শির্ক হলো, আল্লাহর বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে তিনি ছাড়া তার কোনো মাখলুককে আল্লাহর সমকক্ষ মনে করা। যেমন, ইবাদতে, আল্লাহর নাম ও সিফাতসমূহে অংশীদার করা। শির্ক দুই প্রকার: প্রথম: এমন শির্ক যা আল্লাহর সত্ত্বা, নাম, সিফাত ও কর্মসমূহের সাথে সম্পৃক্ত। এটি হলো রুবুবিয়্যাহর ভেতর শির্ক। দ্বিতীয়: আল্লাহর ইবাদত ও মুআমালায় শির্ক করা। এটি হলো, উলুহিয়্যাহ ও ইবাদতের ভেতর শির্ক।
তাকফীর হলো, কোনো মুসলিমকে কুফরের দোষে দোষী করা এবং তার দীন থেকে বের হয়ে যাওয়া। এটি বলা হয় যখন কোন ব্যক্তি ইসলাম ভঙ্গকারী কোন একটিতে লিপ্ত হয়। তাকফীর এটি একটি শরয়ী বিধান যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। যেমন, হালাল করা, হারাম করা, ওয়াজিব করা। যত প্রকার কথা বা কর্মকে কুফর বলে আখ্যায়িত করা হয় তা সবই বড় কুফর নয়। আর যতজন কুফরে পতিত হয়, তাদের সকলের উপর কুফরের হুকুম বর্তায় না। তবে যদি তার মধ্যে কুফুরের কারণ, শর্তসমূহ পাওয়া যায় এবং তাকে কাফির বলতে কোনো বাঁধা-নিষেধ না থাকে তখন সে কাফির।সুতরাং এখানে কর্মের উপর কুফরের হুকুম দেয়া ও আমলকারীর ওপর কুফরের হুকুম দেয়ার মধ্যে প্রার্থক্য আছে। কোন ব্যক্তিকে কুফরের দোষে দোষারোপ করার অর্থ হলো, তার মধ্যে কাফেরের অন্তরের আবরণ রয়েছে। কারো ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কুফরের হুকুম দেয়াতে মারাত্মক ক্ষতি ও মহা হুমকি রয়েছে।
যাদু হলো, তাবিজ ও মন্ত্র ও ঘিরা যা মানব দেহে ও আত্মায় প্রভাব ফেলে। ফলে সে অসুস্থ করে, হত্যা করে এবং স্বামী ও স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ ঘটায় আল্লাহর অনুমতিতে। এটি হারাম কবীরাহ গুনাহ। কখনো কখনো এটি কুফর পর্যন্ত পৌঁছে যায়। যাদু কয়েক ধরনের হতে পারে। যেমন ফিরানো ও মোড় ঘোরানো। আরও যেমন খেয়াল ও ধোকা ইত্যাদি। যাদুর প্রকৃতি হলো: প্রভাব বিস্তারে শয়তানকে ব্যবহার করা ও তার থেকে সাহায্য নেয়া। যাদুকরের জন্য তার যাদুর প্রয়োগ ততক্ষণ পর্যন্ত সম্ভব না যতক্ষণ না সে কিছু ইবাদত দ্বারা সে শয়তানের নৈকট্য লাভ না করে। কতক যাদু আছে ধারণা আবার কতক যাদু আছে বাস্তব। আর যে ব্যক্তি এ ধারণা করে যে, যাদু কেবলই ধারণ তার কোন বাস্তবতা নাই সে ভুল করল। আর যাদু উপকার বা ক্ষতি করাতে তার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নাই। তার প্রভাব আল্লাহর কাওনী ও কদরী অনুমতিতেই হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলাই সবকিছুর স্রষ্টা।
আউলিয়া: শব্দটি ওলী শব্দের বহুবচন। শরীআতের পরিভাষায় যার মধ্যে দুটি গুণ একত্র হয় তাকে ওলী বলে। আর তা হলো ঈমান ও তাকওয়া, যা ফরযসমূহ ও নফলসমূহ আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভকে অর্ন্তভুক্ত করে। সাথে সে আল্লাহর আদেশের ইলম রাখে এবং যা জানে তদুনুযায়ী আমল করে। যার আকীদা পরিস্কার এবং আমল সহীহ সে আল্লাহর ওলী। একজন মানুষের ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী তার বন্ধুত্ব আল্লাহর জন্য হয়ে থাকে। যেমন ওলী হলো সে আল্লাহ যার যাবতীয় বিষয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করল ও তার সংশোধনের জন্য তার প্রতি বিশেষ যত্ন নিল। কারণ, আল্লাহ সালেহীনদের দায়িত্ব গ্রহণ করে থাকেন। তিনি মুমিনদের মহাব্বাত করেন ও তাদের থেকে প্রতিহত করেন। আল্লাহর ওলীগণ দুই প্রকার: 1- অগ্রগামী নৈকট্যলাভকারী। 2- মধ্যপন্থাবলম্বনকারী ডানপন্থী। নৈকট্য লাভকারী অগ্রগামীগণ হলো, যারা ফরযের পর নফলসমূহ দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তারা ওয়াজিব, মুস্তাহাব সবই করেন এবং হারাম ও মাকরূহ থেকে বিরত থাকে। আর ডান পন্থী হলো, সেসব নেককার বান্দা যারা ফরয দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করেন। তারা আল্লাহ তাদের ওপর যা ওয়াজিব করেছেন তার ওপর আমল করেন এবং আল্লাহ যা নিষেধ করেছেন তা ছেড়ে দেন। তারা মানদুব বিষয়গুলোর ওপর আমল এবং বৈধ অনর্থক বিষয়গুলো ছেড়ে দিতে নিজেদের কষ্টের মধ্যে ফেলেন না। বান্দার ঈমান ও তাকওয়া অনুযায়ী বন্ধুত্ব ব্যবধান হয়ে থাকে। ফলে প্রত্যেক মুমিনেরই আল্লাহর মুহাব্বত, বন্ধুত্ব ও নৈকট্যের অংশ রয়েছে। কিন্তু এ অংশটুকু দৈহিক ও অন্তরের নেক আমল যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় তা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। কারণ, যে নিজের ওপর যুলুম করে সে হলো গুনাহগার মুমিন। তার ঈমান ও আমলে সালেহ অনুযায়ী তার রয়েছে আল্লাহর বন্ধুত্ব। আল্লাহর অলীগণ নিষ্পাপ নন এবং তারা গায়েব জানেন না। সৃষ্টি ও রিযিক দানে তাদের কোনো ক্ষমতা নাই। তারা কখনোই মানুষকে তাদের সম্মান করা বা কোনো ধন সম্পদ তাদের জন্য খরচ করার প্রতি আহ্বান করে না। আর যে ব্যক্তি এ সব করে সে আল্লাহর ওলী নন। বরং সে মিথ্যুক, মিথ্যা রচনাকারী এবং শয়তানের বন্ধু। আর বেলায়েত অধ্যায়ে এটি ভুল বুঝ ও প্রচারিত গলদ। আরও কতিপয় ভুল হলো: 1- এ ছাড়াও আরও ভুল হলো, আল্লাহর বন্ধু নবী ও নেককারদের বিষয়ে বাড়াবাড়ি করা, যেমন, আল্লাহর কোন বৈশিষ্ট্যকে নবীদের জন্য সাব্যস্ত করা। যেমন, নেককার লোকদের বিষয়ে বাড়াবাড়ি, তাদের কবরসমূহের ওপর নির্মান করা, তাদের নিষ্পাপ হওয়া দাবী করা ইত্যাদি। 2- অনেক মানুষের বিশ্বাস করা যে, একজন বান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত কোন অলৌকিক কর্ম সম্পাদন না করবে ততক্ষণ সে ওলী হতে পারবে না। 3- ওলী হওয়ার দ্বারা কেউ নিষিদ্ধ কর্ম করা ও ওয়াজিবসমূহ ছেড়ে দেওয়ার মর্যদায় উপনীত হয়। এবং এ বিশ্বাস করা যে, ওলীগণ এমন এক পর্যায় পৌঁছে যায় যে পর্যায়ে পৌছলে তাদের থেকে মুকাল্লাফ হওয়ার বিষয়টি আর থাকে না। এটি হলো সু স্পষ্ট গোমরাহী। ওলী হওয়া কখনোই নিষিদ্ধ কর্ম করা এবং ওয়াজিব ছেড়ে দেয়া পর্যন্ত পৌছে দেয় না। 4- কতক মানুষ এ ধারণ পোষণ করে যে, ওলী হওয়া কেবল কতক মানুষের বৈশিষ্ট। কিন্তু বিশুদ্ধ হলো, ওলী হওয়া একটি দীনি মর্যদা। এটি প্রত্যেক মুত্তাকী মুমিনের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। এটি কোন ব্যক্তি, স্থান ও কালের সাথে খাস নয়। 5- ওলীদের ওপর কেউ কেউ আল্লাহর সাথী, আল্লাহর মানুষ প্রয়োগ করে। এ ধরণের নাম করণের ওপর তাদের কাছে কোন প্রমাণ নেই। সূফীগণ ওলীর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের আকীদা পোষণ করে থাকেন। তাদের কেউ ওলীকে নবীর ওপর প্রাধান্য দেয়। আবার তাদের কেউ ওলীকে সব সিফাতে আল্লাহর বরাবর মনে করে। সে সৃষ্টি করে, রিযিক দেয়, জীবন দেয়, মৃত্যু দেয় এবং জগতকে সে পরিচালনা করে। তাদের নিকট বিলায়াতের বিভিন্ন প্রকার রয়েছে। যেমন, গাওস, আকতাব, আবদাল, নুজাবা। হিরা গুহায় তারা তাদের দপ্তরে প্রত্যেক রাত একত্র হয় এবং তারা তাকদীরের বিষয়ে দেখা শোনা করে। তাদের কেউ কেউ আছে যারা এ ধরনের বিশ্বাস করে না তবে তারা তাদের ও তাদের রবের মাঝে মাধ্যম সাব্যস্থ করে। চাই তা তাদের জীবদ্দশায় হোক বা মৃত্যুর পর হোক। আহলে সুন্নাত ওয়ালা জামাত ইসমত (নিষ্পাপ হওয়া) নবী ছাড়া আর কারো জন্য বিশ্বাস করে না। আর অপরদিকে সূফীগণ ওলী হওয়ার জন্য ইসমতকে শর্ত হিসেবে দেখেন। আবার তাদের কেউ আছে যদি কেউ পদস্খলনে পতিত হয় অথবা ভুলে পতিত হয় তখন তার থেকে বিলায়াতকে সম্পূর্ন না করে দেয়।
সাম্প্রদায়িকতা : অন্যায়ের ওপর গোত্র বা বংশের সাহায্যের প্রতি আহ্বান করা অথবা যার বিষয়টি তোমার নিকট গুরুত্বপূর্ণ তাকে হক বা বাতিলের ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এর কতক ধরণ হলো, এক লোক অপর লোককে এ জন্য ঘৃণা করে যে, সে অমুকের বা অমুক বংশের সন্তান, যদিও তা শত্রুতার পর্যায়ে না পৌঁছে। এটি শরীআতকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। কারণ, এটি হলো অন্যায় ও অপরাধের ওপর সাহায্য করা। যেমনিভাবে এটি ইসলামী আকীদার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মূলনীতি পরিপন্থী। অতএব যে ব্যক্তি পক্ষপাতমূলক কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বন করল ও তাদের হয়ে মারামারি করল, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা বা তার দীনের প্রসারের জন্যে নয়, সে অন্যায়ে ওপর হবে এবং এ কারণে সে গুনাহগার হবে। এমনকি যদিও যার জন্য ক্ষুব্ধ হলো সে হকের ওপর থাকে। সব ধরণের এবং সব পদ্ধতির সাম্প্রদায়িকতা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন গোত্রের জন্য, জাতির জন্য, ভূমির জন্য এবং বর্ণ ইত্যাদির জন্য সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকের মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্য বলে গণ্য করা হয়েছে। যেমনিভাবে ইসলাম বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করাকে বাতিল করেছে। আর ইসলাম শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড করেছে তাকওয়া ও আমলে সালেহকে। ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন সাম্প্রদায়িকতা সাক্ষ্যের প্রতিবন্ধক। কারণ, সাম্প্রদায়িকতায় প্রসিদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে তার কওমের স্বার্থে বা অন্য কওমের ক্ষতি করার জন্য সাক্ষ্যকে বিকৃত করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আদ-দালাল (الضلال) গোমরাহী অর্থ হলো, সঠিক পথের ওপর অবিচল না থাকা। চাই তা কথার মধ্যে হোক বা কর্মের মধ্যে হোক বা বিশ্বাসের মধ্যে হোক। দালাল (الضلال) - গোমরাহী দুই প্রকার: 1- ইলম ও বিশ্বাসে গোমরাহী। যেমন কাফের. মুর্তি পুজারী ও আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারকারীদের গোমরাহ হওয়া । 2-আমল ও আহকামের ক্ষেত্রে গোমরাহ হওয়া। যেমন, গোনাহগারদের গোমরাহ হওয়া। আর গোমরাহ হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহকে ছেড়ে দেয়া। যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া, বিদআত করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ করা, অজ্ঞতা ও সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি।
কুফর হয়ত শুরু থেকে থাকবে, যেমন ইতোপূর্বে যে ইসলাম গ্রহণ করেনি তার কুফর অথবা কুফর পরবর্তীতে আসবে, যেমন যে আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে তার কুফর। আর উভয়টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। প্রথম: বড় কুফর। আর তা হলো এমনসব কথা বা কর্ম বা বিশ্বাস যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। এটি কখনো অন্তর দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়, অথবা অন্তরের আমল হয়, যেমন আল্লাহ তাআলা বা তার আয়াত বা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা। আবার কখনো তা প্রকাশ্য কথা দ্বারা হয়, যেমন আল্লাহকে গাল দেয়া। আবার কখনো প্রকাশ্য আমল দ্বারা হয়, যেমন মুর্তিকে সেজদা করা, গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করা। আর বড় কুফর বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, তন্মধ্যে কতক: 1- অস্বীকার ও মিথ্যারোপ করার কুফরী: এ প্রকারের কুফরী কখনো অন্তরের মিথ্যারোপ দ্বারা হয়, আর কখনো মুখ অথবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়। আর এটি হয় অন্তরে জানা ও ইলম থাকা সত্বেও হককে গোপন করা ও প্রকাশ্যে তার আনুগত্য না করার দ্বারা। যেমন, ইয়াহুদীদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করা। 2- অহংকারের কুফর: অর্থাৎ সত্যকে না শিখে ও তার ওপর আমল না করে ছেড়ে দেওয়া। চাই তা কথার মাধ্যমে হোক বা আমল করার মাধ্যমে হোক বা বিশ্বাসের মাধ্যমে হোক। যেমন, ইবলিশের কুফর। 3- নিফাকের কুফর: আর তা হলো, অন্তরে বিশ্বাস ও আমল না করে প্রকাশ্যে অনুগত করা। 4-সন্দেহ ও সংশয়ের কুফর: আর তা হলো, হকের অনুসরণে দ্বিধা-সংশয়ে থাকা বা তা হক হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হীনতায় থাকা। কারণ, ঈমানের দাবি হচ্ছে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়: ছোট কুফর, আর তা হলো এমন গুনাহ ও অপরাধ যাকে শরীআত কুফর বলে নাম করণ করেছেন। তা কোন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করবে না এবং সে বড় কুফর পর্যন্ত পৌঁছবে না। নেয়ামতের অস্বীকার করাও এ কুফরের অর্ন্তভুক্ত। একে কুফরের থেকে ছোট কুফর বলে। যেমন, একজন মুসলিমের তার অপর মুসলিমের সঙ্গে যুদ্ধ করা। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদাহ হলো, ঈমান বাড়ে এবং কমে। ঈমাদারগণ তাদের ইলম ও আমল অনুযায়ী একে অপরের ওপর প্রাধান্য লাভ করে। ফলে তাদের কতক কতক থেকে ঈমানের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ। কুরআন ও হাদীস এবং সালফে সালেহীনের বাণী দ্বারা প্রমাণিত যে, ঈমানের রয়েছে একাধিক স্তর ও অনেক শাখা প্রশাখা এবং ঈমান বৃদ্ধি পায় ও হ্রাস পায়। বিশ্বাস শক্তিশালী ও অধিক হওয়ার কারণে এবং আমল ও কথা সুন্দর ও অধিক হওয়ার কারণে ঈমান বাড়ে, যেমন অন্তরের আমল, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের আমল ও মুখের কথা, যেমন আনুগত্য ও সকল নৈকট্যপূর্ণ আমল আঞ্জাম দেয়া। আর এর বিপরীতের দ্বারা ঈমান হ্রাস পায়। যেমন গুনাহ করা ও নিষিদ্ধ কর্মসমূহ করার কারণে। অতএব যখন কোন বান্দা স্বীয় রবের ইবাদতে অগ্রসর হয় এবং তা সংরক্ষণ করে তখন তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। আর যখন কোন বান্দা তার যিকির থেকে বিমুখ হয় এবং কোন প্রকার গুনাহের কাজে লিপ্ত হয় তখন সে অনুযায়ী তার ঈমান হ্রাস পায়। ঈমান বৃদ্ধি ও হ্রাস অনেক কারণে হয়ে থাকে। এটি সামগ্রীকভাবে দুটি কারণের দিকে ফিরে। ঈমানের বৃদ্ধি পাওয়া রবের নির্দেশের কারণে। কারণ, মুসলিমগণ প্রথম যুগে নির্দিষ্ট পরিমাণ ঈমানের জন্য আদিষ্ট ছিল। তারপর তারা অন্যটির জন্য আদিষ্ট হন। আর ঈমানের বৃদ্ধি পাওয়া বান্দার কর্মের কারণে হয়ে থাকে। সুতরাং যে ওয়াজিবগুলো আদায় করল তার ঈমান যে তাতে ত্রুটি করল তার ঈমানের মতো নয়। আর যে সব নস ঈমান বৃদ্ধিকে প্রমাণ করে সেটি বিপরীত দিকে ঈমান হ্রাস পাওয়াকেও প্রমাণ করে। অনুরূপভাবে তার বিপরীত। কারণ, বৃদ্ধি ও হ্রাস একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও যার ওপর বৃদ্ধি পাওয়া প্রয়োগ করা হয় তার ওপর হ্রাস পাওয়াও প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ মাখলুককে ইসলাম ও তাওহীদের ওপর সৃষ্টি করেছেন। ফলে প্রতিটি মানুষের স্বভাবের দাবি হলো ইসলাম কবুল করা. ইসলামকে জানা ও মহব্বত করা। ফিতরাত বা স্বভাব স্রষ্টাকে স্বীকার করতে, মুহাব্বত করতে এবং কেবল তার জন্য যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করতে বাধ্য করে। স্বভাবের দাবি ও চাহিদসমূহ স্বভাবের পূর্ণতা অনুযায়ী একটির পর একটি লাভ হয় যখন তা বাধা হতে নিরাপদ হয়। আর যখন ফিতরাত নিরাপদ না হয়, তা শয়তান, প্রবৃত্তি ও বিভিন্ন গোমরাহীর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে বিকৃত হয়ে পড়ে। ফিতরাত সাধারণত আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত শরীআত দ্বারা পরিপূর্ণ। কারণ, ফিতরাত বিষয়গুলো সংক্ষেপে জানে আর শরীআত তার ব্যাখ্যা প্রদান করে। সুতরাং শরীআতের বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রে স্বভাব বা ফিতরাত স্বয়ং সম্পন্ন নয়। এ কারণে আল্লাহ ফিতরাতকে পরিপূর্ণ করার জন্যে তাদের নিকট রাসূলগণ প্রেরণ করেন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর এ উম্মাতের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলেন, চার খলিফা যাদের অনুসরণ করা এবং তাদের আদর্শ মজবুত করে ধরার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তারা হলেন, আবূ বকর সিদ্দীক, আবূ হাফস উমার ইবনুল খাত্তাব, যুন নুরাইন উসমান ইবন আফফান ও আবূল হাসান আলী ইবনে আবূ তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুম, যারা ইসলামের শুরুতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর দীনকে ঈলম, আমল ও দাওয়াত সর্বদিক থেকে কায়েম করার লক্ষ্যে এবং মুসলিমদের কল্যাণ ও দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য খিলাফত ও ইমামতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। তাদের খিলাফত ত্রিশ বছর স্থায়ী হয়। দুই বছর তিন মাস হলো আবূ বকরের খিলাফতের সময়। আর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত সাড়ে দশ বছর, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত বারো বছর এবং আলী রাদিয়ালল্লাহু আনহুর খিলাফত চার বছর নয় মাস। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হলো তাদের মর্যাদার ধারাবাহিকতা তাদের খিলাফতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী।
