর তার বান্দাদের প্রতি সুস্পষ্ট সত্য ও হিদায়েতের সাথে অবতীর্ণ। এটি আল্লাহর কালাম আর কারো কথা নয়, আল্লাহ এ দ্বারা যেভাবে চেয়েছেন এবং যে পদ্ধতিতে ইচ্ছা করেছেন সেভাবে সত্যি সত্যি কথা বলেছেন। এটি হক ও সত্য। আর তাতে রয়েছে হিদায়াত ও নূর এবং যাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে তাদের জন্য যথেষ্টতা। 2- কুরআনে যা রয়েছে তার প্রতি বিশ্বাস করা ও সন্তুষ্ট থাকা এবং পূর্ববর্তী কিতাবসমূহ হতে অবিকৃত বিধানসমূহ, বিশ্বাসসমূহ, সংবাদসমূহ ও কাহিনীসমূহে বিশ্বাস করা। সব কিতাব তার কতক কতককে সত্যায়ন করে। আর পূর্বের কিতাব সমূহের কতক কতক দ্বারা রহিত হওয়া হক। যেমন তাওরাত কতক শরীআত রহিত করেছে। আর পূর্বের সব কিতাবকে কুরআনের রহিত করে দেওয়া হক। আর তার কতক আয়াত কতক দ্বারা রহিত হওয়া হক। 3- আল্লাহ যে সব কিতাবের নাম নিয়েছেন তার প্রতি ঈমান আনা। যেমন, ইবরাহিমের ওপর নাযিলকৃত সহীফা। মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত তাওরাত আর ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত ইন্জিল ও দাউদ আলাইহি ওয়াসাল্রামের ওপর নাযিলকৃত যাবুর এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত কুরআন। আর কুরআন হলো সবোর্ত্তম ও সর্বশেষ এবং সব কিতাব সত্যায়নকারী। সব মানুষের ওপর ফরয হলো তারই অনুসরণ করা এবং তার ফায়সালাকে মেনে নেওয়া। তার হক আদায় করা, তার প্রতি আত্মসমর্পন করা, তা থেকে প্রতি হত করা তার তিলাওয়াত করা এবং তাতে চিন্তা ফিকির করা।
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা হলো দীনের প্রধান ভিত্তি এবং ঈমানের রুকনসমূহের প্রথম রুকন। এটি মানুষের ওপর সর্ব প্রথম ফরয এবং আকীদার ক্ষেত্রে মহান শিকড়। বাকী সব আকীদা তার শাখা। কারণ, ঈমানের কোনো রুকন, শাখা ও নীতির ওপর ঈমান আনা শুদ্ধ হবে না। কেবল আল্লাহর ওপর সত্যিকার ঈমান আনার পরই তা শুদ্ধ হবে। আল্লাহর ওপর ঈমান কতক বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে: 1- আল্লাহর পবিত্র সত্তার অস্তিত্বের প্রতি বিশ্বাস ও স্বীকার করা। আর জ্ঞান, বুদ্ধি স্বভাব ও শরিআত তার ওপর প্রমাণ। 2- এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ হলেন রাব্বুল আলামীন, মালিক, খালেক, রিযিকদাতা, তিনি তার মাখলুকের যাবতীয় কর্মের বিধায়ক ও পরিচালনাকারী। সুতরাং তিনি ছাড়া কোনো খালেক নাই, রিযিকদাতা নেই, পরিচালনাকারী ও মালিক নেই। 3- এ কথা বিশ্বাস করা ও স্বীকার করা যে, আল্লাহই হলেন, একমাত্র সত্যিকার ইলাহ আর ইবাদত, আনুগত্য ও নত হওয়ার একমাত্র উপযুক্ত। আর তিনি ছাড়া সব ইলাহ বাতিল এবং তাদের ইবাদতও বাতিল। 4- এ কথা বিশ্বাস করা ও স্বীকার করা যে, আল্লাহই হলেন সব কামাল, জামাল ও জালালের একমাত্র উপযুক্ত। তিনিই দুর্বলতা ও দোষ থেকে মুক্ত।
বারযাখ হলো মানুষের মৃত্যু ও পূনরুত্থানের মাঝের জগত। এ বারযাখে অনুগতদের নিয়ামত এবং কাফেরদের শাস্তি দেয়া হয় আর কতক পাপীকেও শাস্তি দেয়া হয় যাকে আল্লাহ শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন। অতএব বারযাখ হলো কবরের আযাব ও তার নিয়ামতের স্থান। আত্মাসমূহ বারযাখে তাদের অবস্থানস্থলে বিশাল তারতম্যে থাকবে। তাদের কতকের আত্মাসমূহ উর্ধ্ব জগতের উর্ধ্ব ইল্লিয়্যিনে থাকবে। আর সে গুলো হলো, নবীদের আত্মাসমূহ। তারাও স্তরভেদে বিভিন্ন হবে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মিরাজের রাতে দেখেছেন। আর কতকের আত্মা থাকবে হলদে পাখির পেটে যারা জান্নাতে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ঘোরা ফেরা করবে। আর এগুলো হলো, কতক শহীদগণের আত্মা, সবার নয়। কারণ, কতক শহীদের আত্মাকে তার ওপর ঋণ ইত্যাদি থাকার কারণে জান্নাতের প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হবে। আর তাদের কতককে জান্নাতের দরজার ওপর আঁটকে রাখা হবে। আবার কতককে তার কবরে আঁটকে রাখা হবে।
মালায়েকাদের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের রুকনসমূহের একটি রুকন এবং ইসলামী আকীদার মূল বিষয়সমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের প্রতি ঈমান আনা কয়েকটি বিষয়কে অর্ন্তভুক্ত করে: 1- দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের অস্তিত্বকে অকাট্যভাবে স্বীকার করা। 2- যাদের নাম আমরা জেনেছি তাদের প্রতি বিশ্বাস ও মুখে স্বীকার করা। যেমন, জিবরীল, মিকাইল, ইসরাফির ইত্যাদি। আর যাদের নাম আমরা জানিনা তাদের প্রতি আমরা সামগ্রিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করব। 3- আর যাদের কর্ম ও দায়িত্ব সম্পর্কে জানি, তাদের প্রতি বিশ্বাস করব আর যাদের কর্ম ও দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা জানিনা তাদের প্রতি আমরা সামগ্রিকভাবে বিশ্বাস স্থাপন করব। তাদের কাউকে ওহীর দায়িত্ব দেয়া আছে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী নিয়ে অবতরণ করে। তাদের থেকে কাউকে বৃষ্টি ও ফসল উৎপাদনের দায়িত্ব দেয়া আছে। তাদের কাউকে দায়িত্ব দেয়া আছে শিঙ্গায় ফুঁক দেয়ার। আবার কাউকে দায়িত্ব দেয়া আছে মৃত্যুর সময় রুহসমূহ কবজ করার। আর তাদের কেউ নিয়োজত আছেন মায়ের পেটের বাচ্চাদের সংরক্ষণ করার কাজে। আবার কারো দায়িত্ব দেয়া আছে বনী আদমের হিফাযতের এবং তাদের আমালসমূহ লিপিবদ্ধ করার। এছাড়াও আরও যাদের বিভিন্ন কাজে দায়িত্ব দেওয়া আছে। 4- আমরা তাদের যে সব গুণাবলি সম্পর্কে জানি তা স্বীকার করা। যেমন, তারা হলো অদৃশ্য জগতের মানুষের চোখের আড়ালে থাকেন। আর তারা হলো, সত্যিকার দেহের অধিকারী, তারা নূরের তৈরি। আর তাদের রয়েছে ডানা, হয় দুটি ডানা, বা তিনটি, বা চারটি বা আরো বেশি। আর জীবরীল আলাইহি সালামের আছে ছয়শত ডানা। তাদের রয়েছে মহা শক্তি এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর হওয়া ও বিভিন্ন সম্মানীত আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা। তারা কোন নারী বা পুরুষ হওয়ার ক্ষমতা রাখে না। তারা আল্লাহর ইবাদতকারী, গুনাহ থেকে নিষ্পাপ। তাদের সংখ্যা অধিক যার হিসাব একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আল্লাহ তাদেরকে তার ইবাদতের জন্য মনোনীত ও বাছাই করেছেন। তাদেরকে তিনি তার মাখলুকের প্রতি দূত ও বার্তাবাহক বানিয়েছেন। তারা আল্লাহ যা আদেশ দিয়েছেন তার অবাধ্য হন না। তাদের যা আদেশ করা হয় তাই করেন। উলুহিয়াত বা রুবুবিয়্যাতের কোন বৈশিষ্ট্য তাদের নাই।
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান ঈমানের রুকনসমূহের অন্যতম মহান রুকন। আখিরাত দিবস হলো কিয়ামাতের দিন যেদিন মানুষকে হিসাব ও প্রতিদানের জন্য উত্থিত করা হবে। তাকে এ বলে নাম করনের কারণ হলো, কারণ এটি সেদিন যেদিনের পর আর কোন দিন নেই অথবা তা দেরিতে আসার কারণে। তার প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো মধ্যে রয়েছে কুরআন ও হাদিসে মৃত্যুর পর যা সংঘটিত হবে যেমন, কবরের আযাব ও নিয়ামত, পুনরুত্থান, হাশর, মিযান, হিসাব, প্রতিদান, সীরাত, হাউয, শাফায়াত, জান্নাত, জাহান্নাম ও তার অবস্থা, অধিবাসী, তাতে তাদের জন্য যা আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন সংক্ষিপ্তাকারে ও বিস্তারিত আকারে এ সবের প্রতি বিশ্বাস করা। এ ছাড়াও কিয়ামাতের আলামতসমূহের প্রতি ঈমান আনাও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এগুলো হলো আখিরাত দিবসের নিকটবর্তী হওয়া ও তা আসা কাছাকাছি হওয়ার আলামত। আর এ দিবসটিকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নামে নাম করণ করেছেন, এ দিবসের অবস্থা সম্পর্কে বান্দাহদেরকে অবহিত করা এবং এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা যাতে তারা এ দিবসকে ভয় পায়: তিনি এর নাম (يوم القيامة) কিয়ামতের দিন করে রেখেছেন। কারণ, এ দিনে মানুষ তাদের রবের সামনে দাঁড়াবে। এ ছাড়াও এ দিনকে ওয়াকিআহ (الواقعة) তথা মহাঘটনা, আল-হাক্কাহ (الحاقة) তথা মহাপ্রলয়, আল-কারিআহ (القارعة) তথা মহাপ্রলয়, আর-রাজিফাহ (الراجفة) তথা শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক, আস-সা-খখাহ (الصاخة) তথা প্রচণ্ড আওয়াজ, আল-আযিফাহ (الآزفة) তথা আসন্ন দিন, আল-ফাযাউল আকবর (الفزع الأكبر) তথ মহাভীতি, ইয়ামুল হিসাব (يوم الحساب) তথা হিসাব দিবস, ইয়াওমুদ্দীন (يوم الدين) তথা প্রতিদান দিবস, আল-ওয়াদুল হক (الوعد الحق) তথা সত্য প্রতিশ্রুতি বলা হয়। এ গুলো সবই এমন নাম যা তার অবস্থার গুরুত্ব ও কঠিন ভয়বহতাকে প্রমাণ করে। এ ছাড়াও এ দিনে মানুষ যে সব বিপদের সম্মখীন হবে নামগুলো তার প্রতি ইঙ্গিত করে। এটি এমন একটি দিবস যেদিন চক্ষুসমূহ উল্টে যাবে। অন্তরসমূহ জায়গা থেকে নড়ে যাবে; এমনকি গলা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এ দিবসের প্রতি ঈমান একজন মানুষকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার দিকে আহ্বান করে।
