কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এটি জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান বা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। আর এটি হলো সে সব স্থান যেখানে মৃত ব্যক্তির দেহকে দাফন করা হয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মৃতের লাশকে ঢেকে দেওয়া, তার সম্মান অক্ষুন্ন রাখা যাতে তার দুর্গন্ধ দ্বারা অন্যরা কষ্ট না পায় এবং তাকে হিংস্র প্রাণি কর্তৃক খুলে ফেলা থেকে রক্ষা করা যাতে সে তাকে খেতে না পারে।
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান ঈমানের রুকনসমূহের অন্যতম মহান রুকন। আখিরাত দিবস হলো কিয়ামাতের দিন যেদিন মানুষকে হিসাব ও প্রতিদানের জন্য উত্থিত করা হবে। তাকে এ বলে নাম করনের কারণ হলো, কারণ এটি সেদিন যেদিনের পর আর কোন দিন নেই অথবা তা দেরিতে আসার কারণে। তার প্রতি ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো মধ্যে রয়েছে কুরআন ও হাদিসে মৃত্যুর পর যা সংঘটিত হবে যেমন, কবরের আযাব ও নিয়ামত, পুনরুত্থান, হাশর, মিযান, হিসাব, প্রতিদান, সীরাত, হাউয, শাফায়াত, জান্নাত, জাহান্নাম ও তার অবস্থা, অধিবাসী, তাতে তাদের জন্য যা আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন সংক্ষিপ্তাকারে ও বিস্তারিত আকারে এ সবের প্রতি বিশ্বাস করা। এ ছাড়াও কিয়ামাতের আলামতসমূহের প্রতি ঈমান আনাও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। কারণ, এগুলো হলো আখিরাত দিবসের নিকটবর্তী হওয়া ও তা আসা কাছাকাছি হওয়ার আলামত। আর এ দিবসটিকে আল্লাহ তাআলা বিভিন্ন নামে নাম করণ করেছেন, এ দিবসের অবস্থা সম্পর্কে বান্দাহদেরকে অবহিত করা এবং এ বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা যাতে তারা এ দিবসকে ভয় পায়: তিনি এর নাম (يوم القيامة) কিয়ামতের দিন করে রেখেছেন। কারণ, এ দিনে মানুষ তাদের রবের সামনে দাঁড়াবে। এ ছাড়াও এ দিনকে ওয়াকিআহ (الواقعة) তথা মহাঘটনা, আল-হাক্কাহ (الحاقة) তথা মহাপ্রলয়, আল-কারিআহ (القارعة) তথা মহাপ্রলয়, আর-রাজিফাহ (الراجفة) তথা শিঙ্গায় প্রথম ফুঁক, আস-সা-খখাহ (الصاخة) তথা প্রচণ্ড আওয়াজ, আল-আযিফাহ (الآزفة) তথা আসন্ন দিন, আল-ফাযাউল আকবর (الفزع الأكبر) তথ মহাভীতি, ইয়ামুল হিসাব (يوم الحساب) তথা হিসাব দিবস, ইয়াওমুদ্দীন (يوم الدين) তথা প্রতিদান দিবস, আল-ওয়াদুল হক (الوعد الحق) তথা সত্য প্রতিশ্রুতি বলা হয়। এ গুলো সবই এমন নাম যা তার অবস্থার গুরুত্ব ও কঠিন ভয়বহতাকে প্রমাণ করে। এ ছাড়াও এ দিনে মানুষ যে সব বিপদের সম্মখীন হবে নামগুলো তার প্রতি ইঙ্গিত করে। এটি এমন একটি দিবস যেদিন চক্ষুসমূহ উল্টে যাবে। অন্তরসমূহ জায়গা থেকে নড়ে যাবে; এমনকি গলা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এ দিবসের প্রতি ঈমান একজন মানুষকে আমলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে এবং তার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার দিকে আহ্বান করে।
বারযাখ হলো মানুষের মৃত্যু ও পূনরুত্থানের মাঝের জগত। এ বারযাখে অনুগতদের নিয়ামত এবং কাফেরদের শাস্তি দেয়া হয় আর কতক পাপীকেও শাস্তি দেয়া হয় যাকে আল্লাহ শাস্তি দেয়ার ইচ্ছা করেন। অতএব বারযাখ হলো কবরের আযাব ও তার নিয়ামতের স্থান। আত্মাসমূহ বারযাখে তাদের অবস্থানস্থলে বিশাল তারতম্যে থাকবে। তাদের কতকের আত্মাসমূহ উর্ধ্ব জগতের উর্ধ্ব ইল্লিয়্যিনে থাকবে। আর সে গুলো হলো, নবীদের আত্মাসমূহ। তারাও স্তরভেদে বিভিন্ন হবে। যেমনটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মিরাজের রাতে দেখেছেন। আর কতকের আত্মা থাকবে হলদে পাখির পেটে যারা জান্নাতে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ঘোরা ফেরা করবে। আর এগুলো হলো, কতক শহীদগণের আত্মা, সবার নয়। কারণ, কতক শহীদের আত্মাকে তার ওপর ঋণ ইত্যাদি থাকার কারণে জান্নাতের প্রবেশ থেকে বিরত রাখা হবে। আর তাদের কতককে জান্নাতের দরজার ওপর আঁটকে রাখা হবে। আবার কতককে তার কবরে আঁটকে রাখা হবে।
পুনরুত্থান: অর্থ হলো, আল্লাহ তা‘আলা মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে বের করবেন। যেমন, তাদের শরীরের মূল অংশগুলোকে একত্র করা এবং তার মধ্যে রূহকে ফিরিয়ে দেওয়া। এতে তার জীবন ফিরে আসে। আর তিনি তাদেরকে হাশরের মাঠে তাদের কথা, কাজ ও বিশ্বাসের ওপর হিসাব ও প্রতিদানের জন্যে একত্র করবেন।
জান্নাত হলো, স্থায়ী আবাসস্থল। যেটি আল্লাহ তা‘আলা তার মুমিন বান্দাদের জন্য তৈরি করেছেন। আর তাদেরকে তাতে তার চেহারার দিকে তাকানো দ্বারা সম্মানিত করেছেন। তাতে রয়েছে স্থায়ী নেয়ামতসমূহ যা কোনদিন কোন চোখ দেখেনি এবং কান শুনেনি। আর কোন মানুষের অন্তরে তার কল্পনা হয়নি। এটি হলো পরিপূর্ণ নিআমত। তাতে কোন অপূর্ণতা নাই। তার বিশুদ্ধতাকে কোনো ময়লা কলুষিত করবে না। এটিকে জান্নাত বলে নাম করনের কারণ হলো, তার গাছগুলো অধিক ঘন এবং তার ডালগুলো মিলিত হওয়ার কারণে ছায়া দেয়। এ ছাড়া বর্তমান এর সাওয়াব মানুষের চক্ষু থেকে গোপন।
সিরাত হলো জাহান্নামের পিঠের ওপর স্থাপিত দীর্ঘায়িতু সেতু ও পারাপার।মানুষ তাদের আমল অনুযায়ী ও দুনিয়াতে শরীয়ত কবুল করার অগ্রগামীতার অনুপাতে তার ওপর দিয়ে অতিক্রম করবে আর। তাদের কেউ অতিক্রম করবে চোখের ফলকে, কেউ অতিক্রম করবে বিদ্যুতের গতিতে, কেউ অতিক্রম করবে বাতাসের গতিতে, কেউ অতিক্রম করবে দ্রুতগামী ঘোড়ার মতো, কেউ উটে আরোহনকারীর মতো, কেউ দৌড়ে দৌড়ে আবার কেউ পায়ে হেঁটে আবার কেউ খুড়ে খুড়ে আবার কাউকে চিনে নেয়া হবে এবং তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। সবই বান্দার আমল অনুযায়ী হতে থাকবে। কোন কোন হাদীসে তার বর্ণনা সম্পর্কে এসেছে, এটি চুল থেকেও চিকন এবং তরবারী থেকেও ধারালো। আর কয়লা থেকে গরম। কোন কোন আহলে ইলম বলেন, বরং এটি প্রশস্থ রাস্তা। তাতে রয়েছে পিচ্ছিল্লতা ও বাতাস। আর রয়েছে সা‘দান বৃক্ষের মতো কাটা। তবে তা যে কত বড় তা আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। যাই হোক তা ভয়াবহ ভয়ের ও আতঙ্কের।
আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনার মধ্য হতে একটি হলো হাউযের প্রতি ঈমান আনা। আর তা হলো এ কথা অকাট্য বিশ্বাস করা যে, অবশ্যই মহান হাউযটি মওজুদ আছে যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কিয়ামাতের দিনের বিশাল ময়দানে সম্মানিত করেছেন। যাতে যারা তার প্রতি ঈমান এনেছে এবং যারা তার শরীআতকে অনুসরণ করেছে তারা তা থেকে পানি পান করতে পারে। কারণ, মানুষ এ স্থানে পানির সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন অনুভব করবে। আর এ হাউয জান্নাতের একটি নাহার যার নাম কাউসার তা থেকে আসবে। তা থেকে দুটি নলা প্রবাহিত থাকবে। আহলে ইলমদের বিশুদ্ধ মত অনুসারে এটি পুলসিরাত অতিক্রম করার আগে হবে। এর বৈশিষ্ট্য ও ধরণ হলো, তার পানি দুধের চেয়েও সাদা মধুর চেয়েও মিষ্টি এবং মিশকের চেয়েও অধিক সুঘ্রাণ। আর এর প্লেট ও পেয়ালাগুলো আসমানের তারকার সংখ্যার মতো। তার দৈর্ঘ হলো একমাসের রাস্তা এবং তার প্রসস্থতাও একই পরিমাণ। যে ব্যক্তি একবার তা থেকে পান করবে তারপর সে আর পিপাসিত হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর দীন হতে মুরতাদ হয়ে গেছে বা দীনকে পরিবর্তন করেছে এবং তাতে এমন কিছু আবিষ্কার করেছে যার প্রতি আল্লাহ খুশি নন বা যারা এটির অস্তিত্বকে অস্বীকার করেছে যেমন, খারেজী, রাফেযী, মুতাযিলা এবং আরও অন্যান্য বিদআতী, প্রবৃতির পুজারী ও বক্রমস্তিস্কের অধিকারীদেরকে তা থেকে বিতাড়িত করা হবে। আহলে ইলমগণের সহীহ মতামত হলো, প্রত্যেক নবীর জন্য হাউয রয়েছে। কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মাদের হাউয সবচেয়ে বড় এবং অধিক আগমনকারী ও সুমহান। সামুরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে মারফূ হিসেবে বর্ণিত, প্রত্যেক নবীর রয়েছে একটি হাউয। আর তারা গর্ব করবে তাদের মধ্য হতে কে সবচেয়ে বেশি আগন্তক লাভ করেছেন। আর আমি এ বিশ্বাস করি যে, আমিই হবো সে ব্যক্তি যার আগন্তুক সবচেয়ে বেশি হবে। হাদীস ইমাম তিরমিযি স্বীয় সুনানে (২৪৪৩) তাবরানী কবীরে (৭/২৫৬), বুখারী তারিখে (১/৪৪) ইবনু আবী আসেম আস-সুন্নাহ (৭৩৪) বর্ণনা করেন। সবাই হাসান থেকে তিনি সামুরা থেকে সনদে বর্ণনা করেন। আর হাদীস সব সনদসহ হাসান বা সহীহ যেমনটি সীলসীলাতুস সহীহায় বর্ণনা করা হয়েছে। (১৫৮৯)।