হায়েয ও নিফাসের রক্ত থেকে মেয়েদের মুক্ত হওয়াকে তুহর (পবিত্রতা) বলে। পবিত্রতার দুটি আলামত রয়েছে। রক্ত পড়া বন্ধ হওয়া যাকে ফকীহগণ জাফাফ (الـجَفاف) বলে ব্যক্ত করেন। অর্থাৎ যখন নারী তার লজ্জাস্থানে কোন কাপড়ের টুকরা বা রুই (তুলা) প্রবেশ করানোর পর তা বের করে তখন তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় বের হয়। আর দ্বিতীয় আলামত হলো, সাদা স্রাব দেখা। আর তা হলো সাদা পানি যা হায়েয শেষ হওয়ার পর মহিলাদের লজ্জাস্থান হতে বের হয়।
আল-গুসল : গোসল বলা হয় সমস্ত শরীর ধৌত করা। আর এটি মাথার ওপর থেকে পায়ের নিচ পর্যন্ত সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এর ভেতর ওয়াজিব গোসল হলো, সালাত ইত্যাদি বৈধ হওয়ার জন্যে বড় নাপাকি যেমন জানাবাত ও হায়েয দূর করার নিয়তে গোসল করা। আবার গোসল কখনো নৈকট্য লাভ ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে হয়। উদাহরণত মুস্তাহাব গোসলসমূহ। যেমন মক্কায় প্রবেশের সময় মুহরিমের গোসল করা, ঈদের দিনে গোসল করা ইত্যাদি। আর কখনো গোসল করা বৈধ। যেমন, পরিচ্ছন্নতার জন্য গোসল করা।
নফল হলো, ফরয ও ওয়াজিবের অতিরিক্ত যে সব ইবাদত আল্লাহ বিধিবদ্ধ করেছেন। তন্মধ্যে রয়েছে নফল সালাত। আর তা হলো, ফরয সালাতের অতিরিক্ত নফল ও সুন্নাত (রাতেবাহ) সালাতসমূহ। যেমন, কিয়ামুল লাইল, দুহার সালাত এবং সাধারণ নফল ও এ জাতীয় অন্যান্য সালাত।
বিতরের সালাত: এটি এমন সালাত যা এশার সালাত এবং ফজর উদয়ের মাঝখানে আদায় করা হয়। আর এ দ্বারা রাতের সালাত শেষ করা হয়। এটির সর্বনিম্ন রাকআত হলো এক রাকাআত। আর অধিক রাকাতের কোন সীমানা নাই। তবে মুস্তাহাব হলো এগারো রাকাত। বিতরকে বিতর নামে নামকরণ করার কারণ হলো, এর রাকাত সংখ্যা বিজোড়। হয় এটি এক রাকাত বা তিন রাকাআত বা পাঁচ রাকাত ইত্যাদি।
আল-ইহরাম: ইবাদতে প্রবেশ করার নিয়ত করা হোক সেটি হজ অথবা উমরা।এর অর্থ হচ্ছে, সে হজ বা উমরায় প্রবেশের নিয়ত করল ফলে তার ওপর শিকার করা, বিবাহ করা, সুগন্ধি লাগানো ইত্যাদি যা হালাল ছিল তা হারাম হয়ে যাবে।
আমীন (آمِينْ) শব্দটি দোয়ার শব্দসমূহের একটি শব্দ যেটি দোয়ার পর বলা হয়ে থাকে। চাই তা সালাতের ভিতরে হোক বা বাহিরে। কারণ, মুমিন আল্লাহর কাছে চায় যে, তিনি যেন তার দোআ কবুল করেন।
আস-সালাত: অর্থাৎ পরিচিত ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আর তা হলো জানা-শোনা কতক কর্ম যেমন দাঁড়ানো, বসা, রুকু ও সেজদা এবং বিশেষ কিছু কতক কথন যেমন কিরাত, যিকির ইত্যাদি। তাকবীরে তাহরীমাহ দিয়ে শুরু করা হয় এবং সালাম দিয়ে শেষ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে ও বিশেষ কতক শর্ত সাপেক্ষে আদায় করা হয়, যেমন পবিত্রতা, কিবলা মুখী হওয়া প্রভৃতি। সংক্ষেপে সালাতের নিয়ম হলো, প্রথমে দু্ই হাত কাঁধ বরাবর বা কান বরাবর তুলে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমাহ বলবে। তারপর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখবে বুকের উপর বা বুকের নিচে। তারপর সানা পড়বে এবং সূরা ফাতেহা পড়বে। তারপর কুরআনের যেখান থেকে পড়া সহজ হয় সেখান থেকে কিরাত পড়বে। তারপর দুই হাত তুলে তাকবীর বলে রুকু করবে। রুকুতে সে তার দুই হাতকে দুই হাঁটুর উপর রাখবে। ভালোভাবে রুকু করবে এবং রকুতে গিয়ে (سبحانَ ربِّي العظيم) বার বার বলবে। পারলে হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়বে। আর মাথা তুলে সোজা হয়ে ভালোভাবে দাঁড়াবে এবং ইমাম ও একা সালাত আদায়কারী (سمِعَ الله لمنْ حَمِده) বলবে। আর সবাই বলবে, (ربَّنا ولك الحمدُ)। আর হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো পারবে। তারপর তাকবীর বলে সেজদায় যাবে। সাতটি অঙ্গের উপর সেজদা করবে। আর সেগুলো হলো, দুই পায়ের অগ্রভাগ, দুই হাটু, দুই হাতের তালু, নাকসহ কপাল। ভালোভাবে সেজদা করবে এবং সেজদায় গিয়ে বার বার (سبحانَ ربِّي الأعلى) বলবে। আর হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো পারলে বাড়াবে। তারপর তাকবীর বলে বসবে। তার দুই হাত দুই উরুর বা হাটুর উপর রাখবে এবং স্থীরতার সাথে বসবে আর বলবে, (رَبِّي اغفرْ لي رَبِّي اغفرْ لي) তারপর আবার সেজদা করবে। তারপর মাথা উঠিয়ে দাড়াবে এবং সুূরা ফাতিহা ও তার সাথে অপর একটি সূরা পড়বে এবং প্রথম রাকাতে যা যা করেছিল তাই করবে। যদি সালাত দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তবে তখন দ্বিতীয় বৈঠকের পর দুই সেজদার মাঝের বৈঠকের মতো করে বসবে। আর তাশাহুদ পড়বে (التَّحيِّاتُ لله والصَّلواتُ والطَّيِّباتُ، السَّلامُ عليكَ أيَّها النَّبيُّ ورحمةُ الله وبركاتُه، السَّلامُ عَلَينا وعَلَى عبادِ الله الصَّالحينَ، أشهدُ أن لا إله إلا الله وأشهدُ أنَّ محمَّدًا عبدُه ورسولُه) (সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর প্রত্যেক নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো (সত্য) মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” তারপর দরূদে ইব্রাহীম পড়বে (اللَّهمَّ صلِّ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما صلَّيتَ على إِبراهيمَ وعلى آل إبراهيمَ، إنَّكَ حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ بارك على محمَّدٍ وعلى آل محمَّدٍ، كما باركتَ على إبراهيمَ وعلى آل إبراهيمَ، إنَّك حميدٌ مجيدٌ) “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের ওপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরিবারের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।” তারপর (السَّلام عليكم ورحمة الله) বলে ডান দিকে সালাম ফিরাবে এবং একই নিয়মে বাম দিকে ফিরাবে। তবে যদি সালাত দুই রাকাতের অধিক হয়, তখন সে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তখন সে সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো ছাড়া দ্বিতীয় রাকাতে যা করেছিল তাই করবে। আর চতুর্থ রাকআতেও এমনই করবে যেমনটি প্রথম রাকআতে করেছিল।
রুকু থেকে ওঠার পর সোজা হয়ে দাড়ানোর সময় একজন মুসল্লির বলা যে, ربَّنا ولَكَ الحَمْدُ।
ইসলাম মুসলিমদের ঐক্য ও ইবাদাতের ক্ষেত্রে পরস্পরের সহযোগীতার ওপর গুরুত্বারোপ করে থাকে। এ কারণে আল্লাহ আমাদের জন্য জামাআতবদ্ধ কিছু ইবাদতের প্রচলন করেছেন যা মানুষ একা একা আদায় করতে পারে না। যেমন, নসিহত, ভালো কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করা, হজ করা। অনুরূপভাবে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত জামাআতের সাথে আদায় করা। আর এতে রয়েছে অনেক উপকার। অপরাগতা না থাকলে তা যে ওয়াজিব সে বিষয়ে অনেক প্রমাণ রয়েছে।
তরজমা দুই প্রকার: ১- শাব্দিক অনুবাদ। আর তা হলো, বাক্যের শাব্দিক আকৃতি বা ইবারাতের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা। ২- কথার অর্থের অনুবাদ: আর তা হলো, এমন শব্দাবলী দ্বারা বক্তব্যটি ব্যক্ত করা যা তার অর্থ ও উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। অনুবাদটি এখানে ব্যাখ্যার স্তরে হবে।
রমযান মাস: হিজরি বছরের মাসসমূহের নবম মাস যেটি শাবান মাসের পরে এবং শাউয়াল মাসের আগে। বিভিন্ন আহকাম ও ফযীলতের কারণে রমযান মাসটি অন্যান্য মাসের তুলনায় বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। তন্মধ্যে এ মাসে কুরআন নাযিল হওয়া, তাতে সিয়াম ওয়াজিব হওয়া, এ মাসে কদরের রাত রয়েছে, তারাবীর সালাত এবং এ মাসে সাওয়াব বৃদ্ধি পাওয়া।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত পড়া একটি মহান ইবাদত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্মান ও মর্যাদা। সালাতের শব্দাবলীর অন্যতম হলো صلّى اللهُ عليه وسلّم বলা (আল্লাহ তার ওপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন)। আর নূন্যতম বলা হলো (اللَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ) হে আল্লাহ মুহাম্মাদের উপর সালাত নাযিল করুন। আর উত্তম হলো সালাতে (দুরুদে) ইবরাহীমী। আর তা হলো এ কথা বলা, (للَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ، وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما صَلَّيْتَ على آل إبْراهِيمَ إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بارِك على مُحَمَّدٍ وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما بارَكْتَ على إِبْراهِيمَ، إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ) এ দরুদের আরও বর্ণনা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত (اللَّهمَّ صَلِّ عليه) এর অর্থ: হে আল্লাহ আপনি উর্ধ্বজগতে আপনার সম্মানিত মালায়েকাদের মাঝে তাঁর প্রশংসা করুন।
তালাক: আর তা হচ্ছে শরয়ী পদ্ধতিতে বৈবাহিক সম্পর্ক ও দাম্পত্য জীবনের পবিত্রতা দূর করার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের পৃথক হয়ে যাওয়া। চাই সেটা পুরোপুরিভাবে হোক যা তিন তালাকে বায়েন দেওয়ার মাধ্যমে আরোপিত হয়ে থাকে অথবা আংশিকভাবে হোক যেমন তালাকে রজয়ীর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। এখানে বিবাহ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বিশুদ্ধ বিবাহ। আর যদি বিবাহ বাতিল বা ফাসিদ হয় তাতে তালাক শুদ্ধ হয় না। যেমন যাকে বিবাহ করেনি তাকে তালাক দেয়া। আর স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের মাঝে এ ধরণের সম্পর্ক নিশ্চিহ্ন করার জন্য মুখে শব্দ উচ্চারণ করতে হবে। আর সে শব্দ দুই প্রকার: ১- স্পষ্ট শব্দ, যেমন, তালাক শব্দ এবং তা থেকে নির্গত শব্দ। যেমন কেউ বলল, (طَلَّقْتُكِ) আমি তোমাকে তালাক দিলাম অথবা বলল, (أَنْتِ طالِقٌ) তুমি তালাক অথবা বলল, (أَنْتِ مُطَلَّقَةٌ) তুমি তালাক প্রাপ্তা। ২- অস্পষ্ট শব্দ। আর তা হলো কিনায় (ইশারা-ইঙ্গিতের) শব্দসমূহ। তার মধ্যে তালাকের নিয়ত থাকতে হবে। এগুলো অবস্থা-পরিবেশ বেধে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন, বলল, (هذا آخرُ مَا بَيننا) এটি আমাদের মাঝে শেষ বোঝাপড়া ও দেখা অথবা বলল, (اغْرُبي عنِّي) তুমি আমার থেকে দূর হও অথবা বলল, (حبلُكِ على غاربِك) তোমার দায়িত্ব তোমার ঘাড়ে।
যিকির অন্তর ও জবানের ইবাদত। এটি সবচেয়ে সহজ আমল ও ইবাদত। এটি বান্দা তার রবের প্রশংসা করাকে শামিল করে। চাই তা তার সত্ত্বা বা সিফাত বা কর্মসমূহ বা বিধানসমূহ সম্পর্কে সংবাদ দেয়ার মাধ্যমে হোক বা তার কিতাব তিলাওয়াতের মাধ্যমে বা তার কাছে চাওয়া ও দোয়ার মাধ্যমে হোক। অথবা তার পবিত্রতা, মহত্ব, তাওহীদ, প্রসংশা, শুকরিয়া এবং তাজীম বর্ণনা করে হোক। অথবা চাই তা তার রাসূলের ওপর দুরূদ পেশ করা দ্বারা হোক। এ গুলো সবই আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে এবং তার কাছে সাওয়াবের আশায় হতে হবে।
সুনানে রাওয়াতেব: ফরয সালাতের আগে এবং তার পরের মাসনুন সালাতসমূহ যেগুলো তার পূর্বে ও পরে আদায় করা হয়। নবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সাথে এগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করতেন। আর তার সংখ্যা হলো: বারো রাকআত: যুহরের পূর্বে চার রাকাত ও পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পরে দুই রাকাত, ইশার পর দুই রাকাত, এবং ফজরের সালাতের পূর্বে দুই রাকাত।
সালাতের ওয়াক্তসমূহ: অর্থাৎ সেসব ওয়াক্ত যেগুলোকে শরীআত সালাত আদায়ের জন্য নিধারণ করেছেন। এটি তিন প্রকার: ১- ওয়াজিব ওয়াক্ত, যেমন ফরয সালাতসমূহের ওয়াক্ত। আর তা হলো পাচটি ওয়াক্ত: প্রথম: ফজরের ওয়াক্ত। এটি ফজরে সাদেকের উদয় থেকে শুরু করে সূর্য ওঠা পর্যন্ত। দ্বিতীয়: যুহরের ওয়াক্ত: সূর্য হেলে পড়া থেকে শুরু হয়ে প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া পর্যন্ত। তৃতীয়: আসরের ওয়াক্ত: প্রত্যেক বস্তুর ছায়া তার সমপরিমাণ হওয়া থেকে শুরু করে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। চতুর্থ মাগরিবের ওয়াক্ত। এটি সুর্য অস্ত যাওয়া থেকে শুরু হয়ে লালিমা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত। পাঁচ: এশার ওয়াক্ত। লালিমা গায়েব হওয়া থেকে অর্ধ রাত পর্যন্ত। এটি প্রয়োজনের সময় (লালিমা অস্ত যাওয়া থেকে) সুবহে সাদেক উদয় হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘ হয়। ২-মুস্তাহাব সময়সমূহ: যেমন সুন্নাত সালাতসমূহের ওয়াক্ত। এগুলো অনেক আছে। কিছু সালাত আছে যেগুলোর সময় শরীয়াতে নির্ধারিত। যেমন বিতরের সালাত। এর সময় হলো এশার সালাতের পর থেকে ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত। আর কিছু আছে যে গুলোর নির্ধরিত কোনো সময় নাই। যেমন সকল নফল সালাতসমূহ। ৩- সাধারণ নফল সালাত আদায়ে নিষেধাজ্ঞার সময়। সেটি হলো পাঁচটি। এক: সূর্য্য উদয়ের সময় থেকে উঁচা হ্ওয়ার আগ পর্যন্ত। দুই: অর্ধ দিবসে যখন সুর্য্য আকাশের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান করে। তিন: সুর্য্য লাল হ্ওয়ার সময় থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। চার: ফজরের সালাতের পর ইশরাক পর্যন্ত। পাঁচ: আসরের সালাতের পর সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার মানে হলো, তাদের আনুগত্য করা, তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা তাদের কষ্ট না দেয়া, তাদের মহব্বাত প্রকাশ করা এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আর এমন সব কর্ম দ্বারা তাদের সন্তুষ্টি করা যা করলে তারা খুশি হয়, যতক্ষণ তাতে পাপ না থাকবে। এখানে মাতা পিতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বাবা ও মা। অনুরূপভাবে তা শামিল করে দাদা দাদি। চাই তারা মুসলিম হোক বা কাফির। তাদের মৃত্যুর পর তাদের সাথে ভালো ব্যবহার হলো, তাদের বন্ধু বান্ধব এবং তাদের সাথীদের সম্মান করা।
সব সম্প্রদায়েরই অভিবাদন রয়েছে যেটি তাদের নির্দশন ও বৈশিষ্ট্য স্বরূপ। এটি হয়ত তাদের দীনের বা তাদের কালচার ও পূর্বসুরীদের অনুকরণের অংশ। আর ইসলামের সম্ভাষণ হলো সালাম। এটি আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে শিখিয়েছেন এবং এটি তিনি চালু করেছেন। আর মুসলিমরা তা আবশ্যক করে নিয়েছে। এটি শান্তির জন্য দোয়া করার সাথে সাথে এমন একটি সম্ভাষণ যা অপরের অন্তরে প্রশান্তি ও নিরাপত্তার উদ্রেক করে। এতে রয়েছে আল্লাহর সালাম নামের প্রসার। এর বাক্য হলো, “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ” অর্থাৎ “তোমাদের ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তার বরকত নাযিল হোক।“ এতে কমপক্ষে ত্রিশটি নেকি রয়েছে। আর যদি কেউ “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ“ বলে, তাতে রয়েছে বিশটি নেকি। আর যদি কেউ “আসসাল্লামু আলাইকুম“ বলে তাতে রয়েছে দশটি নেকি। সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। কেউ কেউ বলেন, ওয়াজিব। তবে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। উপরের তিনটি শব্দের যে কোনোটি দ্বারা উত্তর দেওয়া হয়। সালাম দেওয়ার শব্দের সাথে উত্তরের শব্দের মিল থাকা জরুরি নয়। যদি প্রবেশকারী বলে, “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ“ তাহলে তোমার জন্য তার উত্তরে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম“ বলা বৈধ। কারণ, এটি সালামের জবাব। তবে পুরো বাক্য বলা উত্তম ও অধিক সুন্দর। যদি কোনো জামাত কোনো জামাতের সাথে বা ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করে, তখন তাদের থেকে একজনের সালামের উত্তর দেওয়া যথেষ্ট হবে। যেমনিভাবে মজলিসে প্রবেশ করার সময় সালামের প্রচলন রয়েছে অনুরূপভাবে মজলিশ ত্যাগ করার সময়ও সালাম দিতে হয়। সালামের অনেক বিধান ও আদাব রয়েছে।
পবিত্রতা দুই প্রকার: প্রথমত: নাপাকী থেকে পবিত্র হওয়া। আর এটি হচ্ছে, যে নাপাকী সালাত আদায়ে বারণ করে তা দূরীভূত করা এবং তা থেকে পবিত্র হওয়া। এটিকে তাহারাতে হুকমি বা মানুবি বলে। এটি আবার দুই প্রকার: ১-বড় পবিত্রতা: এটি হয় বড় নাপাকী যেমন, জানাবাত, হায়েয বা নিফাস থেকে পবিত্র হওয়ার জন্য সমস্ত শরীর ধৌত করা। এটিকে গোসল বলে। ২—ছোট নাপাকী: আর এটি হয় ছোট নাপাকী দূর করার জন্যে শরীরের কিছু অঙ্গ ধৌত করা। যেমন পেশাব করা ও বায়ু বের হওয়া। এ ধরনের পবিত্রতা অর্জনকে ওজু বলা হয়। যখন পানি না পাওয়া যায় অথবা পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হয়, তখন উভয় প্রকারের নাপাকীর বিকল্প হলো তায়াম্মুম করা। এটিও তাহারাতে হুকমী। দ্বিতীয়ত: নাপাক বস্তু থেকে পবিত্রতা। আর সেটি মানুষের শরীর, কাপড় বা স্থানের সাথে লেগে থাকা সব নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করা। যেমন, পেশাব, পায়খানা ইত্যাদি। এটিকে তাহারাতে আইনী বা হিসসী বলা হয়।
ইস্তেগফার একটি মহান ইবাদত; চাই তা গুনাহের সাথে হোক বা গুনাহ ছাড়া।এটি কখনো এককভাবে ব্যবহার হয়, তখন তা তাওবার সমর্থক হয়। আর তা হচ্ছে, অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্ধারা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আবার কখনো তাওবার সাথে মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়, তখন ইস্তেগফারের অর্থ হলো, যা অতীত হয়েছে তার অনিষ্ঠতা থেকে হেফাযত কামনা করা। তাওবাহ হলো, ফিরে আসা এবং একজন ব্যক্তি তার কুকর্মের মন্দ পরিণতি থেকে ভবিষ্যতে হেফাযত কামনা করা। ইস্তেগফার শব্দটি বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার হয়েছে। যেমন কেউ বলল, (رَبِّ اغْفِرْ لِي) হে রব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আবার কেউ বলল, (أَسْتَغْفِرُ اللهَ) আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই ইত্যাদি বাক্য।
যাকাত একটি মহান ইবাদত এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন ও মহান ভিত্তি। আর তাতে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অসংখ্য কল্যাণ রয়েছে। এর বাস্তবায়ন হয় বিষেশ সম্পদের মধ্যে যে হক ওয়াজিব হয়েছে তা আদায় করার মাধ্যমে। চাই তা প্রকাশ্যে হোক, যেমন, চতুষ্পদ জন্তু, ফসল, ফলমুল এবং ব্যবসায়িক পণ্য। অথবা অপ্রকাশ্য যেমন, স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ টাকা। এ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় না। যেমন গাড়ি, পোশাক। আর এ হকের আদায় হবে বিশেষ পদ্ধতিতে। আর তা হলো, এ নিয়ত করবে যে, সে যে সম্পদগুলো বের করবে তা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য ফরয যাকাত। আর তারা হলো আট শ্রেণির মানুষ যাদের কথা কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। তারা হলো, ফকীর, মিসকীন, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যারা তাদের ঋণ আদায় করতে অক্ষম, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, যাদের অন্তরসমূহকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন, গোলাম ও বন্ধিদের আযাদ করা, আল্লাহর পথের মুজাহিদ যারা জিহাদের জন্যে নিবেদিত, সেসব মুসাফির যাদের সফর অবস্থায় টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেছে। এর জন্য কতক শর্ত এবং নির্ধারিত অংশ রয়েছে।
সাদাকাহ: (সদকাহ) হ'ল সে বস্তু একজন ব্যক্তি গরিবদেরকে আল্লাহর সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে যা দান করেন, কেবল উদারতার কাজ হিসাবে নয়। এভাবে সদকার সংজ্ঞা থেকে হাদিয়া ও হেবা বের হয়ে গেল যার উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত। নীতিগতভাবে, "সাদাকাহ" শব্দটি স্বেচ্ছাসেবী দানকে বোঝায় এবং যাকাত ফরয দানকে বোঝায়। আরও বলা হয় যে, বাধ্যতামূলক দানকে "সাদাকাহ" বলা হয়, কেননা সদককারী সদকার দ্বারা তার কর্মে সত্যতার সাক্ষর রাখতে চায়। বস্তুত সদকাহ সদকাহ দানকারীর ইমানের বিশুদ্ধতা ও তার ঘোষণার সত্যতার লক্ষণ।
আল-কিবলা: এটি হচ্ছে মুসল্লির তার সালাতের সময়কার সম্মুখ দিক। মুসলিমদের নিকট কিবল হলো কাবা শরীফ। রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পূর্বে সেটি ছিল ফিলিস্তিনে অবস্থিত বাইতুল মুকাদ্দাস মসজিদ। যেটিকে দুই কিবলার প্রথম কিবলা বলা হয়ে থাকে। কিবলা কখনো হুবহু কাবা হয়, আর এটি হলো যারা কাছে আছেন এবং কিবলাকে দেখছেন তাদের জন্য। অথবা কিবলা হয় দিক, এটি হচ্ছে দূরবর্তীদের জন্য।
কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। এটি জান্নাতের বাগানসমূহের একটি বাগান বা জাহান্নামের গর্তসমূহের একটি গর্ত। আর এটি হলো সে সব স্থান যেখানে মৃত ব্যক্তির দেহকে দাফন করা হয়। এ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, মৃতের লাশকে ঢেকে দেওয়া, তার সম্মান অক্ষুন্ন রাখা যাতে তার দুর্গন্ধ দ্বারা অন্যরা কষ্ট না পায় এবং তাকে হিংস্র প্রাণি কর্তৃক খুলে ফেলা থেকে রক্ষা করা যাতে সে তাকে খেতে না পারে।
মৃতকে গোসল দেয়ার নিয়ম: প্রথমে মৃত ব্যক্তির জন্য বানোনো খাট বা কাঠের ওপর তাকে রাখা হবে। তার মাথা রাখার স্থান উঁচু করা হবে যাতে পানি গড়িয়ে পড়ে যায়। গোসল দানকারী গোসল দেয়ার পূর্বে তার শরীর থেকে নাপাকী দূর করবে। তারপর তাকে সালাতের ওজুর মতো করে ওজু করাবে। তবে তার নাকে ও মুখে পানি দিবে না। যদি তাতে কোনো ময়লা থাকে তাহলে তা ভিজা নেকড়া দিয়ে দূর করবে। এটিকে তার আঙ্গুলে নিয়ে তার দাঁত ও নাক পরিষ্কার করবে যাতে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। ওজুর পর তাকে বাম কাঁধে শোয়াবে এবং ডান পাশ ধৌত করবে। তারপর আবার ডানের দিক ঘুরাবে এবং বাম পাশ গোসল করাবে। আর এটি করবে তিনবার করে মাথা ও দাড়ি ধোয়ার পর। মৃতের গোসলে ওয়াজিব হলো একবার ধোয়া। তবে তিনবার ধোয় মুস্তাহাব। প্রত্যেক গোসলই পানি ও বরই পাতা দিয়ে অথবা বিভিন্ন ধরনের সাবান ইত্যাদি দিয়ে যা তার স্থলাভিষিক্ত হয়। গোসলে শেষে তাকে কাফুর লাগাবে। যদি তা সম্ভব না হয়, অন্য কোন খুশবু লাগাবে যদি সম্ভব হয়। আর যদি গোসল দানকারী তিনবার ধৌত করার পর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না হওয়া বা অন্য কোনো কারণে বেশীবার ধৌত করা প্রয়োজন মনে না করেন তবে সে পাঁচ বার বা সাত বার ধৌত করতে পারবে। তবে তাকে অবশ্যই বেজোড় করতে হবে।
জিন আগুনের সৃষ্টি, তারা মুকাল্লাফ অর্থাৎ শরীআতের আদেশ-নিষেধ মান্য করতে আদিষ্ট। তাদের মধ্যে কেউ আছে মুমিন আবার কেউ কাফির। শয়তান তাদের থেকেই কাফের জিনের নাম। এটি (شَطن) থেকে নির্গত হওয়া বিশুদ্ধ, যার অর্থ হলো দূরীভুত হওয়া। কারণ, তার কুফর ও অবাধ্যতার কারণে সে হক থেকে দূরে সরে গেছে। আবার (شاطَ ) অর্থাৎ ধ্বংস হওয়া ও পুড়ে যাওয়া থেকে নির্গত হওয়াও বিশুদ্ধ। কারণ, শয়তান আগুনের তৈরি।
দাফন করা জীবিতদের ওপর মৃত ব্যক্তির অধিকার যা দ্বারা আল্লাহ মানুষকে সম্মানিত করেছেন। আর তা হলো, মৃতের লাশকে মাটির নিচে গর্তে গোপন করা যাতে তা মাটি খুঁড়ে বের করা না যায়, হিংস্র প্রাণী তার পর্যন্ত পৌঁছতে না পারে এবং তা থেকে লাশের দুর্গন্ধ না ছড়ায়, এটি তার সম্মানের স্বার্থে এবং যেন জীবিতদের কষ্টের কারণ না হয়। দাফন করার নিয়ম: কিবলামুখ করে ডান কাঁধের ওপর রাখবে। কবরে নামানো ব্যক্তি বলবে, (بِسْمِ اللهِ وعلى مِلَّةِ رَسولِ اللهِ) “আল্লাহর নামে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মিল্লাতের অন্তর্ভুক্ত করে তাকে কবরে রাখলাম।” তারপর কাফনে বাঁধগুলো খুলে দিবে। কবরের ওপর মাটি বিছিয়ে দিবে। বাঁশ, খড়ি ইত্যাদি দ্বারা ছিদ্র বন্দ করে দেবে, যাতে লাশের উপর মাটি ভেঙ্গে না পড়ে।
সাদকাতুল ফিতর এমন একটি ইবাদত যা রমযানের সাওমের পর আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য চালু করেছেন। আর এটি হলো, প্রত্যেক মুসলিম চাই নারী হোক বা পুরুষ হোক এবং ছোট হোক বা বড় হোক তার পক্ষ থেকে শহরের লোকদের প্রধান খাদ্যের এক সা’ পরিমাণ খরচ করাকে সাদকাতুল ফিতর বলে। এটি পরিবার প্রধান তার অধীনস্থ সবার পক্ষ থেকে আদায় করবে। এটি অন্যায় অপরাধ থেকে রোযাদারের জন্য পবিত্রতা এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্য স্বরূপ। এ ছাড়াও এ দিন তাদের যাতে কারো কাছে হাত পাততে না হয় এবং মুসলিমদের ওপর ঈদ আসাতে তারা যেভাবে আনন্দ করে সেভাবে তাদের অন্তরেও যাতে আনন্দ প্রবেশ করে। এটি ওয়াজিব হওয়ার ওয়াক্ত হলো, রমযানের শেষ দিনে সূর্যাস্ত যাওয়া। তবে উত্তম হলো, ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে আদায় করা। আর ঈদের দুই বা তিন দিন আগে আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নাই। যদি সময় মতো আদায় না করে তবে তা কাজা আদায় করবে এবং ফকির ও মিসকিনকে দিবে। জামহুর আলেমদের নিকট তার পরিমাণ হলো, গম ও ভুট্টা হতে বা এগুলোর আটা হতে বা খেজুর বা কিসমিস হতে এক সা’। আর সা’ হলো, মধ্যম ধরনের মানুষের হাতের কোষের চার কোষ। স্থায়ী ফতোয়া বিভাগ তাদের ফতোয়ায় প্রায় তিন কিলোগ্রাম দ্বারা এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। আর (مجلة البحوث الإسلامية) ইসলামী গবেষণা বিষয়ক পত্রিকায় তার পরিমাণ প্রায় ২.৬ কিলোগ্রাম নির্ধারণ করেছে।
সোনা-রুপার যাকাত হলো, নির্ধারিত কিছু অংশ যাকাত হিসেবে বের করা। আর তা হলো, সোনা ও রুপা এবং তা থেকে উৎপন্ন দিরহাম, দিনার, নগদ অর্থ, অলংকার ইত্যাদি এবং আরো যত কাগজের মুদ্রা ও তার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় এমন সম্পদ থেকে চল্লিশভাগের একভাগ বের করা। আর তা দেয়া হবে ফকীর মিসকীন ও এ ধরনের যারা যাকাতের হকদার তাদেরকে। আর যাকাত ফরয হয় তখনই যখন স্বর্ণ তার নিসাব পূর্ণ করবে। আর তার নিসাবের পরিমাণ হলো বিশ দীনার যা ৮৫ গ্রাম সমান হয়ে থাকে। আর রূপার নিসাব হলো, দুইশত দিরহাম যা ৫৮৫ গ্রামের সমান। আর তার মালিকানার ওপর পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
মুসলিমগণের কবর যিয়ারত করা যদি আখিরাতের স্মরণ করা, মৃতদের থেকে উপদেশ গ্রহণ করা, মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা ও তাদের ওপর দয়াবোধ করার উদ্দেশ্যে হয় তাহলে এটি বৈধ ইবাদত। আর অমুসলিমদের কবর যিয়ারত করা বৈধ যদি তা শুধু উপদেশ গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে হয়; দুআর জন্য নয়। কবর যিয়ারত তিন প্রকার: ১- সুন্নাত যিয়ারত। যদি আখিরাতের স্মরণ করা, মৃতদের থেকে উপদেশ গ্রহণ করা, মৃতদের জন্য ক্ষমা প্রার্থণা ও তাদের ওপর দয়াবোধ করার উদ্দেশ্যে করা হয়। ২- শির্কী যিয়ারত: যেমন মৃতদের কাছে কোনো কিছু চাওয়া, তাদের থেকে উপকার লাভ করা বা তাদের জন্য জবেহ করা ইত্যাদির জন্য কবর যিয়ারত করা। ৩- বিদআতী যিয়ারত, যেমন, মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারত এ উদ্দেশ্যে করা যে, তার কবরের নিকট দোয়া করা অধিক উপকারী এবং দো‘আ কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
আশুরা: এটি মুহাররম মাসের দশম দিন। এ দিন সাওম পালনের কথা হাদীসে বর্ণিত আছে। এটি অতীতের এক বছরের গুনাহের কাফফারাহ। গুনাহ দ্বারা সাগীরাহ গুনাহ উদ্দেশ্য। যদি তার সাগীরাহ গুনাহ না থাকে তাহলে কবীরাহ গুনাহকে হালকা করা হবে। এ হালকা করাটি আল্লাহর অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করবে। আর যদি কবীরাহ গুনাহ না থাকে তাহলে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে। আর এ দিনটিকে কেন্দ্র করে যে সব অনুষ্ঠান, সুরমা লাগানো, খিযাব লাগানো এবং আশুরার দিনে ও রাতে পরিবারের জন্য ভালো খাবারের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি জমহুর আহলে ইলমের মতে এটি বিদআত। কারণ, এ দিনে ফযীলত সম্পর্কে একমাত্র সাওম ছাড় আর কোনো আমল প্রমাণিত নয়।
লাশকে বিদায় জানানো মৃত মুসলিমকে সম্মান করা যা ইসলামের সৌন্দর্যসমূহের একটি সৌন্দর্য। অর্থাৎ, মৃত ব্যক্তির লাশ বহন করা, মৃত্যুুর স্থান থেকে গোসলের স্থান পর্যন্ত তার সাথে থাকা, তার জানাযায় শরীক হওয়া এবং তাকে দাফন করা। আর কেউ শুধু এর কয়েকটি কর্মে অংশ গ্রহণ করে। যেমন বিশেষ করে তাকে দাফন করার জায়গা পর্যন্ত তার সঙ্গে যাওয়া। এ সব আমলের সাথে আরও যা থাকবে তা হলো, মৃতের জন্য দোয়া করা, ক্ষমা চাওয়া, তার পরিবারকে ধৈর্যধারণ করানো এবং তাদের শান্তনা দেওয়া। যে ব্যক্তি শুরু থেকে দাফন পর্যন্ত তার সাথে থাকবে তার জন্য দুই কিরাত সাওয়াব। অর্থাৎ, বড় দুই পাহাড় পরিমাণ সাওয়াব। দুটির মধ্যে ছোটটি হলো উহুদ পাহাড়ের মতো। আর যে ব্যক্তি তার ওপর জানাযার সালাত আদায় করল এবং দাফন করা পর্যন্ত তার সাথে থাকলো সে পরিপূর্ণ দুই কিরাত সাওয়াব পাবে।
পাঁচ ওয়াক্ত সালাত: যে সব সালাত আল্লাহ তাআলা তার বান্দার ওপর দৈনিক পাঁচবার আদায় করা ফরয করেছেন। আর তা হলো, যোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজর। এগুলো ফরয হওয়া কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। এগুলো অবশ্যই দীনের জরুরী বিষয়। অস্বীকারকারী ও তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে ত্যাগকারী কাফের হয়ে যাবে। এগুলো শাহাদাতাইন তথা দুই সাক্ষ্যদানের পর সবচেয়ে গুরুত্ব্যপূর্ণ ও উত্তম ফরয এবং ইসলামের পাঁচ রুকনের দ্বিতীয় রুকন। আমাদের নবী মুহাম্মাদকে যখন মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয় তখন প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত আল্লাহ ফরয করেন। তারপর আমাদের নবীর সুপারিশের কারণে তা কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্তে আনা হয়। এখন তা আমল হিসেবে পাঁচ ওয়াক্ত; কিন্তু সাওয়াব লাভে পঞ্চাশ ওয়াক্তের সমপরিমাণ।
দুই ঈদের সালাত ইসলামের নিদর্শনসমূহ হতে একটি নির্দশন। এ সালাত হলো ঈদুল ফিতরের দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের প্রথম দিন এবং ঈদুল আযহার দিন অর্থাৎ যিলহজ মাসের দশম দিন সশব্দে দুই রাকাত সালাত আদায় করা। সূর্য এক বর্শা বা দুই বর্শা পরিমাণ উপরে উঠলে দুই ঈদের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর তা নফল সালাত বৈধ হওয়ার ওয়াক্ত। আর সূর্য মধ্য আকাশ থেকে ঢলে পড়ার পূর্বে ওয়াক্ত শেষ হয়। অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্তের কিছু সময় পূর্বে। এ সালাত অন্যান্য সাধারণ সালাতসমূহ হতে প্রত্যেক রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীরের কারণে স্বতন্ত্র।
ইহরামের নিষিদ্ধ বিষয়সমুহ: ইহরাম অবস্থায় যে কর্ম বা আচরণ করা নিষিদ্ধ সেগুলো নয়টি: মাথা মুণ্ডানো, নখ কাটা, সেলাই কাপড় পরিধান করা, মাথা ঢাকা, খুশবু ব্যবহার করা, স্থলের পশু শিকার করা বা তাড়ানো, বিবাহ করা, লজ্জাস্থান ব্যতীত অন্য যে কোন উপায়ে মেলামেশা করা এবং সহবাস করা। নারীরাও পুরুষেরই মতো। তবে তার ইহরাম তার চেহারায়। সে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করবে; তবে নিকাব ও হাত মুজা পরিধান করবে না। সে অপরিচিত লোকদের নজর থেকে সুরক্ষার জন্য মাথার উপর দিয়ে চেহারার ওপর কাপড় ঝুলিয়ে দিবে। মুহরিম ব্যক্তি যদি এ সব কর্মের কোনো একটি করে তাহলে তার হুকুমের ব্যাপারে ব্যাখ্যা রয়েছে। উমরাকারীর উমারার কাজ সম্পন্ন করার আগে বা হজকারীর দ্বিতীয় হালালের পূর্বে সহবাস করা দ্বারা তাদের হজ ও উমরা বাতিল হয়ে যাবে। তার ওপর জরুরি হজ বা উমরা পূর্ণ করা এবং অতঃপর তাকে অবশ্যই পরের বছর নতুন ইহরাম বেঁধে হজ বা উমরা পুনরায় আদায় করতে হবে এবং কাফফারাহ আদায় করতে হবে। আর তা হলো, হজের ক্ষেত্রে একটি উট এবং উমরার ক্ষেত্রে একটি ছাগল মক্কার গরীবদের জন্য জবেহ করতে হবে। আর যদি শিকার করে তার শাস্তি হলো, চুতুষ্পদ জন্তু হতে অনুরুপ একটি কুরবানি করতে হবে বা সাওম পালন করতে হবে বা সাদকা করতে হবে। আর বিবাহ সম্পন্ন করলে তার বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে, তবে তাতে কোন কাফফারাহ নাই। আর নখ কাটা, চুল কাটা, খুশবু লাগানো, মাথা ঢাকা, সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধানের ক্ষেত্রে কষ্ট দূর করার ফিদয়া দিতে হবে। আর তা হলো, একটি বকরী জবেহ করা অথবা ছয়জন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো অথবা তিনদিন সাওম পালন করা।
জুমুআর সালাত: এটি একটি স্বয়ং সম্পন্ন সালাত যেটি কিরাত উচ্চস্বরে পড়া, রাকাত সংখ্যা, খুতবা ও তার প্রদত্ত শর্তসমূহে যোহরের সালাত থেকে ভিন্ন; তবে ওয়াক্তের ক্ষেত্রে মিল আছে। মুস্তাহাব হলো প্রথম রাকাতে সূরা আল-জুমুআহ এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল-মুনাফিকূন পড়া অথবা প্রথম রাকাতে সূরা আল-আলা ও দ্বিতীয় রাকাতে সূরা আল-গাশিয়াহ পড়া।
অযু হলো, নির্দিষ্ট অঙ্গে পবিত্র পানি ব্যবহার করা। আর সেটি হলো, নিজে পবিত্র এবং অন্যকেও পবিত্রকারী। আর নির্দিষ্ট অঙ্গ হলো, চেহারা, দুই হাত, দুই পা ও মাথা। এ অঙ্গগুলো নির্ধারিত নিয়মে ধৌত করতে হবে। আর তা হলো,আল্লাহর জন্য ইবাদত করার নিয়তে চেহারা, হাত ও পা ধোয়া এবং মাথা মাসেহ করা। চাই তা নাপাকী দূর করার জন্য হোক বা নতুন করে পবিত্রতা অর্জনের জন্য হোক প্রভৃতি। অযু করার পরিপূর্ণ নিয়ম হলো, বিসমিল্লাহ দিয়ে শুরু করবে এবং বলবে বিসমিল্লাহ। দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবে। কারণ, এ দুটি দ্বারা সে অন্যান্য অঙ্গ স্পর্শ করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন উযু শুরু করতেন তখন তিনি দুই হাতের তালুতে পানি ঢালতেন এবং পাত্রে হাত প্রবেশ করানোর আগে এ দু হাত ধৌত করতেন। ঘুম থেকে উঠার পর এ দুটি ধোয়ার গুরুত্ব বেশি। তারপর কুলি করবে, নাকে পানি নিবে ও নাক থেকে পানি ঝেড়ে ফেলবে। কুলি হলো, মুখে পানি প্রবেশ করিয়ে নাড়া চাড়া করে তা ফেলে দেওয়া। আর ইস্তেনশাক (الاستنشاقُ) হলো, নাকে পানি প্রবেশ করানো। আর ইস্তেনসার (الاستنثارُ) হলো, নাক থেকে পানি বের করা। তারপর চেহারা এবং দুই হাত আঙ্গুলের মাথা থেকে কনুই পর্যন্ত ধোয়া। দুই কনুই ধোয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করবে। ডান হাত দিয়ে ধোয়া শুরু করবে এবং আঙ্গুলগুলো খিলাল করবে। তারপর দুই হাতে কব্জি ভিজিয়ে একবার পুরো মাথা মাসেহ করবে। পুরো মাথা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, পুরো মাথা মাসেহ করা, প্রত্যেক চুলে পানি পৌঁছানো নয়। উত্তম হলে, দুই হাতের তালুকে মাথার সামনের ভাগে রেখে পিছনের দিকে নিয়ে যাবে তারপর পুনরায় আবার সামনে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে। এ ক্ষেত্রে নারীরাও পুরুষের মতো। তারপর দুই পা ধৌত করবে। ডান পা দিয়ে শুরু করে তা টাখনু পর্যন্ত ধৌত করবে। তারপর একই নিয়মে বাম পা ধৌত করবে। দুই পায়ের আঙ্গুল নিজ হাতে খিলাল করবে। মাথা মাসেহ করা ছাড়া বাকী সব কর্মগুলো একবার বা দুইবার বা তিনবার ধৌত করবে। তবে মাথা মাসেহ একবার করবে।
জানাযার সালাত: রুকু সিজদা ব্যতীত তাকবীরে তাহরীমা এবং অন্যান্য তাকবীর ও সালাম বিশিষ্ট একটি সালাত। সালাতটি মুসলিম মৃতদের ওপর পড়া হয়ে থাকে। আর এটি আদায় করা হবে গোসল দেয়া ও কাফন পরানো পর এবং দাফনের পূর্বে। শহীদদের বেলায় গোসল প্রয়োজন নেই, যারা কাফিরদের সঙ্গে যুদ্ধে মারা যায়। এটি আদায় করার পদ্ধতি হলো, প্রথমে তাকবীরে তাহরীমা বলবে, তারপর সূরা ফাতিহা পড়বে। তারপর তাকবীর বলবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর দরূদ পড়বে। তারপর আবার তাকবীর বলে মৃত ব্যক্তির জন্য হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো অথবা বৈধ দুআগুলো দ্বারা দো‘আ করবে। তারপর চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে। আর যদি চায় চতুর্থ তাকবীরের পর সালামের পূর্বে মৃত ব্যক্তির জন্য দোআ করবে।
নফল সালাত: ফরয সালাতসমূহের অতিরিক্ত সালাত। এটি নির্ধারিত ও সাধারণ দুই ভাগে ভাগ হয়: ১-নির্ধারিত নফল সালাত: যে সালাত কোনো কারণের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন, তাহিয়্যাতুল মসজিদ। অথবা কোনো সময়ের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন দুহার সালাত, সুনানে রাওয়াতিব ইত্যাদি। ২-অনির্ধারিত সাধারণ নফল সালাত: সেসব নফল সালাত যা কোনো সময় বা কারণের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং নিষিদ্ধ সময়ের বাহিরে যে কোনো সময় আদায় করা যায়।
সাওম একটি মহান ইবাদত। আর তারই অংশ হচ্ছে, রমযানের সাওম। এটি ইসলামের রুকনসমূহ হতে একটি রুকন। এটি সুবহে সাদেক উদয় হওয়া থেকে শুরু হয় আর সূর্যাস্ত যাওয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। এটি ভাগ হয় না। যে ব্যক্তি এই দীর্ঘ সময় সাওম পালনে অক্ষম হয় কিন্তু যুহর পর্যন্ত পালনে সক্ষম হয়, তার জন্য এতটুকু সিয়াম শরীআতসম্মত নয়, সে খাবার গ্রহণ করবে। আর সাওম ভঙ্গের সর্বসম্মত কারণসমূহ হলো, খানা, পান করা ও সহবাস করা। নফল সাওম বিভিন্ন ধরনের আছে। তার মধ্যে উত্তম সাওম হলো, একদিন সিয়াম পালন করা ও একদিন খাবার গ্রহণ করা।
শরীআতের মাকাছেদ (مَقَاصِدُ الشَّرِيعَةِ): সেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বলে যেগুলো শরীআত নিয়ে এসেছে এবং (হালাল-হারাম) বিধানসমূহে তা বাস্তবায়ন করেছে। আর প্রত্যেক স্থানে ও যুগে তার বাস্তবায়ন, সুন্দরভাবে তার সংরক্ষণ ও তার হিফাযতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। আর শরীআত যেই স্বার্থ (কল্যাণ) হিফাযত করার জন্য এসেছে তার বিবেচনায় মাকাছেদে শরীআহ (শরীআতের উদ্দেশ্যবলী) তিন ভাগে ভাগ হয়: 1- জরুরি মাকাছেদ (المَقَاصِدُ الضَّرُورِيَّةُ): দীন ও দুনিয়াবী কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় যা খুবই জরুরী, যদি তা না থাকে মহা ফাসাদ দেখা দেবে। আর তা পাঁচটি মৌলিক বিষয় হিফাযত করার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। আর তা হলো, দীন, জ্ঞান, নাফস, বংশ ও সম্পদ। 2- প্রয়োজনীয় মাকাসেদ (المَقَاصِدُ الحَاجِيَّةُ): আর হলো যদি তা পাওয়া না যায়, তখন মানব জাতির ওপর কষ্ট ও বিপদ নেমে আসে। 3- সৌন্দর্যবর্ধক মাকাসেদ (المَقَاصِدُ التَّحْسِينِيَّةُ): আর তা হলো যা মানুষের অবস্থাকে সুন্দর করে এবং তার জীবনকে সুন্দরভাবে পূর্ণতা দান করে। এটিকে মাকাসেদে কামালিয়্যাহ, তাকমীলিয়্যাহ অথবা কামালিয়্যাত বলে নাম করণ করা হয়।
জন্তু জবেহ করার অর্থ জন্তুর রক্ত প্রবাহিত করা। অর্থাৎ তাকে মেরে ফেলার জন্যে তার রক্ত প্রবাহিত করা ও বের করে দেয়া। জবেহ করার দুটি পদ্ধতি আছে। একটি হয়, গলা ও রগ কাটার দ্বারা, একে জবেহ বলে নাম রাখা হয়। অথবা খাদ্য নালীতে আঘাত করা দ্বারা হয়ে থাকে। আর তা হলো এমন স্থান যেটি গলা ও সীনার মাঝখানে থাকে। এটিকে বলা হয় নাহার। যবেহের ভেতর সর্বনিম্ন হলো, গলা কাটা যা শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচলের স্থান এবং খাদ্যনালী কাটা যা দ্বারা খাদ্য ও পানীয় ভিতরে প্রবেশ করে। সবোর্চ্চ জবেহ হলো, এ দুটিকে দুই রগসহ কাটা। আর রগ দুটি হলো, ঘাড়ের দুই পাশে। আর জবেহ ও নাহর হয়, জন্তুর ওপর ক্ষমতা থাকা অবস্থায়। আর দ্বিতীয় প্রকার জবেহ হলো, যা জন্তুর যে কোন অঙ্গে আঘাত করা দ্বারা হয়। আর এটি খাস হলো সে সব জন্তুর ক্ষেত্রে যেগুলো পলায়ন করে এবং যার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকে না তার ক্ষেত্রে। উভয় পদ্ধতিতে জবেহ করার সময় আল্লাহর নাম উল্লেখ করা জরুরী।
রুকু হলো, সালাতের কর্ম জাতীয় রুকন। তার রয়েছে দুটি গুণ: 1- পিঠ ঝুকানো। যাতে একজন মানুষ তার দুই হাত দ্বারা দুই হাঁটু ধরতে পারে। 2- দুই হাতকে দুই হাঁটুর ওপর টেক লাগানোর সাথে মাথা ঝুকানো, দুই হাতের আঙ্গুলগুলো খোলা রাখা, দুই হাতকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখা এবং মাথা উঁচু বা নিচু করা ছাড়া পিঠকে বরাবর রাখা। আর এ পদ্ধতিটিই হলো, পরিপূর্ণ পদ্ধতি। আর রুকুর দুই অবস্থা: 1- রুকুর পূর্বে মুসল্লির দাঁড়ানো অবস্থায় থাকা। আর সাধারণভাবে রুকু দ্বারা এটিই উদ্দেশ্য হয়। 2- আর বসা অবস্থা থেকে রুকু করা। আর তা হলো পিঠ এমনভাবে নীচু করা যাতে কপাল দুই হাঁটু বরাবর এসে যায়।
লজ্জাস্থান ঢাকা (سَتْرُ العَوْرَةِ): মানুষের যে সব অঙ্গ খোলা রাখা দোষণীয় এবং যা খোলা রাখতে মানুষ লজ্জাবোধ করে এবং মানুষের দেহের যা প্রকাশ করা বৈধ নয়, সামর্থ্যের সময় তা ঢেকে রাখা, যদিও সে অন্ধকারে একা হয়। সতর ঢাকা দুই প্রকার: ১- সালাতের মধ্যে সতর ঢাকা। আর তা পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীদের জন্য চেহারা ও দুই কব্জি ছাড়া পুরো শরীর ঢেকে রাখা। এ ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য হলো, কাপড় শরীরকে এমনভাবে ঢেকে রাখবে যাতে স্বাভাবিক দৃষ্টি দ্বারা তার গায়ের রং দেখা না যায়। ২- সালাতের বাহিরে সতর ঢাকা। আর তা পুরুষের জন্য নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। আর নারীদের চার অবস্থা: 1- অপরিচিত লোকদের নিকট সারা শরীর ঢাকা। 2- পুরো শরীর ঢেকে রাখা। তবে ঘরের ভিতরে কাজ করার সময় সাধারণত যা খোলা থাকে তা ছাড়া। যেমন, মাথা, গর্দান, হাত ইত্যাদি। আর এ অবস্থা হবে মাহারিম ও নারীদের সামনে। 3- কোনো সতর না ঢাকা। আর এটি হলো তার স্বামীর সাথে। ৪- তার মত নারীর নিকট নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা।
সাহু সাজদা হলো, সালাতের সিজদার ন্যায় একই নিয়মে ও যিকরে দুই সিজদা করা। একাকী সালাত আদায়কারীর অথবা ইমামের মধ্যে যখন সাহু সাজদার কারণসমূহের কোন একটি কারণ পাওয়া যায় তখন এটি আবশ্যক হয়। আর তার স্থান হলো, সালামের পূর্বে যদি কমের মাধ্যমে ভুল করে। আর যদি বেশীর মাধ্যমে ভুল করে তাহলে তার স্থান হল সালামের পর। আর সেজদা সাহুর কারণ তিনটি। আর তা হলো, বৃদ্ধি, হ্রাস ও সন্দেহ।
স্থীরতা হচ্ছে, কিছু সময়ের জন্য জোড়া ও অঙ্গসমূহের স্বীয় স্থানে স্থির হওয়া। তার সর্ব নিম্ন হলো, এত সময় পরিমাণ স্থির থাকা যাকে পরিভাষায় স্থিরতা বলে। কেউ কেউ বলেন, সামান্য সময় অঙ্গসমূহের চলাচল না থাকা। আবার কেউ কেউ বলেন, রুকনের মধ্যে ওয়াজিব যিকির আদায়ের সময় পর্যন্ত। যেমন, একবার তাসবীহ বলা পরিমাণ সময়। এ দুই কথার মধ্যে উল্লেখিত বিষয়টি সালাতে ভুলকারীর কর্ম থেকে আলাদা করা যাবে না। অথচ তাকে পুনরায় সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সতর এমন একটি বিষয় যা হিফাযত করার প্রতি শরীয়ত প্রণেতা খুব গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এটি একটি মৌলিক নীতির অর্ন্তভুক্ত হয়। আর তা হলো ইয্যতের হিফাযত করা। সতর দুই প্রকার: প্রথম: সালাতের ভিতরে সতর। একে সালাতের আওরোত (عَوْرَةَ الصَّلاةِ) বলে। আর তা হলো যা সালাতে ঢেকে রাখা ওয়াজিব। দ্বিতীয়: সালাতের বাহিরে সতর। এটিকে নজরের আওরাত (عَوْرَةَ النَّظَرِ) বলে। আর তা হলো, সালাতের বাহিরে শরীরের যে সব অংশ প্রকাশ না করা এবং ঢেকে রাখা ওয়াজিব।
মসজিদ হলো এমন স্থান যেটিকে স্থায়ীভাবে সালাত আদায়, যিকির, দোআ, দীনি জ্ঞান অর্জন, উম্মাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির জন্য ওয়াকফ আকারে খাস করা হয়েছে। তাতে আযান দিবে ও কিবলামুখী হবে। সালাতের কর্মসমূহের মধ্যে সিজদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হওয়ায় স্থানের নামটি তা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ, বান্দা সিজদাবস্থায় তার রবের সর্বাধিক কাছে থাকে। তাই তাকে মসজিদ বলা হয়। মসজিদের সীমানা হলো, যে দেয়াল বা কাঠ বা বাশ ইত্যাদি তাকে বেষ্টন করে রাখে। মসজিদ হলো জমিনের সবোর্ত্তম অংশ। তার রয়েছে বিশেষ মর্যদা ও ফযীলত আল্লাহর নিকট। আর কতক মসজিদ আছে যেগুলোকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ ফযীলত ও গুণ দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন যা অন্য কোন মসজিদের নেই। আর সে গুলো হলো, তিনটি মসজিদ। মক্কায় মসজিদে হারাম, মদীনায় মসজিদে নববী এবং কুদসে মসজিদে আকসা।
একজন মুসলিম যে সব ইবাদত ও আনুগত্য করা দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করে উমরা হলো তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও মহান ইবাদত ও আনুগত্য। এটি জীবনে একবার ওয়াজিব। এটি হলো মিকাত থেকে ইহরাম বাঁধা, তারপর তাওয়াফ তারপর সাঈ , তারপর মাথা মুন্ডানো বা চুল ছোট করা। এটি দুই প্রকার: 1- একক উমরা যেটি বছরের যে কোনো সময় আদায় করতে পারবে। 2- তামাত্তু হজের উমরা, এটি হজের মাস ছাড়া অনুষ্ঠিত হয় না।
দুটি সাক্ষ্যদানের পর সালাত হলো দীনের খুটি ও ইসলামের মহান রুকনসমূহের অন্যতম। যে ব্যক্তি তা সংরক্ষণ করল সেই সৌভাগ্যবান। আর যে ব্যক্তি তা বরবাদ করল বা তা ছেড়ে দিল সে দূর্ভাগা ও অহংকারী। আল্লাহ তা সংরক্ষণ করার প্রতি ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য অনেক আয়াতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইচ্ছাকৃতভাবে সালাত ত্যাগকারী আল্লাহর শাস্তি ও অসন্তুষ্টির মুখোমুখি হতে হবে। আর তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্চিত হতে হবে। ইচ্ছাকৃত সালাত ত্যাগকারী দুই প্রকার। 1- সালাত ফরয হওয়াকে অস্বীকার করে সালাত ত্যাগ করা। এটি অবশ্যই কুফর। 2- সালাতকে অলসতা ও হালকাভাবে দেখে তা ত্যাগ করা যে, তার পরবর্তী সময়ের প্রবেশ করা। এটিও সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যাওয়ার কারণে কুফর। এই মত হলো উমার, আলী, জাবের সহ আরও অন্যান্য সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুমগণের। যেমনটি তাদের থেকে সহীহ সনদসমূহে বর্ণিত হয়েছে। একজন সাহাবীকেও পাওয়া যাবে না যে সে এ মতের বিরোধিতা করেছে। এর ওপর সাহাবীগণের ইজমার কথা একাধিক আলেম বর্ণনা করেছেন। দ্বিতীয় মত হলো এটি কবীরাহ গুনাহ ও মস্ত বড় পাপ। তার ত্যাগকারীকে হত্যা করা হবে। তবে তাকে কাফির সাব্যস্ত করা যাবেনা। এটি শাফেয়ী ও মালেকীদের মাযহা্ব। তৃতীয় মত হলো, এটি কবীরাহ গুনাহ ও মহাপাপ। তাকে আমরণ বা তাওবা করা পর্যন্ত বন্দী করে রাখা হবে। তবে তাকে কাফের সাব্যস্ত করা হবে না। এটি হানাফীদের মাযহাব। আর যে ব্যক্তি কোনো অপারগতার কারণে সালাত ছেড়ে দেয়, যেমন ঘুম, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি সে অবশ্যই অপারগ। তাকে অবশ্যই যখন স্মরণ হয় কাযা করতে হবে।
মাহযুরাত এমন সব হারাম বস্তুকে শামিল করে যা থেকে শরীআত প্রণেতা নিষেধ করেছেন এবং বিরত থাকতে বলেছেন, যাতে লিপ্ত ব্যক্তিকে তিনি শাস্তি দিবেন এবং যার থেকে বিরত থাকা ব্যক্তিকে তিনি সাওয়াব প্রদান করবেন। মাহযুরের আরও নাম হলো, মুহাররাম—হারাম, মাসিয়াত—অন্যায়, যানবুন-গুনাহ।