তাকদীরের প্রতি ঈমান ঈমানের রুকনসমূহের বড় রুকন এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার ভিত্তি। আর এটি জগতে আল্লাহর রহস্য। আর এর অর্থ হলো, আল্লাহর ইলমে যা অতীত ছিল এবং চিরকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে তা কলম লিপিবদ্ধ করার প্রতি অকাট্য বিশ্বাস করা। যাবতীয় কল্যাণ ও অকল্যাণ আল্লাহর ফায়সালায় ও তার নির্ধারণেই হয়ে থাকে। আর তাঁর ইলমে যা ছিল ও হিকমত যা চেয়েছিল সে অনুযায়ী হবে। আর তিনি যাই ইচ্ছা করেন তা অবশ্যই করেন। কোন কিছুই তাঁর ইচ্ছা ছাড়া হয় না। কোন কিছুই তার চাওয়া থেকে বের হতে পারে না। তাকদীরের প্রতি ঈমান চারটি স্তরকে অন্তর্ভুক্ত করে। আর তা হলো: 1- ইলমের স্তর: আর তা হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, যা কিছু হয়েছে ও হবে এবং যা হয়নি ও যদি হয় তা কীভাবে হবে তা সবই সংক্ষেপে ও স্ববিস্তারে আল্লাহ আযলেই (পূর্ব থেকে) জানতেন। 2- লিপিবদ্ধ করার স্তর। এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তা‘আল সবকিছু লাওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। 3- মাশিয়্যাত তথা চাওয়ার বাস্তবায়ন ও তার কুদরাতের ব্যাপকতার স্তর।আর তা হলো এ কথা বিশ্বাস করা যে, জগতে ভালো ও কল্যাণের কোন কিছুই আল্লাহর চাওয়া ও তার ইচ্ছা ছাড়া সংঘটিত হয় না। 4- সৃষ্টি ও আবিষ্কারের স্তর। আর তা হলো এ কথা বিশ্বাস করা যে, সমগ্র জগৎ আল্লাহর সৃষ্ট। আর তিনি তাদের কর্ম ও গুণের স্রষ্টা।
পুনরুত্থান: অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে বের করবেন। যেমন, তাদের শরীরের মূল অংশগুলোকে একত্র করা এবং তার মধ্যে রূহকে ফিরিয়ে দেওয়া। এতে তার জীবন ফিরে আসে। আর তিনি তাদেরকে হাশরের মাঠে তাদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের ওপর হিসাব ও প্রতিদানের জন্যে একত্র করবেন।
তাকদীস হলো, মহান আল্লাহ, যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নাই তার পরিপূর্ণ মহত্ব ও পূর্ণতার সবোর্চ্চ চুড়া। কারণ, তার জন্য রয়েছে আযমাতের (বড়ত্বের) গুণ এবং জালাল ও কামালের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য। তাই তাঁর সব নামই হলো সুন্দর। আর তাঁর সব কর্ম হলো হিকমাহ। আর তার পুরো শরীআত হলো আদল ও রহমত। আর তার বান্দাগণের ওপর তার নিআমত অসংখ্য অগণিত। সুতরাং তিনিই সবোর্চ্চ সম্মান ও পুরোপুরি মহত্বের একক উপযুক্ত সত্ত্বা। তাঁর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম কুদ্দুস। আর তা হলো, তিনি তার স্বীয় সত্ত্বা, সিফাত ও নামসমূহে পরিপূর্ণ মহত্বের অধিকারী এবং সব ধরনের দোষত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে তিনি মহাপবিত্র। তিনি সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর অলীদের অন্তরসমূহকে ইলম, ঈমান ও নেক আমল দ্বারা পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করেন। আর আল্লাহ ছাড়া অন্যরা আল্লাহর নিকট তার অবস্থান অনুযায়ী এবং আল্লাহ তার সম্মানের যে প্রথা চালু করেছেন সে অনুযায়ী তিনি সম্মানের অধিকারী হন। যেমন, মহান শরীআত কতক স্থান ও সময়ের সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। কারণ, তাতে আল্লাহ এমন কতক ইবাদত চালু করেছেন যাতে তিনি খুশি ও সন্তুষ্ট হন। আর যে সব সম্মান এর বাহিরে তা হলো নিষিদ্ধ সম্মান যার অনুমতি আল্লাহ দেননি।
তাকওয়া: এটি উত্তম চরিত্রসমূহ অন্তর্ভুক্তকারী শব্দ। আর তার মূল হলো, আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের আনুগত্য করা দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে আত্মরক্ষা করা। এটি আত্মার এমন একটি গুণ, যা একজন মানুষকে আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করা ও তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে উদ্ভুদ্ধ করে। অপর অর্থে, নিষিদ্ধ কর্মগুলো করা বা ওয়াজিবগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে শাস্তির উপযুক্ত হয় তা থেকে আত্মাকে হিফাযত করা এবং যে সব মুস্তাহাব, নফল কর্মগুলো পালন এবং মাকরূহ ও সংশয়যুক্ত কর্মগুলো থেকে বিরত থাকাতে মর্যদা বৃদ্ধি পায় সে সব গুণে গুণান্বিত হওয়া। আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন, আর ঈমান ও তাকওয়াকেই তার বন্ধুত্বের কারণ বানিয়েছেন এবং তা অবলম্বনকারীদের জন্য বিশাল সাওয়াব রেখেছেন।
তাওহীদ হলো, সবচেয়ে বড় বিষয় আল্লাহ তাআলা যা তাঁর বান্দাদের ওপর ফরয। এটি হলো বান্দার ওপর আল্লাহর হক। আর এটি হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব নবী ও রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি। আর তাওহীদ হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সৃষ্টি, রাজত্ব ও পরিচালনায় একক। তিনিই ইবাদাতের একমাত্র হকদার। তিনি একক তার কোনো শরীক নেই। ইবাদত থেকে কোন কিছুই গাইরুল্লাহকে সোপর্দ করা যাবে না। আর তার জন্য রয়েছে নামসমূহ ও গুণসমূহ। তাতে তার কোন দৃষ্টান্ত ও সাদৃশ নাই। এই তাওহীদ তিন প্রকার: 1- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ। 2- তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ। 3- তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। সাব্যস্ত করা ও অসাব্যস্ত করা ছাড়া কোনো মানুষের তাওহীদ পরিপূর্ণ হয় না। প্রথম: সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যাবতীয় বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। দুই: অসাব্যস্ত করা, উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যেসব বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্যে খাস তা গাইরুল্লাহর জন্যে অসাব্যস্ত করা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আলেমগণ বিশ্বাস করেন যে, তাওহীদ তিন প্রকার : উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত ও তাওহীদুল আসমা ও সিফাত কুরআন ও হাদীস থেকে অনুসন্ধান করে নেওয়া হয়েছে। এটি পূর্ববর্তী সালাফ আলেমগণের নিকট স্পষ্ট ছিল। এটি কোনো নতুন আবিষ্কৃত ভাগ নয়। এ তিনটি প্রকারের পরস্পরের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর কতক কতককে পুর্ণ করে। ফলে এর কতক অংশকে বাদ দিয়ে কতককে গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই। সুতরাং এ প্রকার সমূহের মাঝে সম্পর্ক তালাযুম, তাযাম্মুন ও শুমলের সম্পর্ক। সুতরাং বলা যায় যে, তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ তাওহীদুল আসমা ও সিফাতকে আবশ্যক করে। কারণ, যখন কোনো বান্দা এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তার রব, সৃষ্টিতে, নাম ও সিফাতসমূহে তার কোন শরীক নেই, তখন তার ওপর এ কথা বর্তায় যে, সে আল্লাহ ছাড়া আর কারো ইবাদত করবে না, আর অপরদিকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তাওহীদে রুবুবিয়্যাহ ও তাওহীদুল আসম ও সিফাতকে অর্ন্তভুক্ত করে। অতএব তাওহীদে উলুহিয়্যাহতে বিশ্বাসী অবশ্যই এ কথা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ তার রব, স্রষ্টা, আর তার জন্য রয়েছে কামাল, জামাল ও জালালের যাবতীয় গুণসমূহ। মনে রাখতে হবে, তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ হলো দীনের প্রধান এবং নবী ও রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি। এটিকে তাওহীদুল ইলাহিয়্যাহ, তাওহীদুল ইবাদাহ, তাওহীদুল কসদ ওয়াততলব, তাওহীদুল ইরাদী আত-তালাবী বলেও নাম করণ করা হয়। আল্লাহর দিকে সম্বোধন করা অনুযায়ী এটিকে তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ এবং ইবাদতকারীর দিকে সম্বোধন হিসেবে এর নাম করা হয় তাওহীদুল ইবাদাহ ও তাওহীদুল কাসদ ও তলব। আর তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ: আর এটি হলো বান্দার এমনসব কর্ম আল্লাহকে এককভাবে সোপর্দ করা, যার দ্বারা তিনি তাদেরকে বান্দা বানিয়েছেন এবং যা তাদের জন্যে অনুমোদন করেছেন। যেমন, দুআ, জবেহ, মান্নত, সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি ইবাদাতের প্রকারসমূহ। কারণ, তিনি একাই তার উপযুক্ত। তাওহিদুল উলুহিয়্যার ভিত্তি হচ্ছে, সব আমল অন্য কারো জন্য না করে কেবল আল্লাহর জন্য করা। চাই এ সব আমল আত্মার আমল হোক বা অঙ্গ প্রত্যঙ্গের আমল হোক। আর এ প্রকারের তাওহীদই হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব নবীদের দাওয়াতের মুল আলোচ্য বিষয়।
