রুকু থেকে ওঠার পর সোজা হয়ে দাড়ানোর সময় একজন মুসল্লির বলা যে, ربَّنا ولَكَ الحَمْدُ।
তাকদীস হলো, মহান আল্লাহ, যিনি এক ও অদ্বিতীয়, যার কোন শরীক নাই তার পরিপূর্ণ মহত্ব ও পূর্ণতার সবোর্চ্চ চুড়া। কারণ, তার জন্য রয়েছে আযমাতের (বড়ত্বের) গুণ এবং জালাল ও কামালের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য। তাই তাঁর সব নামই হলো সুন্দর। আর তাঁর সব কর্ম হলো হিকমাহ। আর তার পুরো শরীআত হলো আদল ও রহমত। আর তার বান্দাগণের ওপর তার নিআমত অসংখ্য অগণিত। সুতরাং তিনিই সবোর্চ্চ সম্মান ও পুরোপুরি মহত্বের একক উপযুক্ত সত্ত্বা। তাঁর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম কুদ্দুস। আর তা হলো, তিনি তার স্বীয় সত্ত্বা, সিফাত ও নামসমূহে পরিপূর্ণ মহত্বের অধিকারী এবং সব ধরনের দোষত্রুটি ও দুর্বলতা থেকে তিনি মহাপবিত্র। তিনি সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর অলীদের অন্তরসমূহকে ইলম, ঈমান ও নেক আমল দ্বারা পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করেন। আর আল্লাহ ছাড়া অন্যরা আল্লাহর নিকট তার অবস্থান অনুযায়ী এবং আল্লাহ তার সম্মানের যে প্রথা চালু করেছেন সে অনুযায়ী তিনি সম্মানের অধিকারী হন। যেমন, মহান শরীআত কতক স্থান ও সময়ের সম্মান ও মর্যাদা দান করেছেন। কারণ, তাতে আল্লাহ এমন কতক ইবাদত চালু করেছেন যাতে তিনি খুশি ও সন্তুষ্ট হন। আর যে সব সম্মান এর বাহিরে তা হলো নিষিদ্ধ সম্মান যার অনুমতি আল্লাহ দেননি।
তাওহীদ হলো, সবচেয়ে বড় বিষয় আল্লাহ তাআলা যা তাঁর বান্দাদের ওপর ফরয। এটি হলো বান্দার ওপর আল্লাহর হক। আর এটি হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব নবী ও রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি। আর তাওহীদ হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সৃষ্টি, রাজত্ব ও পরিচালনায় একক। তিনিই ইবাদাতের একমাত্র হকদার। তিনি একক তার কোনো শরীক নেই। ইবাদত থেকে কোন কিছুই গাইরুল্লাহকে সোপর্দ করা যাবে না। আর তার জন্য রয়েছে নামসমূহ ও গুণসমূহ। তাতে তার কোন দৃষ্টান্ত ও সাদৃশ নাই। এই তাওহীদ তিন প্রকার: 1- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ। 2- তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ। 3- তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। সাব্যস্ত করা ও অসাব্যস্ত করা ছাড়া কোনো মানুষের তাওহীদ পরিপূর্ণ হয় না। প্রথম: সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যাবতীয় বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। দুই: অসাব্যস্ত করা, উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যেসব বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্যে খাস তা গাইরুল্লাহর জন্যে অসাব্যস্ত করা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পর এ উম্মাতের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তি হলেন, চার খলিফা যাদের অনুসরণ করা এবং তাদের আদর্শ মজবুত করে ধরার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন। তারা হলেন, আবূ বকর সিদ্দীক, আবূ হাফস উমার ইবনুল খাত্তাব, যুন নুরাইন উসমান ইবন আফফান ও আবূল হাসান আলী ইবনে আবূ তালেব রাদিয়াল্লাহু আনহুম, যারা ইসলামের শুরুতেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলেন। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর পর দীনকে ঈলম, আমল ও দাওয়াত সর্বদিক থেকে কায়েম করার লক্ষ্যে এবং মুসলিমদের কল্যাণ ও দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় কর্ম আঞ্জাম দেওয়ার জন্য খিলাফত ও ইমামতের দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হন। তাদের খিলাফত ত্রিশ বছর স্থায়ী হয়। দুই বছর তিন মাস হলো আবূ বকরের খিলাফতের সময়। আর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত সাড়ে দশ বছর, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত বারো বছর এবং আলী রাদিয়ালল্লাহু আনহুর খিলাফত চার বছর নয় মাস। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হলো তাদের মর্যাদার ধারাবাহিকতা তাদের খিলাফতের ধারাবাহিকতা অনুযায়ী।
