পাঁচটি জিনিসের যে কোনো একটি দ্বারা বালেগ হওয়া সাব্যস্ত হয়। এর তিনটিতে পুরুষ ও নারী উভয়ই অংশিদার। আর তা হলো, স্বপ্নদোষ হওয়া, পশম ওঠা এবং (নির্ধারিত) বয়স হওয়া। আর দুটি পুরুষ ছাড়া শুধু নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আর তা হলো হায়েয ও গর্ভধারণ।
সুদ হারাম ও কবীরাহ গুনাহ। এটি দুই প্রকার। এক: ব্যবসায়িক সুদ (رِبا البُيُوعِ)। এটি সুদি সম্পদে হয়ে থাকে। এটিও দুই প্রকার: ১- রিবার ফদল (رِبا الفَضْلِ), আর তা হলো, সমজাতীয় একটি পণ্যকে অপর একটি পণ্যের বিনিময়ে বিক্রি করার ক্ষেত্রে পরিমাপে বা ওজনে বাড়িয়ে দেওয়া। যেমন, এক সা খেজুরকে দুই সা খেজুরের বিনিময়ে বিক্রি করা বা এক কিলো স্বর্ণ সোয়া কিলো স্বর্ণের বিনিময়ে বিক্রি করা। ২- রিবা নাসীআ (رِبا النَّسِيئَةِ), এটি হলো: রিবাল ফদল-এর ইল্লতে শামিল দু’টি বস্তুর পরস্পর ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় বস্তু কিংবা তার একটি বিলম্বে গ্রহণ করা। যেমন এক সা গমের বিপরীতে এক সা যব গ্রহণ করা চুক্তির বৈঠকের পরে অথবা রিয়াল ও পাউন্ডসের (টাকার) বিনিময় করা বিলম্বে গ্রহণ করার শর্তে। দুই হলো, ঋণের সুদ رِبا الدُّيونِ، أو رِبا القَرْضِ। আর সেটি হচ্ছে ঋণ দাতার ঋণের বিপরীতে শর্তসাপেক্ষে অধিক গ্রহণ করা। সুদকে বর্তমানে অনেকেই মুনাফা ইত্যাদি নাম বলে চালিয়ে যান। এ ধরনের নাম সম্পূর্ণ বাতিল।
নিষিদ্ধ বেচা-কেনা: এ হলো এমন সব বেচা-কেনা যা নিষিদ্ধ হওয়ার কথা কুরআন ও সুন্নাহে বা যে কোনো একটিতে বর্ণিত হয়েছে। এ সব কেনা-বেচা কখনো আল্লাহর হকের কারণে নিষিদ্ধ হয় যেমন, জুমার আযানের পরে কেনা-বেচা করা, আবার কখনো তা মানুষের হকের কারণে নিষিদ্ধ হয়। যেমন, অপর ভাইয়ের কেনা-বেচার ওপর কেনা-বেচা করা এবং (বাজারে পৌঁছার আগে) রাস্তা থেকে পণ্য ক্রয় করা। আবার কোনো কোনো কেনা-বেচা নিষিদ্ধ হয় আল্লাহ ও মানুষ উভয়ের হকের কারণে। যেমন, সুদের সাথে সম্পৃক্ত কেনা-বেচা। যদিও এ ধরনের কিছু কিছু কেনা-বেচা বিশুদ্ধ কেনা-বেচার শর্তসমূহকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা বেচা-কেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাতে সব শর্ত পাওয়া যেতে হবে এবং অশুদ্ধ ও নিষিদ্ধ বেচা-কেনার সব ধরনের শর্তমুক্ত হতে হবে। আর কেনা-বেচা ও লেনদেনের মুলনীতি হলো, জায়েয ও বৈধ হওয়া। তাই যখন লেন-দেনে সুদ, ধোকা, জুলুম বা মানুষের হক আত্মসাৎ করা ইত্যাদি শামিল হয় তখন তা হারাম হয়ে যায়। অনুরূপভাবে যখন বিশুদ্ধ কেনা-বেচা কিংবা বিশুদ্ধ চুক্তি ইত্যাদির এক বা একাধিক শর্ত ভঙ্গ করা হয় তখন তা হারাম হয়ে যায়।
বেচা-কেনা এমন একটি শরীআত অনুমোদিত লেনদেন যা মানতে উভয় পক্ষ বাধ্য। বিক্রেতা যেমন ক্রেতার জন্য বস্তুর মালিকানা বা মালের অধিকার হস্তান্তর করবে। আর ক্রেতা মূল্যের মালিকানা বিক্রেতার জন্য হস্তান্তর করবে। বেচা-কেনার রুকন তিনটি। বাক্য, ক্রেতা ও বিক্রেতা এবং যার ওপর আকদ হবে সে বস্তু। আর তার শর্ত হলো, সাতটি: 1- ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্মতি। 2- লেনদেনকারীর জন্য ক্রয় বিক্রয় করা বৈধ হতে হবে। যেমন, উভয়ে স্বাধীন হওয়া, মুকাল্লাফ হওয়া ও জ্ঞানী হওয়া। 3- বিক্রিত বস্তুটি এমন সম্পদ হতে হবে যার দ্বারা সাধারণত উপকার লাভ করা যায়। 4- বিক্রিত বস্তুটি বিক্রেতার মালিকাধীন হতে হবে বা আকদের সময় তা বিক্রি করার ব্যাপারে অনুমতিপ্রাপ্ত হতে হবে। 5- বিক্রিত বস্তুটি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য দেখা বা সিফাত বর্ণনা দ্বারা জানা থাকতে হবে। 6- মূল্য জানা থাকতে হবে। 7- বিক্রিত বস্তুটি হস্তান্তর যোগ্য হতে হবে।
মসজিদ হলো এমন স্থান যেটিকে স্থায়ীভাবে সালাত আদায়, যিকির, দোআ, দীনি জ্ঞান অর্জন, উম্মাতের অবস্থা পর্যবেক্ষণ ইত্যাদির জন্য ওয়াকফ আকারে খাস করা হয়েছে। তাতে আযান দিবে ও কিবলামুখী হবে। সালাতের কর্মসমূহের মধ্যে সিজদা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হওয়ায় স্থানের নামটি তা থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ, বান্দা সিজদাবস্থায় তার রবের সর্বাধিক কাছে থাকে। তাই তাকে মসজিদ বলা হয়। মসজিদের সীমানা হলো, যে দেয়াল বা কাঠ বা বাশ ইত্যাদি তাকে বেষ্টন করে রাখে। মসজিদ হলো জমিনের সবোর্ত্তম অংশ। তার রয়েছে বিশেষ মর্যদা ও ফযীলত আল্লাহর নিকট। আর কতক মসজিদ আছে যেগুলোকে আল্লাহ তাআলা বিশেষ ফযীলত ও গুণ দ্বারা বিশেষায়িত করেছেন যা অন্য কোন মসজিদের নেই। আর সে গুলো হলো, তিনটি মসজিদ। মক্কায় মসজিদে হারাম, মদীনায় মসজিদে নববী এবং কুদসে মসজিদে আকসা।