তাওহীদুর রুববিয়্যাহ: আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা এবং স্বীয় কর্মসমূহে তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাস করা। আর অকাট্যভাবে এ কথা বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, আল্লাহ সবকিছুর রব ও মালিক, তিনি একক। তিনি প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা ও রিযিকদাতা। আর তিনিই হায়াতদাকারী ও মৃত্যুদানকারী। তিনি উপকারকারী ও ক্ষতিকারী। বিপদের সময় দুআ কবুলে তিনি একক। তাঁর জন্যই রয়েছে যাবতীয় বিষয়। তার হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সবকিছু তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। এতে তার কোনো শরীক নেই।
তাওরাত: আসমমানি কিতাবসমূহের একটি কিতাব যেটি আল্লাহ তাআলা মুসা আলাইহি সালামের ওপর নাযিল করেছেন। ইয়াহুদীদের পরিভাষা ও তাদের বর্তমান বিশ্বাসে এটি হলো বিকৃত তাওরাত যাকে তারা পাঁচটি দফতর বলে বিশ্বাস করে, যা মূসা আলাইহিস সালাম নিজ হাতে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং তাকে তারা বিনতাতুক করে নাম রাখে। এটি ইউনানি শব্দ যা বিনতা এর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। এটিও ইউনানী শব্দ অর্থ পাঁচ (খামছাহ) অর্থাৎ পাঁচটি দফতর। আর দফতর সমূহ হলো, তাকবীন, খুরুজ, আউয়াবীন, আদদ, তাসনীয়্যাহ। তাওরাত রহিত হয়ে গেছে। তাই সেটি অনুযায়ী আমল করা যাবে না। কারণ, আল্লাহ সংবাদ দেন যে, কুরআন হলো পূর্বের সব আসমামী কিতাবসমূহের ওপর ফায়সালাকারী। অনুরূপভাবে আল্লাহ এও সংবাদ দেন যে, ইয়াহুদী ও খৃষ্টানরা তাদের আসমানি কিতাবকে পরিবর্তন ও বিকৃত করেছে এবং তারা তার ওপর মিথ্যাচার ও অপবাদ দেয়ার জন্য তাতে এমন কিছু ঢুকিয়েছে যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়।
জান্নাত হলো, স্থায়ী আবাসস্থল। যেটি আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। আর তাদেরকে তাতে তার চেহারার দিকে তাকানো দ্বারা সম্মানিত করেছেন। তাতে রয়েছে স্থায়ী নেয়ামতসমূহ যা কোনদিন কোন চোখ দেখেনি এবং কান শুনেনি। আর কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি। এটি হলো পরিপূর্ণ নিআমত। তাতে কোন অপূর্ণতা নাই। তার বিশুদ্ধতাকে কোনো ময়লা কলুষিত করবে না। এটিকে জান্নাত বলে নাম করনের কারণ হলো, তার গাছগুলো অধিক ঘন এবং তার ডালগুলো মিলিত হওয়ার কারণে ছায়া দেয়। এ ছাড়া বর্তমান এর সাওয়াব মানুষের চক্ষু থেকে গোপন।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদাহ হলো, ঈমান বাড়ে এবং কমে। ঈমাদারগণ তাদের ইলম ও আমল অনুযায়ী একে অপরের ওপর প্রাধান্য লাভ করে। ফলে তাদের কতক কতক থেকে ঈমানের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। কুরআন ও হাদীস এবং সালফে সালেহীনের বাণী দ্বারা প্রমাণিত যে, ঈমানের রয়েছে একাধিক স্তর ও অনেক শাখা প্রশাখা এবং ঈমান বৃদ্ধি পায় ও হ্রাস পায়। বিশ্বাস শক্তিশালী ও অধিক হওয়ার কারণে এবং আমল ও কথা সুন্দর ও অধিক হওয়ার কারণে ঈমান বাড়ে, যেমন অন্তরের আমল, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ও মুখের কথা, যেমন আনুগত্য ও সকল নৈকট্যপূর্ণ আমল আঞ্জাম দেয়া। আর এর বিপরীতের দ্বারা ঈমান হ্রাস পায়। যেমন গুনাহ করা ও নিষিদ্ধ কর্মসমূহ করার কারণে। অতএব যখন কোন বান্দা স্বীয় রবের ইবাদতে অগ্রসর হয় এবং তা সংরক্ষণ করে তখন তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর যখন কোন বান্দা তার যিকির থেকে বিমুখ হয় এবং কোন প্রকার গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তখন সে অনুযায়ী তার ঈমান হ্রাস পায়। ঈমান বৃদ্ধি ও হ্রাস অনেক কারণে হয়ে থাকে। এটি সামগ্রীকভাবে দুটি কারণের দিকে ফিরে। ঈমানের বৃদ্ধি পাওয়া রবের নির্দেশের কারণে। কারণ, মুসলিমগণ প্রথম যুগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঈমানের জন্য আদিষ্ট ছিল। তারপর তারা অন্যটির জন্য আদিষ্ট হন। আর ঈমানের বৃদ্ধি পাওয়া বান্দার কর্মের কারণে হয়ে থাকে। সুতরাং যে ওয়াজিবগুলো আদায় করল তার ঈমান যে তাতে ত্রুটি করল তার ঈমানের মতো নয়। আর যে সব নস ঈমান বৃদ্ধিকে প্রমাণ করে সেটি বিপরীত দিকে ঈমান হ্রাস পাওয়াকেও প্রমাণ করে। অনুরূপভাবে তার বিপরীত। কারণ, বৃদ্ধি ও হ্রাস একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও যার ওপর বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োগ করা হয় তার ওপর হ্রাস পাওয়াও প্রমাণিত হয়।
সুন্নাহ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন পদ্ধতি যার ওপর তিনি এবং তার সাহাবায়ে কিরামগণ ছিলেন, যাতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয় নেই। সুন্নাহ শব্দটি ইবাদত ও বিশ্বাস সবকিছুতে সুন্নাহকে শামিল করে। যদিও যারা সুন্নাহ সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তারা আকিদার ক্ষেত্রে আলোচনাকে উদ্দেশ্য করেছেন। কারণ, এটি হলো দীনের আসল-মূল। আর এর বিরোধিতাকারী মহা বিপদে আছে। এ কারণেই সুন্নাহ শব্দটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সালাফ ও খালাফ রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের থেকে বড় বড় ইমামদের জবানে এর ব্যবহার ব্যাপক। ফলে বলা হয়ে থাকে (فلان من أهل السنة) অমুক আহলে সুন্নাহ থেকে। এর অর্থ হলো, সে সহীহ প্রশংসিত সরল তরীকার লোক। আর সুন্নাহ হলো সেই তারীকা যার ওপর পরিচালিত হয়। তখন এটি কথা কর্ম ও বিশ্বাসসমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনগণ যার ওপর ছিলেন তাকে মুজবুত করে আঁকড়ে ধরাকে শামিল করে। আর এটি হলো পরিপূর্ণ ব্যাপক সুন্নাহ। এটিই হলো দীন যার থেকে কোন মূর্খ হতভাগা ও গোমরাহ ছাড়া কেউ বিমুখ হয় না।
শাদাতান হলো, কোনো মানুষের বলা যে, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। প্রথম সাক্ষ্যদানের অর্থ হলো, একক আল্লাহর জন্য যাবতীয় ইবাদত করা। তিনি ছাড়া অন্য সবকিছু থেকে ইবদাতকে না করা। এই সাক্ষ্য সাক্ষ্যদাতাকে কোনো উপকার করবেন না যতক্ষণ না তার ভেতর দু’টি জিনিস পাওয়া যাবে: 1- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বিশ্বাস, ইলম, ইয়াকীন, সত্যারোপ, মুহাব্বত, ইখলাস ও আনুগত্যের সাথে বলা। 2- আল্লাহ ব্যতীত আর যে সবকিছুর ইবাদত করা হয়, তা প্রত্যাখ্যান করা। অতএব যে ব্যক্তি এ শাহাদাত মুখে বলল এবং আল্লাহ ছাড়া যে সবের ইবাদত করা হয় তার সাথে কুফরী করল না। এ কথা তার কোনো উপকার করবে না। আর দ্বিতীয় সাক্ষ্য হলো, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। এর অর্থ হলো, যে সব বিষয়ে তিনি নির্দেশ দেন তা মানা। যে সংবাদ দেন তা বিশ্বাস করা, যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকা। তিনি যা শরীআত হিসেবে দান করেছেন তা ছাড়া অন্যভাবে আল্লাহর ইবাদত না করা। আর এ কথা জানা ও বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সমগ্র মানবজাতির নিকট প্রেরিত রাসূল। তিনি এমন এক বান্দা যার ইবাদত করা যায় না। আর এমন এক রাসূল যাকে অস্বীকার করা যায় না। বরং তার অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে। যে তার আনুগত্য করল জান্নাতে প্রবেশ করবে আর যে তার নাফরমানি করল জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
