তরজমা দুই প্রকার: ১- শাব্দিক অনুবাদ। আর তা হলো, বাক্যের শাব্দিক আকৃতি বা ইবারাতের ধারাবাহিকতা ঠিক রেখে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় অনুবাদ করা। ২- কথার অর্থের অনুবাদ: আর তা হলো, এমন শব্দাবলী দ্বারা বক্তব্যটি ব্যক্ত করা যা তার অর্থ ও উদ্দেশ্যকে স্পষ্ট করে। অনুবাদটি এখানে ব্যাখ্যার স্তরে হবে।
সব সম্প্রদায়েরই অভিবাদন রয়েছে যেটি তাদের নির্দশন ও বৈশিষ্ট্য স্বরূপ। এটি হয়ত তাদের দীনের বা তাদের কালচার ও পূর্বসুরীদের অনুকরণের অংশ। আর ইসলামের সম্ভাষণ হলো সালাম। এটি আল্লাহ তা‘আলা আদম আলাইহিস সালামকে শিখিয়েছেন এবং এটি তিনি চালু করেছেন। আর মুসলিমরা তা আবশ্যক করে নিয়েছে। এটি শান্তির জন্য দোয়া করার সাথে সাথে এমন একটি সম্ভাষণ যা অপরের অন্তরে প্রশান্তি ও নিরাপত্তার উদ্রেক করে। এতে রয়েছে আল্লাহর সালাম নামের প্রসার। এর বাক্য হলো, “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ ওয়া বারাকাতুহ” অর্থাৎ “তোমাদের ওপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তার বরকত নাযিল হোক।“ এতে কমপক্ষে ত্রিশটি নেকি রয়েছে। আর যদি কেউ “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ“ বলে, তাতে রয়েছে বিশটি নেকি। আর যদি কেউ “আসসাল্লামু আলাইকুম“ বলে তাতে রয়েছে দশটি নেকি। সালাম দেওয়া মুস্তাহাব। কেউ কেউ বলেন, ওয়াজিব। তবে সালামের উত্তর দেওয়া ওয়াজিব। উপরের তিনটি শব্দের যে কোনোটি দ্বারা উত্তর দেওয়া হয়। সালাম দেওয়ার শব্দের সাথে উত্তরের শব্দের মিল থাকা জরুরি নয়। যদি প্রবেশকারী বলে, “আসসাল্লামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ“ তাহলে তোমার জন্য তার উত্তরে “ওয়া আলাইকুমুস সালাম“ বলা বৈধ। কারণ, এটি সালামের জবাব। তবে পুরো বাক্য বলা উত্তম ও অধিক সুন্দর। যদি কোনো জামাত কোনো জামাতের সাথে বা ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করে, তখন তাদের থেকে একজনের সালামের উত্তর দেওয়া যথেষ্ট হবে। যেমনিভাবে মজলিসে প্রবেশ করার সময় সালামের প্রচলন রয়েছে অনুরূপভাবে মজলিশ ত্যাগ করার সময়ও সালাম দিতে হয়। সালামের অনেক বিধান ও আদাব রয়েছে।
আস-সালাত: অর্থাৎ পরিচিত ইবাদত দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। আর তা হলো জানা-শোনা কতক কর্ম যেমন দাঁড়ানো, বসা, রুকু ও সেজদা এবং বিশেষ কিছু কতক কথন যেমন কিরাত, যিকির ইত্যাদি। তাকবীরে তাহরীমাহ দিয়ে শুরু করা হয় এবং সালাম দিয়ে শেষ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে ও বিশেষ কতক শর্ত সাপেক্ষে আদায় করা হয়, যেমন পবিত্রতা, কিবলা মুখী হওয়া প্রভৃতি। সংক্ষেপে সালাতের নিয়ম হলো, প্রথমে দু্ই হাত কাঁধ বরাবর বা কান বরাবর তুলে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরীমাহ বলবে। তারপর ডান হাতকে বাম হাতের উপর রাখবে বুকের উপর বা বুকের নিচে। তারপর সানা পড়বে এবং সূরা ফাতেহা পড়বে। তারপর কুরআনের যেখান থেকে পড়া সহজ হয় সেখান থেকে কিরাত পড়বে। তারপর দুই হাত তুলে তাকবীর বলে রুকু করবে। রুকুতে সে তার দুই হাতকে দুই হাঁটুর উপর রাখবে। ভালোভাবে রুকু করবে এবং রকুতে গিয়ে (سبحانَ ربِّي العظيم) বার বার বলবে। পারলে হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো পড়বে। আর মাথা তুলে সোজা হয়ে ভালোভাবে দাঁড়াবে এবং ইমাম ও একা সালাত আদায়কারী (سمِعَ الله لمنْ حَمِده) বলবে। আর সবাই বলবে, (ربَّنا ولك الحمدُ)। আর হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো পারবে। তারপর তাকবীর বলে সেজদায় যাবে। সাতটি অঙ্গের উপর সেজদা করবে। আর সেগুলো হলো, দুই পায়ের অগ্রভাগ, দুই হাটু, দুই হাতের তালু, নাকসহ কপাল। ভালোভাবে সেজদা করবে এবং সেজদায় গিয়ে বার বার (سبحانَ ربِّي الأعلى) বলবে। আর হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো পারলে বাড়াবে। তারপর তাকবীর বলে বসবে। তার দুই হাত দুই উরুর বা হাটুর উপর রাখবে এবং স্থীরতার সাথে বসবে আর বলবে, (رَبِّي اغفرْ لي رَبِّي اغفرْ لي) তারপর আবার সেজদা করবে। তারপর মাথা উঠিয়ে দাড়াবে এবং সুূরা ফাতিহা ও তার সাথে অপর একটি সূরা পড়বে এবং প্রথম রাকাতে যা যা করেছিল তাই করবে। যদি সালাত দুই রাকাত বিশিষ্ট হয়, তবে তখন দ্বিতীয় বৈঠকের পর দুই সেজদার মাঝের বৈঠকের মতো করে বসবে। আর তাশাহুদ পড়বে (التَّحيِّاتُ لله والصَّلواتُ والطَّيِّباتُ، السَّلامُ عليكَ أيَّها النَّبيُّ ورحمةُ الله وبركاتُه، السَّلامُ عَلَينا وعَلَى عبادِ الله الصَّالحينَ، أشهدُ أن لا إله إلا الله وأشهدُ أنَّ محمَّدًا عبدُه ورسولُه) (সমস্ত মৌখিক, দৈহিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী! আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর প্রত্যেক নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো (সত্য) মাবুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।” তারপর দরূদে ইব্রাহীম পড়বে (اللَّهمَّ صلِّ على محمَّدٍ وعلى آلِ محمَّدٍ، كما صلَّيتَ على إِبراهيمَ وعلى آل إبراهيمَ، إنَّكَ حميدٌ مجيدٌ، اللَّهمَّ بارك على محمَّدٍ وعلى آل محمَّدٍ، كما باركتَ على إبراهيمَ وعلى آل إبراهيمَ، إنَّك حميدٌ مجيدٌ) “হে আল্লাহ! আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করুন, যেরূপ আপনি ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর পরিবারের ওপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অত্যন্ত মর্যাদার অধিকারী। হে আল্লাহ! মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারের ওপর তেমনি বরকত দান করুন যেমনি আপনি বরকত দান করেছেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পরিবারের উপর। নিশ্চয়ই আপনি অতিপ্রশংসিত, অতি মর্যাদার অধিকারী।” তারপর (السَّلام عليكم ورحمة الله) বলে ডান দিকে সালাম ফিরাবে এবং একই নিয়মে বাম দিকে ফিরাবে। তবে যদি সালাত দুই রাকাতের অধিক হয়, তখন সে তৃতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়িয়ে যাবে। তখন সে সূরা ফাতিহার পর সূরা মিলানো ছাড়া দ্বিতীয় রাকাতে যা করেছিল তাই করবে। আর চতুর্থ রাকআতেও এমনই করবে যেমনটি প্রথম রাকআতে করেছিল।
রুকু থেকে ওঠার পর সোজা হয়ে দাড়ানোর সময় একজন মুসল্লির বলা যে, ربَّنا ولَكَ الحَمْدُ।
স্থীরতা হচ্ছে, কিছু সময়ের জন্য জোড়া ও অঙ্গসমূহের স্বীয় স্থানে স্থির হওয়া। তার সর্ব নিম্ন হলো, এত সময় পরিমাণ স্থির থাকা যাকে পরিভাষায় স্থিরতা বলে। কেউ কেউ বলেন, সামান্য সময় অঙ্গসমূহের চলাচল না থাকা। আবার কেউ কেউ বলেন, রুকনের মধ্যে ওয়াজিব যিকির আদায়ের সময় পর্যন্ত। যেমন, একবার তাসবীহ বলা পরিমাণ সময়। এ দুই কথার মধ্যে উল্লেখিত বিষয়টি সালাতে ভুলকারীর কর্ম থেকে আলাদা করা যাবে না। অথচ তাকে পুনরায় সালাত আদায় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।