তাসবীহ আল্লাহর প্রতি ঈমানের সাক্ষ্যসমূহের অন্তর্ভুক্ত এবং তার তাওহীদের নীতিসমূহের একটি নীতি। এ ছাড়াও এটি ইসলামী আকীদার সৌন্দর্য্যের দলীল। আর তার অর্থ হলা আল্লাহর তাজীম ও পবিত্রতা বর্ণনা করা এবং মুশরিক ও মুলহিদরা যেসব দোষত্রুটি তাঁর সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছে তা থেকে তাকে পবিত্র ও মুক্ত করা। যেমন, শরীক সাব্যস্ত করা, সন্তান সাব্যস্ত করা, সঙ্গীনি ইত্যাদি সাব্যস্ত করা। আর এটি হলো অন্তরসমূহ ও চিন্তা চেতনাকে আল্লাহর প্রতি কোন দূর্বলতার ধারণা পোষণ অথবা তার প্রতি কোন খারাপ সম্বোধন করা থেকে দূরে রাখা। আর এর দাবি হলো পূর্ণতার সিফাতসমূহকে আল্লাহর সঙ্গে সাব্যস্ত করা। আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের মধ্যে রয়েছে সাব্বুহু বা সুব্বুহু। আর এর অর্থ হলো, সে সত্বা যাকে সব ধরবের দোষ ও ত্রুটি থেকে আসমানসমূহ ও যমীনের অধিবাসীরা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন করে। তাসবীহ কখনো মুখে সুবহানাল্লাহ বলার দ্বারা হয়ে থাকে। আবার কখনো অঙ্গের দ্বারা হয়ে থাকে। আর তা হলো, আর তা হলো আল্লাহকে ছাড়া অন্যদের বাদ দিয়ে একক আল্লাহর ইবাদত করার দ্বারা। আর অন্তর দ্বারাও হয়ে থাকে। অন্তরে আল্লাহকে পবিত্র জানা এবং তার থেকে সব ধরনের ত্রুটি না করা। আর তার নাম, সিফাত ও সত্তাতে পূর্ণতার বিশ্বাস করা। তাসবীহ পাঁচ প্রকার: 1- আল্লাহর জাতে মুকাদ্দাসার তাসবীহ। 2- আল্লাহর জন্য ফিরিশতাদের তাসবীহ। 3- আল্লাহর জন্যে নবী ও তাদের অনুসারীদের মত নেককার মানুষের তাসবীহ। 4- আল্লাহর জন্য সমগ্র জগতের তাসবীহ। 5- আল্লাহর জন্যে জান্নাতে জান্নাতীদের তাসবীহ।
আল্লাহর আয়াতসমূহ: তা হলো এমন সব দলীল প্রমাণ ও নিদর্শন যা তার প্রতি পথ পদর্শন করে এবং কেবল তার ইবাদত করার দিকে ধাবিত করে। আল্লাহর আয়াতসমূহ দুই প্রকার: 1- কাওনী আয়াতসমূহ: আর তা হলো ছোট বড় সব সৃষ্টি যেমন, আসমানসমূহ, যমীন, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়সমূহ, গাছপালা পশুপাখি ইত্যাদি। এ সবের সৃষ্টি, পরিচালনার মধ্যে চিন্তা করা এবং এদের বিস্তারিত রহস্য সম্পর্কে ফিকির করা আল্লাহর তাওহীদের দিকে নিয়ে যায়। 2- শরয়ী আয়াতসমূহ: আর তা হলো রাসূলগণ যে সব ওহী নিয়ে এসেছেন। যেমন কুরআনুল করীম ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত। এখানে কুরআনের আয়াতসমূহের ওপর আয়াত শব্দের একটি ব্যবহার রয়েছে।
কুরআন: এটি আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর নাযিলকৃত। এটি আল্লাহর কালাম, মাখলুক নয়। আর এটি ইসলামের আকীদা, ইবাদত, আহকাম ও আদাবসমূহের কিতাব। কুরআনের অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন, সম্মান, ইয্যত, মহত্ব ইত্যাদি। আর কয়েকটি কারণে কুরআনকে সম্মানি (কারীম) হওয়ার গুণেগুণান্বিত করা হয়েছে। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি হলো: 1- যার বাণী তার, মহত্ব, বড়ত্ব ও সম্মান। 2- তাতে রয়েছে মানুষকে সম্মান দেয়া এবং সমস্ত উম্মতের ওপর তাদের প্রাধান্য দেয়া। 3- এটি এমন একটি কিতাব যাতে অধিক কল্যাণ ও বরকত প্রদান করা হয়েছে। ফলে তার তিলাওয়াতকারীকে সাওয়াব, ইলম ও আদব প্রদান করা হয়। 4- এটি তার স্বীয় শব্দ ও অর্থে একটি পবিত্র, মহান ও সম্মানি কিতাব।