যাদু হলো, তাবিজ ও মন্ত্র ও ঘিরা যা মানব দেহে ও আত্মায় প্রভাব ফেলে। ফলে সে অসুস্থ করে, হত্যা করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায় আল্লাহর অনুমতিতে। এটি হারাম কবীরাহ গুনাহ। কখনো কখনো এটি কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যাদু কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন ফিরানো ও মোড় ঘোরানো। আরও যেমন খেয়াল ও ধোকা ইত্যাদি। যাদুর প্রকৃতি হলো: প্রভাব বিস্তারে শয়তানকে ব্যবহার করা ও তার থেকে সাহায্য নেয়া। যাদুকরের জন্য তার যাদুর প্রয়োগ ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব না যতক্ষণ না সে কিছু ইবাদত দ্বারা সে শয়তানের নৈকট্য লাভ না করে। কতক যাদু আছে ধারণা আবার কতক যাদু আছে বাস্তব। আর যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, যাদু কেবলই ধারণ তার কোন বাস্তবতা নাই সে ভুল করল। আর যাদু উপকার বা ক্ষতি করাতে তার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নাই। তার প্রভাব আল্লাহর কাওনী ও কদরী অনুমতিতেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই সবকিছুর স্রষ্টা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর এ উম্মাতের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলেন, চার খলিফা যাদের অনুসরণ করা এবং তাদের আদর্শ মজবুত করে ধরার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তারা হলেন, আবূ বকর সিদ্দীক, আবূ হাফস উমার ইবনুল খাত্তাব, যুন নুরাইন উসমান ইবন আফফান ও আবূল হাসান আলী ইবনে আবূ তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুম, যারা ইসলামের শুরুতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর দীনকে ঈলম, আমল ও দাওয়াত সর্বদিক থেকে কায়েম করার লক্ষ্যে এবং মুসলিমদের কল্যাণ ও দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য খিলাফত ও ইমামতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। তাদের খিলাফত ত্রিশ বছর স্থায়ী হয়। দুই বছর তিন মাস হলো আবূ বকরের খিলাফতের সময়। আর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত সাড়ে দশ বছর, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত বারো বছর এবং আলী রাদিয়ালল্লাহু আনহুর খিলাফত চার বছর নয় মাস। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হলো তাদের মর্যাদার ধারাবাহিকতা তাদের খিলাফতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী হওয়া একটি মহান মর্যাদা। আল্লাহ তাআলা এর জন্য নবীদের পর সর্ব উৎকৃষ্ট মাখলুককে নির্বাচন করেছেন। তিনি তাদের চক্ষুকে তার নবীর দর্শন দিয়ে সম্মানিত করেছেন এবং তাদের কর্ণকে তার আওয়াজ শোনার দ্বারা ধন্য করেছেন। যারাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তারা সবাই সাহাবী বিবেচিত হবেন, যদিও কোনো অপারগতার কারণে তাকে না দেখেন, যেমন অন্ধ ব্যক্তি। চাই সাক্ষাত অল্প সময় থাকুক বা বেশি সময় থাকুক এবং তার থেকে হাদীস বর্ণনা করুক বা নাই করুক। আলেমগণ সাহাবীদের নাম ও তাদের জীবনীর ওপর এবং কতক আলেম যাদেরকে সাহাবী ধারনা করেছেন অথচ তাদের সাথীত্ব বিশুদ্ধভাবে প্রমাণিত হয়নি তাদের ওপর অনেক কিতাব লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এ সব কিতাবের মধ্যে উত্তম কিতাব হলো হাফেয ইবন হাজারের আল-ইসাবাহ ফী তামীযিস সাহাবাহ।
ইঞ্জিল: এটি সে কিতাব যা আল্লাহ তা‘আলা ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর তাওরাতের পরিপূর্ণকারী ও সমর্থনকারী হিসেবে নাযিল করেছেন। আর অধিকাংশ শরয়ী বিষয়ে এটি তার মোতাবেক ছিল। এটি সিরাতে মুস্তাকীমের দিকে নিয়ে যায়। এটি বাতিল থেকে হককে স্পষ্ট করে। এটি গায়রুল্লাহকে ত্যাগ করে এক আল্লাহর ইবাদাতের দিকে আহ্বান করে। ইঞ্জিলের নিজস্ব বিধান খুব কমই রয়েছে। এর অধিকাংশ বিধান তাওরাতের বিধানের অনুসরণ করে। ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আসমানে উঠিয়ে নেওয়ার পরে- খৃস্টানদের ধারণা মতে, তার মৃত্যুর পরে- ইঞ্জিলে বিকৃতি ঘটে। তাতে পরিবর্তন হয়, বাড়ানো হয় ও কমানো হয়। পূর্বের কিতাবসমূহ রহিতকারী আসমানি কিতাব হলো কুরআন। খৃষ্টানদের নিকট গ্রহণযোগ্য ইঞ্জিল চারটি। আর তা হলো, ইঞ্জিলে ইউহান্না, ইঞ্জিলে মুরকুস, ইঞ্জিলে মাত্তা ও ইঞ্জিলে লুকা। এ সব ইঞ্জিলের আলোচ্য বিষয়গুলোকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা সম্ভব। সংক্ষিপ্তাকারে তা নিম্নরূপ: 1- কাহিনীসমূহ: অধিকাংশ অধ্যায় জুড়েই রয়েছে ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাহিনী। তার জন্ম, তারপর তার দাওয়াত, তারপর তাকে শুলে চড়ানো, তার দাফন করা, কবর থেকে তাকে উঠানো, তারপর তাকে আসমানে তুলে নিয়ে যাওয়াসহ প্রভৃতি ঘটনা সম্পর্কে তাদের ধারণা মোতাবেক আলোচনা করে। 2- বিশ্বাসসমূহ: ঈসা মাসীহের ইলাহ হওয়া এবং তার আল্লাহর পুত্র হওয়া এবং বিকৃত নাসরানী দীনের মৌলিক আকিদা সাব্যস্তের ওপর গুরুত্বারোপ করে। তবে ইঞ্জিলসমূহ থেকে ইউহান্না ইঞ্জিল এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশী সাব্যস্ত করে। 3- শরীআত: ইঞ্জিলসমূহ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, এগুলো মুসা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীআতকে স্বীকার করেছে। তবে মাসীহের পরিবর্তন সম্পর্কে যে বর্ণনা রয়েছে তা ছাড়া অথবা নির্ধারিত কিছু বিষয়ের রহিতকরণ ছাড়া। আর তা হলো, তালাক, ক্ষতের কিসাস, ব্যভিচারীকে পাথর নিক্ষেপ করা। 4- আখলাক: এ অংশে আদর্শ স্থাপনে, শীথিলতা প্রদর্শনে, ক্ষম করা ও মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করার ক্ষেত্রে বাড়াবড়ি প্রতিয়মান হয়। এটি ইঞ্জিলের কতক নসে যুদ্ধের প্রতি আহ্বান করার বিষয়টি না থাকাকে প্রমাণ করে না, তবে আদর্শ ও ক্ষমার বিষয়টি বেশী ছিল। 5- বিবাহ ও পরিবার গঠন: ইঞ্জিলগুলো বিবাহের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। তবে তা থেকে সাধারণত এ কথা বুঝা যায় যে, বিবাহ না করা ব্যক্তি আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় সে ব্যক্তি থেকে যে বিবাহ করে নারীদের সাথে মেলামেশা করে। খৃষ্টানদের হাতে যে ইঞ্জিল রয়েছে তা ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিপিবদ্ধ করেননি এবং তা তার ওপর ওহী আকারে নাযিল হয়নি। কিন্তু তার পরবর্তীতে তা লিপিবদ্ধ করা হয়। যার ফলে তাতে বিভিন্ন বৈপরিত্ব ও মত প্রার্থক্য, রবকে অসম্পূর্ণ মনে করা, নবীগণের প্রতি খারাপ মন্তব্য করা, তাদের বিকৃতির কারণে জ্ঞান-বুদ্ধি ও নকলের পরিপন্থী বাতিল আকীদাহ পরিলক্ষিত হয়। তাদের নিকট এ সব কিতাবসমূহের ধারাবাহিক কোন সনদ নেই। তারা এসব কিতাব লিখার তারিখ সম্পর্কে অসংখ্য মতে বিভক্ত। যারা ইঞ্জিলের পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বুলিস(শাউল আল-ইহুদী)। বিকৃতির পর ইঞ্জিল এমন সব বিকৃত আকীদাহ দ্বারা মিশ্রিত হয়েছে যা ঈসা আলাইহিস সালাম ও তার হাওয়ারীগণ জানতো না। বরং তা তিনটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে। আর তা হলো, তাসলিস, শুলি, কুরবানী এবং মানুষের জন্য মাসীহের মুহাসাবহ। খৃষ্টানদের নিকট এ চারটি ইঞ্জিল ঐক্যবদ্ধ ফরমান হিসেবে নির্বাচন করা সম্পন্ন হয়েছে ৩২৫ সালের নিকিয়া সম্মেলনে।
ছোট শির্ক হলো সে সব গুনাহ যেগুলো শরীআত প্রণেতা শির্ক বলে নামকরণ করেছেন, তবে তার সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদত- ইচ্ছা, কথা ও কর্ম করার স্তরে পৌঁছেনি। অথবা প্রত্যেক মৌখিক আমল বা কর্ম যার ওপর শরীআত শির্ক প্রয়োগ করেছেন; কিন্তু তা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। যেমন, গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা, সামান্য রিয়া ইত্যাদি। ছোট শির্ক দুই প্রকার: 1- প্রকাশ্য শির্ক: আর এটি হলো যে শির্ক মুখে ও আমলে প্রকাশ পায়। সুতরাং মৌখিক শির্ক হলো, গাইরুল্লাহর নামে সপথ করা এবং এ কথা বলা যে, আল্লাহ যা চেয়েছে এবং তুমি যা চেয়েছো। কখনো কখনো এটি বড় শির্ক পর্যন্ত পৌছে যায় কথকের নিয়ত ও ইচ্ছার কারণে। কারণ, গাইরুল্রাহর তাযীমের ইচ্ছা করা আল্লাহকে তাযীম করার মতো। ফলে সে শির্কে আকবার করল। আর কাজের শির্ক হলো, মুসীবত দূর করা বা তা তুলে দেয়ার জন্য তাবীয পরিধান করা তাগা লাগানো এবং বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীয ঝুলানো। তবে যদি কেউ এ বিশ্বাস করে যে, এগুলো নিজেই মুসীবত দূর করতে সক্ষম তাহলে এটি শির্কে আকবর। 2- গোপন শির্ক। এটি হলো নিয়ত, ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে শির্ক। যেমন, লোকিকতা ও সুখ্যাতি। যেমন, যেসব আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় এমন আমল যেমন সালাত বা তিলাওয়াত খুব সুন্দর করে করল, যাতে সে প্রসংশিত হয় এবং তাকে মানুষ ভালো আখ্যায়িত করে।