প্রবৃত্তির অনুসরণ করা খারাপ ও গোমরাহীর মূল কারণ গুলোর একটি অন্যতম কারণ। আর তা হলো শরীআত বিরোধী কার্যকলাপের প্রতি মানুষের আত্মার ঝুঁকে যাওয়া। আর সেটি দুই প্রকার: 1- সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। এটি হলো প্রবৃত্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকার। প্রবৃত্তির অনুসরণ একজন মানুষকে বিদআত বা কুফরে লিপ্ত হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। এ কারণেই বিদআতীকে প্রবৃত্তির অনুসারী বলা হয়ে থাকে। কারণ তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল এবং কিতাব ও সুন্নাহ থেকে বিমুখ রইল। 2- রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। যেমন বৈধ বস্তু অতিক্রম করে হারামে লিপ্ত হওয়া। যেমন, সুদ খাওয়া, ব্যভিচার করা। এটি একজন মানুষকে ফাসেকীর মধ্যে লিপ্ত করে। সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা অপেক্ষা অধিক মারাত্মক। আর ইসলামী শরীআতের আগমন হলো মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করে শরীআতের অনুসরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
ছোট শির্ক হলো সে সব গুনাহ যেগুলো শরীআত প্রণেতা শির্ক বলে নামকরণ করেছেন, তবে তার সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদত- ইচ্ছা, কথা ও কর্ম করার স্তরে পৌঁছেনি। অথবা প্রত্যেক মৌখিক আমল বা কর্ম যার ওপর শরীআত শির্ক প্রয়োগ করেছেন; কিন্তু তা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। যেমন, গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা, সামান্য রিয়া ইত্যাদি। ছোট শির্ক দুই প্রকার: 1- প্রকাশ্য শির্ক: আর এটি হলো যে শির্ক মুখে ও আমলে প্রকাশ পায়। সুতরাং মৌখিক শির্ক হলো, গাইরুল্লাহর নামে সপথ করা এবং এ কথা বলা যে, আল্লাহ যা চেয়েছে এবং তুমি যা চেয়েছো। কখনো কখনো এটি বড় শির্ক পর্যন্ত পৌছে যায় কথকের নিয়ত ও ইচ্ছার কারণে। কারণ, গাইরুল্রাহর তাযীমের ইচ্ছা করা আল্লাহকে তাযীম করার মতো। ফলে সে শির্কে আকবার করল। আর কাজের শির্ক হলো, মুসীবত দূর করা বা তা তুলে দেয়ার জন্য তাবীয পরিধান করা তাগা লাগানো এবং বদ নজর থেকে বাঁচার জন্য তাবীয ঝুলানো। তবে যদি কেউ এ বিশ্বাস করে যে, এগুলো নিজেই মুসীবত দূর করতে সক্ষম তাহলে এটি শির্কে আকবর। 2- গোপন শির্ক। এটি হলো নিয়ত, ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে শির্ক। যেমন, লোকিকতা ও সুখ্যাতি। যেমন, যেসব আমল দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা হয় এমন আমল যেমন সালাত বা তিলাওয়াত খুব সুন্দর করে করল, যাতে সে প্রসংশিত হয় এবং তাকে মানুষ ভালো আখ্যায়িত করে।
ইসলাম হলো সত্য দীন। এটি ছাড়া অন্য কোনো দীনকে আল্লাহ কারো থেকে কবুল করবেন না। এটি হলো বিশেষ অর্থ। ইসলাম তার সামগ্রিক অর্থে দুই ভাগে বিভক্ত হয়: প্রথম: ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় আল্লাহর কাওনী ও কাদরী বিষেয়র আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। এ ধরনের মেনে নেওয়াতে কারো কোনো স্বাধীনতা নাই এবং তাতে কোনো সাওয়াবও নাই। দুই: আল্লাহর শরীআতের আনুগত্য করা ও মেনে নেওয়া। এটি হলো সে ইসলাম যার ওপর মানুষকে প্রসংশা করা হয় এবং সাওয়াব দেওয়া হয়ে থাকে। এটিকেও আম ও খাস দুই ভাগে ভাগ করা হয়: 1- আম-ব্যাপক: এটি হলো সে দীন যা নিয়ে নূহ আলাইহিস সালাম থেকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত সব নবীর আগমন ঘটেছে। আর তা হলো, এক আল্লাহর ইবাদত করা, তার কোনো শরীক নেই এবং তার শরীআতকে প্রতিষ্ঠা করা। 2- খাস বা বিশেষ: আর তা হলো, সে শরীআত যা নিয়ে আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসেছেন। তার রয়েছে দুটি ব্যবহার: এক: প্রকাশ্য কথা ও কর্ম। আর তা হলো পাঁচ রুকন ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়। দুই: এটি বাহ্যিক আমাল ও বাতেনী বিশ্বাসকে সামিল করে। যেমন, ঈমানের ছয়টি রুকন ও তার আনুসাঙ্গিক বিষয়।
বাড়াবাড়ি করা সমাজে একটি মারাত্মক সমস্যা। আর তা হলো বৈধ সীমা অতিক্রম করা এবং দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা। এটি দুই ভাগে ভাগ হয়: 1- বিশ্বাসগত বাড়াবাড়ি। যেমন, তাকফীরের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি। এ থেকে আছে খারেজীদের বাড়াবাড়ি। যারা সতর্কতার আয়াত ও হাদীসসমূহ বুঝার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে তাদের বিরোধী মুসলিমদের কাফির বলে। এবং যেমন সালেহীন ও নবীদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা, তাদের মাধ্যমে সাহায্য চেয়ে, তাদেরকে আহ্বান করে, তাদের সম্মান ও মর্যাদাকে বুলন্দ করে এবং তাদের ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করে যা শরীআতের সীমানা থেকে বের করে দেয়। 2- আমলী বাড়াবাড়ি। আর তা হলো, ইবাদাতে বৃদ্ধি করা এবং দীন ও ইবাদাতে বাড়াবাড়ি করা। যেমন কতক ইবাদতকারীর খৃষ্টানদের আবিষ্কৃত বৈরাগ্যতা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাদের ইবাদাতে ও কর্মগত জীবন থেকে বের হওয়ার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করা। যেমন, যে শুধু সিয়াম রাখে, কিন্তু সিয়াম ভঙ্গ করে না এবং যে নারীদের বিয়ে কর না। বাড়াবাড়ি আরও দুই ভাগে ভাগ হয়: এক প্রকার বাড়াবাড়ি হলো যেটি একজন মানুষকে দীন থেকে খারিজ করে দেয়। যেমন মুর্তি পুজা করা, নেককার লোকদের পুজা করা অথবা কোনো মাখলুকের জন্য গাইবী ইলম সাব্যস্ত করা। অপর প্রকার বাড়াবাড়ি হলো, যা একজন মানুষকে মিল্লাত থেকে বের করে দেয় না। যেমন, সালাত ও হজের কতক ওয়াজিবে বাড়াবাড়ি করা। বাড়াবাড়ি করার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে দীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, আলেমগণ থেকে বিমুখতা, পক্ষাপাতিত্ব করা, বিদআতে লিপ্ত হওয়া ইত্যাদি। দীনের সব মাসআলার ক্ষেত্রেই বিশ্বাসগত হোক বা আমলী বাড়াবাড়ি চলে।
ঈমান হলো, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে সব সংবাদ দিয়েছেন তার প্রতি অকাট্য বিশ্বাস করা এবং মুখে স্বীকার করা যা অন্তরের আমলকে আবশ্যক করে তারপর তার অনুসারী হয় অঙ্গসমূহের আমল। অথবা বলা যায় যে, তা হলো মুখে উচ্চারণ করা, অন্তরে বিশ্বাস করা, রুকনসমূহের ওপর আমল করা। আর কথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তরের কথা। আর তা হলো, সহীহ সত্য বিশ্বাস যা আল্লাহর কিতাব ও তার রাসূলের সুন্নাত থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। আর মুখের কথা হলো, দুই শাহাদাতকে উচ্চারণ করা। কারণ, নসসমূহে যখন কথা ব্যবহার করা হয়, তখন তা অন্তরের কথা বিশ্বাসকে শামিল করে আর মুখের কথা উচ্চারণকে শামিল করে। আর আমল দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, অন্তর, অঙ্গসমূহ ও মুখের আমল। অন্তরের আমল হলো, একজন বান্দার অন্তর দিয়ে ঈমানের আমলসমূহ পালন করা। যেমন, লজ্জা, তাওয়াক্কুল, আশা, ভয়, ইনাবাত, মুহাব্বত ইত্যাদি। আল্লাহ মুখের আমল হলো, তাসবীহ, তাকবীর, কুরআন তিলাওয়াত, ভালো কাজের আদেশ অন্যায় হতে নিষেধ করা ইত্যাদি। আর অঙ্গসমূহের আমল হলো, একজন বান্দার সালাত, সাওম, হজ, জিহাদ ইত্যাদি ইবাদত পালন করা।
দীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কার করা চাই তা বিশ্বাসসমূহে হোক বা আমলসমূহে হোক অত্যন্ত ক্ষতিকর বিষয়। কারণ, নতুন কিছু আবিষ্কার করার অর্থ হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যে পথের ওপর চলেছেন তার বাইরে এমন পথ রয়েছে যা আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যায়। বিদআতের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হলো: 1- এটি দীনের মধ্যে তৈরি ও আবিষ্কার করা। ফলে তার থেকে দুনিয়াবী বিষয়ে যা আবিষ্কার করা হয়েছে তা বের হয়ে যায়, যেমন সকল শিল্প। 2- বিদআত এমন দলীল বা নিয়ম বা শরয়ী মুল থেকে নির্গত হয় না যা তার ওপর প্রমাণ হয়। 3- দীনের মধ্যে বিদআত কখনো হ্রাস করার দ্বারা হয়ে থাকে যেমনিভাবে বৃদ্ধি করার দ্বারা হয়। তবে শর্ত হলো হ্রাস বা বৃদ্ধির উদ্দিপক হতে হবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কাজেই যে অলসতাবশত ইবাদত ছেড়ে দিল তার কর্মকে বিদআত বলা যাবে না। আর বিদআত দুই ভাগে বিভক্ত হয়: 1- বিশ্বাসের ক্ষেত্রে বিদআত (নতুন সৃষ্টি)। যেমন, মুতাযিলা, রাফেযী ও জাহমিয়্যা ইত্যাদি গোমরাহ দলগুলোর কথাবার্তা। 2- ইবাদাতের ক্ষেত্রে বিদআত। যেমন এমন কোনো ইবাদত দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা যার অনুমোদন তিনি দেননি। এটি কয়েক প্রকার: 1- মূল ইবাদাতে বিদআত। আর এটিকে হাকিকি বিদআত বলে নাম রাখা হয়। যেমন দীনের মধ্যে এমন কোনো ইবাদত আবিষ্কার করা যার কোনো ভিত্তি নেই। যেমন মীলাদের অনুষ্ঠানাদি। 2- মূল ইবাদতের সাথে বাড়ানো। এটিকে বিদআতে ইযাফিয়্যাহ বলে। এটি কখনো বৈধ ইবাদতের ওপর বৃদ্ধি করা দ্বারা হয়ে থাকে। যেমন, যুহরের সালাতে পঞ্চম রাকাত বৃদ্ধি করা। আর কিছু বিদআত আছে যা ইবাদত আদায়ের পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। যেমন কোনো ইবাদত এমন পদ্ধতিতে আদায় করল যার অনুমোদন শরীআত দেয়নি। যেমন, শরয়ী যিকিরসমূহ একসাথে গানের তালে তালে আদায় করা। কতক বিদআত আছে যা বৈধ ইবাদতের জন্যে সময় নির্দিষ্ট করার ফলে হয়, যা শরীআত নির্ধারণ করেনি। যেমন, মধ্য শাবানের রাতে কিয়াম করা ও দিনে সাওম পালন করা। কারণ হলো মূল সাওম পালন ও কিয়াম করা বৈধ, কিন্তু এটিকে কোনো সময়ের সাথে খাস করতে হলে বিশুদ্ধ দলীল প্রয়োজন। আবার কতক বিদআত আছে যা বৈধ ইবাদতকে কোন স্থানের সাথে খাস করার কারণে হয়ে থাকে। যেমন, কবরকে দুআ বা ইবাদতের জন্য খাস করা যা আল্লাহ বৈধ করেননি।
বিদআত হলো দীনের মধ্যে এমন কিছু আবিষ্কার করা যা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীগণ যে আকীদাহ পোষণ ও যে আমল করতেন তার পরিপন্থী। অথবা বলা হবে: এটি হলো দীনের মধ্যে এমন নব আবিষ্কৃত পথ যা শরয়ী পথের পরিপন্থী। তার ওপর চলা দ্বারা সাধারণত আল্লাহর ইবাদতে অতিরঞ্জন করা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে। আর তা হলো দুই প্রকার: 1- বিশ্বাসগত বিদআত: আর তা হলো আল্লাহ তাআলা যে সত্যসহ তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন ও তাঁর কিতাব নাযিল করেছেন তার পরিপন্থী বিশ্বাস করা। যেমন, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলা, রাফেযী ও অন্যান্য গোমরাহ ফিরকাসমূহের কতাবার্তা। 2- ইবাদত সংশ্লিষ্ট বিদআত: আর তা হলো এমন অবস্থা ও দীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট আমল দ্বারা আল্লাহর ইবাদত করা যার অনুমতি আল্লাহ দেননি এবং তিনি এর কিছুই কবুল করবেন না। এটি কয়েক প্রকার: 1- মূল ইবাদতে বিদআত। একে হাকীকী বিদআত বলে। যেমন এমন কোনো ইবাদত আবিষ্কার করা দীনের মধ্যে যার কোনো ভিত্তি নাই। যেমন, মীলাদ অনুষ্ঠানসমূহ। 2- মূল ইবাদতে যুক্ত বিদআত। এটি বিদআতে ইযাফী বলা হয়ে থাকে। এটি কখনো বৈধ ইবাদতের ওপর বৃদ্ধি করার দ্বারা হয়। যেমন কেউ যুহরের সালাতে পঞ্চম রাকাত বৃদ্ধি করল। আবার কখনো ইবাদত আদায়ের নিয়মের মধ্যে হয়, যেমন, অনুমোদনহীন পদ্ধতিতে ইবাদত আদায় করা। যেমন, বৈধ আযকারকে একত্রে গানের আওয়াযে আদায় করা। আবার তা কখনো বৈধ ইবাদতের জন্যে সময়কে খাস করা দ্বারা হয় যা শরীয়ত খাস করেনি। যেমন, অর্ধ শাবানের রাত ও দিনকে সাওম ও কিয়াম দ্বারা খাস করা। কেননা মূল সাওম ও কিয়াম বৈধ, কিন্তু তাকে কোনো সময়ের সাথে খাস করতে হলো অবশ্যই সহীহ দলীল থাকতে হবে।
রিয়া হলো, ভালো কাজ অন্যকে দেখানো বা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদতকে প্রকাশ করা যাতে তারা তার প্রসংশা করে। অথবা বলা যায়, কোনো আমলে গাইরুল্লাহর প্রতি লক্ষ্য রেখে ইখলাস ছেড়ে দেয়া। কতক আহলে ইলম এ বলে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রিয়া এমন কর্ম খালেক থেকে অমনোযোগী ও অন্ধ হয়ে যার দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে মাখলুকে দেখানো। এটি গোপন শির্ক এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আমলকে ধ্বংসকারী। এ বিষয়ে কঠোর হুমকি এসেছে। একজন মুসলিমের জন্য উচিত হলো যাবতীয় আমল কেবল আল্লাহর জন্য করতে সচেষ্ট হবে।
মুহাব্বাতের শির্ক: আর তা হলো আল্লাহর সাথে গাইরুল্লাহকে আল্লাহর মুহাব্বাতের মতো বা তার চেয়েও অধিক মুহাব্বাত করা। আর তা হলো উবুদিয়্যাতের মুহাব্বাত যা একজনকে বিনয়, তাজীম, পরিপূর্ণ আনুগত্য করা এবং মাহবুবকে অন্যের ওপর প্রাধান্য দেয়াকে বাধ্য করে। এ মুহাব্বাত কেবল আল্লাহর জন্য খাস। এর মধ্যে অন্য কাউকে শরীক করা বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি কোনো কিছুকে আল্লাহর সাথে মুহাব্বাত করল আল্লাহর জন্য বা আল্লাহতে করল না তবে সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে শরীক সাব্যস্ত করল। আল্লাহ তাআলা বলেন, কতক মানুষ যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে একাধিক শরিক সাব্যস্ত করে তারা আল্লাহকে মুহাব্বাত করার মতো তাদেরকে মহব্বাত করেন। মুহাব্বাত মুলত তিন ভাগে বিভক্ত: 1- ওয়াজিব মুহব্বাত: আর তা হলো আল্লাহর মুহাব্বাত ও তার রাসূলের মুহাব্বাত এবং আল্লাহ যে সব ইবাদাত ইত্যাদিকে মুহাব্বাত করেন তার মুহাব্বাত। 2- স্বভাবগত মুহাব্বাত। এটি আবার তিন প্রকার: ক-রহমত ও দয়ার মুহাব্বাত। যেমন, পিতার মুহাব্বত সন্তানের প্রতি। খ-সত্বাগত মুহাব্বাত। যেমন স্ত্রীর প্রতি স্বামীর মুহাব্বাত। গ- উঠা বসা ও মেলা মেশার মুহাব্বাত। যেমন, মুশরিকদেরকে কোনো পেশায় বা একসঙ্গে চলাফেরা করার কারণে বা অন্য কারণে মুহাব্বাত করা। এ তিন প্রকারের মুহাব্বাত এমন মুহাব্বাত যা মাখলুকের জন্য পরস্পরের প্রতি গ্রহণযোগ্য। এ ধরনের মুহাব্বাত তাদের মধ্যে পাওয়া যাওয়া আল্লাহর মুহাব্বাতে শির্ক বলে পরিগণিত হবে না। তবে যদি এ মুহাব্বাতে সীম লঙ্ঘন হয় এবং আল্লাহর মুহাব্বাতে প্রাধান্য পায় বা তা আল্লাহর আনুগত্য থেকে ফিরিয়ে রাখার কারণ হয়। কারণ, সেটি তখন হবে নিষিদ্ধ মুহাব্বাত। 3- নিষিদ্ধ মুহাব্বাত। আর তা হলো এমন মুহাব্বাত যা শরয়ীভাবে তার জন্যে বৈধ নয়। যেমন, অপরিচিত নারী ও পুরুষদের মুহাব্বাত করা এবং বাদ্যযন্ত্র ও নেশা ইত্যাদিকে মুহাব্বাত করা।
আনুগত্যে শির্ক করা: আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করার ব্যাপারে এবং আল্লাহর যা হালাল করেছেন তা হারাম করার ব্যাপারে পাদ্রী, পীর বা আলেম ও নেতাদের আনুগত্য করা। আর তার ধরণ হলো, কোন মাখলুককে এমনভাবে গ্রহণ করা যেন সে তার আদেশ ও নিষেধে আনুগত্যের অধিকারী রব। সুতরাং আল্লাহ যা হারাম করেছেন তা হালাল করা বিষয়ে বা আল্লাহ যা হালাল করেছেন তা হারাম করা বিষয়ে যে ব্যক্তি কোন মাখলুকের আনুগত্য করল যেমন তাদের হালাল ও হারাম করার সুযোগ করে দিল এবং দীনের পরিপন্থী হওয়া সত্বেও জেনে শুনে নিজের জন্য ও অন্যদের জন্য তার আনুগত্য করা পথকে সুগন করল সে আল্লাহকে বাদ দিয়ে একাধিক রব গ্রহণ করল। আর আল্লাহর সাথে বড় শিরক করল। শরীআতের বিকৃতি ও আল্লাহর আহকামের পরিবর্তন করা বিষয়ে তাদের আনুগত্য করাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহকে বাদ দিয়ে রুহবান ও আহবারদের রব হিসেবে গ্রহণ করা দ্বারা ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে তারা তাদের নিজেদেরকে শরীআত প্রণয়নের ক্ষেত্রে আল্লাহর অংশিদার সাব্যস্থ করে। সুতরাং এ বিষয়ে যারা তাদের আনুগত্য করবে তারা শরীআত প্রণয়নে, হারাম ও হালাল নির্ধারণে তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত করলো। এটি বড় শির্ক। এ ধরনের আরও শির্ক হলো, শরীআতের পরিপন্থী আইন প্রণয়নে—হারামকে হালাল করার ক্ষেত্রে শাসক ও নেতাদের আনুগত্য করা। যেমন, সুদ., যিনা, মদপান, উত্তরাধিকারী সম্পদে নারী ও পুরুষদের সমান করা বা হালালকে হারাম করা যেমন, একাধিক বিবাহকে নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি আরও যে সব বানানো কানুন দ্বারা আল্লাহর বিধানকে পরিবর্তন করে।
গুনাহের বিভিন্ন স্তর ও শ্রেণি রয়েছে। তন্মধ্যে কিছু গুনাহ গুনাহকারীকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আর তা হলো শির্ক ও আল্লাহর সাথে কুফরী করা। আর কতক আছে যা গুনাহকারীকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় না। কিন্তু তার ঈমান ও ইসলামকে হ্রাস করে দেয়। এটি দুইভাগে বিভক্ত: 1- কবীরাহ গুনাহ। আলেমগণ এর সংজ্ঞায় একাধিক মত দিয়েছেন। কেউ কেউ বলেন, তা হলো এমন সব গুনাহ যে গুলোর বর্ণনাকে আল্লাহ বা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জাহান্নাম বা ক্রোধ বা অভিশাপ বা আযাব দিয়ে শেষ করেছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তা হলো যে সব গুনাহের ওপর দুনিয়াতে আল্লাহ শাস্তি বা আখিরাতের আযাবের হুমকি দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ বলেন, তা হলো যে সব গুনাহে বান্দা তাদের নিজেদের মধ্যে জুলুম করে। কেউ কেউ বলেন, তা হলো এমন সব গুনাহ যা করতে মানুষ ভয় অনুধাবন করে না এবং লজ্জা অনুভব করে না । বরং তাকে তুচ্ছ মনে করে থাকে এবং সাহস পদর্শন করে করে থাকে। আর হদ বা শাস্তি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো শরীআত নির্ধারিত শাস্তি। যেমন, চুরি ও ব্যভিচারের শাস্তি। কারণ, চুরি করার শাস্তি হলো হাত কাটা। আর হুমকি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ধমক দেওয়া, জাহান্নামের ভয় দেখানো বা ক্রোধের বা আল্লাহর রহমাত থেকে দূরে সরানো ইত্যাদি। যেমন, ছিনতাই করা বাপ ছাড়া অন্যের প্রতি বংশের দাবি করা। 2- সগীরা গুনাহ: যে সব গুনাহরে ওপর কোন শাস্তি বা ধমক আসেনি। তবে বার বার করা দ্বারা তা কখনো কখনো কবীরাহ গুনাহে পরিণত হয়। যেমন কোন অপরিচিতা নারীর দিক বার বার তাকানো।