ইস্তেগফার একটি মহান ইবাদত; চাই তা গুনাহের সাথে হোক বা গুনাহ ছাড়া।এটি কখনো এককভাবে ব্যবহার হয়, তখন তা তাওবার সমর্থক হয়। আর তা হচ্ছে, অন্তর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্ধারা গুনাহ থেকে বিরত থাকা। আবার কখনো তাওবার সাথে মিলিয়ে ব্যবহৃত হয়, তখন ইস্তেগফারের অর্থ হলো, যা অতীত হয়েছে তার অনিষ্ঠতা থেকে হেফাযত কামনা করা। তাওবাহ হলো, ফিরে আসা এবং একজন ব্যক্তি তার কুকর্মের মন্দ পরিণতি থেকে ভবিষ্যতে হেফাযত কামনা করা। ইস্তেগফার শব্দটি বিভিন্ন বাক্যে ব্যবহার হয়েছে। যেমন কেউ বলল, (رَبِّ اغْفِرْ لِي) হে রব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। আবার কেউ বলল, (أَسْتَغْفِرُ اللهَ) আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই ইত্যাদি বাক্য।
গীবত হলো, অনুপস্থিতিতে দোষ আলোচনা করা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি কোন মানুষকে তার অগোচরে এমন কিছুসহ উল্লেখ করা যা সে অপছন্দ করে এবং যার আলোচনা তাকে কষ্ট দেয়। চাই তা তার দীন, দেহ, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, মাল, বা চলাফেরা ইত্যাদি যে কোন বিষয়ে হোক না কেন। চাই আলোচনাটি মুখে হোক বা ইশারায় হোক বা অন্য কোনোভাবে হোক। কারণ, ইঙ্গিত করা মুখে বলার মতো। এ ক্ষেত্রে কর্ম কথার মতো। আর ইশারা করা, ইঙ্গিত করা, লিখিত বলা, অঙ্গ ভঙ্গিতে বলা, চোখের ইশারায় বলা এবং যা দ্বারা উদ্দেশ্য বুঝা যায় এমন কিছু দিয়ে বলা সবই গীবতের অর্ন্তভুক্ত।
তাকওয়া: এটি উত্তম চরিত্রসমূহ অন্তর্ভুক্তকারী শব্দ। আর তার মূল হলো, আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের আনুগত্য করা দ্বারা আল্লাহর আযাব থেকে আত্মরক্ষা করা। এটি আত্মার এমন একটি গুণ, যা একজন মানুষকে আল্লাহর আদেশসমূহ পালন করা ও তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে উদ্ভুদ্ধ করে। অপর অর্থে, নিষিদ্ধ কর্মগুলো করা বা ওয়াজিবগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে শাস্তির উপযুক্ত হয় তা থেকে আত্মাকে হিফাযত করা এবং যে সব মুস্তাহাব, নফল কর্মগুলো পালন এবং মাকরূহ ও সংশয়যুক্ত কর্মগুলো থেকে বিরত থাকাতে মর্যদা বৃদ্ধি পায় সে সব গুণে গুণান্বিত হওয়া। আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের তাকওয়া অবলম্বনের আদেশ দিয়েছেন, আর ঈমান ও তাকওয়াকেই তার বন্ধুত্বের কারণ বানিয়েছেন এবং তা অবলম্বনকারীদের জন্য বিশাল সাওয়াব রেখেছেন।
মানুষের নফস যা ভালোবাসে এবং যা কিছু তার স্বভাবের সাথে মিলে বা উপযোগী হয় তার প্রতি ঝুঁকে যাওয়া। যদি তার নফস এমন কিছুর দিকে ঝুকে যা শরীআত পরিপন্থী তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির নিন্দনীয় অনুসরণ। আর যদি তার নফস এমন কিছুর দিকে ঝুঁকে যা শরীআতের বিধান অনুযায়ী হয় তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির প্রসংশনীয় অনুসরণ। প্রবৃত্তি দুই ভাগে বিভক্ত হয়: 1- প্রবৃত্তি যা দীনের যাবতীয় বিধানসমূহে হয়ে থাকে। এটিকে সংশয়ের প্রবৃত্তি বলে। এটি প্রবৃত্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকার। এ ধরনের প্রবৃত্তির অনুসরণ একজন ব্যক্তিকে বিদআত বা কুফরে পতিত করে। এ কারণেই বিদআতীদের প্রবৃত্তির পুজারী বলা হয়। কারণ, তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল এবং কুরআন ও সুন্নাহ হতে বিমুখ হল। 2- প্রবৃত্তি যা দুনিয়াবী বিষয়ে হয়ে থাকে। এটিকে রিপুর প্রবৃত্তি বলা হয়ে থাকে। যেমন, খাওয়া, বিবাহ করা। এ ধরণে প্রবৃত্তি একজন মানুষকে কখনো গুনাহ ও অশ্লীল কাজে নিয়োজিত করে। দীনি বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা রিপুর বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ অপেক্ষা অধিক মারাত্মক। আর মনে রাখতে হবে শরীআত আসছে মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করে শরীআতের অনুসরণের দিকে নিয়ে যেতে।
তাওবাহ হলো অনেক বড় নেক আমল এবং নবী ও রাসূলগণের চরিত্র। আর তা হলো, বান্দার বাহ্যিক ও অবাহ্যিক আল্লাহ যা অপছন্দ করেন তা ছেড়ে আল্লাহ যা পছন্দ করেন তার দিকে ফিরে আসা। তাওবাহ দুই প্রকার: 1- গোপনে তাওবাহ করা। এটি বান্দা ও তার রবের মাঝখানে হয়। যখন তাওবার শর্তসমূহ পাওয়া যায় তখন আল্লাহ তাওবাহ কবুল করেন। 2- প্রকাশ্যে তাওবাহ করা। আর তা হলো এমন তাওবাহ যার সাথে কর্তৃত্ব, সাক্ষ্য গ্রহণ করা, হদ (শাস্তি) বাতিল করা, মানুষের ওপর হুকুম দেওয়া ইত্যাদি সম্পর্ক রাখে। যেমন, যাদুকর ও নাস্তিকের তাওবাহ করা। তাওবার শর্তসমূহ হলো তাওবাহ হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। কাজেই তার দ্বারা দুনিয়া বা মানুষের বাহ বাহ ও প্রসংশা আশা করা যাবে না। আর গুনাহ থেকে সম্পূর্ণ ফিরে আসা, গুনাহ করার ওপর লজ্জিত হওয়া, সাথে সাথে ভবিষ্যতে এ গুনাহ না করার ওপর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। আর তাওবাহ হতে হবে সূর্য পশ্চিম আকাশে উদয় হওয়া আগে এবং মৃত্যুর সময় মৃত্যু যন্ত্রণার গড়গড় শব্দ আরম্ভ হওয়ার পূর্বে। আর তাওবা যদি অন্যের অধিকারের সাথে সম্পৃক্ত হয় তবে উক্ত ব্যক্তিকে তার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া: ইচ্ছা করে মিথ্যা সংবাদ দেওয়া যাতে বাতিল উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়। চাই তা শপথ সহকারে হোক বা শপথবিহীন। যেমন কোন আত্মাকে ধ্বংস করা বা সম্পদ লুন্ঠন করা বা হারামকে হালাল করা বা হালালকে হারাম করা ইত্যাদির জন্যে সাক্ষী দেয়া। মিথ্য সাক্ষ্য দানকারী চারটি বড় গুনাহে লিপ্ত হলো। প্রথমত: সে তার আত্মার ওপর মিথ্যা, অপবাদ এবং কবীরাগুনাহ হতে কোন একটি কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়ে জুলুম করল। দ্বিতীয়ত: সে যার বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করল এবং যার সম্পদ, ইজ্জত ও জানকে সাক্ষ্য দ্বারা ছিনিয়ে নিল তার ওপর জুলুম করল। তৃতীয়ত: আর সে জুলুম করল তার ওপর যার জন্য সে সাক্ষ্য দিল। যেমন সে তার কাছে হারাম মালকে নিয়ে গেল। চতুর্থত: আল্লাহ যা হারাম করেছেন সে তা নিজের কর্ম দ্বারা বৈধ করল।
প্রবৃত্তির অনুসরণ করা খারাপ ও গোমরাহীর মূল কারণ গুলোর একটি অন্যতম কারণ। আর তা হলো শরীআত বিরোধী কার্যকলাপের প্রতি মানুষের আত্মার ঝুঁকে যাওয়া। আর সেটি দুই প্রকার: 1- সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। এটি হলো প্রবৃত্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকার। প্রবৃত্তির অনুসরণ একজন মানুষকে বিদআত বা কুফরে লিপ্ত হওয়ার দিকে নিয়ে যায়। এ কারণেই বিদআতীকে প্রবৃত্তির অনুসারী বলা হয়ে থাকে। কারণ তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল এবং কিতাব ও সুন্নাহ থেকে বিমুখ রইল। 2- রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা। যেমন বৈধ বস্তু অতিক্রম করে হারামে লিপ্ত হওয়া। যেমন, সুদ খাওয়া, ব্যভিচার করা। এটি একজন মানুষকে ফাসেকীর মধ্যে লিপ্ত করে। সংশয়যুক্ত বস্তুতে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা রিপুর ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা অপেক্ষা অধিক মারাত্মক। আর ইসলামী শরীআতের আগমন হলো মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করে শরীআতের অনুসরণের দিকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে।
রিয়া হলো, ভালো কাজ অন্যকে দেখানো বা মানুষকে দেখানোর উদ্দেশ্যে ইবাদতকে প্রকাশ করা যাতে তারা তার প্রসংশা করে। অথবা বলা যায়, কোনো আমলে গাইরুল্লাহর প্রতি লক্ষ্য রেখে ইখলাস ছেড়ে দেয়া। কতক আহলে ইলম এ বলে ব্যাখ্যা করেছেন যে, রিয়া এমন কর্ম খালেক থেকে অমনোযোগী ও অন্ধ হয়ে যার দ্বারা উদ্দেশ্য হয়ে থাকে মাখলুকে দেখানো। এটি গোপন শির্ক এবং তার সাথে সম্পৃক্ত আমলকে ধ্বংসকারী। এ বিষয়ে কঠোর হুমকি এসেছে। একজন মুসলিমের জন্য উচিত হলো যাবতীয় আমল কেবল আল্লাহর জন্য করতে সচেষ্ট হবে।