সিরাত হলো জাহান্নামের পিঠের ওপর স্থাপিত দীর্ঘায়িতু সেতু ও পারাপার।মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ও দুনিয়াতে শরীয়ত কবুল করার অগ্রগামীতার অনুপাতে তার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে আর। তাদের কেউ অতিক্রম করবে চোখের ফলকে, কেউ অতিক্রম করবে বিদ্যুতের গতিতে, কেউ অতিক্রম করবে বাতাসের গতিতে, কেউ অতিক্রম করবে দ্রুতগামী ঘোড়ার মতো, কেউ উটে আরোহনকারীর মতো, কেউ দৌড়ে দৌড়ে আবার কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউ খুড়ে খুড়ে আবার কাউকে চিনে নেয়া হবে এবং তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সবই বান্দার আমল অনুযায়ী হতে থাকবে। কোন কোন হাদীসে তার বর্ণনা সম্পর্কে এসেছে, এটি চুল থেকেও চিকন এবং তরবারী থেকেও ধারালো। আর কয়লা থেকে গরম। কোন কোন আহলে ইলম বলেন, বরং এটি প্রশস্থ রাস্তা। তাতে রয়েছে পিচ্ছিল্লতা ও বাতাস। আর রয়েছে সা‘দান বৃক্ষের মতো কাটা। তবে তা যে কত বড় তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যাই হোক তা ভয়াবহ ভয়ের ও আতঙ্কের।
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার মধ্য হতে একটি হলো হাউযের প্রতি ঈমান আনা। আর তা হলো এ কথা অকাট্য বিশ্বাস করা যে, অবশ্যই মহান হাউযটি মওজুদ আছে যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিয়ামাতের দিনের বিশাল ময়দানে সম্মানিত করেছেন। যাতে যারা তার প্রতি ঈমান এনেছে এবং যারা তার শরীআতকে অনুসরণ করেছে তারা তা থেকে পানি পান করতে পারে। কারণ, মানুষ এ স্থানে পানির সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন অনুভব করবে। আর এ হাউয জান্নাতের একটি নাহার যার নাম কাউসার তা থেকে আসবে। তা থেকে দুটি নলা প্রবাহিত থাকবে। আহলে ইলমদের বিশুদ্ধ মত অনুসারে এটি পুলসিরাত অতিক্রম করার আগে হবে। এর বৈশিষ্ট্য ও ধরণ হলো, তার পানি দুধের চেয়েও সাদা মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ। আর এর প্লেট ও পেয়ালাগুলো আসমানের তারকার সংখ্যার মতো। তার দৈর্ঘ হলো একমাসের রাস্তা এবং তার প্রসস্থতাও একই পরিমাণ। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে তারপর সে আর পিপাসিত হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীন হতে মুরতাদ হয়ে গেছে বা দীনকে পরিবর্তন করেছে এবং তাতে এমন কিছু আবিষ্কার করেছে যার প্রতি আল্লাহ খুশি নন বা যারা এটির অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে যেমন, খারেজী, রাফেযী, মুতাযিলা এবং আরও অন্যান্য বিদআতী, প্রবৃতির পুজারী ও বক্রমস্তিস্কের অধিকারীদেরকে তা থেকে বিতাড়িত করা হবে। আহলে ইলমগণের সহীহ মতামত হলো, প্রত্যেক নবীর জন্য হাউয রয়েছে। কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মাদের হাউয সবচেয়ে বড় এবং অধিক আগমনকারী ও সুমহান। সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ হিসেবে বর্ণিত, প্রত্যেক নবীর রয়েছে একটি হাউয। আর তারা গর্ব করবে তাদের মধ্য হতে কে সবচেয়ে বেশি আগন্তক লাভ করেছেন। আর আমি এ বিশ্বাস করি যে, আমিই হবো সে ব্যক্তি যার আগন্তুক সবচেয়ে বেশি হবে। হাদীস ইমাম তিরমিযি স্বীয় সুনানে (২৪৪৩) তাবরানী কবীরে (৭/২৫৬), বুখারী তারিখে (১/৪৪) ইবনু আবী আসেম আস-সুন্নাহ (৭৩৪) বর্ণনা করেন। সবাই হাসান থেকে তিনি সামুরা থেকে সনদে বর্ণনা করেন। আর হাদীস সব সনদসহ হাসান বা সহীহ যেমনটি সীলসীলাতুস সহীহায় বর্ণনা করা হয়েছে। (১৫৮৯)।
আদ-দালাল (الضلال) গোমরাহী অর্থ হলো, সঠিক পথের ওপর অবিচল না থাকা। চাই তা কথার মধ্যে হোক বা কর্মের মধ্যে হোক বা বিশ্বাসের মধ্যে হোক। দালাল (الضلال) - গোমরাহী দুই প্রকার: 1- ইলম ও বিশ্বাসে গোমরাহী। যেমন কাফের. মুর্তি পুজারী ও আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারকারীদের গোমরাহ হওয়া । 2-আমল ও আহকামের ক্ষেত্রে গোমরাহ হওয়া। যেমন, গোনাহগারদের গোমরাহ হওয়া। আর গোমরাহ হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহকে ছেড়ে দেয়া। যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া, বিদআত করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ করা, অজ্ঞতা ও সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি।
আনুগত্যতা হলো দীনের ভিত্তি এবং ইবাদাতের রুকন। আর তা হলো বাস্তবায়ন করার নিয়তে মানুষকে যা আদেশ করা হয়েছে তা পালন করা এবং যা থেকে তাকে না করা হয়েছে তা ছেড়ে দেয়া। আদিষ্ট বা নিষেধকৃত বিষয়টি কথা বা আমল বা বিশ্বাস যাই হোক। এটি দুই প্রকার: এক- স্রষ্টার আনুগত্য করা, আর সেটি হলো আল্লাহ ও তার রাসূল যা আদেশ করেছেন তা পালন করা এবং তারা যা নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দেয়া। দুই- মাখলুকের আনুগত্য করা। এটি আবার দুই প্রকার: 1- প্রসংশিত আনুগত্য। যেমন, পাপের বাইরে দায়িত্বশীল ও মাতাপিতার আনুগত্য করা। 2- মন্দ ও নিন্দনীয় আনুগত্য করা। আর তা হলো পাপ কাজে মাখলুকের আনুগত্য করা। এ ধরণের আনুগত্যের মধ্যে কতক আছে শির্ক। যেমন, হারামকে হালাল করা বা হালালকে হারাম করার ব্যাপারে বা মুর্তি পুজা বিষয়ে মাখলুকের আনুগত্য করা। আবার কোনো কোনো আনুগত্য ফাসেকী। যেমন, মদ পানে কোনো মাখলুকের আনুগত্য করা ইত্যাদি।
আল্লাহ মাখলুককে ইসলাম ও তাওহীদের ওপর সৃষ্টি করেছেন। ফলে প্রতিটি মানুষের স্বভাবের দাবি হলো ইসলাম কবুল করা. ইসলামকে জানা ও মহব্বত করা। ফিতরাত বা স্বভাব স্রষ্টাকে স্বীকার করতে, মুহাব্বত করতে এবং কেবল তার জন্য যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করতে বাধ্য করে। স্বভাবের দাবি ও চাহিদসমূহ স্বভাবের পূর্ণতা অনুযায়ী একটির পর একটি লাভ হয় যখন তা বাধা হতে নিরাপদ হয়। আর যখন ফিতরাত নিরাপদ না হয়, তা শয়তান, প্রবৃত্তি ও বিভিন্ন গোমরাহীর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে বিকৃত হয়ে পড়ে। ফিতরাত সাধারণত আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত শরীআত দ্বারা পরিপূর্ণ। কারণ, ফিতরাত বিষয়গুলো সংক্ষেপে জানে আর শরীআত তার ব্যাখ্যা প্রদান করে। সুতরাং শরীআতের বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রে স্বভাব বা ফিতরাত স্বয়ং সম্পন্ন নয়। এ কারণে আল্লাহ ফিতরাতকে পরিপূর্ণ করার জন্যে তাদের নিকট রাসূলগণ প্রেরণ করেন।
ইবাদত হলো পরিপূর্ণ বিনয় ও নমনীয়তা। আর আল্লাহর ইবাদত তাঁর তাওহীদকে শামিল করে, যা মাখলুক সৃষ্টি করার একমাত্র লক্ষ্য। এ কারণেই ইবাদাতের কিছু অংশ গাইরুল্লাহর জন্য করা শির্ক। ইবাদাতের দুটি প্রয়োগ রয়েছে: প্রথম- কাউনি (পার্থিব) সাধারণ ইবাদত। আর এটি হলো বল প্রয়োগ ও রাজত্বের ইবাদত। এটি আসমান ও যমীনের সব অধিবাসী মুমিন ও কাফির সবাইকে শামিল করে। ফলে সবই আল্লাহর গোলাম। অর্থাৎ তারা সবাই তাঁর কাওনী নির্দেশের অনুগত্যকারী। যখন তিনি চান তাদের জীবন দান করেন আর যখন চান তিনি তাদের মৃত্যু দান করেন। আর যখন চান তিনি তার হিকমত অনুযায়ী ইচ্ছামত তাদের মাঝে কর্তৃত্ব করেন। এর থেকে বের হওয়ার তাদের কোনো সুযোগ নাই। এ ধরনের ইবাদতে কোনো সাওয়াব নাই এবং কোনো প্রসংশার অধিকারীও হবে না। দ্বিতীয়- শরয়ী বিশেষ ইবাদত। এটি হলো, আনুগত্য, বিনয় ও ইচ্ছাধীন মুহাব্বাতের ইবাদত। এ ইবাদতের ওপর মানুষের প্রসংশা করা হয়। এটি আল্লাহ যাকে তাওফীক দেন তার সঙ্গে খাস। এটি কবুল হওয়ার শর্তের মধ্যে রয়েছে ঈমান, এখলাস ও অনুসরণ। বিশেষ ইবাদত আনুগত্যের সব প্রকারকে অন্তর্ভুক্ত করে। এর স্তর হলো চারটি: 1- অন্তরের কথা, আর তা হলো, আল্লাহ যা সংবাদ দিয়েছেন তা বিশ্বাস করা। 2- মুখের কথা, আর তা হলো মুখে তার সংবাদ দেয়া, তা উচ্চারণ করা ও তার দিকে আহ্বান করা। 3- অন্তরের আমল, যেমন, তাকে মহাব্বাত করা ও তার ওপর ভরসা করা। 4- আর হলো অঙ্গের আমল, যেমন সালাত ইত্যাদি। আর ইবাদতের রুকন হলো তিনটি, মুহাব্বাত, ভয় ও আশা।
প্রবৃত্তির অনুসরণ করা খারাপ ও গোমরাহীর মূল কারণ গুলোর একটি অন্যতম কারণ। আর তা হলো শরীআত বিরোধী কার্যকলাপের প্রতি মানুষের আত্মার ঝুঁকে যাওয়া। আর সেটি দুই প্রকার: 1- সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। এটি হলো প্রবৃত্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকার। প্রবৃত্তির অনুসরণ একজন মানুষকে বিদআত বা কুফরে লিপ্ত হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। এ কারণেই বিদআতীকে প্রবৃত্তির অনুসারী বলা হয়ে থাকে। কারণ তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল এবং কিতাব ও সুন্নাহ থেকে বিমুখ রইল। 2- রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। যেমন বৈধ বস্তু অতিক্রম করে হারামে লিপ্ত হওয়া। যেমন, সুদ খাওয়া, ব্যভিচার করা। এটি একজন মানুষকে ফাসেকীর মধ্যে লিপ্ত করে। সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা অপেক্ষা অধিক মারাত্মক। আর ইসলামী শরীআতের আগমন হলো মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করে শরীআতের অনুসরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
