তাওহীদ হলো, সবচেয়ে বড় বিষয় আল্লাহ তাআলা যা তাঁর বান্দাদের ওপর ফরয। এটি হলো বান্দার ওপর আল্লাহর হক। আর এটি হলো শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব নবী ও রাসূলগণের দাওয়াতের ভিত্তি। আর তাওহীদ হলো, এ কথা বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় সৃষ্টি, রাজত্ব ও পরিচালনায় একক। তিনিই ইবাদাতের একমাত্র হকদার। তিনি একক তার কোনো শরীক নেই। ইবাদত থেকে কোন কিছুই গাইরুল্লাহকে সোপর্দ করা যাবে না। আর তার জন্য রয়েছে নামসমূহ ও গুণসমূহ। তাতে তার কোন দৃষ্টান্ত ও সাদৃশ নাই। এই তাওহীদ তিন প্রকার: 1- তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ। 2- তাওহীদুর রবুবিয়্যাহ। 3- তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত। সাব্যস্ত করা ও অসাব্যস্ত করা ছাড়া কোনো মানুষের তাওহীদ পরিপূর্ণ হয় না। প্রথম: সাব্যস্ত করা। অর্থাৎ উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যাবতীয় বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করা। দুই: অসাব্যস্ত করা, উবুদিয়্যাত, রুবুবিয়্যাত এবং নাম ও সিফাতসমূহের যেসব বৈশিষ্ট আল্লাহর জন্যে খাস তা গাইরুল্লাহর জন্যে অসাব্যস্ত করা।
তাওহীদুর রুববিয়্যাহ: আল্লাহর অস্তিত্বের প্রতি ঈমান আনা এবং স্বীয় কর্মসমূহে তাঁর একত্ববাদে বিশ্বাস করা। আর অকাট্যভাবে এ কথা বিশ্বাস ও স্বীকার করা যে, আল্লাহ সবকিছুর রব ও মালিক, তিনি একক। তিনি প্রতিটি বস্তুর স্রষ্টা ও রিযিকদাতা। আর তিনিই হায়াতদাকারী ও মৃত্যুদানকারী। তিনি উপকারকারী ও ক্ষতিকারী। বিপদের সময় দুআ কবুলে তিনি একক। তাঁর জন্যই রয়েছে যাবতীয় বিষয়। তার হাতেই যাবতীয় কল্যাণ। পরিকল্পনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সবকিছু তার দিকে প্রত্যাবর্তন করে। এতে তার কোনো শরীক নেই।
আল্লাহ মাখলুককে ইসলাম ও তাওহীদের ওপর সৃষ্টি করেছেন। ফলে প্রতিটি মানুষের স্বভাবের দাবি হলো ইসলাম কবুল করা. ইসলামকে জানা ও মহব্বত করা। ফিতরাত বা স্বভাব স্রষ্টাকে স্বীকার করতে, মুহাব্বত করতে এবং কেবল তার জন্য যাবতীয় ইবাদত সম্পাদন করতে বাধ্য করে। স্বভাবের দাবি ও চাহিদসমূহ স্বভাবের পূর্ণতা অনুযায়ী একটির পর একটি লাভ হয় যখন তা বাধা হতে নিরাপদ হয়। আর যখন ফিতরাত নিরাপদ না হয়, তা শয়তান, প্রবৃত্তি ও বিভিন্ন গোমরাহীর দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার কারণে বিকৃত হয়ে পড়ে। ফিতরাত সাধারণত আল্লাহর নিকট থেকে নাযিলকৃত শরীআত দ্বারা পরিপূর্ণ। কারণ, ফিতরাত বিষয়গুলো সংক্ষেপে জানে আর শরীআত তার ব্যাখ্যা প্রদান করে। সুতরাং শরীআতের বিস্তারিত জানার ক্ষেত্রে স্বভাব বা ফিতরাত স্বয়ং সম্পন্ন নয়। এ কারণে আল্লাহ ফিতরাতকে পরিপূর্ণ করার জন্যে তাদের নিকট রাসূলগণ প্রেরণ করেন।
সীরাতে মুস্তাকীম: আর তা হলো যা দিয়ে আল্লাহ তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন। এটি বাতেনী বিষয়—বিশ্বাস ও ইচ্ছাসমূহকে শামিল করে এবং প্রকাশ্য বিষয়—কথা ও কর্মগুলো শামিল করে। এটিই হলো ইবলিসের লক্ষ্য আদম সন্তানকে সিরাতে মুস্তাকীম থেকে বিরত রাখার জন্য তার ওপর উঠে বসে। সিরাতে মুস্তাকীম হলো সুস্পষ্ট রাস্তা যাতে কোনো বক্রতা নাই ও বিকৃতি নাই। আর তার প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে— আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করা এবং সুন্নাত ও জামাতের আনুগত্য করা এবং আল্লাহর গোলামীর পথ ইত্যাদিকে অবলম্বন করা।