নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর সালাত পড়া একটি মহান ইবাদত। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তার সম্মান ও মর্যাদা। সালাতের শব্দাবলীর অন্যতম হলো صلّى اللهُ عليه وسلّم বলা (আল্লাহ তার ওপর সালাত ও সালাম প্রেরণ করুন)। আর নূন্যতম বলা হলো (اللَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ) হে আল্লাহ মুহাম্মাদের উপর সালাত নাযিল করুন। আর উত্তম হলো সালাতে (দুরুদে) ইবরাহীমী। আর তা হলো এ কথা বলা, (للَّهُمَّ صلِّ على مُحَمَّدٍ، وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما صَلَّيْتَ على آل إبْراهِيمَ إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بارِك على مُحَمَّدٍ وعلى آل مُحَمَّدٍ، كما بارَكْتَ على إِبْراهِيمَ، إنّك حَمِيدٌ مَجِيدٌ) এ দরুদের আরও বর্ণনা রয়েছে। হাদীসে বর্ণিত (اللَّهمَّ صَلِّ عليه) এর অর্থ: হে আল্লাহ আপনি উর্ধ্বজগতে আপনার সম্মানিত মালায়েকাদের মাঝে তাঁর প্রশংসা করুন।
উলুল আযম রাসূলগণ: তারা হলো সেসব নবী যারা মানবজাতির সর্বোৎকৃষ্ট ও আল্লাহর অধিক তাকওয়া অবলম্বনকারী। আল্লাহ কতক রাসূলকে কতকের ওপর পূর্ণতা দিয়েছেন এবং কতককে কতকের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। আর এর কারণ হলো, আল্লাহ যাদের ফযীলত দান করেছেন, তাদের তিনি এমন কল্যাণ দিয়েছেন যা তিনি অন্য কাউকে দেননি বা তার মর্যাদাকে অন্যের মর্যাদার ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। অথবা আল্লাহর ইবাদত বন্দেগীতে, তার প্রতি দাওয়াত দেওয়াতে এবং তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে তিনি অন্যদের চেয়ে অধিক পরিশ্রম করেছেন, ফলে তারাই উলুল আযম রাসূলগণ। আর তাদেরকে উলুল আযম বলা হয়, কারণ, তারা তাদের কাওমের যুলুম-নির্যাতনের ওপর সবর করেছেন। তাদের দেওয়া কষ্ট-ক্লেশ ও গাল-মন্দ ইত্যাদির ওপর সবর করেছেন। অন্যদের তুলনায় তারা বেশি কষ্ট সহ্য করেছেন। আর যে আযম (العزم ) দ্বারা আল্লাহ তাদের প্রসংশা করেছেন এবং তাদের ফযীলত বর্ণনা করেছেন তার অর্থ হলো, দৃঢ়তা, প্রত্যয়, শক্তি। আর সবর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, রিসালাতের দায়িত্ব গ্রহণের ওপর ধৈর্যধারণ করা, আমানত আদায় ও তা বহন করার কষ্টের ওপর ধৈর্যধারণ করা। রিসালাতের দায়িত্ব আদায় ও তাবলীগ করার ক্ষেত্রে সর্বাত্মক চেষ্টা ও সর্ব শক্তি ব্যয় করা, সাথে যাদের কাছে তাদের প্রেরণ করা হয়েছে তাদের কষ্টের ওপর ধৈর্য ধারণ করা। এ ধরনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্যের নিদর্শন হলো, নূহ আলাইিহ সালাম অন্যদের থেকে অধিক মর্যাদাবান, কারণ, তিনি হলেন, সর্ব প্রথম রাসূল যাকে আল্লাহ রাসূল বানিয়ে পাঠিয়েছেন। আর তিনি হলেন, মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা। তার পর যত নবীগণ দুনিয়াতে এসেছেন সবাই তারই বংশধর। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ, তিনি রহমানের বন্ধু, আল্লাহ তাকে বিভিন্ন মুজিযা দ্বারা সম্মানিত করেছেন। ফলে তার বংশধরদের মধ্যে নবুওয়াত ও আসমানি কিতাব নাযিল করেছেন। মানুষের অন্তর তার মুহাব্বাতে এবং তাদের মুখ তার প্রসংশায় পরিপূর্ণ। মুসা আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ, তিনি কালীমুল্লাহ, তিনি বনী ইসলাঈলের মহান নবী। তার শরীআত ও কিতাব বনী ইসরাইলের নবীগণ ও তাদের আলেমদের মূল। আর তার অনুসারীদের সংখ্যা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারী ছাড়া সব নবীগণের থেকে অধিক। ঈসা আলাইহিস সালাম অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। কারণ আল্লাহ তাআলা তাঁর সত্যতা প্রমাণে অনেক মুজিযা দিয়েছেন। তিনি সত্যিকারে আল্লাহর রাসূল। তিনি আল্লাহর হুকুমে অন্ধ এবং কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দান করতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতেন। তিনি শৈশবে দোলনায় মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আল্লাহ তাঁকে রুহুল আমীনের মাধ্যমে সাহায্য করেছেন। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত সব রাসূল থেকে সর্বোত্তম রাসূল। তিনি শেষ নবী, মুত্তাকীনদের ইমাম, আদম সন্তনের সরদার, যে মাকামে মাহমুদের প্রতি আগের ও পরের সবাই আগ্রহ করবেন তিনি তার অধিকারী। তিনি হামদ ও হাউযে কাউসারের মালিক। কিয়ামতের দিন মাখলুকের সুপারিশকারী, তিনি ওসীলাহ ও ফযীলাহের মালিক, যাকে আল্লাহ সর্বত্তোম কিতাব দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তার জন্য চালু করেছেন তার দীনের সর্বত্তোম শরীআতসমূহ। আর তার উম্মাতদের সবোর্ত্তম উম্মাত বানিয়েছেন যাদের মানুষের কল্যাণে বের করা হয়েছে।