সুন্নাহ হলো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবন পদ্ধতি যার ওপর তিনি এবং তার সাহাবায়ে কিরামগণ ছিলেন, যাতে কোন প্রকার সন্দেহ সংশয় নেই। সুন্নাহ শব্দটি ইবাদত ও বিশ্বাস সবকিছুতে সুন্নাহকে শামিল করে। যদিও যারা সুন্নাহ সম্পর্কে লিপিবদ্ধ করেছেন তারা আকিদার ক্ষেত্রে আলোচনাকে উদ্দেশ্য করেছেন। কারণ, এটি হলো দীনের আসল-মূল। আর এর বিরোধিতাকারী মহা বিপদে আছে। এ কারণেই সুন্নাহ শব্দটি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদা বুঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। সালাফ ও খালাফ রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের থেকে বড় বড় ইমামদের জবানে এর ব্যবহার ব্যাপক। ফলে বলা হয়ে থাকে (فلان من أهل السنة) অমুক আহলে সুন্নাহ থেকে। এর অর্থ হলো, সে সহীহ প্রশংসিত সরল তরীকার লোক। আর সুন্নাহ হলো সেই তারীকা যার ওপর পরিচালিত হয়। তখন এটি কথা কর্ম ও বিশ্বাসসমূহে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর খুলাফায়ে রাশেদীনগণ যার ওপর ছিলেন তাকে মুজবুত করে আঁকড়ে ধরাকে শামিল করে। আর এটি হলো পরিপূর্ণ ব্যাপক সুন্নাহ। এটিই হলো দীন যার থেকে কোন মূর্খ হতভাগা ও গোমরাহ ছাড়া কেউ বিমুখ হয় না।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত হলো, যারা কুরআন ও সুন্নাহকে মজবুত করে ধরেছেন এবং বুঝা ও তদনুযায়ী আমল করার ক্ষেত্রে সালফে সালেহীনের আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছেন। আর তারা উম্মাত যে বিষয়ের ওপর একমত হয়েছেন তাকে মজবুত করে ধরেছেন। তারা জামাতবদ্ধতার ওপর আগ্রহী ও বিচ্ছিন্নতাকে পরিহারকারী। এ গুণের ভিত্তি হলো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণ করা, তিনি যে বিশ্বাস, আদর্শ, নিয়মনীতি নিয়ে এসেছেন তার সাথে ঐকমত পোষণ করা এবং মুসলিম জামাত যারা হকের ওপর একত্র হয়েছেন এবং দীনের ব্যাপারে কোন বিচ্ছিন্ন হননি তাদের সাথে থাকা। তারাই হলো মুক্তিপ্রাপ্ত ও সাহায্য প্রাপ্ত দল যাদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সংবাদ দেন যে, তারা তার প্রদর্শিত রাস্তায় ও তারপর তার সাহাবীগণের রাস্তায় চলবেন। আর তারা হলেন এমন মুসলিম যারা কিতার ও সুন্নাতের অনুসরণকারী এবং গোমরাহ ও বিদআতীদের পরিহারকারী। আহলে সুন্নাত ও ওয়াল জামান কোন একটি নির্ধারিত দল বা জামাত এবং স্থান বা যামানারর মধ্যে সীমাবদ্ধ নন; বরং যারাই আহলে সুন্নাতের আলামত বা গুণে গুণান্বিত হবেন এবং তাদের আদর্শের ওপর হবেন, সে অবশ্যই তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন এবং তাদের দলের দিকে তাকে সম্বোধন করা হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে যা নকল করা হয়েছে তার সবকিছুকেই সুন্নাহ শামিল করে। তন্মধ্যে: প্রথমত: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কথাগুলো। দ্বিতীয়ত: সর্বাবস্থায় তার কর্মসমূহ। যেমন, সালাতসমূহের আদায় ইত্যাদি। তৃতীয়ত: তার স্বীকৃতিসমূহ। আর তা হলো তার কতক সাহাবীগণ থেকে যে সব কর্ম প্রকাশ পেয়েছে তাকে চুপ থাকার মাধ্যমে বা কর্মকে ভালো বলে স্বীকৃতি প্রদান। চতুর্থত: তার সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্য। আর হলো আল্লাহ তাকে যে আকৃতির ওপর সৃষ্টি করেছেন এবং তার দৈহিক বর্ণনা। আর তার সৃষ্টিগত চরিত্র বলতে বুঝানো হয়েছে যে সব আখলাক ও বৈশিষ্ট্য দিয়ে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন। পঞ্চমত: তার সীরাত, তার যুদ্ধসমুহ ও তার সংবাদগুলো। মুহাদ্দিসগণ এ গুলো সবই সুন্নাহের মূল কিতাবসমূহে এবং সীরাতে নববীর উৎসসমূহে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন।