যাকাত একটি মহান ইবাদত এবং ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি রুকন ও মহান ভিত্তি। আর তাতে ব্যক্তি ও সমাজের জন্য অসংখ্য কল্যাণ রয়েছে। এর বাস্তবায়ন হয় বিষেশ সম্পদের মধ্যে যে হক ওয়াজিব হয়েছে তা আদায় করার মাধ্যমে। চাই তা প্রকাশ্যে হোক, যেমন, চতুষ্পদ জন্তু, ফসল, ফলমুল এবং ব্যবসায়িক পণ্য। অথবা অপ্রকাশ্য যেমন, স্বর্ণ, রৌপ্য ও নগদ টাকা। এ ছাড়া অন্য কোনো সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয় না। যেমন গাড়ি, পোশাক। আর এ হকের আদায় হবে বিশেষ পদ্ধতিতে। আর তা হলো, এ নিয়ত করবে যে, সে যে সম্পদগুলো বের করবে তা একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য ফরয যাকাত। আর তারা হলো আট শ্রেণির মানুষ যাদের কথা কুরআনে আলোচনা করা হয়েছে। তারা হলো, ফকীর, মিসকীন, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যারা তাদের ঋণ আদায় করতে অক্ষম, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, যাদের অন্তরসমূহকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা প্রয়োজন, গোলাম ও বন্ধিদের আযাদ করা, আল্লাহর পথের মুজাহিদ যারা জিহাদের জন্যে নিবেদিত, সেসব মুসাফির যাদের সফর অবস্থায় টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেছে। এর জন্য কতক শর্ত এবং নির্ধারিত অংশ রয়েছে।
সাদাকাহ: (সদকাহ) হ'ল সে বস্তু একজন ব্যক্তি গরিবদেরকে আল্লাহর সাওয়াব লাভের উদ্দেশ্যে যা দান করেন, কেবল উদারতার কাজ হিসাবে নয়। এভাবে সদকার সংজ্ঞা থেকে হাদিয়া ও হেবা বের হয়ে গেল যার উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পরিক বন্ধুত্ব ও মহব্বত। নীতিগতভাবে, "সাদাকাহ" শব্দটি স্বেচ্ছাসেবী দানকে বোঝায় এবং যাকাত ফরয দানকে বোঝায়। আরও বলা হয় যে, বাধ্যতামূলক দানকে "সাদাকাহ" বলা হয়, কেননা সদককারী সদকার দ্বারা তার কর্মে সত্যতার সাক্ষর রাখতে চায়। বস্তুত সদকাহ সদকাহ দানকারীর ইমানের বিশুদ্ধতা ও তার ঘোষণার সত্যতার লক্ষণ।
সাদকাতুল ফিতর এমন একটি ইবাদত যা রমযানের সাওমের পর আল্লাহ তার বান্দাদের জন্য চালু করেছেন। আর এটি হলো, প্রত্যেক মুসলিম চাই নারী হোক বা পুরুষ হোক এবং ছোট হোক বা বড় হোক তার পক্ষ থেকে শহরের লোকদের প্রধান খাদ্যের এক সা’ পরিমাণ খরচ করাকে সাদকাতুল ফিতর বলে। এটি পরিবার প্রধান তার অধীনস্থ সবার পক্ষ থেকে আদায় করবে। এটি অন্যায় অপরাধ থেকে রোযাদারের জন্য পবিত্রতা এবং মিসকীনদের জন্য খাদ্য স্বরূপ। এ ছাড়াও এ দিন তাদের যাতে কারো কাছে হাত পাততে না হয় এবং মুসলিমদের ওপর ঈদ আসাতে তারা যেভাবে আনন্দ করে সেভাবে তাদের অন্তরেও যাতে আনন্দ প্রবেশ করে। এটি ওয়াজিব হওয়ার ওয়াক্ত হলো, রমযানের শেষ দিনে সূর্যাস্ত যাওয়া। তবে উত্তম হলো, ঈদুল ফিতরের সালাতের আগে আদায় করা। আর ঈদের দুই বা তিন দিন আগে আদায় করাতে কোনো অসুবিধা নাই। যদি সময় মতো আদায় না করে তবে তা কাজা আদায় করবে এবং ফকির ও মিসকিনকে দিবে। জামহুর আলেমদের নিকট তার পরিমাণ হলো, গম ও ভুট্টা হতে বা এগুলোর আটা হতে বা খেজুর বা কিসমিস হতে এক সা’। আর সা’ হলো, মধ্যম ধরনের মানুষের হাতের কোষের চার কোষ। স্থায়ী ফতোয়া বিভাগ তাদের ফতোয়ায় প্রায় তিন কিলোগ্রাম দ্বারা এর পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন। আর (مجلة البحوث الإسلامية) ইসলামী গবেষণা বিষয়ক পত্রিকায় তার পরিমাণ প্রায় ২.৬ কিলোগ্রাম নির্ধারণ করেছে।
সোনা-রুপার যাকাত হলো, নির্ধারিত কিছু অংশ যাকাত হিসেবে বের করা। আর তা হলো, সোনা ও রুপা এবং তা থেকে উৎপন্ন দিরহাম, দিনার, নগদ অর্থ, অলংকার ইত্যাদি এবং আরো যত কাগজের মুদ্রা ও তার সাথে সম্পৃক্ত করা হয় এমন সম্পদ থেকে চল্লিশভাগের একভাগ বের করা। আর তা দেয়া হবে ফকীর মিসকীন ও এ ধরনের যারা যাকাতের হকদার তাদেরকে। আর যাকাত ফরয হয় তখনই যখন স্বর্ণ তার নিসাব পূর্ণ করবে। আর তার নিসাবের পরিমাণ হলো বিশ দীনার যা ৮৫ গ্রাম সমান হয়ে থাকে। আর রূপার নিসাব হলো, দুইশত দিরহাম যা ৫৮৫ গ্রামের সমান। আর তার মালিকানার ওপর পরিপূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া।
দুই ঈদের সালাত ইসলামের নিদর্শনসমূহ হতে একটি নির্দশন। এ সালাত হলো ঈদুল ফিতরের দিন অর্থাৎ শাওয়াল মাসের প্রথম দিন এবং ঈদুল আযহার দিন অর্থাৎ যিলহজ মাসের দশম দিন সশব্দে দুই রাকাত সালাত আদায় করা। সূর্য এক বর্শা বা দুই বর্শা পরিমাণ উপরে উঠলে দুই ঈদের সালাতের ওয়াক্ত শুরু হয়। আর তা নফল সালাত বৈধ হওয়ার ওয়াক্ত। আর সূর্য মধ্য আকাশ থেকে ঢলে পড়ার পূর্বে ওয়াক্ত শেষ হয়। অর্থাৎ যোহরের ওয়াক্তের কিছু সময় পূর্বে। এ সালাত অন্যান্য সাধারণ সালাতসমূহ হতে প্রত্যেক রাকাতে অতিরিক্ত তাকবীরের কারণে স্বতন্ত্র।