বাড়াবাড়ি করা সমাজে একটি মারাত্মক সমস্যা। আর তা হলো বৈধ সীমা অতিক্রম করা এবং দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা। এটি দুই ভাগে ভাগ হয়: 1- বিশ্বাসগত বাড়াবাড়ি। যেমন, তাকফীরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি। এ থেকে আছে খারেজীদের বাড়াবাড়ি। যারা সতর্কতার আয়াত ও হাদীসসমূহ বুঝার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরোধী মুসলিমদের কাফির বলে। এবং যেমন সালেহীন ও নবীদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা, তাদের মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে, তাদেরকে আহ্বান করে, তাদের সম্মান ও মর্যাদাকে বুলন্দ করে এবং তাদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে যা শরীআতের সীমানা থেকে বের করে দেয়। 2- আমলী বাড়াবাড়ি। আর তা হলো, ইবাদাতে বৃদ্ধি করা এবং দীন ও ইবাদাতে বাড়াবাড়ি করা। যেমন কতক ইবাদতকারীর খৃষ্টানদের আবিষ্কৃত বৈরাগ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের ইবাদাতে ও কর্মগত জীবন থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। যেমন, যে শুধু সিয়াম রাখে, কিন্তু সিয়াম ভঙ্গ করে না এবং যে নারীদের বিয়ে কর না। বাড়াবাড়ি আরও দুই ভাগে ভাগ হয়: এক প্রকার বাড়াবাড়ি হলো যেটি একজন মানুষকে দীন থেকে খারিজ করে দেয়। যেমন মুর্তি পুজা করা, নেককার লোকদের পুজা করা অথবা কোনো মাখলুকের জন্য গাইবী ইলম সাব্যস্ত করা। অপর প্রকার বাড়াবাড়ি হলো, যা একজন মানুষকে মিল্লাত থেকে বের করে দেয় না। যেমন, সালাত ও হজের কতক ওয়াজিবে বাড়াবাড়ি করা। বাড়াবাড়ি করার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, আলেমগণ থেকে বিমুখতা, পক্ষাপাতিত্ব করা, বিদআতে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। দীনের সব মাসআলার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসগত হোক বা আমলী বাড়াবাড়ি চলে।
ইসলাম হলো সত্য দীন। এটি ছাড়া অন্য কোনো দীনকে আল্লাহ কারো থেকে কবুল করবেন না। এটি হলো বিশেষ অর্থ। ইসলাম তার সামগ্রিক অর্থে দুই ভাগে বিভক্ত হয়: প্রথম: ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় আল্লাহর কাওনী ও কাদরী বিষেয়র আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। এ ধরনের মেনে নেওয়াতে কারো কোনো স্বাধীনতা নাই এবং তাতে কোনো সাওয়াবও নাই। দুই: আল্লাহর শরীআতের আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। এটি হলো সে ইসলাম যার ওপর মানুষকে প্রসংশা করা হয় এবং সাওয়াব দেওয়া হয়ে থাকে। এটিকেও আম ও খাস দুই ভাগে ভাগ করা হয়: 1- আম-ব্যাপক: এটি হলো সে দীন যা নিয়ে নূহ আলাইহিস সালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সব নবীর আগমন ঘটেছে। আর তা হলো, এক আল্লাহর ইবাদত করা, তার কোনো শরীক নেই এবং তার শরীআতকে প্রতিষ্ঠা করা। 2- খাস বা বিশেষ: আর তা হলো, সে শরীআত যা নিয়ে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন। তার রয়েছে দুটি ব্যবহার: এক: প্রকাশ্য কথা ও কর্ম। আর তা হলো পাঁচ রুকন ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়। দুই: এটি বাহ্যিক আমাল ও বাতেনী বিশ্বাসকে সামিল করে। যেমন, ঈমানের ছয়টি রুকন ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়।
আল-হিজরাহ (হিজরত) হলো: ব্যক্তি যে দেশে কাফেরদের মাঝে বসবাস করে তা ছেড়ে দেয়া এবং ইসলামী শহরে স্থানান্তরিত হওয়া। আর শির্কের শহর হলো যেখানে কুফরের নিদর্শনসমূহ বাস্তবায়ন করা হয় এবং ব্যাপকভাবে সেখানে ইসলামের নির্দশন বাস্তবায়ন করা হয় না। ইসলামী শহর হলো, যেখানে ইসলামের নিদর্শনগুলো ও বিধানগুলো ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়। আর হিজরত এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, তার অবস্থান বড়ই মহান এবং তার বিষয়টি খুব বড়। কারণ, এটি বন্ধুত্ব ও শুক্রতার সুস্পষ্ট বিষয়। কারণ, এতে রয়েছে দীনের হিফাযত ও মুশরিকদের থেকে দূরে থাকা। এটি কয়েক প্রকার: 1- প্রথম হিজরত হাবশায় যখন কাফেররা সাহাবী রিদওয়ানুল্লাহি আলাইহিম-দের কষ্ট দিয়েছিল। 2- দ্বিতীয় হিজরত হলো মক্কা থেকে মদীনায়। 3- তৃতীয় হিজরত হলো, বিভিন্ন গোত্রের লোকদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শরীআত শেখার জন্য হিজরত করা। তারপর তারা তাদের নিজেদের বাড়ি চলে যেতেন এবং তার কাওমের লোকদের শরীআত শেখাতেন। 4- চতুর্থ হিজরত হলো মক্কার লোকদের থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আসতো এবং তারা আবার মক্কায় ফিরে যেতো। 5- পঞ্চম হিজরত হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর মুসলিমদের শির্কে শহর থেকে মুসলিম শহরে হিজরত করা। 6- ষষ্ট হিজরত হলো আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দেয়া। আর হিজরত অন্য বিবেচনায় দুই প্রকার: 1- স্বশরীরে এক দেশ থেকে অন্য দেশে হিজরত করা। যেমন, কুফরী রাষ্ট্র থেকে মুসলিম রাষ্ট্রে যাওয়া এবং বিদাতী এলাকা থেকে যেখানে সুন্নাত আছে সে এলাকায় যাওয়া এবং যে এলাকায় হারামের প্রাধান্য পায় সে এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়া প্রভৃতি। 2- আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি অন্তর দ্বারা হিজরত করা। ফলে অন্তরের মাধ্যমে গাইরুল্লাহর মহব্বত ছেড়ে আল্লাহর মহব্বতের দিকে হিজরত করা এবং গাইরুল্লাহর গোলামী থেকে বের হয়ে আল্লাহর গোলামীর দিকে যাওয়া। গাইরুল্লাহ ভয়, আশা ও তার ওপর ভরসা করা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ভয়, আশা ও তাঁর ওপর তাওয়াককুল করার প্রতি হিজরত করা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হলো, যারা কুরআন ও সুন্নাহকে মজবুত করে ধরেছেন এবং বুঝা ও তদনুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনের আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছেন। আর তারা উম্মাত যে বিষয়ের ওপর একমত হয়েছেন তাকে মজবুত করে ধরেছেন। তারা জামাতবদ্ধতার ওপর আগ্রহী ও বিচ্ছিন্নতাকে পরিহারকারী। এ গুণের ভিত্তি হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করা, তিনি যে বিশ্বাস, আদর্শ, নিয়মনীতি নিয়ে এসেছেন তার সাথে ঐকমত পোষণ করা এবং মুসলিম জামাত যারা হকের ওপর একত্র হয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে কোন বিচ্ছিন্ন হননি তাদের সাথে থাকা। তারাই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত ও সাহায্য প্রাপ্ত দল যাদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেন যে, তারা তার প্রদর্শিত রাস্তায় ও তারপর তার সাহাবীগণের রাস্তায় চলবেন। আর তারা হলেন এমন মুসলিম যারা কিতার ও সুন্নাতের অনুসরণকারী এবং গোমরাহ ও বিদআতীদের পরিহারকারী। আহলে সুন্নাত ও ওয়াল জামান কোন একটি নির্ধারিত দল বা জামাত এবং স্থান বা যামানারর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন; বরং যারাই আহলে সুন্নাতের আলামত বা গুণে গুণান্বিত হবেন এবং তাদের আদর্শের ওপর হবেন, সে অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের দলের দিকে তাকে সম্বোধন করা হবে।
দীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কার করা চাই তা বিশ্বাসসমূহে হোক বা আমলসমূহে হোক অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষয়। কারণ, নতুন কিছু আবিষ্কার করার অর্থ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যে পথের ওপর চলেছেন তার বাইরে এমন পথ রয়েছে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়। বিদআতের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো: 1- এটি দীনের মধ্যে তৈরি ও আবিষ্কার করা। ফলে তার থেকে দুনিয়াবী বিষয়ে যা আবিষ্কার করা হয়েছে তা বের হয়ে যায়, যেমন সকল শিল্প। 2- বিদআত এমন দলীল বা নিয়ম বা শরয়ী মুল থেকে নির্গত হয় না যা তার ওপর প্রমাণ হয়। 3- দীনের মধ্যে বিদআত কখনো হ্রাস করার দ্বারা হয়ে থাকে যেমনিভাবে বৃদ্ধি করার দ্বারা হয়। তবে শর্ত হলো হ্রাস বা বৃদ্ধির উদ্দিপক হতে হবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কাজেই যে অলসতাবশত ইবাদত ছেড়ে দিল তার কর্মকে বিদআত বলা যাবে না। আর বিদআত দুই ভাগে বিভক্ত হয়: 1- বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত (নতুন সৃষ্টি)। যেমন, মুতাযিলা, রাফেযী ও জাহমিয়্যা ইত্যাদি গোমরাহ দলগুলোর কথাবার্তা। 2- ইবাদাতের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন এমন কোনো ইবাদত দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা যার অনুমোদন তিনি দেননি। এটি কয়েক প্রকার: 1- মূল ইবাদাতে বিদআত। আর এটিকে হাকিকি বিদআত বলে নাম রাখা হয়। যেমন দীনের মধ্যে এমন কোনো ইবাদত আবিষ্কার করা যার কোনো ভিত্তি নেই। যেমন মীলাদের অনুষ্ঠানাদি। 2- মূল ইবাদতের সাথে বাড়ানো। এটিকে বিদআতে ইযাফিয়্যাহ বলে। এটি কখনো বৈধ ইবাদতের ওপর বৃদ্ধি করা দ্বারা হয়ে থাকে। যেমন, যুহরের সালাতে পঞ্চম রাকাত বৃদ্ধি করা। আর কিছু বিদআত আছে যা ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমন কোনো ইবাদত এমন পদ্ধতিতে আদায় করল যার অনুমোদন শরীআত দেয়নি। যেমন, শরয়ী যিকিরসমূহ একসাথে গানের তালে তালে আদায় করা। কতক বিদআত আছে যা বৈধ ইবাদতের জন্যে সময় নির্দিষ্ট করার ফলে হয়, যা শরীআত নির্ধারণ করেনি। যেমন, মধ্য শাবানের রাতে কিয়াম করা ও দিনে সাওম পালন করা। কারণ হলো মূল সাওম পালন ও কিয়াম করা বৈধ, কিন্তু এটিকে কোনো সময়ের সাথে খাস করতে হলে বিশুদ্ধ দলীল প্রয়োজন। আবার কতক বিদআত আছে যা বৈধ ইবাদতকে কোন স্থানের সাথে খাস করার কারণে হয়ে থাকে। যেমন, কবরকে দুআ বা ইবাদতের জন্য খাস করা যা আল্লাহ বৈধ করেননি।
তাসবীহ আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাক্ষ্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং তার তাওহীদের নীতিসমূহের একটি নীতি। এ ছাড়াও এটি ইসলামী আকীদার সৌন্দর্য্যের দলীল। আর তার অর্থ হলা আল্লাহর তাজীম ও পবিত্রতা বর্ণনা করা এবং মুশরিক ও মুলহিদরা যেসব দোষত্রুটি তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে তা থেকে তাকে পবিত্র ও মুক্ত করা। যেমন, শরীক সাব্যস্ত করা, সন্তান সাব্যস্ত করা, সঙ্গীনি ইত্যাদি সাব্যস্ত করা। আর এটি হলো অন্তরসমূহ ও চিন্তা চেতনাকে আল্লাহর প্রতি কোন দূর্বলতার ধারণা পোষণ অথবা তার প্রতি কোন খারাপ সম্বোধন করা থেকে দূরে রাখা। আর এর দাবি হলো পূর্ণতার সিফাতসমূহকে আল্লাহর সঙ্গে সাব্যস্ত করা। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে রয়েছে সাব্বুহু বা সুব্বুহু। আর এর অর্থ হলো, সে সত্বা যাকে সব ধরবের দোষ ও ত্রুটি থেকে আসমানসমূহ ও যমীনের অধিবাসীরা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে। তাসবীহ কখনো মুখে সুবহানাল্লাহ বলার দ্বারা হয়ে থাকে। আবার কখনো অঙ্গের দ্বারা হয়ে থাকে। আর তা হলো, আর তা হলো আল্লাহকে ছাড়া অন্যদের বাদ দিয়ে একক আল্লাহর ইবাদত করার দ্বারা। আর অন্তর দ্বারাও হয়ে থাকে। অন্তরে আল্লাহকে পবিত্র জানা এবং তার থেকে সব ধরনের ত্রুটি না করা। আর তার নাম, সিফাত ও সত্তাতে পূর্ণতার বিশ্বাস করা। তাসবীহ পাঁচ প্রকার: 1- আল্লাহর জাতে মুকাদ্দাসার তাসবীহ। 2- আল্লাহর জন্য ফিরিশতাদের তাসবীহ। 3- আল্লাহর জন্যে নবী ও তাদের অনুসারীদের মত নেককার মানুষের তাসবীহ। 4- আল্লাহর জন্য সমগ্র জগতের তাসবীহ। 5- আল্লাহর জন্যে জান্নাতে জান্নাতীদের তাসবীহ।
ঈমান হলো, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব সংবাদ দিয়েছেন তার প্রতি অকাট্য বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করা যা অন্তরের আমলকে আবশ্যক করে তারপর তার অনুসারী হয় অঙ্গসমূহের আমল। অথবা বলা যায় যে, তা হলো মুখে উচ্চারণ করা, অন্তরে বিশ্বাস করা, রুকনসমূহের ওপর আমল করা। আর কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তরের কথা। আর তা হলো, সহীহ সত্য বিশ্বাস যা আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। আর মুখের কথা হলো, দুই শাহাদাতকে উচ্চারণ করা। কারণ, নসসমূহে যখন কথা ব্যবহার করা হয়, তখন তা অন্তরের কথা বিশ্বাসকে শামিল করে আর মুখের কথা উচ্চারণকে শামিল করে। আর আমল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তর, অঙ্গসমূহ ও মুখের আমল। অন্তরের আমল হলো, একজন বান্দার অন্তর দিয়ে ঈমানের আমলসমূহ পালন করা। যেমন, লজ্জা, তাওয়াক্কুল, আশা, ভয়, ইনাবাত, মুহাব্বত ইত্যাদি। আল্লাহ মুখের আমল হলো, তাসবীহ, তাকবীর, কুরআন তিলাওয়াত, ভালো কাজের আদেশ অন্যায় হতে নিষেধ করা ইত্যাদি। আর অঙ্গসমূহের আমল হলো, একজন বান্দার সালাত, সাওম, হজ, জিহাদ ইত্যাদি ইবাদত পালন করা।
বিদআত হলো দীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করা যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যে আকীদাহ পোষণ ও যে আমল করতেন তার পরিপন্থী। অথবা বলা হবে: এটি হলো দীনের মধ্যে এমন নব আবিষ্কৃত পথ যা শরয়ী পথের পরিপন্থী। তার ওপর চলা দ্বারা সাধারণত আল্লাহর ইবাদতে অতিরঞ্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর তা হলো দুই প্রকার: 1- বিশ্বাসগত বিদআত: আর তা হলো আল্লাহ তাআলা যে সত্যসহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন ও তাঁর কিতাব নাযিল করেছেন তার পরিপন্থী বিশ্বাস করা। যেমন, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলা, রাফেযী ও অন্যান্য গোমরাহ ফিরকাসমূহের কতাবার্তা। 2- ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিদআত: আর তা হলো এমন অবস্থা ও দীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট আমল দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা যার অনুমতি আল্লাহ দেননি এবং তিনি এর কিছুই কবুল করবেন না। এটি কয়েক প্রকার: 1- মূল ইবাদতে বিদআত। একে হাকীকী বিদআত বলে। যেমন এমন কোনো ইবাদত আবিষ্কার করা দীনের মধ্যে যার কোনো ভিত্তি নাই। যেমন, মীলাদ অনুষ্ঠানসমূহ। 2- মূল ইবাদতে যুক্ত বিদআত। এটি বিদআতে ইযাফী বলা হয়ে থাকে। এটি কখনো বৈধ ইবাদতের ওপর বৃদ্ধি করার দ্বারা হয়। যেমন কেউ যুহরের সালাতে পঞ্চম রাকাত বৃদ্ধি করল। আবার কখনো ইবাদত আদায়ের নিয়মের মধ্যে হয়, যেমন, অনুমোদনহীন পদ্ধতিতে ইবাদত আদায় করা। যেমন, বৈধ আযকারকে একত্রে গানের আওয়াযে আদায় করা। আবার তা কখনো বৈধ ইবাদতের জন্যে সময়কে খাস করা দ্বারা হয় যা শরীয়ত খাস করেনি। যেমন, অর্ধ শাবানের রাত ও দিনকে সাওম ও কিয়াম দ্বারা খাস করা। কেননা মূল সাওম ও কিয়াম বৈধ, কিন্তু তাকে কোনো সময়ের সাথে খাস করতে হলো অবশ্যই সহীহ দলীল থাকতে হবে।
আল্লাহর আয়াতসমূহ: তা হলো এমন সব দলীল প্রমাণ ও নিদর্শন যা তার প্রতি পথ পদর্শন করে এবং কেবল তার ইবাদত করার দিকে ধাবিত করে। আল্লাহর আয়াতসমূহ দুই প্রকার: 1- কাওনী আয়াতসমূহ: আর তা হলো ছোট বড় সব সৃষ্টি যেমন, আসমানসমূহ, যমীন, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়সমূহ, গাছপালা পশুপাখি ইত্যাদি। এ সবের সৃষ্টি, পরিচালনার মধ্যে চিন্তা করা এবং এদের বিস্তারিত রহস্য সম্পর্কে ফিকির করা আল্লাহর তাওহীদের দিকে নিয়ে যায়। 2- শরয়ী আয়াতসমূহ: আর তা হলো রাসূলগণ যে সব ওহী নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআনুল করীম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। এখানে কুরআনের আয়াতসমূহের ওপর আয়াত শব্দের একটি ব্যবহার রয়েছে।
রিয়া হলো, ভালো কাজ অন্যকে দেখানো বা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদতকে প্রকাশ করা যাতে তারা তার প্রসংশা করে। অথবা বলা যায়, কোনো আমলে গাইরুল্লাহর প্রতি লক্ষ্য রেখে ইখলাস ছেড়ে দেয়া। কতক আহলে ইলম এ বলে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রিয়া এমন কর্ম খালেক থেকে অমনোযোগী ও অন্ধ হয়ে যার দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে মাখলুকে দেখানো। এটি গোপন শির্ক এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আমলকে ধ্বংসকারী। এ বিষয়ে কঠোর হুমকি এসেছে। একজন মুসলিমের জন্য উচিত হলো যাবতীয় আমল কেবল আল্লাহর জন্য করতে সচেষ্ট হবে।
