মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার মানে হলো, তাদের আনুগত্য করা, তাদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা তাদের কষ্ট না দেয়া, তাদের মহব্বাত প্রকাশ করা এবং তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। আর এমন সব কর্ম দ্বারা তাদের সন্তুষ্টি করা যা করলে তারা খুশি হয়, যতক্ষণ তাতে পাপ না থাকবে। এখানে মাতা পিতা দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, বাবা ও মা। অনুরূপভাবে তা শামিল করে দাদা দাদি। চাই তারা মুসলিম হোক বা কাফির। তাদের মৃত্যুর পর তাদের সাথে ভালো ব্যবহার হলো, তাদের বন্ধু বান্ধব এবং তাদের সাথীদের সম্মান করা।
নাফরামানি করা কবীরাহ গুনাহসমূহের অর্ন্তভূক্ত। এর অনেক ধরণ আছে। আর তার মুলনীতি হলো, সন্তানের পক্ষ থেকে পিতা-মাতা বা তাদের একজনের এমন কষ্ট পাওয়া যা জ্ঞানীদের সমাজে গৌণ ও ছোট বিষয় নয়। সুতরাং যদি পিতা-মাতার পক্ষ থেকে এমন কোনো আদেশ বা নিষেধ পাওয়া গেল যা অমান্য করাকে উরফ তথা প্রথায় নাফরমানি মনে করে না, তখন সন্তান যদি তা না মানে, তাহলে তা নাফরমানী হবে না। নাফরমানীর আরও ধরণ হলো, প্রহার করা, ঘর থেকে বের করা, তাদের দু’জনের অথবা একজনের মুখের ওপর বকা-ঝকা (চিৎকার) করা।
মিথ্যা হলো, কোনো জিনিসের বাস্তবতা বিপরীত সংবাদ দেওয়া। চাই তা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত। চাই সংবাদটির বাতুলতা আবশ্যিকভাবে জানুক বা প্রমাণ সাপেক্ষে জানুক। মিথ্যা হলো, মুখের বিপদ এবং সব ধর্মেই তা একটি নিন্দনীয় অভ্যাস। অধিকন্তু এটি নিফাকের একটি ধরণ। কারণ, তাতে আছে বাস্তবতা গোপন করা এবং তার পরিপন্থীটিকে প্রকাশ করা। মিথ্যা কখনো মুখের দ্বারা হয়। এটি হলো মূল মিথ্যা। আবার কখনো অঙ্গের দ্বারা হয়, যেমন হাত দিয়ে ইশারাহ করা, আবার কখনো তা অন্তর দ্ধারা হয়, যেমন অস্বীকার করা। আর মিথ্যা তিন ভাগে ভাগ হয়: 1-আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করা। এটি মিথ্যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার। যেমন, কোনো বাতিল কথাকে আল্লাহর দিকে নিসবত করা এবং হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বলা। 2-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিধ্যারোপ করা। যেমন, বানোয়াট হাদীসগুলো তার দিকে নিসবত করা। 3-দুনিয়াবী ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের ওপর মিথ্যারোপ করা। প্রথম ও দ্বিতীয়টি গুনাহের দিক দিয়ে খুবই মারাত্মক।
গীবত হলো, অনুপস্থিতিতে দোষ আলোচনা করা। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি কোন মানুষকে তার অগোচরে এমন কিছুসহ উল্লেখ করা যা সে অপছন্দ করে এবং যার আলোচনা তাকে কষ্ট দেয়। চাই তা তার দীন, দেহ, চরিত্র, বৈশিষ্ট্য, মাল, বা চলাফেরা ইত্যাদি যে কোন বিষয়ে হোক না কেন। চাই আলোচনাটি মুখে হোক বা ইশারায় হোক বা অন্য কোনোভাবে হোক। কারণ, ইঙ্গিত করা মুখে বলার মতো। এ ক্ষেত্রে কর্ম কথার মতো। আর ইশারা করা, ইঙ্গিত করা, লিখিত বলা, অঙ্গ ভঙ্গিতে বলা, চোখের ইশারায় বলা এবং যা দ্বারা উদ্দেশ্য বুঝা যায় এমন কিছু দিয়ে বলা সবই গীবতের অর্ন্তভুক্ত।
আদ-দালাল (الضلال) গোমরাহী অর্থ হলো, সঠিক পথের ওপর অবিচল না থাকা। চাই তা কথার মধ্যে হোক বা কর্মের মধ্যে হোক বা বিশ্বাসের মধ্যে হোক। দালাল (الضلال) - গোমরাহী দুই প্রকার: 1- ইলম ও বিশ্বাসে গোমরাহী। যেমন কাফের. মুর্তি পুজারী ও আল্লাহর সিফাতকে অস্বীকারকারীদের গোমরাহ হওয়া । 2-আমল ও আহকামের ক্ষেত্রে গোমরাহ হওয়া। যেমন, গোনাহগারদের গোমরাহ হওয়া। আর গোমরাহ হওয়ার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে কুরআন ও সুন্নাহকে ছেড়ে দেয়া। যুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া, বিদআত করা, প্রবৃত্তির অনুসরণ করা, অজ্ঞতা ও সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি।
মানুষের নফস যা ভালোবাসে এবং যা কিছু তার স্বভাবের সাথে মিলে বা উপযোগী হয় তার প্রতি ঝুঁকে যাওয়া। যদি তার নফস এমন কিছুর দিকে ঝুকে যা শরীআত পরিপন্থী তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির নিন্দনীয় অনুসরণ। আর যদি তার নফস এমন কিছুর দিকে ঝুঁকে যা শরীআতের বিধান অনুযায়ী হয় তাহলে তা হবে প্রবৃত্তির প্রসংশনীয় অনুসরণ। প্রবৃত্তি দুই ভাগে বিভক্ত হয়: 1- প্রবৃত্তি যা দীনের যাবতীয় বিধানসমূহে হয়ে থাকে। এটিকে সংশয়ের প্রবৃত্তি বলে। এটি প্রবৃত্তির সবচেয়ে ক্ষতিকর প্রকার। এ ধরনের প্রবৃত্তির অনুসরণ একজন ব্যক্তিকে বিদআত বা কুফরে পতিত করে। এ কারণেই বিদআতীদের প্রবৃত্তির পুজারী বলা হয়। কারণ, তারা তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করল এবং কুরআন ও সুন্নাহ হতে বিমুখ হল। 2- প্রবৃত্তি যা দুনিয়াবী বিষয়ে হয়ে থাকে। এটিকে রিপুর প্রবৃত্তি বলা হয়ে থাকে। যেমন, খাওয়া, বিবাহ করা। এ ধরণে প্রবৃত্তি একজন মানুষকে কখনো গুনাহ ও অশ্লীল কাজে নিয়োজিত করে। দীনি বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ করা রিপুর বিষয়ে প্রবৃত্তির অনুসরণ অপেক্ষা অধিক মারাত্মক। আর মনে রাখতে হবে শরীআত আসছে মানুষকে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বের করে শরীআতের অনুসরণের দিকে নিয়ে যেতে।
আত্মীয় সম্পর্ক বলতে আত্মীয়দের সাথে যাবতীয় ধরনের ভালো ব্যবহারকে বুঝায়। চাই বাহ্যিক হোক বা আত্মীক হোক। আর তা একাধিকভাবে হতে পারে। সম্পদ দ্বারা হতে পারে। সম্মান পদর্শন দ্বারা হতে পারে, উপদেশ দ্বারা হতে পারে, মতামত ও পরামর্শ দ্বারা হতে পারে। শরীর দ্বারা হতে পারে। আবার কখনো দেখা শোনা করা, দোয়া করা, প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা, ইয্যতের হেফাযত ইত্যাদি দ্বারা হতে পারে। আর আত্মীয়তার সম্পর্ক আত্মীয়, সম্পর্ক এবং তাদের অধিকার ও অবস্থার ভিন্নতার কারণে বিভিন্ন হয়ে থাকে। আর নিকট আত্মীয় দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, ব্যক্তির পরিবার এবং তার ও আত্মীয়ের মধ্যে বংশ রয়েছে। যেমন, মাতা-পিতা ও তার দাদা, পর দাদা যদিও তা উপরে আরও যায়। অনুরুপভাবে সন্তান সন্ততি নাতি পুতি যত নিচেই যাক। আর ভাই ও তার সন্তানেরা বোন ও তাদের সন্তানেরা। চাচা, ফুফি, মামা খালা ও তাদের সন্তানেরা। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কাছে হওয়া জরুরি নয়। আর একজন মানুষকে তার নিয়্যতের কারণেই সাওয়াব দেয়া হবে এবং আল্লাহর ইবাদত হিসেবে করার কারণে সাওয়াব দেওয়া হবে। আর এটিকে ভাগাভাগি করা যায় না। সুতরাং কারো জন্য এটি বৈধ নয় যে, কাউকে খাস করবে এবং অপরকে বাদ দেবে। যেমনটি বর্তমানে কিছু মানুষ করে থাকে। তারা কতকের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখে আবার দুনিয়াবি কারণে কারো কারো সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে। আর সুস্পষ্ট ভুল ধারণা হলো এ ধারণা করা যে, এটি শুধু এক প্রকার যেমন মাল। বরং এটি হলো দেখতে যাওয়া, সাক্ষাত করা, সালাম দেওয়া ইত্যাদি। চাই তা আনন্দের সময় হোক বা বিপদের সময়।