সাম্প্রদায়িকতা : অন্যায়ের ওপর গোত্র বা বংশের সাহায্যের প্রতি আহ্বান করা অথবা যার বিষয়টি তোমার নিকট গুরুত্বপূর্ণ তাকে হক বা বাতিলের ক্ষেত্রে সাহায্য করা। এর কতক ধরণ হলো, এক লোক অপর লোককে এ জন্য ঘৃণা করে যে, সে অমুকের বা অমুক বংশের সন্তান, যদিও তা শত্রুতার পর্যায়ে না পৌঁছে। এটি শরীআতকর্তৃক প্রত্যাখ্যাত। কারণ, এটি হলো অন্যায় ও অপরাধের ওপর সাহায্য করা। যেমনিভাবে এটি ইসলামী আকীদার ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও শত্রুতার মূলনীতি পরিপন্থী। অতএব যে ব্যক্তি পক্ষপাতমূলক কোনো সম্প্রদায়ের পক্ষাবলম্বন করল ও তাদের হয়ে মারামারি করল, আল্লাহর দীনকে সমুন্নত রাখা বা তার দীনের প্রসারের জন্যে নয়, সে অন্যায়ে ওপর হবে এবং এ কারণে সে গুনাহগার হবে। এমনকি যদিও যার জন্য ক্ষুব্ধ হলো সে হকের ওপর থাকে। সব ধরণের এবং সব পদ্ধতির সাম্প্রদায়িকতা নিষিদ্ধ হওয়া বিষয়ে অনেক হাদীস রয়েছে। যেমন গোত্রের জন্য, জাতির জন্য, ভূমির জন্য এবং বর্ণ ইত্যাদির জন্য সাম্প্রদায়িকতা। সাম্প্রদায়িকের মৃত্যুকে জাহেলী মৃত্য বলে গণ্য করা হয়েছে। যেমনিভাবে ইসলাম বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদের প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে গর্ব করাকে বাতিল করেছে। আর ইসলাম শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড করেছে তাকওয়া ও আমলে সালেহকে। ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন সাম্প্রদায়িকতা সাক্ষ্যের প্রতিবন্ধক। কারণ, সাম্প্রদায়িকতায় প্রসিদ্ধ ব্যক্তির পক্ষে তার কওমের স্বার্থে বা অন্য কওমের ক্ষতি করার জন্য সাক্ষ্যকে বিকৃত করা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
মিথ্যা হলো, কোনো জিনিসের বাস্তবতা বিপরীত সংবাদ দেওয়া। চাই তা ইচ্ছাকৃত হোক বা অনিচ্ছাকৃত। চাই সংবাদটির বাতুলতা আবশ্যিকভাবে জানুক বা প্রমাণ সাপেক্ষে জানুক। মিথ্যা হলো, মুখের বিপদ এবং সব ধর্মেই তা একটি নিন্দনীয় অভ্যাস। অধিকন্তু এটি নিফাকের একটি ধরণ। কারণ, তাতে আছে বাস্তবতা গোপন করা এবং তার পরিপন্থীটিকে প্রকাশ করা। মিথ্যা কখনো মুখের দ্বারা হয়। এটি হলো মূল মিথ্যা। আবার কখনো অঙ্গের দ্বারা হয়, যেমন হাত দিয়ে ইশারাহ করা, আবার কখনো তা অন্তর দ্ধারা হয়, যেমন অস্বীকার করা। আর মিথ্যা তিন ভাগে ভাগ হয়: 1-আল্লাহর ওপর মিথ্যারোপ করা। এটি মিথ্যার সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রকার। যেমন, কোনো বাতিল কথাকে আল্লাহর দিকে নিসবত করা এবং হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম বলা। 2-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর মিধ্যারোপ করা। যেমন, বানোয়াট হাদীসগুলো তার দিকে নিসবত করা। 3-দুনিয়াবী ইত্যাদি বিষয়ে মানুষের ওপর মিথ্যারোপ করা। প্রথম ও দ্বিতীয়টি গুনাহের দিক দিয়ে খুবই মারাত্মক।
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া: ইচ্ছা করে মিথ্যা সংবাদ দেওয়া যাতে বাতিল উদ্দেশ্য হাসিল করা যায়। চাই তা শপথ সহকারে হোক বা শপথবিহীন। যেমন কোন আত্মাকে ধ্বংস করা বা সম্পদ লুন্ঠন করা বা হারামকে হালাল করা বা হালালকে হারাম করা ইত্যাদির জন্যে সাক্ষী দেয়া। মিথ্য সাক্ষ্য দানকারী চারটি বড় গুনাহে লিপ্ত হলো। প্রথমত: সে তার আত্মার ওপর মিথ্যা, অপবাদ এবং কবীরাগুনাহ হতে কোন একটি কবীরাহ গুনাহে লিপ্ত হয়ে জুলুম করল। দ্বিতীয়ত: সে যার বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করল এবং যার সম্পদ, ইজ্জত ও জানকে সাক্ষ্য দ্বারা ছিনিয়ে নিল তার ওপর জুলুম করল। তৃতীয়ত: আর সে জুলুম করল তার ওপর যার জন্য সে সাক্ষ্য দিল। যেমন সে তার কাছে হারাম মালকে নিয়ে গেল। চতুর্থত: আল্লাহ যা হারাম করেছেন সে তা নিজের কর্ম দ্বারা বৈধ করল।