মুহাব্বাতের শির্ক: আর তা হলো আল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহকে আল্লাহর মুহাব্বাতের মতো বা তার চেয়েও অধিক মুহাব্বাত করা। আর তা হলো উবুদিয়্যাতের মুহাব্বাত যা একজনকে বিনয়, তাজীম, পরিপূর্ণ আনুগত্য করা এবং মাহবুবকে অন্যের ওপর প্রাধান্য দেয়াকে বাধ্য করে। এ মুহাব্বাত কেবল আল্লাহর জন্য খাস। এর মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করা বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি কোনো কিছুকে আল্লাহর সাথে মুহাব্বাত করল আল্লাহর জন্য বা আল্লাহতে করল না তবে সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে শরীক সাব্যস্ত করল। আল্লাহ তাআলা বলেন, কতক মানুষ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে একাধিক শরিক সাব্যস্ত করে তারা আল্লাহকে মুহাব্বাত করার মতো তাদেরকে মহব্বাত করেন। মুহাব্বাত মুলত তিন ভাগে বিভক্ত: 1- ওয়াজিব মুহব্বাত: আর তা হলো আল্লাহর মুহাব্বাত ও তার রাসূলের মুহাব্বাত এবং আল্লাহ যে সব ইবাদাত ইত্যাদিকে মুহাব্বাত করেন তার মুহাব্বাত। 2- স্বভাবগত মুহাব্বাত। এটি আবার তিন প্রকার: ক-রহমত ও দয়ার মুহাব্বাত। যেমন, পিতার মুহাব্বত সন্তানের প্রতি। খ-সত্বাগত মুহাব্বাত। যেমন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মুহাব্বাত। গ- উঠা বসা ও মেলা মেশার মুহাব্বাত। যেমন, মুশরিকদেরকে কোনো পেশায় বা একসঙ্গে চলাফেরা করার কারণে বা অন্য কারণে মুহাব্বাত করা। এ তিন প্রকারের মুহাব্বাত এমন মুহাব্বাত যা মাখলুকের জন্য পরস্পরের প্রতি গ্রহণযোগ্য। এ ধরনের মুহাব্বাত তাদের মধ্যে পাওয়া যাওয়া আল্লাহর মুহাব্বাতে শির্ক বলে পরিগণিত হবে না। তবে যদি এ মুহাব্বাতে সীম লঙ্ঘন হয় এবং আল্লাহর মুহাব্বাতে প্রাধান্য পায় বা তা আল্লাহর আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখার কারণ হয়। কারণ, সেটি তখন হবে নিষিদ্ধ মুহাব্বাত। 3- নিষিদ্ধ মুহাব্বাত। আর তা হলো এমন মুহাব্বাত যা শরয়ীভাবে তার জন্যে বৈধ নয়। যেমন, অপরিচিত নারী ও পুরুষদের মুহাব্বাত করা এবং বাদ্যযন্ত্র ও নেশা ইত্যাদিকে মুহাব্বাত করা।
আনুগত্যে শির্ক করা: আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ব্যাপারে এবং আল্লাহর যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ব্যাপারে পাদ্রী, পীর বা আলেম ও নেতাদের আনুগত্য করা। আর তার ধরণ হলো, কোন মাখলুককে এমনভাবে গ্রহণ করা যেন সে তার আদেশ ও নিষেধে আনুগত্যের অধিকারী রব। সুতরাং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করা বিষয়ে বা আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করা বিষয়ে যে ব্যক্তি কোন মাখলুকের আনুগত্য করল যেমন তাদের হালাল ও হারাম করার সুযোগ করে দিল এবং দীনের পরিপন্থী হওয়া সত্বেও জেনে শুনে নিজের জন্য ও অন্যদের জন্য তার আনুগত্য করা পথকে সুগন করল সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে একাধিক রব গ্রহণ করল। আর আল্লাহর সাথে বড় শিরক করল। শরীআতের বিকৃতি ও আল্লাহর আহকামের পরিবর্তন করা বিষয়ে তাদের আনুগত্য করাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে বাদ দিয়ে রুহবান ও আহবারদের রব হিসেবে গ্রহণ করা দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে তারা তাদের নিজেদেরকে শরীআত প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশিদার সাব্যস্থ করে। সুতরাং এ বিষয়ে যারা তাদের আনুগত্য করবে তারা শরীআত প্রণয়নে, হারাম ও হালাল নির্ধারণে তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করলো। এটি বড় শির্ক। এ ধরনের আরও শির্ক হলো, শরীআতের পরিপন্থী আইন প্রণয়নে—হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে শাসক ও নেতাদের আনুগত্য করা। যেমন, সুদ., যিনা, মদপান, উত্তরাধিকারী সম্পদে নারী ও পুরুষদের সমান করা বা হালালকে হারাম করা যেমন, একাধিক বিবাহকে নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি আরও যে সব বানানো কানুন দ্বারা আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করে।
সীরাতে মুস্তাকীম: আর তা হলো যা দিয়ে আল্লাহ তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। এটি বাতেনী বিষয়—বিশ্বাস ও ইচ্ছাসমূহকে শামিল করে এবং প্রকাশ্য বিষয়—কথা ও কর্মগুলো শামিল করে। এটিই হলো ইবলিসের লক্ষ্য আদম সন্তানকে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিরত রাখার জন্য তার ওপর উঠে বসে। সিরাতে মুস্তাকীম হলো সুস্পষ্ট রাস্তা যাতে কোনো বক্রতা নাই ও বিকৃতি নাই। আর তার প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে— আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা এবং সুন্নাত ও জামাতের আনুগত্য করা এবং আল্লাহর গোলামীর পথ ইত্যাদিকে অবলম্বন করা।
কুরআন: এটি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত। এটি আল্লাহর কালাম, মাখলুক নয়। আর এটি ইসলামের আকীদা, ইবাদত, আহকাম ও আদাবসমূহের কিতাব। কুরআনের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, সম্মান, ইয্যত, মহত্ব ইত্যাদি। আর কয়েকটি কারণে কুরআনকে সম্মানি (কারীম) হওয়ার গুণেগুণান্বিত করা হয়েছে। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি হলো: 1- যার বাণী তার, মহত্ব, বড়ত্ব ও সম্মান। 2- তাতে রয়েছে মানুষকে সম্মান দেয়া এবং সমস্ত উম্মতের ওপর তাদের প্রাধান্য দেয়া। 3- এটি এমন একটি কিতাব যাতে অধিক কল্যাণ ও বরকত প্রদান করা হয়েছে। ফলে তার তিলাওয়াতকারীকে সাওয়াব, ইলম ও আদব প্রদান করা হয়। 4- এটি তার স্বীয় শব্দ ও অর্থে একটি পবিত্র, মহান ও সম্মানি কিতাব।
গুনাহের বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণি রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু গুনাহ গুনাহকারীকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আর তা হলো শির্ক ও আল্লাহর সাথে কুফরী করা। আর কতক আছে যা গুনাহকারীকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। কিন্তু তার ঈমান ও ইসলামকে হ্রাস করে দেয়। এটি দুইভাগে বিভক্ত: 1- কবীরাহ গুনাহ। আলেমগণ এর সংজ্ঞায় একাধিক মত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, তা হলো এমন সব গুনাহ যে গুলোর বর্ণনাকে আল্লাহ বা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নাম বা ক্রোধ বা অভিশাপ বা আযাব দিয়ে শেষ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তা হলো যে সব গুনাহের ওপর দুনিয়াতে আল্লাহ শাস্তি বা আখিরাতের আযাবের হুমকি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তা হলো যে সব গুনাহে বান্দা তাদের নিজেদের মধ্যে জুলুম করে। কেউ কেউ বলেন, তা হলো এমন সব গুনাহ যা করতে মানুষ ভয় অনুধাবন করে না এবং লজ্জা অনুভব করে না । বরং তাকে তুচ্ছ মনে করে থাকে এবং সাহস পদর্শন করে করে থাকে। আর হদ বা শাস্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শরীআত নির্ধারিত শাস্তি। যেমন, চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তি। কারণ, চুরি করার শাস্তি হলো হাত কাটা। আর হুমকি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ধমক দেওয়া, জাহান্নামের ভয় দেখানো বা ক্রোধের বা আল্লাহর রহমাত থেকে দূরে সরানো ইত্যাদি। যেমন, ছিনতাই করা বাপ ছাড়া অন্যের প্রতি বংশের দাবি করা। 2- সগীরা গুনাহ: যে সব গুনাহরে ওপর কোন শাস্তি বা ধমক আসেনি। তবে বার বার করা দ্বারা তা কখনো কখনো কবীরাহ গুনাহে পরিণত হয়। যেমন কোন অপরিচিতা নারীর দিক বার বার তাকানো।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা নকল করা হয়েছে তার সবকিছুকেই সুন্নাহ শামিল করে। তন্মধ্যে: প্রথমত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় তার কর্মসমূহ। যেমন, সালাতসমূহের আদায় ইত্যাদি। তৃতীয়ত: তার স্বীকৃতিসমূহ। আর তা হলো তার কতক সাহাবীগণ থেকে যে সব কর্ম প্রকাশ পেয়েছে তাকে চুপ থাকার মাধ্যমে বা কর্মকে ভালো বলে স্বীকৃতি প্রদান। চতুর্থত: তার সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর হলো আল্লাহ তাকে যে আকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন এবং তার দৈহিক বর্ণনা। আর তার সৃষ্টিগত চরিত্র বলতে বুঝানো হয়েছে যে সব আখলাক ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। পঞ্চমত: তার সীরাত, তার যুদ্ধসমুহ ও তার সংবাদগুলো। মুহাদ্দিসগণ এ গুলো সবই সুন্নাহের মূল কিতাবসমূহে এবং সীরাতে নববীর উৎসসমূহে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন।