আবূ হামযা অথবা আবূ সুমামাহ আনাস ইবন মালিক ইবনু নাধার ইবন ধামধাম আল-আনসারী আন-নাজ্জারী আল-খাযরাজী আল-বাসরী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। হিজরীতের দশ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খাদেম ও অধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। বসরাতে মৃত্যুবরণকারী সর্বশেষ সাহাবী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দু‘আ করে বলেছেন: “হে আল্লাহ! আপনি তার সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দিন আর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান।” তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বদরের যুদ্ধে গিয়েছিলেন; তখন তিনি ছোট তাঁর খিদমত করতেন। আবূ বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে যখন খিলাফা নির্ধারণ করা হল, তখন তিনি আনাসের কাছে দূত পাঠালেন যেন তিনি বাহরাইনে যাকাত আদায়কারী দায়িত্বশীল হিসেবে যোগদান করেন। সে সময় উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আবূ বকরের কাছে প্রবেশ করলে তিনি তার কাছে পরামর্শ চান, তিনি বললেন: তাকে পাঠান। সে বুদ্ধিমান লেখক। তিনি বলেন: তখন তিনি তাকে পাঠালেন। তিনি ৯৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ মাহযূরাহ আউস ইবন মি‘য়ার আল-কুরাইশী আল-জুমাহী, তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তার নাম ও তার পিতার নাম নিয়ে আলিমগণ ইখতিলাফ করেছেন। তিনি হুনাইনের যুদ্ধের পরে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কণ্ঠকে পছন্দ করে তাকে ইসলামের পথে আহ্বান করলে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বলেন: আমাকে তিনি নিজেই আযান শিখিয়েছেন, তিনি বললেন, বল: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার... এভাবে শেষ পর্যন্ত। যখন তিনি আযান শিখে ফেললেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মক্কাতে তার মুয়াজ্জিন হিসেবে নিয়োগ করলেন। তার থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তিনি ৫৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
আইয়ূব আলাইহিস সালাম, ধৈর্যশীল নবী, মূসা আলাইহিস সালামের আগেকার নবীদের একজন তিনি। তিনি ফিলিস্তিনের পূর্বাঞ্চলে আউস এর ভুমিতে অথবা হাওরান এলাকায় বাস করতেন। আরব ঐতিহাসিকদের কাছে তিনি হচ্ছেন ইবরাহীম খলীলের বংশধর, তাদের মধ্যে পাঁচ পুরুষের ব্যবধান ছিল। আল্লাহ তাকে পরীক্ষা করেছিলেন সন্তান ও সম্পদ কেড়ে নেওয়া এবং আঠারো বছর ব্যাপী শরীরে রোগের মাধ্যমে, তিনি এতে ধৈর্য ধরেছিলেন এমনকি তিনি এক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে গিয়েছিলেন, তারপরে আল্লাহ তার রোগকে দূর করে দিয়েছিলেন।
কা‘ব ইবন ‘উজরাহ আল-আনসারী আস-সালিমী আল-মাদানী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি বাই‘আতুর রিদওয়ানে অংশগ্রহণ করেন।
মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আত-তূসী, আবূ হামিদ আল-গাজ্জালী ‘জা’ বর্ণে তাশদীদ সহকারে হবে। আর এভাবেই হরকত প্রদান করেছেন, ইবনুস সাম‘আনী, ইবনুল আছীর, নববী, ইবনু খাল্লিকান, ইবনু দাকীকুল ‘ঈদ, যাহাবী, সুবকী, সাখখাভী এবং মুর্তাজা আয-যাবিদী। আর এ ব্যাপারে মতানৈক্য থাকা সাপেক্ষে এটিই গ্রহণযোগ্য মত। তিনি ৪৫০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে উসুল শাস্ত্রবিদ ও একজন শাফেয়ী ফকীহ, তার অসংখ্য রচনাবলী রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম: ‘ইহইয়ায়ে উলূমিদ্দীন’, আল-মুস্তাসফা ফী উসূলিল ফিকহ এবং ফিকহের ক্ষেত্রে: ‘আল-ওয়াজীয’, ‘আল-ওয়াসিত’ এবং ‘আল-বাসিত’। তিনি দর্শনশাস্ত্রে মনোনিবেশ করেন, তারপর তিনি দর্শন থেকে ফিরে আসেন এবং তার বিরুদ্ধে খন্ডন মূলক বই লেখেন। এবং তিনি তারপরে যাকে কালাম শাস্ত্র বলা হয়, তাতে মনোনিবেশ করেন এবং সেখানে তার মূলনীতি সমূহ এবং মাসআলার মধ্যে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন, তারপর তিনি সেখান থেকেও ফিরে আসেন; তার সামনে এটার অথর্বতা, অগ্রহণযোগ্যতা ও কালাম শাস্ত্রবিদদের নিজস্ব দ্বন্দ স্পষ্ট হওয়ার কারণে। এবং যখন তিনি প্রথম জীবনে দর্শন শাস্ত্রবিদদের বিরুদ্ধে উপনীত হয়েছিলেন, তখন তিনি কালামশাস্ত্রবিদ ছিলেন আর তখনই তাকে ‘হুজ্জাতুল ইসলাম’ নামে আখ্যায়িত করা হয়; কেননা তিনি তাদেরকে নির্বাক করে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি বাতেনীদের তরীকা গ্রহণ করেন এবং এরপর তিনি সেখান থেকেও ফিরে আসেন। আর বাতেনী ফিরকার আকিদার বিভ্রান্তি তিনি স্পষ্ট করেন এবং তাদের দ্বারা কুরআন-সুন্নাহ এবং শরীয়তের বিধানসমূহের ব্যাপারে খেলা করার বিষয়টিও তুলে ধরেন। এর পরে তিনি সুফিদের পন্থা অবলম্বন করেন। ইবনুস সলাহ তার ব্যাপারে বলেন: “আবু হামিদ, তার ব্যাপারে এবং তার থেকে অনেক কথাই রয়েছে। কিন্তু তার এই সমস্ত গ্রন্থসমূহ -অর্থাৎ হকের বিপরীতে লিখিত তার গ্রন্থাবলী- সেদিকে দৃষ্টিপাত করা যাবে না। আর এই ব্যক্তি সম্পর্কে চুপ থাকতে হবে, আর তার বিষয়টি আল্লাহর কাছেই সোপর্দ করতে হবে।” যাহাবী বলেন: “এই লোকটি দর্শনশাস্ত্রকে তিরস্কার করে ‘তাহাফুত’ নামক একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। এবং তিনি তাদের দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে দিয়েছিলেন, তবে কিছু স্থানে তিনি তাদের সাথে একমত পোষণ করেছিলেন, এ ধারণার বশবর্তী হয়ে যে, সেটা সঠিক এবং তা হচ্ছে দীনের মুতাবিক। কিন্তু তার হাদীস শাস্ত্রে কোনো জ্ঞান ছিল না এবং বিবেকের উপর ফয়সালাকারী সুন্নাতে নববী সম্পর্কেও তার কোনো অভিজ্ঞতা ছিলনা। আর তার কাছে একটি কিতাবের মধ্যে গভীর মনযোগ দেওয়া প্রিয় হয়ে ওঠে, যার নাম: “রাসাইলু ইখওয়ানিস সফা”, আর এটি ছিল একটি গোপন রোগ সমতুল্য, অনিবারক পাঁচড়া সদৃশ এবং জীবননাশক বিষ। যদি না আবু হামিদ অত্যন্ত মেধাবী এবং মুখলিছদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হতেন, তবে নিশ্চিত তিনি ধ্বংস হয়ে যেতেন। সুতরাং সাবধান, সাবধান, এই সমস্ত গ্রন্থ থেকে। তোমরা তোমাদের দীন (ইসলাম) নিয়ে প্রথম যুগের মানুষদের সন্দেহ থেকে পলায়ন কর; অন্যথায় তোমরা বিভ্রান্তির মধ্যে পতিত হবে।” আবু বাকর ইবনুল আরাবী বলেন: “আমাদের শায়খ আবু হামিদ: তিনি দার্শনিকদেরকে গিলে ফেলেছেন এবং তাদেরকে বমি করে উগরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি।” কাযী আয়াদ বলেন: “আবু হামিদ ছিলেন অত্যন্ত মন্দ জ্ঞান ও তথ্যের বাহক, ভয়াবহ ত্রুটিযুক্ত গ্রন্থসমূহের লেখক। তিনি সূফীবাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি করেন এবং তাদের মাযহাবকে সাহায্য করতে আত্মনিয়োগ করেন এবং তার দায়ী হিসেবে পরিণত হন। এবং ঐ শাস্ত্রে তিনি তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ রচনা করেন -তথা ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন- এবং সেখান থেকে বেশ কিছু স্থান সমালোচিত হয়েছে, আর উম্মতের ধারণা তার ব্যাপারে খুব খারাপ হয়ে গেছে। আল্লাহই তার গোপন সংবাদের ব্যাপারে জানেন। আমাদের কাছে সুলতানের আদেশ ও ফকীহদের ফাতওয়া বাস্তবায়িত হয়েছে, আর তা হচ্ছে: সেগুলোকে পুড়িয়ে ফেলা এবং তার থেকে দূরে থাকা, সুতরাং তা কার্যকরী হয়েছে।” ইবনুল জাওযী বলেন: “আবূ হামিদ ‘ইহইয়াউ উলূমিদ্দীন’ নামক গ্রন্থ রচনা করেছেন, তিনি সেটিকে জাল এবং বানোয়াট হাদীস দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন, কিন্তু তিনি সেগুলোর জাল বা বানোয়াট হওয়ার ব্যাপারে জানতেন না। তিনি কাশফের ব্যাপারে আলোচনা করেছেন আর ফিকাহ শাস্ত্রের নিয়মকানুন থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন।” তিনি ৫০৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ আমর উওয়াইস ইবন আমির ইবন জুয ইবন মালিক আল-কারানী। তিনি বড় মাপের তাবেয়ীদের মধ্য হতে একজন সম্মানিত তাবেয়ী ছিলেন। অত্যন্ত ধার্মিক ও ইবাদাতগুজারদের অন্যতম ছিলেন। তার মূল বংশ ইয়ামানী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবিতাবস্থা পেলেও তাকে দেখেননি। পরবর্তীতে উমার ইবনুল খাত্তাবের কাছে আগমণ করেন এবং তারপরে তিনি কূফাতে বসবাস করেন। প্রমাণিত আছে যে, তিনি শ্রেষ্ঠ তাবেয়ী। যেমন উসাইর ইবন জাবির হতে প্রমাণিত, তিনি বলেছেন: উমার ইবনুল খাত্তাবের কাছে যখন ইয়ামানীদের সাহায্যকারী ফৌজ আসত- অর্থাৎ যোদ্ধাদের দল, যারা যুদ্ধে মুসলিম সৈন্যবাহিনীকে সাহায্য করতেন- তখন তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করতেন: “তোমাদের মধ্যে কি উওয়াইস ইবন আমির রয়েছে?” অবশেষে উওয়াইস পর্যন্ত পৌঁছলেন, তিনি বললেন: তুমিই উওয়াইস ইবন আমির? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি বললেন, “তুমি ‘মুরাদ’ বংশের তারপর ‘কারন’ বংশের? তিনি বললেন: হ্যাঁ, তিনি বললেন, তোমার কুষ্ঠরোগ ছিল আর তুমি তার থেকে নিরাময় লাভ করেছো এক দিরহাম জায়গা ছাড়া? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন: হ্যাঁ। তখন উমার বললেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “তোমাদের কাছে ইয়ামেনের সাহায্যকারী ফৌজের সাথে উওয়াইস ইবন আমির আসবে। সে হবে মুরাদ গোত্র হতে, তারপরে ‘করন’ হতে। তার কুষ্ঠরোগ ছিল, সে তার থেকে নিরাময় লাভ করেছে এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ছাড়া। তার মাতা জীবিত, আর সে তার অনুগত (সেবক)। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে আল্লাহ তা অবশ্যই পূরণ করবেন। যদি তুমি পার যে, সে তোমার জন্য ইস্তেগফার (গুনাহ মাফের দু‘আ) করবে, তবে তাই কর।” অতএব তুমি আমার জন্যে ইস্তিগফার কর। তখন তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করেন। উমার তাকে বললেন: তুমি কোথায় যাবে? তিনি বললেন: কূফা। তিনি বললেন: আমি কি সেখানের প্রশাসকের কাছে তোমার জন্যে লিখে দেব না? তিনি বললেন: আমি সাধারণ মানুষের সাথে থাকাকেই পছন্দ করি। রাবী বলেন: পরবর্তী বছরে তাদের অভিজাত লোকেদের মাঝে এক লোক হজ্ব করতে আসলে উমার এর সাথে তার দেখা হল। তিনি তাকে উওয়াইস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। সে বলল: আমি তাকে জরাজীর্ণ ঘরে দরিদ্র অবস্থায় রেখে এসেছি। তিনি বললেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: “ইয়ামেনের সাহায্যকারী ফৌজের সাথে তোমাদের কাছে উওয়াইস ইবন আমির আসবে। সে হবে মুরাদ গোত্র হতে, তারপরে ‘করন’ হতে। তার কুষ্ঠরোগ ছিল, সে তার থেকে নিরাময় লাভ করেছে এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা ছাড়া। তার মা ছিল, আর সে তার অনুগত (সেবক) ছিল। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে আল্লাহ তা অবশ্যই পূরণ করবেন। যদি তুমি পার যে, সে তোমার জন্য ইস্তেগফার (গুনাহ মাফের দু‘আ) করবে, তবে তাই কর।” তারপরে ঐ ব্যক্তি উওয়াইসের কাছে এসে বললেন: আমার জন্য ইস্তিগফার করুন। তিনি বললেন: আপনি তো পূণ্যবান সফর থেকে সবেমাত্র আগমণ করেছেন; কাজেই আপনি আমার জন্য ইস্তিগফার করুন। সে বলল: আপনি আমার জন্য ইস্তিগফার করুন। উওয়াইস বললেন: আপনি সবেমাত্রই পূণ্যবান সফর থেকে আগমণ করেছেন, আপনি আমার জন্য ইস্তিগফার করুন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কি উমারের সাক্ষাত পেয়েছেন? সে বলল: হ্যাঁ, তখন তিনি তার জন্য ইস্তিগফার করলেন। তখন লোকেরা তার মর্যাদার ব্যাপারে অবগত হল। এরপর তিনি তার সামনে চললেন।উসাইর বলেন: আমি তাকে একটি ডোরাদার চাদর পরিয়ে দিলাম। অতপর কোনো লোক যখন তাকে দেখতো তখন বলতো: উওয়াইসের নিকট এ চাদরটি কোথা হতে আসলো? তিনি ৩৭ হিজরীতে মারা যান।
তিনি হচ্ছেন: আবূ উমারাহ, আরো বলা হয়েছে: আবূ আমর, আরো বলা হয়েছে: আব তুফাইল, বারা ইবন আযিব ইবন হারিছ আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী, তিনি তার নিজের ব্যাপারে বলেছেন: বদরের দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে আর ইবনু উমারকে ছোটদের মধ্যে গণ্য করে ফেরত দিযেছিলেন। আর তাই তিনি বদরের যুদ্ধে উপস্থিত হতে পারেননি। তার থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে চৌদ্দটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে: পনেরোটি। তিনি আল্লাহর রাসূলের কাছ থেকে বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন, এছাড়াও তিনি তার পিতা হতে, আবূ বকর হতে, উমার হতে এবং তারা ছাড়া আরো বড় সাহাবীদের থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি ৭১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
বারা ইবন মালিক ইবন নাধার ইবন ধামধাম, একজন সম্মানিত সাহাবী, বিদগ্ধ পণ্ডিত এবং অত্যন্ত সাহসী বীর ছিলেন। তিনি সম্মুখ যুদ্ধে একশত মুশরিককে হত্যা করেছেন, তাতে যারা (পরোক্ষভাবে) অংশগ্রহণ করেছে তাদের ছাড়াই। ইয়ামামার দিনে মুসলিমরা মুশরিকদের দিকে সৈন্যবহর নিয়ে এগিয়ে তাদেরকে একটি বাগানের মধ্যে আশ্রয় নিতে বাধ্য করেছিল, যার মধ্যে আল্লাহর দুশমন মুসাইলামাহও ছিল। তখন বারা বললেন: হে মুসলিমগণ! আমাকে তাদের মধ্যে নিক্ষেপ কর। তখন তাকে বহন করে নিয়ে প্রাচীরের উপরে ধরলে, তিনি ঝাপিয়ে পড়ে তাদের সাথে লড়াই শুরু করলেন, যতক্ষণ না আল্লাহ মুসলিমদেরকে বিজয় দান করলেন, আর মুসলিমরা তাদের উপর প্রবেশ করলেন। আর আল্লাহ মুসাইলামাহকে ধ্বংস করলেন।বারা ২০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
বুরাইদাহ ইবন হুসাইব ইবন আব্দুল্লাহ আল-আসলামী, একজন সম্মানিত সাহাবী। ইবনুস সাকান বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গামীমে মুহাজির অবস্থায় তাকে অতিক্রমকালে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি তার স্বীয় স্থানেই অবস্থান করতে থাকেন, এমনকি বদর ও উহুদ যুদ্ধ অতিক্রম করে যায়। তারপরে তিনি সেখান থেকে আগমণ করেন। আরো বলা হয়েছে: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর থেকে ফেরার পরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। আর বসরা বিজয় হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই বসবাস করতে থাকেন। তিনি ৬৩ হিজরীতে মারা যান।
বিলাল ইবন রাবাহ আল-হাবশী আল-মুআজ্জিন। তিনি হচ্ছেন- বিলাল ইবন হামামাহ, হামামাহ হচ্ছেন তার মা। আবু বকর সিদ্দীক তাকে মুশরিকদের কাছ থেকে কিনে নিয়েছিলেন; যেহেতু তারা তাওহীদ গ্রহণ করার কারণে তাকে শাস্তি দিচ্ছিলো, এরপর আবু বকর তাকে মুক্ত করে দেন। তখন থেকে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আঁকড়ে ধরেন এবং তার জন্যে আযান দেন। আর তার সাথে সকল যুদ্ধে শরীক হয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে আবু উবাইদা ইবন জাররাহকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। আম্মার বলেছেন: তারা তথা মুশরিকরা যা চেয়েছে প্রত্যেকেই তা বলেছে, শুধু বিলাল ছাড়া। তারপরে বিলাল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে মুজাহিদ হিসেবে বের হয়ে যান অবশেষে ২০ হিজরীতে সিরিয়াতে মৃত্যুবরণ করেন।
তুমাধির বিনত আমর ইবন হারিছ ইবন শারীদ আর-রিয়াহিয়্যাহ আস-সুলামিয়্যাহ। তার উপনাম ছিল খানসা, তিনি তার উপনামেই প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তিনি নজদের অধিবাসীদের মধ্যে প্রসিদ্ধ আরব কবিদের একজন ছিলেন। তিনি তার জীবনের অধিকাংশ সময় জাহেলী যুগেই পার করেছেন। তিনি তার দুইভাই সখর ও মু‘আবিয়াহর শোকগাথার কারণে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এরপরে তিনি ইসলাম পেয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তার স্বীয় গোত্র বনু সুলাইমের সাথে আগমণ করেন। তার চারটি পুত্রসন্তান ছিল, তারা হিজরী ১৬ সালে কাদেসিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন, তিনি তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে দৃঢ় থাকতে উদ্বুদ্ধ করছিলেন, অবশেষে তারা সকলেই শাহাদাত বরণ করেন। তখন তিনি বললেন: “ঐ আল্লাহর প্রশংসা, যিনি তাদের নিহত হওয়ার মাধ্যমে আমাকে সম্মানিত করেছেন।” তিনি হিজরী ২৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তামিম ইবন আউস ইবন হারেসা, আরো বলা হয়েছে: খারিজাহ ইবন সাউদ, আরো বলা হয়েছে: সাওয়াদ ইবন জুযাইমা ইবন যিরা‘ ইবন আদী ইবন আদ-দার, আবু রুকায়্যাহ আদ-দারী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী প্রথম যুগে নাসারা ছিলেন। তিনি মদিনাতে আসেন অতঃপর ইসলাম গ্রহণ করেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে তিনি দাজ্জাল ও দাজ্জালের খোঁচরের ঘটনা বর্ণনা করেন, আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সূত্রে উক্ত ঘটনা মিম্বারের উপর আলোচনা করেন। এটা তার মানাকিব হিসেবে ধরা হয়। তিনি অধিক তাহাজ্জুদ গুজারী ব্যক্তি ছিলেন, এমনকি তিনি একটি আয়াত পড়তে পড়তে পুরো একটি রাত কাটিয়ে দিয়েছেন, আয়াতটির অর্থ: “নাকি যারা দুষ্কর্ম করেছে তারা মনে করেছে যে, আমরা জীবন ও মৃত্যুর দিক দিয়ে তাদেরকে ওদের মত গণ্য করব, যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে? তাদের বিচার-সিদ্ধান্ত কতই না মন্দ! (২১) [সূরা আল-জাছিয়াহ: ২১]। তিনি ৪০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন।
ছাবিত ইবন ধাহহাক ইবন খলীফাহ ইবন ছা‘লাবাহ আল-আনসারী আল-আশহালী। তিনি বাই‘আতুর রিদওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। খন্দকের দিনে তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাহনে তার পিছনে আরোহণ করেছিলেন। আর হামরাউল আসাদে তার রাহবার ছিলেন। যারা গাছের নিচে বাই‘আত নিয়েছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ৪৫ হিজরীতে মারা যান।
জাবির ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবন হারাম আল-আনসারী আস-সুলামী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। অনেক সাহাবীও তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি এবং তার পিতা উভয়েই সাহাবী ছিলেন। বুখারীর ‘সহীহ’ গ্রন্থে রয়েছে, তিনি আকাবাতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে একুশটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, আর আমি তারমধ্যে ঊনিশটিতে তার সাথে ছিলাম। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু সত্তর হিজরীর পরে মারা যান, তিনি দীর্ঘজীবি হয়েছিলেন। তিনি অসীয়ত করে গিয়েছিলেন, হাজ্জাজ ইবন ইউসূফ যেন তার জানাযা না পড়ান।
জুবাইর ইবন মুত‘ঈম ইবন আদী ইবন নাওফেল ইবন আবদে মানাফ আল-কুরাইশী আন-নাওফালী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি কুরাইশদের মধ্যে প্রবীণ এবং বংশ-বিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বদর যুদ্ধে বন্দীদের মুক্তিপণ বিষয়ে এসেছিলেন। তারপর তিনি তাকে মাগরিবের সালাতে ‘সূরা তূর’ তিলাওয়াত করতে শুনেন। তিনি বলেন: আর তখনই প্রথম ঈমান আমার অন্তরে প্রবেশ করেছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেন: “আজ যদি মুত‘ঈম ইবন আদী বেঁচে থাকতেন। আর তিনি এ সকল দুর্গন্ধযুক্ত ব্যক্তিদের ব্যাপারে আমাকে বলতেন, আমি তার খাতিরে এদেরকে মুক্তি দিয়ে দিতাম” তথা বদরের যুদ্ধবন্দীদেরকে। বুখারী এটি বর্ণনা করেছেন। জুবাইর হুদাইবিয়াহ ও ফাতহে মক্কার মাঝামাঝি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেছেন: ফাতহে মক্কার সময়ে। তিনি মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাতকালে ৫৯ হিজরীতে মারা যান।
হুবাব ইবন মুনযির ইবন জুমূহ আল-আনসারী আল-খাযরাজী তারপর আস-সুলামী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সাহসী কবিদের অন্যতম ছিলেন। তাকে ‘যুর-রায়’ (মাথাওয়ালা / বুদ্ধিমান) বলা হয়। ছা‘আলাবী বলেছেন: “তিনি বদর যুদ্ধের দিনে পরামর্শদাতা ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার রায় বা মত গ্রহণ করেছিলেন। এরপরে জিবরীল অবতীর্ণ হয়ে বললেন: মত (সঠিক সিদ্ধান্ত) হচ্ছে যা হুবাব বলেছেন। জাহিলী যুগেও তার অনেকগুলো প্রসিদ্ধ রায় বা মত ছিল।” তিনি উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলে ৫০ বছর বয়সে ২০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ যার আল-গিফারী, জুনদুব ইবন জুনাদাহ তার নামের ভেতর বেশি প্রসিদ্ধ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। বলা হয়ে থাকে: তিনি ইসলাম গ্রহণে চতুর্থ ব্যক্তি। আবার বলা হয়: পঞ্চম ব্যক্তি। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইসলামের অভিবাদনে অভিবাদন জানান। তিনি মক্কাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে তার কথা শুনে সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেছিলেন: “তুমি তোমার কওমের কাছে ফিরে যেয়ে তাদেরকে সংবাদ দিতে থাক, যতক্ষণ না আমার আদেশ তোমার কাছে পৌঁছায়।” তখন তিনি বললেন: ওই সত্ত্বার কসম, যার হাতে আমার নফস, আমি তাদের মাঝে চিৎকার করে বলব। তারপরে তিনি বের হয়ে মসজিদে আসলেন আর উচ্চস্বরে ঘোষণা করলেন: أشهد أن لا إله إلا اللَّه وأن محمدًا عبده ورسوله (আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো ইলাহ নেই, আর মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল)। তখন লোকেরা তার কাছে ছুটে এসে তাকে প্রহার শুরু করল এমনকি তাকে মেরে শুইয়ে দিল। আবূ যার উপস্থিত থাকলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দিয়ে কোনো কিছু শুরু করতেন, আর তিনি অনুপস্থিত থাকলে তার খোঁজ করতেন। তিনি ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
জুওয়াইরিয়াহ বিনত হারিছ ইবন আবী ধিরার আল-খুযা‘ঈয়্যাহ আল-মুসত্বালিকিয়্যাহ, উম্মুল মু’মিনীন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পঞ্চম অথবা ষষ্ট হিজরীতে বিবাহ করেন। তার নাম ছিল বাররাহ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা পরিবর্তন করে দেন। তিনি ৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
হাতিব ইবন আবী বালতা‘আহ ইবন আমর ইবন উমাইর ইবন সালামাহ আল-লাখমী, তিনি বনু আসাদ ইবন আবদিল উযযার মিত্র ছিলেন। মুহাদ্দিসগণ তার বদরে উপস্থিত হওয়া সম্পর্কে একমত পোষণ করেছেন। হাদীসে এসেছে, হাতিব ইবন আবী বালতা‘আহর এক দাস এসে অভিযোগ করে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! হাতিব অবশ্যই জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করবে। তিনি বললেন: “না; কারণ সে বদর ও হুদাইবিয়্যাহতে অংশগ্রহণ করেছে।” হাতিব বলেছেন: আল্লাহর কসম! আমি ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আজ পর্যন্ত আল্লাহর ব্যাপারে কোনো সন্দেহ পোষণ করিনি, তবে আমি একজন অপরিচিত মানুষ। মক্কাতে আমার সন্তান ও ভাইয়েরা রয়েছে। একথা তিনি তার পক্ষ থেকে ওযর পেশ করে বলছিলেন, মক্কাবাসীদের কাছে তার পত্র প্রদান করার পরে, যেখানে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন বলে তিনি সংবাদ দিয়েছিলেন। এ ব্যাপারেই আল্লাহ নাযিল করেছেন: যার অর্থ- “হে ঈমানদারগণ! তোমরা আমার শত্রু ও তোমাদের শত্রুদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে না।” তিনি ৩০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান আল-আবসী। তার পিতা রক্তপাত করেছিল, ফলে তিনি পলায়ন করে মদীনাতে চলে আসেন। তারপরে তিনি বনু আব্দুল আশহালের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। ইয়ামানী বংশীদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করার কারণে তার কওম তাকে আল-ইয়ামান নামকরণ করেন। তিনি হুযাইফার মাতাকে বিবাহ করেন। মদীনাতে তার সন্তান হয়। হুযাইফা ও তার পিতা এরপরে ইসলাম গ্রহণ করেন। হুযাইফা খন্দক ও তার পরবর্তী যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে মাদায়েনে গভর্নর নিযুক্ত করেন। তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত ছিলেন। উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যার পরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর বাই‘আত হওয়ার মাত্র চল্লিশ দিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। সহীহাইনে এসেছে, আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু আলকামাকে বলেছিলেন: তোমাদের মধ্যে সহিবুস-সির তথা গোপন কথার ধারক কি নেই, যা তিনি ছাড়া কেউ জানেন না? অর্থ্যাৎ হুযাইফা। সহীহাইনে আরো রয়েছে যে, উমার হুযাইফাকে ফিতনার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেছেন। হুযাইফা ইরাকের অভিযানসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৩৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
হাসান ইবন আলী ইবন আবি তালেব আল-হাশিমী আল-কুরাইশী, আবূ মুহাম্মাদ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দৌহিত্র। তিনি তৃতীয় হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের পঞ্চম এবং শেষ খলীফা ছিলেন। তিনি মদীনা মুনাওয়ারাতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মা ফাতিমাতুয যাহরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লামের কন্যা। তিনি তার প্রথম ও বড় সন্তান ছিলেন। তিনি অত্যন্ত বিবেকসম্পন্ন, ধৈর্যশীল এবং উত্তম কাজের প্রতি আগ্রহান্বিত ছিলেন। আর তিনি মানুষের মধ্যে অত্যন্ত শুদ্ধভাষী, সুন্দর কথনকারী ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। তিনি পদব্রজে বিশ বার হজ করেছিলেন। হাসান তার নিজেকে খিলাফত থেকে সরিয়ে নেন এবং মুয়াবিয়ার কাছে ৪১ হিজরীতে তা সমর্পণ করেন। এজন্য এই বছরকে বলা হয় জামা‘আতের বছর। যেহেতু এই বছরে মুসলমানদের কথা এক হয়েছিল। এরপরে হাসান মদীনাতে গমন করেন এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার আগ পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন। তার খিলাফাতের সময়কাল ছিল ছয় মাস পাঁচ দিন। তিনি ৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আল-হাসান ইবন ইয়াসার আল-বাসরী, আবূ সা‘ঈদ। তিনি একজন ফকীহ তাবেয়ী এবং অধিক হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন। তিনি একুশ হিজরীতে মদীনাতে জন্ম গ্রহণ করেন। তিনি বসরাবাসীর ইমাম ছিলেন। তার সময়ে তিনি বিদ্বান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি অধিক ইবাদাতগুজার, সাহসী, শুদ্ধভাষী, আলিম ও ফকীহ ছিলেন। তিনি বসরাতে বসবাস করতেন। তার ভাব-গাম্ভীর্য অন্তরসমূহে প্রভাব ফেলত। আর তাই তিনি শাসকদের কাছে গমণ করে তাদেরকে সৎকাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করতেন। তিনি সত্যের ক্ষেত্রে কারো তিরষ্কারের ভয় করতেন না। হাজ্জাজ ইবন ইউসূফের সাথে তার কিছু ঘটনা ছিল। তিনি তার কষ্ট থেকে নিরাপদে ছিলেন। যখন উমার ইবন আব্দুল আযীয খিলাফাতে আসলেন, তখন তিনি তার কাছে লিখে পাঠালেন: আমি এই (ক্ষমতার) দায়িত্বে ফেঁসে গেছি, আমার জন্য কয়েক সাহায্যকারী দেখুন যারা আমাকে তাতে সাহায্য করবেন। হাসান তাকে জবাব দিলেন: যারা দুনিয়াদার আপনি তাদেরকে চান না, আর যারা আখিরাতমুখী তারা আপনাকে চায় না; সুতরাং আল্লাহর কাছেই সাহায্য চান। তিনি ১১০ হিজরীতে মারা যান।
হুসাইন ইবন আলী ইবন আবী তালেব আল-হাশেমী, আবূ আব্দুল্লাহ। ফাতিমা যাহরার ছেলে। তিনি মদীনাতে ৪র্থ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। হাদীসে এসেছে: “হাসান ও হুসাইন দুজনেই জান্নাতী যুবকদের সর্দার।” তিনি নবীর বাড়ীতেই বেড়ে ওঠেন। ইয়াযিদ ইবন মু‘আবিয়াহর সময়কালে ৬১ হিজরীতে হত্যা করা হয়।
উম্মু হারাম বিনত মিলহান বিনত খালিদ ইবন যাইদ ইবন হারাম ইবন জুনদুব আল-আনসারিয়্যাহ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি উম্মু হারাম হতে বর্ণনা করেছেন -তিনি আনাসের খালা ছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাড়িতে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, যখন তিনি জেগে উঠলেন তখন তিনি হাসছিলেন, তারপরে বললেন: “আমার সামনে আমার উম্মাতের একদল মানুষকে পেশ করা হল, যারা সবুজ সমুদ্রে (আরব উপসাগর) আরোহণ করছিল, যেভাবে বাদশাহগণ তাদের সিংহাসনে বসেন।” তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু‘আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপরে তিনি আবার ঘুম থেকে উঠে হাসতে লাগলেন। আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কী কারণে হাসছেন? তিনি বললেন: “আমার সামনে আমার উম্মাতের একদল মানুষকে পেশ করা হল, যারা সবুজ সমুদ্রে আরোহণ করছিল, যেভাবে বাদশাহগণ তাদের সিংহাসনে বসেন।” তিনি বলেন: তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! আপনি দু‘আ করুন, আল্লাহ যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি বললেন: “তুমি অগ্রগামীতের অন্তর্ভুক্ত।” আনাস বলেছেন: এরপরে তিনি উবাদাহ ইবন সামিতকে বিবাহ করলেন। তিনি তাকে তার সাথে নিয়ে অভিযানে বের হলেন, যখন তিনি সমুদ্র পার হলেন আর তার বাহনে উঠলেন, তখন বাহন (উট) তাকে ফেলে দিল আর তাতে তিনি মারা যান। এটি হিজরী ২৭ সনের ঘটনা।
হাসসান ইবন ছাবিত ইবনুল মুনযির ইবন হারাম আল-আনসারী আল-খাযরাজী অতঃপর আন-নাজ্জারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের কবি। তার অনেকগুলো উপনাম ছিল: আবুল ওয়ালিদ, এটিই বেশী প্রসিদ্ধ, এছাড়াও আবুল মুদাররিব, আবুল হুসাম এবং আবু আব্দুর রহমান। সহীহ সূত্রে সাব্যস্ত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসসান ইবন ছাবিতের জন্য মসজিদের মধ্যে মিম্বার রাখতেন, আর তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যঙ্গ ও নিন্দা করত, তাদের জবাব দিতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “নিশ্চয় রুহুল কুদুস (জিবরীল) হাসসানের সাথে থাকে যতক্ষণ সে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের পক্ষে জবাব দিতে থাকে।” ইবন সা‘দ বলেছেন: তিনি জাহেলী যুগে ৬০ বছর ও ইসলামী যুগে ৬০ বছর বেঁচে ছিলেন। ৫৪ হিজরীতে মৃত্যুর সময়ে তার ১২০ বছর বয়স হয়েছিল।
উম্মু হাকীম বিনত হারিছ ইবন হিশাম ইবন মুগীরাহ আল-মাখযূমিয়্যাহ, তিনি একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী। মুশরিকদের সাথে তিনি উহুদের দিনে উপস্থিত ছিলেন। পরে মক্কা বিজয়ের দিনে ইসলাম গ্রহণ করেন। আবূ জাহেলের পুত্র ইকরিমা তার স্বামী ছিলেন। সে ইয়ামানে পালিয়ে গিয়েছিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে তিনি তার কাছে গমণ করেন এবং তাকে নিয়ে ফিরে আসেন এবং ইকরিমাও ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপরে উম্মু হাকীম তার সাথে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান, সেখানে ইকরিমা মারা গেলে, দামেশকের দক্ষিণে মারজুস সুফফার যুদ্ধের কিছু আগে তিনি খালিদ ইবন সা‘ঈদ ইবনুল আসকে বিবাহ করেন। যখন তিনি সেখানে শাহাদাত বরণ করেন, তখন উম্মু হাকীম ক্ষিপ্রতার সাথে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তিনি সুসংযত থাকা সত্ত্বেও তার কাপড় প্রকাশিত হয়ে পড়ে। মুসলিমরা নদীর ধারে একটি সাঁকোর পাশে যুদ্ধ করেন, যাকে পরবর্তীতে ‘উম্মু হাকিমের সাঁকো’ হিসেবে নামকরণ করা হয়। তিনি ফুসতাত নগরের স্তম্ভের কাছে সাতজন রোমানকে হত্যা করেন, যেখানে খালিদ তাকে বিবাহ করেছিলেন। তিনি ১৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মুল মু’মিনীন হাফসাহ বিনত আমীরীল মু’মিনীন উমার ইবনুল খাত্তাব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামকে বিবাহের আগে তিনি খুনাইস ইবনু হুযাফাহর সাথে বিবাহ বন্ধনে ছিলেন। আবূ উমার বলেছেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম তাকে এক তালাক দিয়েছিলেন, এরপরে তাকে ফিরিয়ে নেন। আর তার কারণ যে, জিবরীল তাকে বলেছিলেন: আপনি হাফসাহকে ফিরিয়ে নিন; কেননা সে অধিক সিয়াম পালনকারী এবং অধিক দন্ডায়মান (সালাত আদায়কারী) নারী। আর তিনি জান্নাতে আপনার স্ত্রী হবেন। তিনি তার ভাই আব্দুল্লাহ ইবন উমারকে অসীয়ত করেছেন, যে ব্যাপারে উমার তাকে অসীয়ত করেছেন, তা হচ্ছে সদকার বিষয়ে, যা তিনি বনে সদকা করেছিলেন। তিনি ৪৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
হাকীম ইবন হিযাম ইবন খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ইবন আব্দুল উযযা ইবন কুসাই আল-আসাদী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি কুরাইশদের মধ্যে একজন নেতা ছিলেন। তিনি নবুওয়াতের আগে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লামের বন্ধু ছিলেন, নবুওয়ত পরবর্তী যুগেও তিনি তাকে মহব্বত করতেন এবং ভালবাসতেন। তবে তিনি দেরিতে ইসলাম গ্রহণ করেন, এমনকি তিনি মক্কা বিজয়ের বছরে ইসলাম কবূল করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞাসা করে তিনি বলেছিলেন: আমি জাহেলী যুগে কিছু ভাল কাজ করেছি, ইসলাম গ্রহণ করার পরে সেগুলোর কোন পুরষ্কার আমি কি পাব? তিনি বলেছিলেন: “তোমার পূর্বে গত হওয়া ভাল কাজসহ তুমি ইসলাম গ্রহণ করেছ।” তিনি ৫৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
হালীমাহ আস-সা‘দিয়্যাহ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধমাতা। তিনি আবু জুআইবের কন্যা ছিলেন, তার পুরো নাম আব্দুল্লাহ ইবনুল হারিছ ইবনু শাজনাহ। আতা ইবনু ইয়াসার বলেছেন: আব্দুল্লাহর কন্যা হালীমাহ, যিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুধমাতা ছিলেন, তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আসলে তিনি দাঁড়িয়ে গেলেন। এরপরে তার নিজের চাদর বিছিয়ে দিলেন, তখন হালীমাহ তার উপরে বসলেন। তিনি ৮ম হিজরীর পরে মৃত্যুবরণ করেন।
আবু সুলাইমান সাইফুল্লাহ (আল্লাহর তলোয়ার) খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ ইবনুল মুগীরাহ ইবন আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু মাখযূম আল-কুরাইশী আল-মাখযূমী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি জাহেলী যুগে কুরাইশদের মধ্যে একজন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ছিলেন। উমরাতুল হুদাইবিয়্যাহ পর্যন্ত তিনি কুরাইশ কাফিদের সাথে অনেকগুলো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। এরপরে খাইবার যুদ্ধের পরে তিনি সপ্তম হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। কেউ কেউ বলেছেন: তিনি এর আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তিনি মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তিনি প্রচণ্ড বীরত্ব প্রদর্শন করেন। এরপরে তিনি তায়েফ ও হুনাইনের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উযযা নামক দেবতাকে (মূর্তি) ধংস করতে পাঠিয়েছিলেন, আর তিনি তা সম্পাদন করেছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেছিলেন: “আল্লাহর বান্দা ও আশীরার ভাই খালিদ কতইনা উত্তম মানুষ! সে আল্লাহর তলোয়ারের মধ্য হতে একটি তলোয়ার, যাকে আল্লাহ কাফিরদের বিরুদ্ধে কোষমুক্ত করেছেন।” তিনি ২১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
খালিদ ইবন যাইদ ইবন কুলাইব ইবন ছা‘লাবাহ, আবু আইয়ূব আল-আনসারী। তিনি বনু নাজ্জারের অন্তর্ভুক্ত একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আকাবাহ, বদর, উহুদ, খন্দকসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি অত্যন্ত সাহসী, ধৈর্যশীল এবং জিহাদ ও যুদ্ধের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। তিনি বনু উমাইয়াহর সময় পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। আর তিনি মদীনাতে বাস করতেন। এরপরে তিনি সিরিয়াতে গমন করেন। যখন ইয়াযিদ তার পিতা মু‘আবিয়াহ এর সময়ে কুস্তুনতুনিয়াতে অভিযানে বের হন, তখন তিনি তার সাথে যোদ্ধা হিসেবে ছিলেন। এরপরে অনেক ঘটনা ঘটে যায়, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন তিনি তাকে নিয়ে শত্রুর ভূমি দ্রুত অতিক্রম করতে অসীয়ত করেন। যখন তিনি মারা যান, তখন তাকে কুস্তুনতুনিয়ার দূর্গ-মূলে ৫২ হিজরীতে দাফন করা হয়।
খাব্বাব ইবনুল আরাত ইবন জানদালাহ আত-তাইমী, তাকে আল-খুযায়ীও বলা হয়। আবূ আব্দুল্লাহ, তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি জাহেলী যুগে যুদ্ধবন্দী হন, এরপরে মক্কাতে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তিনি উম্মু আনমার আল-খুযাঈয়্যাহর আযাদকৃত দাস ছিলেন। আরো অন্যান্য মতও রয়েছে। এরপরে বনু যাহরার সাথে তার মিত্রতা হয়। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের অন্যতম। বদর ও পরবর্তী সকল যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেছেন। জাহেলী যুগে তিনি তলোয়ারের কাজ করতেন, যা সহীহাইনের হাদীসে সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি ৩৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মুল মু’মিনীন খাদীজাহ বিনত খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ইবন আব্দুল উযযা ইবন কুসাই আল-কুরাইশীয়্যাহ আল-আসাদিয়্যাহ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী। তিনিই প্রথম যিনি আল্লাহর প্রতি এবং তার রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছিলেন আর রাসূল যা নিয়ে এসেছিলেন তা সত্য বলে বিশ্বাস করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে উদ্বিগ্নতাকে হালকা করেছিলেন। আল্লাহর রাসূল তার বিরুদ্ধে বলা যা কিছুই অপছন্দ করতেন, এরপরে খাদীজার কাছে আসলে তিনি তার মনোবল দৃঢ় করে দিতেন আর মানুষের কাজকে তুচ্ছ হিসেবে তুলে ধরতেন। সহীহাইনে আয়েশা হতে বর্ণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদীজাকে জান্নাতে মণি ও মুক্তাখচিত একটি গৃহের সুসংবাদ দিয়েছিলেন, যাতে কোন হৈ চৈ থাকবে না, আবার কোন কষ্টও থাকবে না। তিনি হিজরতের ৩ বছর পূর্বে মৃত্যুবরণ করেন।
রাফে‘ ইবন খাদীজ ইবন রাফে‘ ইবন আদী ইবন আল-আনসারী আল-আউসী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। বদরের দিনে তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে পেশ করা হলে তিনি তাকে ছোট মনে করে বাদ দিয়েছিলেন; তবে উহুদের যুদ্ধে তাকে অনুমতি প্রদান করেন। তিনি উহুদ ও পরবর্তী যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। ৭৪ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মু সুলাইম বিনত মিলহান ইবন খালিদ ইবন যাইদ আল-আনসারিয়্যাহ, তিনি আনাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহহুর মা ও উম্মু হারামের বোন ছিলেন। তিনি একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী ছিলেন। তার বেশ কিছু হাদীস রয়েছে। তার লকব ছিল- গুমাইসা, কেউ কেউ বলেছেন: রুমাইসা। তার নাম ছিল সাহলাহ। কেউ কেউ বলেছেন: রমলাহ, আরো বলা হয়- রুমাইছা, আরো বলা হয়- আনীফাহ, আরো বলা হয়: মালীকাহ। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সূত্রে প্রমাণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমি জান্নাতে প্রবেশ করলাম। আর সেখানে একটি শব্দ শুনতে পেলাম, তখন আমি বললাম: এ কে? তারা (মালায়েকাগণ) বললেন: সে হচ্ছে গুমাইসা বিনত মিলহান, আনাস ইবন মালিকের মাতা।” নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাতে তার স্ত্রী ছাড়া অন্য কারো গৃহে প্রবেশ করতেন না; তবে উম্মু সুলাইমের গৃহে যেতেন। তাকে কারণ জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “আমার সাথে থেকে তার ভাই নিহত হয়েছে; আমি তার প্রতি সহানুভূতি জানাই।” তিনি জাহেলী যুগে মালিক ইবনুন নাদারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিলেন, সেখানেই আনাসের জন্ম হয়। তারপরে যখনই তার সামনে ইসলাম আগমণ করে, তখন তিনি তার কওমের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আর তার স্বামীর কাছে ইসলাম পেশ করলে সে রাগান্বিত হয়ে সিরিয়া চলে যায়, পরে সেখানে মারা যায়। উম্মু সুলাইম ৩০ হিজরীর কাছাকাছি সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ আব্দুল্লাহ যুবাইর ইবনুল আওয়াম ইবন খুওয়াইলিদ ইবন আসাদ ইবন আব্দুল উযযা ইবন কুসাই ইবন কিলাব আল-কুরাইশী আল-আসাদী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাওয়ারী ও ফুফাতো ভাই ছিলেন। তিনি জান্নাতের সাক্ষ্যপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীর অন্যতম ছিলেন। তিনি বিশিষ্ট ছয়জন শুরা সদস্যদের একজন ছিলেন। যুবাইরের চাচা তাকে একটি বদ্ধ ঘরে ঝুলিয়ে রেখে আগুনের ধোয়া দিত, যেন সে কুফুরীর দিকে ফিরে যায়; কিন্তু তিনি বলতেন: আমি কুফুরী করব না। উরওয়া হতে বর্ণিত, যুবাইরের শরীরে তিনটি তলোয়ারের আঘাত ছিল, আমি তার মধ্যে আমার আঙ্গুল ঢুকাতাম, যার দুটি ছিল বদরের দিনে আর তৃতীয়টি ইয়ারমুকের যুদ্ধে। তিনি ৩৬ হিজরীতে হত্যার স্বীকার হন।
উম্মুল মু’মিনীন রমলাহ বিনত আবু সুফইয়ান, সখর ইবন হারব আল-উমাবিয়্যাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ষষ্ঠ হিজরীতে বিবাহ করেন। তিনি তার পূর্বের স্বামী উবাইদুল্লাহ ইবন জাহাশের সাথে হাবশাতে হিজরত করেন। তারপরে তিনি তার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার পরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহ আনহা হতে বর্ণিত: উম্মু হাবীবাহ তার মৃত্যুর সময়ে আমাকে ডেকে বললেন: সতীনদের মধ্যে যা কিছু হয়ে থাকে, আমাদের মধ্যে তা ঘটত। তুমি আমাকে তার থেকে মুক্ত করে দাও। ফলে আমি তাকে ক্ষমা করে দেই আর আমি তার জন্যে ইস্তেগফার করি। এরপরে তিনি আমাকে বললেন: তুমি আমাকে আনন্দিত করেছ, আল্লাহ তোমাকে আনন্দিত করুক! এবং উম্মু সালামাহর কাছেও তিনি অনুরুপ বার্তা পাঠান। তিনি মদীনাতে ৪৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। এ ব্যাপারে আরো মত রয়েছে।
রুওয়াইফি‘ ইবন ছাবিত ইবনুস সাকান। তিনি বনু মালিক ইবনুন নাজ্জারের অন্তর্গত ছিলেন। একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি মিশরে গমন করেন, ৪৬ হিজরীতে মু‘আবিয়াহ তাকে ত্রিপোলীর শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। তিনি আফ্রিকার বিরুেদ্ধে করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বুরকাহ (সিয়েরানাইকা) নামক অঞ্চলে সেখানে আমীর থাকা অবস্থায় ৫৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
যাইদ ইবন আরকাম ইবন কায়েস আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তার কুনিয়াত নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে, কেউ বলেছেন: আবূ উমার, কেউ বলেছেন: আবূ আমির। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। উহুদের দিনে তাকে ছোট মনে করে বাদ দেওয়া হয়। তার প্রথম যুদ্ধ ছিল খন্দক, কেউ কেউ বলেছেন: মুরাইসী। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সতেরটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, যা বুখারীতে রয়েছে। তার থেকে বর্ণিত অনেক হাদীস রয়েছে। বুখারীতে তার সূরা মুনাফিকুন নাযিলের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সিফফীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৬৮ হিজরীতে মুখতারের সময়ে কূফাতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ খারিজাহ যাইদ ইবন ছাবিত ইবন আধ-ধাহহাক আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তিনি বড় সাহাবীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি অহী লেখক ছিলেন। তিনি হিজরতের ১১ বছর আগে মদীনাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মক্কাতে বেড়ে ওঠেন। তিনি ছয় বছর বয়সী থাকাকালীন তার পিতা নিহত হন। তিনি এগারো বছর বয়সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হিজরত করেন। তিনি ইলম ও দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি মদীনাতে বিচার, ফাতাওয়া, কিরাআত ও ফারায়েয শাস্ত্রের প্রধান বলে গণ্য হতেন। তিনি ৪৫ হিজরীতে মারা যান। আবূ হুরাইরা বলেছেন: আজকে এই উম্মাতের সবচেয়ে বড় বিদ্বান ব্যক্তি মারা গেলেন, আর আশা করা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা ইবন আব্বাসকে তার (ইলমের) স্থলাভিষিক্ত করবেন।
যায়েদ ইবন হারিছাহ ইবন শারাহীল অথবা শুরাহবীল আল-কালবী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। জাহেলী যুগে ছোট বয়সে তাকে অপহরণ করা হয়েছিল। পরে খাদীজা বিনত খুওয়াইলিদ তাকে ক্রয় করে, বিবাহের সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাকে উপহার হিসেবে দেন। তারপরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ইসলামের আগেই পালক পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন আর তাকে আযাদ করে দেন। এবং তাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ফুফাতো বোনের সাথে বিবাহ দেন। মানুষেরা তাকে যায়েদ ইবন মুহাম্মাদ বলে ডাকতে থাকে, যতক্ষণ না এ আয়াত নাযিল হয়: যার অর্থ: “তাদেরকে তাদের পিতার নামে ডাকো।” তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী সাহাবীদের অন্যতম। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে কোনো যুদ্ধে / অভিযানে পাঠালে তাকেই তার আমীর বানিয়ে দিতেন। তিনি তাকে ভালবাসতেন আর অগ্রগামী করতেন। হিজরী ৮ম সালে মুতার যুদ্ধে তার হাতে দায়িত্ব ছিল, তিনি সেখানেই শহীদ হন।
যায়েদ ইবনু খালিদ আল-জুহানী, আবু যুর‘আহ. অথবা আবু আব্দুর রহমান অথবা আবু ত্বালহা। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি হুদাইবিয়্যাহতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার হাতে মক্কা বিজয়ের দিনে জুহাইনার ঝান্ডা ছিল। তার হাদীস সহীহাইনে এবং অন্যান্য গ্রন্থে বিদ্যমান। তিনি ৭৮ হিজরীতে মৃৃত্যুবরণ করেন।
আবূ ত্বালহা আল-আনসারী, যায়েদ ইবন সাহল ইবনুল আসওয়াদ আন-নাজ্জারী, তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। তার অসংখ্য মানাকিব (মর্যাদা) রয়েছে। তিনি ইসলাম ও জাহেলী উভয় যুগেই সাহসী বীর ও (বর্ষা বা অনুরূপ যুদ্ধাস্ত্র) নিক্ষেপকারীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তার জন্ম মদীনাতে। তিনি আকাবা, বদর, উহুদ ও খন্দকসহ সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি অত্যন্ত উঁচু আওয়াজের অধিকারী ছিলেন, হাদীসে এসেছে: “সৈন্যদের মধ্যে আবূ ত্বালহার আওয়াজ একহাজার লোক অপেক্ষা উত্তম (কার্যকরী)।” খয়বারের দিনে তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাহনের উপরে তার পিছে ছিলেন। তার মৃত্যুসাল নিয়ে বেশ মতানৈক্য পাওয়া যায়, বলা হয়েছে: ৩২ হিজরী, আবার বাল হয়েছে: ৩৩, কেউ বলেছেন: ৩৪, কেউ বলেছেন: ৫০ অথবা ৫১।
সায়িব ইবন ইয়াযিদ ইবন সা‘ঈদ আল-কিন্দী, তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। তার জন্ম প্রথম হিজরীর কিছুটা আগে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিদায় হজের দিনে তিনি তার পিতার সাথে ছিলেন। তিনি ব্যাথায় কাতর হলে তার খালা তাকে নিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যান, তিনি তাকে হাত বুলিয়ে দেন, তার জন্য দু‘আ করেন এবং তিনি অযু করেন। এরপরে সায়িব তার অযুর পানি হতে পান করেন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন। তিনি মোহরে নবুওয়তের দিকেও তাকিয়েছিলেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে মদীনার বাজারের দায়িত্বে নিয়োজিত করেছিলেন। তিনি মদীনাতে মারা যাওয়া শেষ সাহাবী, তিনি ৯১ হিজরীতে মারা যান।
আবু হুযাইফার আযাদকৃত দাস সালেম। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী, বদরী, নৈকট্যপ্রাপ্ত ও আলিমদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি মদীনাতে আসলে, মক্কা থেকে আগত মুহাজিরদের ইমামতি করতেন; কারণ তিনিই তাদের মধ্যে সবচেয়ে কিরাআত সম্পর্কে বেশী জানতেন। উমার বলেন: “যদি দুই ব্যক্তির কোন একজন আমাকে পেত তারপর আমি তাকে দায়িত্ব দিতাম, তাহলে আমি তার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারতাম: আবু হুযাইফার আযাদকৃত দাস সালেম আরেকজন হচ্ছে আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ। কারণ, তারা তাদের (ওমরদের) জীবিত থাকাবস্থায় মারা গেছেন। তিনি বারো হিজরীতে মৃত্যূবরণ করেন।
সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাস মালিক ইবন উহাইব, আরো বলা হয়: ইবন ওয়াহিব, ইবন আবদে মানাফ ইবন যুহরা ইবন কিলাব আল-কুরাইশী আয-যুহরী, আবূ ইসহাক। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন এবং তাদের মধ্যে সর্বশেষ মৃত্যুবরণকারী ছিলেন। তিনি একজন অশ্বারোহী ছিলেন। তিনিই আল্লাহর পথে সর্বপ্রথম বর্শা নিক্ষেপ করেন। তিনি ছয়জন আহলুশ শুরার অন্তর্ভুক্তও ছিলেন। তার দু‘আ নিশ্চিত কবূল হওয়ার ব্যাপারে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি কিসরার মাদায়েন বিজয় করেন। ফিতনা থেকে দূরে ছিলেন। ৫৫ হিজরীতে তিনি মৃত্যবরণ করেন।
সা‘দ ইবন মালিক ইবন সিনান আল-আনসারী আল-খাযরাজী আল-খুদরী। তিনি তার কুনিয়াতের মাধ্যমে প্রসিদ্ধ। আর তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অধিক হাদীস বর্ণনাকারীদের একজন। তার প্রথম যুদ্ধ হচ্ছে খন্দক। তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ১২টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৭৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ মুহাম্মাদ সা‘ঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব ইবন হাযান আল-কুরাইশী আল-মাখযূমী। ইমাম ও জ্ঞানের প্রতীক, বড় তাবেয়ীদের একজন। তিনি ১৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আহলে মদীনার আলিম ছিলেন এবং তার যামানাতে তিনি তাবেয়ীদের সর্দার ছিলেন। তিনি বলেছেন: “চল্লিশ বছরে আমার কোন সালাতের জামা‘আত ছুটে যায়নি।” তিনি আরো বলেছেন: “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বিচার-ফয়সালা করেছেন, সে ব্যাপারে আমার থেকে কেউ বেশী জানে না, এমনকি আবু বকরও নয় এবং উমারও নয়।” তিনি তার সময়ে ফাতওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রসর (প্রাধান্যপ্রাপ্ত) ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাকে বলা হত: ফকীহুল ফুকাহা (ফকীহদের ফকীহ)। তার বিখ্যাত উক্তির মধ্যে রয়েছে: “শয়তান যখনই কোন বিষয় থেকে নিরাশ হয়, তখনই সেখানে সে নারীদের বেশে (পক্ষ হতে) উপস্থিত হয়।” তিনি ৯৩ অথবা ৯৪ হিজরীতে মারা যান।
আবূ মুহাম্মাদ সা‘ঈদ ইবন যুবায়ের ইবন হিশাম আল-ওয়ালিবী। তিনি ওয়ালিবীদের আযাদকৃত গোলাম ছিলেন। তাকে আবূ আব্দুল্লাহ আল-আসাদী আল-কূফীও বলা হয়। তিনি ইমাম, হাফিজ, মুকরি (তথা কুরআন শিক্ষাদানদারী বিদ্বান) এবং মুফাসসির ছিলেন। তিনি একজন তাবেয়ী, ৪৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আসবাহানে ছিলেন, কিন্তু হাদীস বর্ণনা করতেন না। তারপরে যখন তিনি কূফাতে ফিরে এলেন, তখন তিনি হাদীস বর্ণনা শুরু করলেন। তখন আমরা তাকে ঐ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বললেন: “তুমি যেখানে পরিচিত, সেখানেই তোমার পরিচ্ছদকে বিস্তৃত কর।” কূফার লোকেরা যখন ইবনু আব্বাসের কাছে ফাতওয়ার জন্য আসত, তখন তিনি তাদেরকে বলতেন: “তোমাদের মধ্যে কি উম্মু দাহমার পুত্র -সা‘ঈদ ইবনু যুবায়ের- নেই? তিনি রাতে প্রচুর কাঁদতেন, এমনকি তার চোখে ছানি পড়ে গিয়েছিল। ৯৫ হিজরীতে হাজ্জাজ তাকে হত্যা করে।
সা‘ঈদ ইবন যায়েদ ইবন আমর ইবন নুফাইল ইবন আব্দুল উযযা আল-আদাভী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী এবং দশজন সুসংবাদপ্রাপ্ত জান্নাতীদের মধ্যে একজন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দারুল আরকামে প্রবেশের আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হিজরত করেন এবং উহুদসহ পরবর্তী সব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। বদরের সময়ে তিনি মদীনাতে ছিলেন না। এ কারণেই তিনি তাতে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি ইয়ারমুক ও দামেশক বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন। ৫১ হিজরীতে তিনি মারা যান।
আবূ আব্দুল্লাহ সুফইয়ান ইবন সা‘ঈদ ইবন মাসরূক আছ-ছাওরী আল-কূফী, তিনি মুজতাহিদ, ফকীহ, মুহাদ্দিস ও ইমাম ছিলেন। তিনি ৯৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। ইয়াহইয়া আল-কাত্তান বলেছেন: আামার কাছে শু‘বা থেকে অধিক প্রিয় আর কেউ ছিল না, তার সমান প্রিয়ও কেউ ছিল না। তবে সুফইয়ান তার বিরোধিতা করলে আমি সুফইয়ানের কথা গ্রহণ করি। একদা তার হাতে কিছু দীনার ছিল। এক ব্যক্তি তাকে বলল: হে আবূ আব্দুল্লাহ! আপনি এই দীনারগুলো জমা করে রেখেছেন? তিনি বললেন: তুমি চুপ থাক, এগুলো না থাকলে রাজা-বাদশাহরা আমাদেরকে রুমালের মত ব্যবহার করত। তিনি ১৬১ হিজরীতে মারা যান।
আবূ মুহাম্মাদ সুফইয়ান ইবন ঊয়ায়নাহ ইবন মাইমূন আল-হিলালী, তাদের আযাদকৃত দাস ছিলেন, আল-কূফী। তিনি মুহাদ্দিস ও ফকীহ ছিলেন। তিনি ১০৭ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হারামে মক্কার মুহাদ্দিস ছিলেন। কূফাতে জন্মগ্রহণ করেন। আর মক্কাতে বসবাস করতেন। সেখানেই তিনি মারা যান। তিনি হাফিজ ও ছিকাহ ছিলেন। ব্যাপক জ্ঞান ও অনেক সম্মানের অধিকারী ছিলেন। ইমাম শাফেয়ী বলেছেন: “যদি মালিক আর সুফিইয়ান না থাকত, তবে হিযাজের ইলম বিলুপ্ত হয়ে যেত।” তিনি সত্তর বার হজ্জ করেছিলেন, হিজরী ১৯৮ সালে তার ওফাত হয়।
সালমান আল-ফারিসী একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি তার নিজেকে ইসলামের সালমান হিসেবে নামকরণ করেন। তার মূল বংশধারা ছিল ইস্পাহানের মূর্তিপূজকদের থেকে। তিনি দৈহিক দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী ও মতামত প্রদানের ক্ষেত্রে বলিষ্ট ছিলেন। শরীআত ও অন্যান্য বিষয়েও জ্ঞানী ছিলেন। আহযাবের যুদ্ধে তিনিই মুসলিমদেরকে খন্দক খননের পরামর্শ দিয়েছিলেন। যখন আনসার ও মুহাজিররা তাকে নিয়ে দ্বন্দ করছিলেন আর প্রত্যেকেই বলছিলেন: সালমান আমাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: “সালমান আমাদের আহলে বাইতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।” তিনি অনেক দীর্ঘ হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি ৩৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ আমির এবং আবূ মুসলিম সালামাহ ইবনুল আকওয়া আল-আসলামী। তাকে আবূ ইয়াস আল-হিজাযী আল-মাদানীও বলা হয়। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমাদের সবচেয়ে উত্তম ঘোড়-সওয়ার হচ্ছে আবূ কাতাদাহ এবং সবচেয়ে উত্তম পদব্রজী সৈনিক হচ্ছে সালামাহ।” উসমানকে যখন হত্যা করা হয়, সালামাহ তখন রবাযাহ নামক স্থানের দিকে চলে যান। সেখানে তিনি একজন নারীকে বিবাহ করেন এবং তাদের অনেকগুলো সন্তান হয়। তিনি মারা যাওয়ার কয়েক রাত আগে মদীনাতে আসেন, এবং ৭৪ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ দাঊদ সুলাইমান ইবনুল আশ‘আছ ইবন ইসহাক ইবন বাশীর আল-আযদী আস-সিজিস্তানী। তিনি ‘সুনানু আবী দাউদ’ এর লেখক ও প্রসিদ্ধ ইমাম। তিনি ইমাম তিরমিযীর উস্তাদ ও ইমাম আহমাদের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০২ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। তার অন্যতম সংকলন হচ্ছে: ‘আল-মারাসীল’ এবং ‘আল-কদর’ তিনি ২৭৫ হিজরীতে মৃতুবরণ করেন।
সাহল ইবন হুনাইফ আল-আনসারী আল-আউসী। তার কুনিয়াত ছিল: আবূ সা‘ঈদ ও আবূ আব্দুল্লাহ। তিনি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন এবং বদরে শরীক হন। উহুদের দিন মানুষ বিচ্ছিন্ন হলেও তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ছিলেন এবং মৃত্যুর বাই‘আত গ্রহণ করেছিলেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে তীর-বর্শা নিক্ষেপ করছিলেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: “তোমরা সাহলকে তীর বা বর্শা সমর্পণ করো; কেননা সে হচ্ছে সাহল [অথবা সে সহজে তা নিক্ষেপ করতে পারে]” তিনি খন্দকসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। উষ্ট্রের যুদ্ধের পরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে বসরার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তারপরে তিনি তার সাথে সিফফীনে অংশগ্রহণ করেন। আর ৩৮ হিজরীতে তিনি মারা যান।
সাহল ইবন সা‘দ ইবন মালিক আল-আনসারী আস-সা‘য়িদী, তিনি প্রসিদ্ধ সাহাবীদের মধ্যে একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। বলা হয়: তার নাম ছিল- হুযন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম পরিবর্তন করে দেন। যুহরী বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যাওয়ার সময়ে সাহলের বয়স পনের বছর ছিল। এক বর্ণনা অনুযায়ী তিনি মদীনাতে মারা যাওয়া সর্বশেষ সাহাবা ছিলেন। তিনি ৯১ হিজরীতে মৃতবরণ করেন।
উম্মুল মু’মিনীন সাউদাহ বিনত যাম‘আহ ইবন কায়েস ইবন আবদ শামস আল-কুরাইশিয়্যাহ আল-আমিরিয়্যাহ, তাকে সুহাইল ইবন আমরের ভাই সাকরান ইবন আমর বিবাহ করেছিলেন। তিনি তাকে রেখে মারা গেলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ করেন। খাদীজা মারা যাওয়ার পরে তিনি তাকেই প্রথম বিবাহ করেন। তিনি আশংকা করেছিলেন যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তালাক দিয়ে দিবেন, এ জন্য তিনি বলেছিলেন: আমাকে তালাক না দিয়ে রেখে দিন, আর আমার দিনটি আয়েশার জন্য ঠিক করে নিন। তখন তিনি তাই করলেন। তখন এই আয়াত নাযিল হল, যার অর্থ: “তারা যদি নিজেদের মধ্যে কোনো ইসলাহ করে নেয়, তাহলে তাদের উভয়ের উপরেই কোনো সমস্যা (পাপ) হবে না। বরং ইসলাহ করে নেওয়াই উত্তম।” আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: “মানুষের মধ্য হতে আমার কাছে সাউদাহ ছাড়া এমন কোনো প্রিয় কেউ নেই, যার দেহে আমার অবস্থানকে আমি পছন্দ করব। তার ভিতরে এক তেজস্বীতা ছিল, যার থেকে প্রত্যাবর্তন ত্বরান্বিত হত।” তিনি ৫৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ ইয়ালা এবং আবূ আব্দুর রহমান শাদ্দাদ ইবন আউস ইবন ছাবিত ইবনুল মুনযির ইবন হারাম আল-আনসারী আন-নাজ্জারী আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সহাবাদের মধ্যে বিদ্বান ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনি বাইতুল মাকদিসে অভিবাসী হয়েছেন। তার অনেক ইবাদত ও আমলের ক্ষেত্রে অনেক প্রচেষ্টা ছিল। তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন, যাদেরকে জ্ঞান ও স্থিরতা বা ধৈর্য্য দান। তিনি ৫৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
সা‘ব ইবন জুচ্ছামাহ ইবন ক্বায়েস ইবন রবী‘আহ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন ইয়া‘মার আল-লাইছী। কুরাইশদের মিত্র ছিলেন। সা‘ব ওয়াদ্দান নামক স্থানে গমণ করতেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ও আউফ ইবন মালিকের মাঝে ভ্রাতৃত্ব স্থাপন করেছিলেন। তিনি হিজরী ২৫ সালের কাছাকাছি সময়ে মৃত্যুবরণ করেন।
তুফায়েল ইবন আমর ইবন ত্বরীফ ইবনুল আস ইবন ছা‘লাবাহ আদ-দাউসী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলেছিলেন: হে আল্লাহর রাসূল! নিশ্চয় দাউসের লোকেরা অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়েছে, আপনি তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন। তখন আল্লাহর রাসূল বললেন: “হে আল্লাহ! আপনি দাউসকে হিদায়াত দিন।” তিনি (তুফায়েল) মক্কাতে ইসলাম গ্রহণ করেন, এরপরে তিনি তার কওমের কাছে ফিরে যান। তারপরে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উমরাতুল কাযার সময়ে উপস্থিত হন এরপরে তিনি মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
শু‘বাহ ইবনুল হাজ্জাজ ইবনুল ওয়ারদ, আবূ বিসত্বাম আল-আযদী আল-আতাকী, তিনি তাদের আযাদকৃত দাস ছিলেন, আল-ওয়াসিতী। তিনি হাফিজ, ইমাম ও হাদীসের ক্ষেত্রে আমীরুল মু’মিনীন ছিলেন। তিনি ৮২ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি তার যুগে বসরার শ্রেষ্ঠ শাইখ ও আলিম ছিলেন। তিনি ইলমের পাত্রসমূহের মধ্য হতে অন্যতম ছিলেন। তার যুগে হাদীসের ক্ষেত্রে কেউ তার অগ্রে যেতেন না। তিনি একাধারে হুজ্জাত, নাকিদ তথা রাবী বিশ্লেষক, ন্যায়পরায়ন, অল্পে তুষ্ট এবং জ্ঞানচর্চা ও আমলের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় ছিলেন। তিনি ১৬০ হিজরীতে মৃতবরণ করেন।
সালিহ আলাইহিস সালাম, একজন আরব নবী। তিনি বনু ছামূদ গোত্রের ছিলেন। যাদেরকে আসহাবুল হিজর (হিজর অঞ্চল অথবা পাথরের অধিবাসী) বলা হয়। হিজর (حجر) শব্দটির হা বর্ণে যের এবং জীম বর্ণে সুকূন সহযোগে পড়তে হবে। হিজর হচ্ছে তাদের (ছামূদ গোত্রের) শহরের নাম, আজকের দিনে যাকে সালিহ আলাইহিস সালামের দিকে সম্পৃক্ত করে মাদায়েনে সালিহ বলা হয়। সালিহ আলাইহিস সালাম নূহ ও ‘আদ সম্প্রদায়ের পরে এসেছিলেন। তাকে তার সম্প্রদায়ের হিদায়াতের জন্য পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু অল্প সংখ্যক ছাড়া সবাই তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল। তখন চিৎকার (আযাব) তাদেরকে গ্রাস করে ফেলেছিল।
সখর ইবন হারব ইবন উমাইয়াহ ইবন আবদে শামস ইবন আবদে মানাফ, আবূ সুফইয়ান আল-কুরাইশী আল-উমাভী। তিনি তার নাম ও কুনিয়াতের মাধ্যমে প্রসিদ্ধ। তার আরো একটি কুনিয়াত ছিল: আবূ হানযালাহ। (আবরাহার) হস্তী বছর হতে দশ বছর আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের বছরে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হুনাইন ও তায়েফ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি তাদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন যাদের অন্তরকে আকৃষ্ট করা হয়েছিল (মুয়াল্লাফাতে কুলূব)। তার আগে তিনি উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে মুশরিকদের সর্দার ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণের আগেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কন্যা উম্মু হাবীবাকে বিবাহ করেছিলেন; তিনি আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ৩১ হিজরীতে, অন্য বর্ণনায় ৩৪ হিজরীতে উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ উমামাহ আল-বাহিলী, সুদায়্যি ইবন আজলান ইবনুল হারিছ। বলা হয়: ইবন ওয়াহব, আরো বলা হয়: ইবন আমর ইবন ওয়াহব ইবন আরীব ইবন ওয়াহব ইবন রিয়াহ ইবনুল হারিছ ইবন মা‘আন ইবন মালিক ইবন আ‘সার। তিনি তার কুনিয়াতে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি বলেছেন: যখন এই আয়াত নাযিল হল, যার অর্থ: “আল্লাহ মুমিনদের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হয়ে গেছেন যখন তারা গাছের নিচে বাই‘আত গ্রহণ করছিল।” তখন আমি বললাম: হে আল্লাহর রাসূল! যারা আপনার কাছে গাছের নিচে বাই‘আত নিয়েছিল, আমি তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। তিনি বললেন: “তুমি আমার দলভুক্ত এবং আমি তোমার দলভুক্ত।” তিনি ৮১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মুল মু’মিনীন সফিয়্যাহ বিনত হুওয়াই ইবন আখতাব। বনু নযীরের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এবং তিনি লাও ইবন ইয়াকুবের বংশধারার ছিলেন। এরপরে তিনি মূসা আলাইহিস সালামের ভাই হারূন আলাহিস সালামের বংশধর ছিলেন। তিনি (সফিয়্যাহ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ছিলেন। ৫০ হিজরীতে তিনি মৃত্যবরণ করেন।
আবুল ফাদল আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম ইবন আবদে মানাফ আল-কুরাইশী আল-হাশিমী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মের দুই বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। জাহেলী যুগে তার হাতে হাজীদের পানি পান করানো এবং কাবা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল। তিনি ইসলাম গ্রহণের আগে বাই‘আতে আকাবাতে আনসারদের সাথে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বাধ্য হয়ে বদরে মুশরিকদের সাথে ছিলেন। তিনি বন্দী হন এবং তিনি নিজের ও তার ভাতিজা আকীল ইবন আবী তালেবের মুক্তিপণ আদায় করে দেন। এরপরে তিনি মক্কাতে ফিরে যান। কেউ কেউ বলেছেন: তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তবে তার কওমের কাছে তা গোপন রেখেছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সংবাদ লিখে পাঠাতেন। মক্কা বিজয়ের কিছুদিন আগে তিনি মদীনাতে হিজরত করেন। এরপরে মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন, হুনাইনের দিনে তিনি অত্যন্ত দৃঢ়পদ ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে আব্বাসকে কষ্ট দেবে, সে আমাকেই কষ্ট দেবে; কেননা কোন ব্যক্তির চাচা তার পিতার মতই।” তিনি ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্বাদ ইবন বিশর ইবন ওয়াকশ আল-আশহালী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি কা‘ব ইবন আশরাফকে হত্যাকারীদের একজন ছিলেন। সহীহ বুখারীতে আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আব্বাদের আওয়ায শুনে বলেছিলেন: “হে আল্লাহ! আব্বাদকে আপনি রহম করুন।” তিনি ১২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল ওয়ালিদ, উবাদাহ ইবনুস সামিত ইবন কায়েস আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আকাবাহর নকীবদের মধ্য হতে একজন ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মধ্যে ও আবূ মারছাদ আল-গুনাভীর মধ্যে ভাতৃত্ব সম্পর্ক স্থাপন করেছিলেন। তিনি বদরের পরে প্রতিটি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৩৪ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল ফারজ, আব্দুর রহমান ইবন আহমাদ ইবন রজব আস-সুলামী আল-বাগদাদী তারপরে আদ-দিমাশকী। তিনি একাধারে মুহাদ্দিস, হাম্বলী ফকীহ, নির্ভরযোগ্য ও বহুশাস্ত্রবিদ বিদ্বান ছিলেন। তিনি ৭৩৬ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি সালাফদের কথার ব্যাপারে অত্যন্ত দূরদর্শী ছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য লেখনীর মধ্যে রয়েছে: ‘তাকরীরুল কাওয়ায়েদ ওয়া তাহরীরুল ফাওয়ায়েদ’, ‘জাইলু তবকাতিল হানাবিলাহ’, ‘ফাতহুল বারী ফী শারহি সহীহিল বুখারী’, ‘জামিউল উলূমি ওয়াল হিকাম’ এটি হচ্ছে আল-আরবাঊন আন-নাওয়াবিয়্যাহ গ্রন্থের ব্যাখ্যা এবং ‘শারহু জামি‘ আত-তিরমিযী’। তিনি হিজরী ৭৯৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুর রহমান ইবন সামুরাহ ইবন হাবীব ইবন আবদু শামস আল-কুরাইশী, আবূ সা‘ঈদ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। জাহেলী যুগে তার নাম ছিল: আবদু কালাল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন আব্দুর রহমান। তিনি নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। মক্কা বিজয়ের দিন তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপরে তিনি মুতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বসরাতে বসবাস করতেন। তিনি সিজিস্তান, কাবুলসহ আরো অন্যান্য স্থান জয় করেন। তিনি সিজিস্তানে আমীর নিযুক্ত হন। তিনি খুরাসানের অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং বেশ কিছু স্থানে বিজয়ী হন। এরপরে তিনি আবার বসরাতে ফিরে আসেন। এবং সেখানেই ৫০ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ হুরাইরাহ আব্দুর রহমান ইবন সখর আদ-দাউসী। ইবনু আব্দুল বার বলেন: “বিদ্বানগণ ইসলাম ও জাহেলী যুগে আবূ হুরাইরাহ ও তার পিতার নামের ব্যাপারে এত বেশী মতামত ব্যক্ত করেছেন যে, তার সংরক্ষণ করা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার।” তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি ইসলামের মুসনিদ (হাদীসের বর্ণনাকারী), তিনি সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি একদিনে ১২০০০ তাসবীহ পাঠ করতেন। মদীনাতে তিনি একাধিকবার দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ৫৭ অথবা ৫৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল ফারজ, ইবনুল জাওযী, আব্দুর রহমান ইবন আলী ইবন মুহাম্মাদ ইবন আলী ইবন উবাইদুল্লাহ ইবন আব্দুল্লাহ ইবন হিমাদী, তার বংশধারা আবু বাকর আস-সিদ্দীক পর্যন্ত গিয়েছে, আল-কুরাইশী, আত-তাইমী, আল-বিকরী, আল-বাগদাদী আল-হাম্বালী। তিনি ৫০৯ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম, আল্লামাহ, হাফিয এবং মুফাসসির ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য লেখালেখি করেছেন। তিনি তাফসীরের ক্ষেত্রে সমুদ্র (পরিমাণ জ্ঞানী) ছিলেন। ইতিহাস ও জীবনী বিষয়ে তিনি মহাপণ্ডিত ছিলেন। হাদীসের ব্যাপারে তাকে হাসান (উত্তম) হিসেবে আখ্যা দেওয়া হত, ফকীহ ছিলেন। এছাড়াও তিনি আলেমদের ঐক্য ও মতবিরোধের ব্যাপারে জ্ঞানী ছিলেন। তার পৌত্র আবুল মুজাফফার বলেন: আমি আমার নানাকে মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি: “আমি আমার এই দুটি আঙ্গুল দিয়ে দুই হাজার খন্ড (বই বা পাণ্ডুলিপি) লিখেছি,আর আমার হাতে এক লক্ষ মানুষ তাওবা করেছে এবং আমার হাতে বিশ হাজার লোক ইসলাম গ্রহণ করেছে।” তিনি প্রতি এক সপ্তাহে কুরআন খতম করতেন। বাল্যকাল থেকেই মানুষকে নসীহত করতেন। তারপর থেকে তার চাহিদা মানুষের কাছে বাড়তেই থাকে, এবং তারা তার কাছে ভিড় জমাতে থাকে হিজরী ৫৯৭ সালে মৃত্যুবরণের আগ পর্যন্ত।
আব্দুর রহমান ইবন আমর ইবন ইয়াহমাদ, আবূ আমর আল-আওযা‘ঈ। তিনি একজন ইমাম ও ফকীহ ছিলেন। তিনি ৮৮ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। আওযা নামক স্থানে তিনি বাস করতেন। সেটি মূলত একটি ছোট গিরিপথ, যা দামেশকের বাবুল ফারাদীসের সামনে অবস্থিত। তিনি (সিরিয়া বা দামেশকের) অধিবাসীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তিনি হাদীস বর্ণনাতে বিশ্বস্ত ছিলেন। তার নিজস্ব একটি প্রসিদ্ধ মাযহাব ছিল। স্পেন ও সিরিয়াবাসী আলিমগণ একটি সময় পর্যন্ত তার সে মাযহাবের উপর আমল করেছেন। এরপরে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়। তার একটি বক্তব্য হচ্ছে: “যে ব্যক্তি আলিমদের বিরল মতসমূহকে গ্রহণ করবে, সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।” তিনি ১৫৭ হিজরীতে মারা যান।
আব্দুর রহমান ইবন আউফ ইবন আবদু আউফ ইবন আব্দিল হারিছ ইবন যাহরাহ ইবন কিলাব আল-কুরাইশী আয-যুহরী, আবূ মুহাম্মাদ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। আবরাহার হস্তীর বছরের দশ বছর পরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আশারায়ে মুবাশশারাহ তথা দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি ছয়জন শুরা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন্, যাদের ব্যাপারে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মারা যাওয়ার সময়ে তাদের উপরে রাজী ছিলেন। দারুল আরকামে প্রবেশের আগেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি মদীনা ও হাবশাতে (উভয় স্থানে) হিজরত করেন। বদরসহ সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। আব্দুর রহমান ইবন আউফ বদরে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকের জন্য চারশত দিরহামের অসীয়ত করেছিলেন, তাদের সংখ্যা একশত ছিল। তিনি ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুর রহমান ইবন মুহাম্মাদ আবূ হাতিম ইবন ইদরীস ইবনুল মুনযির আত-তামিমী আল-হানজালী আর-রাজী, আবূ মুহাম্মাদ। তিনি একজন মুহাদ্দিস ও হাফিজ ছিলেন। ২৪০ হিজরীতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাদীসের ক্ষেত্রে বড় হাফিজদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। রাই (الري) শহরের দারবে হানজালা বা হানজালার পথে তার বাড়ী ছিল, এই দুটি স্থানের দিকেই তাকে সম্পৃক্ত করা হয়। তার অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: ‘আল-জারহু ওয়াত তা‘দীল’, ‘আত-তাফসীর’ এবং ‘আর-রদ্দু আলাল জাহামিয়্যাহ’ ইত্যাদি। তিনি ৩২৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুর রহমান ইবন নাসির ইবন আব্দুল্লাহ ইবন সা‘দী আত-তামিমী। তিনি নজদের অধিবাসী, ফকীহ, মুফাসসির ও হাম্বলী ছিলেন। তার জন্ম ও মৃত্যু কাসীম শহরের উনাইযাহ অঞ্চলে হয়েছিল। তিনি ১৩০৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনিই সেখানে ১৩৫৮ হিজরীতে সর্বপ্রথম একটি লাইব্রেরী প্রতিষ্ঠা করেন। তার বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে: শাইখ মুহাম্মাদ আল-উছাইমীন। তার লেখা প্রায় ৩০টি গ্রন্থ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে: ‘তাফসীরুল কারীমির রহমান ফী তাফসীরি কালামিল মান্নান’, ‘তাইসীরুল লাত্বীফ আল-মান্নান ফী খুলাসাতি মাকাসিদিল কুরআন’, ‘আল-কাওয়ায়েদুল হিসান ফী তাফসীরিল কুরআন’, ‘ত্বরীকুল উসূল ইলাল ইলমিল মামূলি মিনাল উসূল’ এবং ‘আল-আদিল্লাতুল কাওয়াত্বি ওয়াল বারাহীন ফী ইবত্বালি উসূলিল মুলহিদীন’। তিনি ১৩৭৬ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ইবরাহীম ইবন মূসা ইবন মুহাম্মাদ, আবূ ইসহাক আল-লাখমী আল-গারানাতী। তিনি শাতিবী নামে প্রসিদ্ধ। তার কুনিয়াত, যার মাধ্যমে তিনি পরিচিত হয়েছিলেন, তা হচ্ছে আবূ ইসহাক। তিনি একজন ফকীহ, উসূলশাস্ত্রবিদ ও মুফাসসির ছিলেন। এটা স্পষ্ট যে, তিনি গ্রানাডাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এর একটি কারণ হচ্ছে তিনি সেখানেই বেড়ে ওঠেন আর তিনি তা প্রস্থান করেছেন মর্মে কিছু জানা যায়নি। আর তার সফর না করার কারণ হচ্ছে: যেহেতু আলিমগণ ইলম অন্বেষণের জন্যই সফর করতেন, কিন্ত শাতিবীর শহরেই তখন ইলম উপস্থিত ছিল। তিনি ৭৯০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল মুনযির ও আবুত তুফায়েল উবাই ইবন কা‘ব ইবন কায়েস ইবন উবায়েদ আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। সাহাবাদের মধ্যে তিনি একজন বিদ্বান বলে বিবেচিত হতেন। উমার বলতেন: “উবাই হচ্ছে মুসলিমদের সর্দার।” তাকে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: “হে আবুল মুনযির! তোমার মুখস্ত থাকা কোন আয়াতটি সবচেয়ে মহান, তা কি তুমি জান?” উবাই বলেন: আমি বললাম: الله لا إله إلا هو الحي القيوم যার অর্থ: “আল্লাহ হচ্ছেন তিনি, যিনি ছাড়া কোন প্রকৃত ইলাহ নেই, তিনিই চিরঞ্জীব, চিরন্তন।” তিনি বলেন: তখন তিনি আমার বুকের উপরে মৃদু আঘাত করলেন। তিনি বললেন: “আল্লাহর কসম! তোমার জ্ঞানকে স্বাগতম, হে আবুল মুনযির।” আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আরো বলেছিলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ আমাকে আদেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাকে সূরা বাইয়িনাহ পাঠ করে শুনাই। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: আমার নাম ধরে বলেছেন? তিনি জবাব দিলেন: হ্যাঁ। তখন তিনি কেঁদে ফেললেন। তার মৃত্যুসাল নিয়ে প্রচুর মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন: ১৯ হিজরী, কেউ ২০ হিজরী আবার কেউ ৩২ হিজরী বলেছেন।
আরওয়া বিনতুল হারিছ ইবন আব্দুল মুত্তালিব আল-কুরাইশিয়্যাহ। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন ছিলেন। আবূ সুফিয়ান ইবনুল হারিছের বোন। তিনি তার বিশুদ্ধভাষী হওয়ার কারণে প্রসিদ্ধ ছিলেন। ইবনু সা‘দ তাকে মহিলা সাহাবীদের মধ্যে উল্লেখ করেছেন। তিনি ৫০ হিজরীর কাছাকাছি সময়ে মৃত্যবরণ করেন।
উসামাহ ইবন যাইদ ইবন হারিসাহ ইবন শারাহীল ইবন আব্দুল উযযা ইবন ইমরাউল কায়েস আল-কালবী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি মাওলা (আযাদকৃত গোলাম), আমীর ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিলেন । তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রিয়ভাজন ও প্রিয়ভাজনের সন্তান ছিলেন এবং তার আযাদকৃত গোলাম এবং আযাদকৃত গোলামের সন্তান ছিলেন। সিরিয়ার অভিযানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সেনাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেন, যে সেনাবাহিনীতে উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুসহ বড় বড় সাহাবী উপস্থিত ছিলেন। তিনি সফর করার আগেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুবরণ করেন। আবূ বকর আস-সিদ্দীক তাদেরকে অভিযানে দ্রুত প্রেরণ করার ব্যবস্থা করেন। উসামাহ হতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তিনি বলেছেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এবং হাসানকে ধরে বলতেন: “হে আল্লাহ! আমি তাদের দুজনকে ভালবাসি, সুতরাং আপনিও তাদের দুজনকে ভালবাসেন।” তিনি ৫৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আহমাদ ইবন আব্দুল হালীম ইবন আবদিস সালাম ইবন তাইমিয়্যাহ আল-হাররানী, শাইখুল ইসলাম। তিনি একাধারে ইমাম, মুজতাহিদ ও সমাজ সংষ্কারক মুজাদ্দিদ ছিলেন। তিনি ৬৬১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নাকলী (কুরআন-সুন্নাহ) ও আকলী (যুক্তিভিত্তিক) উভয় ধরণের জ্ঞানের সাগর ছিলেন। তিনি মেধা ও দ্রুত বুঝার ক্ষেত্রে একজন তারকাতুল্য ব্যক্তি ছিলেন। তাকে তাকী উদ্দিন নামে অভিহিত করা তিনি অপছন্দ করতেন। তবুও তিনি উক্ত নাম ও শাইখুল ইসলাম নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। তার সম্পর্কে আল্লামাহ ইবনু দাকীকুল ‘ঈদ বলেছেন: “আমি যখন ইবন তাইমিয়্যাহ এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম, তখন দেখলাম যে, তিনি এমন একজন লোক, যার দুই চোখের সামনেই সকল ইলম রয়েছে। তিনি সেখান থেকে যেটি খুশি গ্রহণ করছেন আর যেটি খুশি ছেড়ে দিচ্ছেন।” হাফিয ইবনু হাজার বলেছেন: “তিনি ফিকহ শিখেছেন, তাতে দক্ষতা অর্জন করেছেন এরপরে তাতে তিনি শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করেছেন। তিনি অগ্রসর হয়েছেন আর কিতাব রচনা করেছেন, দারস এবং ফাতওয়া প্রদান করেছেন। সমসাময়িকদের থেকে মর্যাদায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। দ্রুত মনে করা, প্রচণ্ড সংরক্ষণ শক্তি, কুরআন-সুন্নাহ (নাকল) ও যুক্তি (বা আকল) উভয়ের ক্ষেত্রে জ্ঞানগত ব্যাপকতা এবং পূর্ববর্তী ও পরবর্তী মাযহাবসমূহের ব্যাপারে প্রশস্ত জ্ঞান ইত্যাদির ক্ষেত্রে তিনি এক বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী ছিলেন।” তার লেখনী অসংখ্য, এমনকি যাহাবী বলেছেন: “বর্তমান সময়ে তার লেখনীর পরিমাণ মনে হয় চার হাজার খাতা বা তারও অধিক।” তার গ্রন্থগুলোর অন্যতম কয়েকটি হচ্ছে: দারউ তা‘আরুদিল আকলি ওয়ান নাকল, মিনহাজুস সুন্নাহ আন-নাবাবিয়্যাহ, আল-ইস্তিকামাহ, আল-জাওয়াবুস সহীহ লিমান বাদ্দালা দীনাল মাসীহ, বায়ানু তালবীসিল জাহামিয়্যাহ, ইকতিদাউস সিরাত আল-মুস্তাকীম লিমুখালাফাতি আসহাবিল জাহীম। তিনি হিজরী ৭২৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি উম্মু আব্দুল্লাহ আসমা বিনত আবী বকর, আব্দুল্লাহ ইবন আবী কুহাফা উসমান আত-তাইমিয়্যাহ। তিনি একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী ছিলেন। আর তিনি আবু বকর সিদ্দিকের কন্যা ছিলেন। যুবায়ের ইবনুল আওয়ামের স্ত্রী ছিলেন। আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়েরের মা ছিলেন। তিনি উম্মুল মুমিনীন আয়েশার বৈমাত্রেয় বোন ছিলেন। তিনি ‘যাতুন নিতাকাইন’ (দুই ফিতাওয়ালা) নামে পরিচিত। তিনি মৃত্যুবরণকারী সর্বশেষ হিজরতকারী মহিলা। তিনি বেশ কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি অনেক লম্বা হায়াত পেয়েছিলেন, শেষ বয়সে তিনি অন্ধ হয়ে যান। তিনি ৭৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ আহমাদ ইবন মুহাম্মাদ ইবন হাম্বাল আশ-শাইবানী। তিনি ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইসলামের বিদ্বান ও ইমামদের একজন ছিলেন। তার জীবনী সংক্রান্ত আলোচনা অনেক ও প্রসিদ্ধ। তার সম্পর্কে ইমাম শাফেয়ী বলেছেন: “আহমাদ আটটি বিষয়ের ইমাম ছিলেন: হাদীসের ইমাম, ফিকহের ইমাম, ভাষার ইমাম, কুরআনের ইমাম, দরিদ্রতার ইমাম, যুহদ বা দুনিয়া বিমূখতার ইমাম, আল্লাহ ভীরুতার ইমাম এবং সুন্নাহর ইমাম।” খলকে কুরআন তথা কুরআন আল্লাহর সৃষ্ট কী না (মুতাযিলাদের মতবাদ) এর মাসআলাতে তার অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা তার ইলম ও সবরের প্রতি ইঙ্গিত করে। এমনকি এ কারণে তাকে ‘ইমামু আহলিস সুন্নাহ’ বলা হয়। অর্থাৎ তিনি বিদ‘আতের প্রসারের সময়ে সুন্নাহকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আর অন্যান্য যাদেরকে আহলুস সুন্নাহর ইমাম বলা হয়, তাও এই অর্থেই। এর বিপরীত হচ্ছে বিদ‘আতীদের ইমামগণ; কেননা তারা বিদ‘আতকে তৈরী করে এবং তা (সমাজে) নিয়ে আসে। সুতরাং সুন্নাহর ইমামগণের প্রতি সুন্নাহর সম্পৃক্ততা হচ্ছে তা প্রতিষ্ঠা ও প্রসারের কারণে। আর বিদ‘আতের ইমামদের প্রতি বিদ‘আতের সম্পৃক্ততা হচ্ছে তা তৈরী করা এবং নতুনভাবে তা নিয়ে আসার কারণে। ইমাম আহমাদের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের মধ্যে রয়েছে: আল-মুসনাদ, আয-যুহদ, আল-আশরিবাহ, রিসালাতুন ফিল মুসীই সলাতাহ, আর-রদ্দু আলায যানাদিকাতি ওয়াল জাহামিয়্যাহ এবং অন্যান্য। তার ছাত্ররা তার কাছ থেকে ষাট হাজার মাসআলাহ বর্ণনা করেছেন। এবং তার মাযহাব উসূলী ও ফুরূয়ী (মৌলিক ও প্রশাখাগত) উভয় ধরণের মাসআলা সহকারে প্রতিষ্ঠিত। তিনি ২৪১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আসমা বিনত উমাইস ইবন মা‘আদ – অথবা মা‘বাদ- ইবনুল হারিছ আল-খছ‘আমিয়্যাহ। তার কুনিয়ত ছিল উম্মু আব্দুল্লাহ। তিনি একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী ছিলেন। মাইমূনাহ বিনতুল হারিছের বৈপিত্রীয় বোন ছিলেন। তিনি জা‘ফার ইবন আবী তালিবের স্ত্রী ছিলেন, তিনি তাকে রেখে মারা যান। তারপরে তাকে আবূ বকর সিদ্দীক বিবাহ করেন, তিনিও তাকে রেখে মারা যান। তারপরে তাকে আলী ইবন আবী তালেব বিবাহ করেন এবং তাদের সবার থেকে তার সন্তান হয়। তিনি প্রথমে হাবশাতে এরপরে মদীনাতে হিজরত করেন। এজন্য তাকে দুই হিজরতের অধিকারিনী বলা হয়। তিনি আলীর পরে মারা যান।
উসাইদ ইবনুল হুদাইর ইবন সিমাক ইবন আতীক ইবন নাফি‘ ইবন ইমরাঊল কায়েস ইবন যাইদ ইবন আব্দিল আশহাল, আবু ইয়াহইয়া, আরো বলা হত: আবূ আতীক, আল-আনসারী, আল-আওসী আল-আশহালী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আকাবার রাতে বারোজন নকীবের একজন ছিলেন। তিনি প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তাকে সম্ভ্রান্ত শ্রেণির মধ্যে বুদ্ধিজীবি ও সিদ্ধান্ত প্রদানকারী হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি মানুষদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর আওয়াজে কুরআন পাঠ করতেন। ২০ হিজরীতে তার মৃত্যুর সময়ে খাটিয়ার দুই পায়ের মধ্যে থেকে উমার তাকে বহন করেন, যতক্ষণ না তাকে বাকীতে (কবরস্থানে) রাখা হয়। এরপরে তিনি তার জানাযার ইমামতি করেন।
আল-আশ‘আছ ইবন কায়েস ইবন মা‘দীকারিব ইবন মু‘আবিয়াহ আল-কিন্দী। তিনি তাদের মধ্যে একজন সাহাবী ছিলেন, যারা আমুল উফূদ বা প্রতিনিধি আগমণের বছরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ইসলামের আগ পর্যন্ত কিনদাহর রাজাদের একজন ছিলেন। তার নাম ছিল: মা‘দীকারিব। তার মাথার চুল এলোমেলো বা অগোছালো ধরণের ছিল, আর এ কারণেই তার নামের উপরে এই লকবটি প্রসিদ্ধি লাভ করে। আশ‘আছ রাদিয়াল্লাহু আনহু কূফাতে ৪০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। হাসান ইবনু আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুমা তার জানাযার সালাতের ইমামতি করেন।
আম্মার ইবন ইয়াসির আবুল ইয়াকজান আল-আনসী আল-মাক্কী। তিনি বনূ মাখযূমের একজন আযাদকৃত দাস ছিলেন। বড় একজন ইমাম ও একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম। তার মা ছিলেন- বনূ মাখযূমের আযাদকৃত দাসী সুমাইয়াহ, তিনিও মহিলা সাহাবীদের মধ্যে একজন প্রবীণ সাহাবী ছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার জন্য আম্মারকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। তিনি বদরসহ সকল যুদ্ধে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হাবশাতে হিজরত করেছিলেন এবং তারপরে মদীনাতে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ও তার পিতা-মাতাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন। ৩৭ হিজরীতে সিফফিনের যুদ্ধে তাকে বিদ্রোহীরা হত্যা করে।
আবূ হাফস উমার ইবনুল খাত্তাব ইবন আব্দুল উযযা আল-কুরাইশী আল-‘আদাভী। আমীরুল মু’মিনীন, আল-ফারূক। তিনি প্রথম শ্রেণির মুহাজির, আহলে বাই‘আতুর রিদওয়ান, আশারায়ে মুবাশশারাহ তথা দশজন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের একজন ছিলেন। তিনি প্রতিটি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি আবূ বকর এর সাহায্যকারী বা মন্ত্রী ছিলেন। আর আবূ বকর এর কথা অনুযায়ী তিনি খিলাফাতে অধিষ্ঠিত হন। তিনি ছিলেন প্রথম খলীফা, যাকে আমীরুল মু’মিনীন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। মদীনাতে উপস্থিত এবং অনুপস্থিত কোন সাহাবীই তার বাই‘আত গ্রহণে বিলম্ব করেননি। তিনি ২২ হিজরীতে মারা যান।
আবূ হাফস উমার ইবন আবী সালামাহ আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল আসাদ ইবন হিলাল ইবন আব্দুল্লাহ ইবন উমার ইবন মাখযূম আল-কুরাইশী আল-মাখযূমী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রবীব (স্ত্রী -উম্মু সালামাহর- প্রথম স্বামীর সন্তান)। আবার দুধ পানের সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার চাচা ছিলেন। তিনি হিজরতের দুবছর আগে অথবা কাছাকাছি সময়ে জন্মগ্রহণ করেন। আবদুল মালিক ইবন মারওয়ানের খিলাফাত আমলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ইমাম, আবূ আব্দুল্লাহ আমর ইবনুল ‘আস ইবন ওয়ায়েল আল-কুরাইশী আস-সাহমী। তাকে আবূ মুহাম্মাদও বলা হত। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি কুরাইশদের মধ্যে সুকৌশলী ও পতাকাবাহী ব্যক্তি ছিলেন। বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার ক্ষেত্রে তাকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করা হত। তিনি মুসলিম অবস্থায় অষ্টম হিজরীর প্রথম দিকে খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ ও কা‘বার রক্ষণাবেক্ষণকারী উসমান ইবন তালহার সঙ্গে হিজরত করে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে গমন করেন। তাদের আগমণ ও ইসলাম গ্রহণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত খুশি হন। আমরকে তিনি কয়েকটি অভিযানের নেতুত্ব প্রদান করেন। আবূ উসমান আন-নাহদী হতে সহীহ সূত্রে বর্ণিত, তিনি আমর থেকে বর্ণনা করেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাতুস সালাসিল নামক অভিযানে সেনাদের উপরে দায়িত্বশীল হিসেবে নিযুক্ত করেন, ঐ যুদ্ধের সেনাদের মধ্যে আবূ বাকর ও উমার ছিলেন। তিনি ৪২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ মিহজান আমর ইবন হাবীব ইবন আমর ইবন উমায়ের ইবন আউফ আস-সাকাফী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি ইসলাম ও জাহেলী যুগে সাহসী, কবি ও সম্মানিতদের অন্যতম ছিলেন। তিনি ৯ হিজরীতে ইসলাম গ্রহণ করেন। বেশ কিছু হাদীস তিনি বর্ণনা করেছেন। তিনি মাঝে মাঝে মদ পান করে ফেলতেন। উমার তাকে একাধিকবার হদ্দ প্রয়োগ করে শাস্তি দিয়েছেন। তারপরে তাকে কোন একটি সামুদ্রিক দ্বীপে নির্বাসনে পাঠানো হলে তিনি সেখান থেকে পলায়ন করেন। এরপরে তিনি সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাসের সাথে মিলিত হন, যখন সা‘দ পারস্য সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। উমার তাকে বন্দী করার নির্দেশ দিলে সা‘দ তাকে তার কাছে বন্দী করে নেন। এমন একদিনে কাদেসিয়াতে প্রচণ্ড রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। তখন আবূ মিহজান সা‘দের স্ত্রী সালমার কাছে তার কয়েদ খুলে দেওয়ার জন্য বলেন এবং তাকে এই ওয়াদা দেন যে, যদি তিনি সুস্থ থাকেন তবে তিনি সেখানে ফিরে আসবেন। এবং এ ব্যাপারে তিনি বেশ কয়েকটি পংক্তি আবৃত্তি করেন। তখন তিনি তার কয়েদ খুলে দেন। সেদিন তিনি এক আশ্চর্যজনকভাবে লড়াই করেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরে তিনি উক্ত কয়েদ ও বন্দীদশায় ফিরে আসেন। তখন সা‘দকে সালমা সকল কথা খুলে বললে, সা‘দ তাকে মুক্ত করে দেন এবং তাকে বলেন: আমি কখনোই আপনার উপরে হদ্দ প্রয়োগ করব না। তখন আবূ মিহজান বললেন: আর আমিও আল্লাহর কসম, আর কোনোদিন মদ পান করব না। এরপরে তিনি আর কখনোই মদ পান করেননি। তিনি ৩০ হিজরীতে আজারবাইজান অথবা জুরজান নামক স্থানে মৃত্যুবরণ করেন।
ইবন উম্মু মাকতূম, অধিকাংশের মতে তার নাম ছিল আমর, কেউ কেউ বলেছেন: আব্দুল্লাহ। তিনি কায়েস ইবন যায়িদাহ আল-কুরাইশী আল-আমিরীর পুত্র ছিলেন। তার মাতা উম্মু কালসূম এর নাম হচ্ছে আতিকাহ আল-মাখযূমিয়্যাহ। তিনি (ইবনু উম্মু মাকতূম) একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি দৃষ্টিতে অন্ধ ছিলেন। তিনি মক্কাতেই ইসলাম গ্রহণ করেন, তবে বদরের যুদ্ধের পরে তিনি মদীনাতে হিজরত করেন। তিনি বিলালের সাথে মদীনাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুয়জ্জিন ছিলেন। যুদ্ধের সময়ে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মদীনার দায়িত্ব প্রদান করতেন। তার থেকে বর্ণিত হাদীস রয়েছে। তিনি কাদেসিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তার সাথে একটি কালো ঝান্ডা ছিল, এবং তার গায়ে একটি প্রশস্ত বর্ম ছিল। তিনি অন্ধ হয়েও লড়াই করেন। এরপরে তিনি মদীনাতে ফিরে আসেন। উমার ইবনুল খত্তাবের মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে তিনি মারা যান। কেউ কেউ বলেছেন: তিনি কাদেসিয়াতে ১৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আউফ ইবন মালিক ইবন আবী আউফ আল-আশজা‘ঈ আল-গাতফানী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি হুনাইনের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। ওয়াকিদী বলেন: “তিনি খায়বারের আগে ইসলাম গ্রহণ করে তাতে অংশগ্রহণ করেন।” তিনি মক্কা বিজয়ে এবং মুতার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
আবুদ দারদা উআইমির ইবন যাইদ ইবন কায়েস। আরো বলা হয়: উআইমির ইবন আমির, আরো বলা হয়: ইবন আব্দুল্লাহ, আরো বলা হয়: ইবন ছা‘লাবাহ ইবন আব্দুল্লাহ আল-আনসারী আল-খাযরাজী। অনুসরণযোগ্য ইমাম। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি এই উম্মাতের হাকীম ছিলেন, দামেশকের বিচারক এবং দামেশকের ক্বারীদের সর্দার ছিলেন। যারা আল্লাহর রাসূলের কাছে তিলাওয়াত করেছেন, তিনি তাদের মধ্যে গণ্য। তিনি অন্য কারো কাছ থেকে পড়েছেন, এ মর্মে কোন বর্ণনা আমাদের কাছে আসেনি। তিনি তাদের মধ্যেও অন্যতম, যারা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশাতে কুরআন একত্রিত করেছেন। তিনি উসমানের খিলাফাত আমলে ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছেন, আরো মতও রয়েছে।
উম্মু হানী বিনত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা আবূ তালেব আব্দু মানাফ ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম আল-কুরাইশিয়্যাহ, সাইয়্যিদাহ সম্মানিতা নারী ছিলেন। তার নাম ফাখিতাহ, কেউ কেউ বলেছেন: হিন্দা। তিনি একজন বড় মহিলা সাহাবী ছিলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিনে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনেকগুলো হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর মৃত্যুর পরেও দীর্ঘদিন বেঁচে ছিলেন।
ফাতিমাহ বিনত কায়েস আল-ফিহরিয়্যাহ: তিনি হচ্ছেন ফাতিমাহ বিনত কায়েস ইবন খালিদ আল-আকবার ইবন ওয়াহব। তিনি ধাহহাক ইবন কায়েসের বোন ছিলেন। তিনি একজন সম্মানিত মহিলা সাহাবী। তিনি সম্ভ্রান্ত একজন নারী ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তিনি বেশ কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলে মৃতবরণ করেন।
আল-ফাদল ইবন আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব ইবন হাশিম ইবন আবদে মানাফ আল-কুরাইশী আল-হাশিমী, আবু মুহাম্মাদ ও আবু আব্দুল্লাহ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার ছেলে। তিনি আব্বাসের বড় সন্তান ছিলেন। আব্বাসকে তার নামেই নামকরণ করা হত। তিনি আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ৮হিজরীতে মক্কা বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার সাথে হুনাইনেও অংশগ্রহণ করেন। সেই যুদ্ধে যখন মানুষেরা আক্রমণের প্রচন্ডতায় পিছনে ফিরে গিয়েছিল, তখন আহলে বাইত ও তার সাহাবীদের থেকে যারা রসূলের সাথে দৃঢ়তাসহ অবস্থান করছিলেন তিনি তাদের একজন ছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিদায় হজে অংশগ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মুজদালিফা থেকে মিনা পর্যন্ত নিজের সওয়ারীর পিছনে বসিয়ে ছিলেন। এজন্য তাকে বলা হত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ‘রাদীফ’ তথা পিছনে আরোহণকারী। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত দেখেন এবং তার গোসল কার্যে অংশগ্রহণ করেন, তিনি আলী ইবন আবু তালিবকে পানি ঢেলে দিচ্ছিলেন। তার মৃত্যুর সময় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে, তবে সবচেয়ে শুদ্ধ মত হচ্ছে: তিনি মুজাহিদ হিসেবে সিরিয়াতে গমন করেন এবং সেখানে আমওয়াসের মহামারীতে জর্দানের কাছাকাছি কোনো এক স্থানে তিনি ১৮ হিজরীতে, উমার ইবনুল খাত্তাবের খিলাফাত আমলে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল ‘আস ইবনুর রাবী‘ ইবন আবদে শামস ইবন আবদে মানাফ ইবন কুসাই ইবন কিলাব আল-কুরাইশী আল-আবশামী। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জামাই ছিলেন, রাসূলের কন্যা জয়নাবের স্বামী। তিনি উমামাহর পিতা ছিলেন, যাকে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের মধ্যে বহন করতেন। তার মূল নাম ছিল: লাকীত, তবে অন্যান্য মতও রয়েছে। তার মায়ের নাম ছিল হালাহ বিনত খুওয়াইলিদ, তিনি খাদিজাহর বোন ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “তার বিবাহ সম্পর্ক প্রসঙ্গে ভালো প্রশংসা করেছেন।” তিনি বলেছেন: “তিনি আমার সাথে কথা বলেছেন এবং আমাকে সত্যায়ন করেছেন। তিনি আমাকে ওয়াদা দিয়েছেন আর আমার সাথে দেওয়া ওয়াদা পূর্ণ করেছেন।” তিনি মক্কা বিজয়ের পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ১২ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কা‘ব ইবন মালিক আল-আনসারী আস-সুলামী। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবী ও কবি ছিলেন। তিনি আকাবায় অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন। এবং তাবূক যুদ্ধে পিছে থাকা তিনজনের একজন ছিলেন, পরবর্তীতে আল্লাহ যাদের তাওবা কবূল করেছিলেন।
উম্মু কালসূম আল-কুরাইশিয়্যাহ আল-হাশিমিয়্যাহ, তিনি আমাদের নবী মুস্তাফা মুহাম্মাদ -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- ইবন আব্দুল্লাহ ইবন আব্দুল মুত্তালিবের কন্যা। তার মাতার নাম: খাদীজাহ বিনত খুওয়াইলিদ। তাকে নবুওয়তের আগে আবু লাহাবের পুত্র উতাইবাহ বিবাহ করেছিল, যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়তপ্রাপ্ত হলেন, আর {تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ} যার অর্থ: “আবূ লাহাবের দুইহাত ধংস হোক!” নাযিল হল, তখন উতাইবাহর পিতা আবূ লাহাব তাকে বলল: তোমার মাথা থেকে আমার মাথা (সম্পর্ক) হারাম হয়ে যাবে, যদি তুমি তার (নবী মুহাম্মাদ) কন্যাকে তালাক না দাও। তখন উতাইবাহ তাকে আলাদা করে দেয়, তাদের মধ্যে কোন দাম্পত্য সম্পর্ক (সহবাস) হয়নি। উম্মু কালসূম তারপরে তার পিতা -মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এবং মাতা খাদীজাহর সাথে মক্কাতেই বসবাস করতে থাকেন। তিনি তার মায়ের সাথে ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল যখন নারীদের কাছ থেকে বাই‘আত গ্রহণ করেন, তখন তিনিও বাই‘আত হন। এরপরে তিনি মদীনাতে হিজরত করেন। যখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা রুকাইয়া মারা যান, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উসমানের সাথে বিবাহ দেন। এটি হিজরতের তৃতীয় বছরের রবী‘ঊল আউয়াল মাসে ঘটেছিল। একই বছরের জুমাদিঊল আখিরাতে তিনি তার গৃহে প্রবেশ করেন। নবম হিজরীতে তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি উসমানের কাছেই ছিলেন। তিনি তার কোনো সন্তান জন্ম দেননি।
আবূ মারছাদ আল-গানাবী কান্নায ইবনুল হুসাইন আল-গানাবী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি তার কুনিয়াতের দ্বারা বেশী প্রসিদ্ধ ছিলেন। তিনি সাহাবীদের মধ্যে মুরুব্বী ও বিদ্বান ছিলেন। তিনি বদর, উহুদ, খন্দকসহ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সবকটি যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন। আবূ বাকরের খিলাফাত আমলে, তিনি মদীনাতে ৬৬ বছর বয়সে ১২ হিজরীতে মারা যান।
মারিয়াহ আল-কিবতিয়্যাহ -রাদিয়াল্লাহু আনহা- তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত দাসী এবং রাসূলের পুত্র ইবরাহীমের মা ছিলেন। তিনি হিজরী ১৬ সালে মারা যান। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজেই মানুষকে একত্রিত করেছিলেন, তার জানাযাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য। উমার তার জানাযার ইমামতি করেন এবং বাকী নামক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
মালিক ইবন আনাস ইবন আবী আমির আল-আসবাহী আল-মাদানী। আবূ আব্দুল্লাহ, শাইখুল ইসলাম, হুজ্জাতুল উম্মাহ, দারুল হিজরাহ তথা মদীনার ইমাম, চারজন প্রসিদ্ধ ইমামের একজন। তিনি ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সকল শ্রেণির আলিমগণ তার ইমাম হওয়া এবং হাদীস মুখস্ত ও সংরক্ষণে তার অনুসরণ করার ব্যাপারে একমত হয়েছেন। শাফেয়ী বলেন: “যদি আলিমদের কথা উল্লেখ করা হয়, তাহলে মালিক সেখানে তারকা (তুল্য)।” ফিকহ শাস্ত্রের ইমাম হওয়া সত্তেও তার হাদীসসমূহ সবচেয়ে বিশুদ্ধ। তার ‘মুয়াত্তা’ নামক একটি গ্রন্থ রয়েছে। তিনি ১৭৯ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবুল হাজ্জাজ মুজাহিদ ইবন জাবর, তিনি কায়েস ইবনুস সায়েব আল-মাখযূমীর আযাদকৃত গোলাম ছিলেন। তিনি একজন তাবেয়ী ছিলেন। তিনি মুফাসসির ও কারীদের ইমাম এবং শাইখ ছিলেন। তিনি উমারের খিলাফাত আমলে ২১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেছেন। তিনি ইবন আব্বাসের কাছ থেকে অনেক ও সুন্দর বর্ণনা করেছেন, তিনি তার কাছ থেকে কুরআন, তাফসীর ও ফিকহ শিক্ষা করেছেন। এছাড়াও তিনি আবূ হুরাইরাহ, আয়েশাসহ অন্যান্যদের থেকেও বর্ণনা করেছেন। তিনি মক্কাতে ১০৪ হিজরীতে ৮৩ বছর বয়সে সিজদারত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবন জা‘ফার ইবন আবী তালেব ইবন আব্দুল মুত্তালিব, আবূ জা‘ফার আল-কুরাইশী আল-হাশিমী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তার পিতা জা‘ফার মুতার যুদ্ধে মারা যাওয়ার পরে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি রাসূলের ঘরেই বেড়ে ওঠেন। তিনি অত্যন্ত ভদ্র, দানশীল ও মহানুভব ব্যক্তি ছিলেন।
আব্দুল্লাহ ইবন রাওয়াহা ইবন ছা‘লাবাহ ইবন ইমরাউল কায়েস আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আনসারদের মধ্য হতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একজন কবি ছিলেন। আকাবার বাই‘আতের একজন নকীব ছিলেন। বদরে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। জাহেলী ও ইসলামী উভয় যুগে তিনি অত্যন্ত মর্যাদাবান ছিলেন। তিনি মুতার যুদ্ধে ৮ম হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম আল-আসাদী আল-কুরাইশী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। প্রখ্যাত সাহাবী যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়ামের পুত্র ছিলেন। তিনি ২য় হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম: আসমা বিনত আবী বাকর আস-সিদ্দীক। তিনি তার সময়ে কুরাইশদের শ্রেষ্ট ঘোড়-সওয়ার ছিলেন। তার ব্যাপারে অনেক মর্যাদার কথা রয়েছে। ৭৩ হিজরীতে নিহত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ৯ বছর খিলাফাতে ছিলেন।
আবুল আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনুল আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব আল-হাশিমী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচার ছেলে। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি হিবরুল উম্মাহ (উম্মাতের পণ্ডিত), যুগের ফকীহ এবং তাফসীরের ইমাম। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে তিনি মুকছিরীন তথা অধিক বর্ণনাকারীদের একজন ছিলেন। তার অনেক মর্যাদা রয়েছে। তার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু‘আ করেছিলেন: “হে আল্লাহ! আপনি তাকে দীনের গভীর জ্ঞান দান করুন! আর তাকে তাফসীর শিক্ষা দিন।” তিনি ৬৮ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবন আবী আউফা আলকামাহ ইবন খালিদ ইবনুল হারিছ আল-খুযায়ী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি আহলে বাই‘আতুর রিদওয়ানের একজন ছিলেন। তিনি কূফাতে মৃত্যুবরণকারী সর্বশেষ সাহাবী ছিলেন। তিনি ৮৭ হিজরীতে মৃত্যবরণ করেন।
আবূ বাকর আস-সিদ্দিক আব্দুল্লাহ ইবনু আবী কুহাফাহ উসমান ইবন আমির আল-কুরাইশী আত-তাইমী। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খলীফা ছিলেন। তিনিই পুরুষদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। আশারায়ে মুবাশশারাহ তথা জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের একজন ছিলেন, হিজরতের সময়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুহার সাথী ছিলেন আর সেখানে সোহবতের এই মর্যাদা শুধুমাত্র তিনিই অর্জন করেছেন। তার ব্যাপারে আল্লাহ কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন, যা কিয়ামত পর্যন্ত তিলাওয়াত করা হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নবীর পরে এই উম্মাতের শ্রেষ্ট ব্যক্তি তিনিই। আল্লাহর রাসূল যে অসুস্থতায় মারা যান, সেই অসুস্থতার সময়ে তিনি মানুষদের জামা‘আতে ইমামতি করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার কাছে মানুষের মধ্য হতে, সঙ্গ ও সম্পদের দিক থেকে আবু বাকরই সবচেয়ে বেশী দান করেছে। আমি যদি আমার রব ব্যতীত অন্য কাউকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতাম, তাহলে আবূ বাকরকেই গ্রহণ করতাম। তবে তার জন্য ভালাবাসা ও ইসলামের ভ্রাতৃত্বের বন্ধন রয়েছেই।” বুখারী এটি বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল ‘আস আল-কুরাইশী আস-সাহমী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি একজন বিদ্বান ও ইবাদাতগুজার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন এবং সপ্তম হিজরীর পরে তিনি হিজরত করেন। তিনি কয়েকটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার অসংখ্য মর্যাদা, সম্মান ও ফযীলতের কথা বর্ণিত আছে। তার ইলম ও আমলের ক্ষেত্রে পারদর্শিতা ছিল। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্রচুর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ৬৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ মূসা আল-আশ‘আরী আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস ইবন সুলাইম ইবন হাদ্দার আল-আশ‘আরী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি মক্কাতে প্রথম যুগেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশাতে হিজরত করেন। তিনি অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি একজন ইবাদাতগুজার, ফকীহ, হাদীসশাস্ত্রবিদ ও পণ্ডিত ছিলেন। সহীহাইনে এসেছে: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে আল্লাহ! আপনি আব্দুল্লাহ ইবন কায়েসের গুনাহকে ক্ষমা করে দিন। আর তাকে কিয়ামাতের দিনে সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন।” তিনি ৪২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে মক্কাতে দাফন করা হয়, কেউ কেউ বলেছেন: তাকে কূফার পাশে দুই মাইল মত দূরত্বে ছাভিয়্যাহ নামক স্থানে দাফন করা হয়।
আব্দুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ ইবন গাফেল ইবন হাবীব আল-হুযালী, আবূ আব্দুর রহমান। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রথম দিকেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশা ও মদীনাতে দুইস্থানেই হিজরত করেন। তিনি বদরসহ সকল যুদ্ধেই অংশগ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সহচর্যে ছিলেন, তিনি “সাহিবুন না‘লাইন” বা রাসূলের জুতা-রক্ষক ছিলেন। তিনি সাহাবীদের মধ্যে ফকীহ ও কারী সাহাবী ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি চায় যে, সে কুরআন যেভাবে নাযিল হয়েছে, সেভাবে পড়বে, তাহলে সে যেন ইবনু উম্মু আবদের কিরাআত অনুযায়ী তা পাঠ করে।” তিনি ৩২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আব্দুল্লাহ ইবন মুগাফফাল আল-মুযানী, আবূ সা‘ঈদ ও আবূ যিয়াদ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী। তিনি বসরাতে বাস করতেন। তিনি তাবূকের যুদ্ধে প্রচুর কেঁদেছিলেন। তিনি গাছের নিচের বাই‘আতে (বাই‘আতুর রিদওয়ান) অংশগ্রহণ করেন। উমার যে দশজনকে বসরার মানুষকে ফিকহ শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রেরণ করেছিলেন, তিনি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন। তসতর শহরের দরজাতে তিনি সর্বপ্রথম প্রবেশ করেন। তিনি ৫৭ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আত্তাব ইবন উসাইদ ইবন আবিল ‘ঈস ইবন উমাইয়্যাহ ইবন আবদে শামস ইবন আবদে মানাফ আল-কুরাইশী আল-উমাভী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের দিন ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি সন্দেহপূর্ণ বিষয়ে কঠোর ও মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ছিলেন।
উসমান ইবন আবিল ‘আস ইবন বিশর আস-সাকাফী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সাকীফ গোত্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে তায়েফের গভর্নর নিযুক্ত করেছিলেন। উক্ত পদেই তিনি বহাল ছিলেন যতদিন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেঁচে ছিলেন, এরপরে আবূ বাকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলে এবং উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলের প্রথম দুই বছর পর্যন্ত। এরপরে ১৫ হিজরীতে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে ওমান ও বাহরাইনের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। এরপরে তিনি বসরাতে বাস করতে শুরু করেন, এবং সেখানেই তিনি মু‘আবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফাত আমলে মৃত্যুবরণ করেন, কেউ কেউ বলেছেন: ৫০ হিজরীতে আবার কেউ বলেছেন: ৫১ হিজরীতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
উসমান ইবন মায‘ঊন ইবন হাবীব ইবন ওয়াহব ইবন হুযাফাহ ইবন জুমাহ আল-জুমাহী। ইবনু ইসহাক বলেন: তিনি তেরজন পুরুষের পরেই ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি তার পুত্র সায়িব সহ হাবশার প্রথম হিজরতকারীদের সাথে হিজরত করেন। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বিবাহ ত্যাগ করতে নিষেধ করেছিলেন, তা না হলে আমরা খাসী হয়ে যেতাম। তিনিই মুহাজিরদের মধ্যে মদীনাতে মারা যাওয়া প্রথম সাহাবী, এবং তাদের মধ্যে প্রথম যাকে বাকী (কবরস্থান) এ দাফন করা হয়। আয়েশা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান ইবনু মায‘ঊনকে মৃত্যু অবস্থায় কাঁদতে কাঁদতে চুমু দিয়েছিলেন, আর তার চোখ বেয়ে পানি পড়ছিল। যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুত্র ইবরাহীম মৃত্যুবরণ করলেন, তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন: “আমাদের নেককার পূর্বসূরী উসমান ইবনু মায‘ঊনের সাথে মিলিত হও।” তিনি ২য় হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি হচ্ছেন আল-খলীফাতুর রাশিদ, আমীরুল মু’মিনীন উসমান ইবন আফফান ইবন আবিল ‘আস আল-কুরাইশী আল-উমাভী। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় কন্যা রুকাইয়াকে তার সাথে বিবাহ দেন। যখন রুকাইয়া মৃত্যুবরণ করেন, তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রুকইয়ার বোন উম্মু কুলসূমকে বিবাহ দেন। আর উসমানকে ‘যুন নুরাইন’ বা ‘দুই নূরের অধিকারী’ বলা হত। তিনি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজনের একজন ছিলেন। এবং তিনি এমন ছয়জনের একজন ছিলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারা যাওয়ার সময়ে যাদের উপরে সন্তুষ্ট ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেছেন: “আমি কি এমন ব্যক্তি থেকে লজ্জাবোধ করব না, যার থেকে ফেরেশতারাও লজ্জাবোধ করেন?” তিনি উসমানের ব্যাপারে আরো বলেছেন: “তার উপরে আগত বিপদের ওপর তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও।” তার অসংখ্য সম্মানজনক মর্যাদা ও অবস্থান রয়েছে। যা তার মর্যাদা ও দীনের ক্ষেত্রে তার সহযোগিতার প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। যার মধ্যে রয়েছে: তিনি দুইটি হিজরত করেন, প্রথমটি হাবশাতে ও পরেরটি মদীনাতে। তিনি তাবূক যুদ্ধের সৈন্যদের খরচ বহন করেন, রূমা কূপ খনন করে তা মুসলিমদের জন্য সদকা করে দেন, অনুরুপভাবে মসজিদে নববীর সম্প্রসারণ করেন, তার সময়েই কুরআনকে গ্রন্থবদ্ধ করা হয় এবং মুসলিমদের অঞ্চল-বিজয় আরো প্রসারিত হয়, এমনকি তা পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম কোণে পৌঁছে যায়।
আবূ আব্দুল্লাহ উরওয়াহ ইবনুয যুবায়ের ইবনুল ‘আওয়াম আল-কুরাইশী আল-আসাদী, আল-ইমাম। তিনি একজন তাবেয়ী ছিলেন। তিনি ২৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রসিদ্ধ সাত ফকীহদের একজন ছিলেন। মদীনার ফকীহ ও তাবেয়ীদের মধ্যে সম্মানিত ছিলেন। তিনি ছোট ছিলেন বিধায় তার পিতা থেকে সামান্য কিছু হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি আরো বর্ণনা করেছেন তার মা আসমা বিনতু আবী বাকর আস-সিদ্দীক ও তার খালা আয়েশার সূত্রে। তিনি তার খালাকে আঁকড়ে থাকেন এবং তার কাছে থেকে ফিকহের জ্ঞান অর্জন করেন। উমার ইবনু আবদিল আযীয বলেছেন: “উরওয়াহ ইবনুয যুবায়ের থেকে জ্ঞানী কেউ ছিল না।” তিনি ৯৪ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
উকবাহ ইবন আমির ইবন আবস আল-জুহানী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি একজন আলিম, কুরআন শিক্ষাদানকারী কারী, বিশুদ্ধভাষী, ফকীহ, ফারায়েয শাস্ত্রবিদ এবং উঁচু মর্যাদার কবি ছিলেন। তিনি মিসর বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন। মু‘আবিয়া ইবনু আবী সুফইয়ানের শাসনামলের শেষ দিকে তিনি মুকাত্তাম নামক এলাকাতে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
উকবাহ ইবন আমর ইবন ছা‘লাবাহ আবূ মাস‘ঊদ আল-বদরী আল-আনসারী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি বাই‘আতুল আকাবাতে অংশগ্রহণ করেন। তার বদরে অংশগ্রহণ করা নিয়ে ইখতিলাফ রয়েছে। এক বর্ণনা অনুযায়ী তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ নেননি; তবে তিনি বদরের পানির কাছে অবতরণ করার কারণে তাকে ‘বদরী’ বলা হয়। তিনি অসংখ্য হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাকে সাহাবাদের আলিমদের মধ্যে গণ্য করা হয়। তিনি ৩৯ অথবা ৪০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ বাকর মুহাম্মাদ ইবনু সীরীন আল-বাসরী আল-আনসারী, তিনি তাদের মাওলা ছিলেন। একজন তাবেয়ী ইমাম ছিলেন। স্বপ্নের ব্যাখ্যায় তিনি এক অনুপম ব্যক্তিত্ব। তার পিতা সীরীন সাহাবী আনাস ইবনু মালিকের গোলাম ছিলেন। আনাস তাকে আযাদ করে দেন। উমার ইবনুল খাত্তাবের খিলাফাতের দুই বছর থাকতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। স্বপ্ন-ব্যাখ্যার একটি কিতাবকে তার প্রতি নিসবত করা হয়, তবে উক্ত কিতাব তার হওয়ার বিষয়টি সঠিক নয়। প্রথম তিন হিজরী শতাব্দীতে তার জীবনী লেখকদের কেউই উল্লেখ করেননি যে, তার এ সংক্রান্ত কোনো কিতাব ছিল, যদিও এ শাস্ত্রে তার পাণ্ডিত্যের কথা তারা সবাই উল্লেখ করেছেন। কতিপয় গ্রন্থে তার স্বপ্ন ব্যাখ্যার কিছু উদাহরণও পেশ করা হয়েছে, তবুও তা তার প্রণীত কোনো কিতাব থেকে চয়ন করা হয়েছে, অথবা তিনি তা বর্ণনা করেছেন এমন কোনটিরই প্রমাণ নেই। আর যা তার থেকে বর্ণিত হয়েছে, তাও উক্ত কিতাবে থাকা বিষয়সমূহ হতে অনেক কম। তিনি ১১০ হিজরীতে মৃত্যবরণ করেন।
মুহাম্মাদ ইবন মাসলামাহ ইবন খালিদ আল-আনসারী আল-আউসী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে তিনি তাবূক ছাড়া সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। কেননা তাবূকের অভিযানে আল্লাহর রাসূল তাকে মদীনার দায়িত্বভার অর্পণ করেছিলেন। তিনি মিসর বিজয়ে অংশ নেন। তিনি হিজরী ৪৩ সালে মৃত্যবরণ করেন।
আবুল হাসান আলী ইবন আবী তালিব আল-হাশিমী আল-কুরাইশী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আল-খলীফাতুর রাশিদীন এর চতুর্থ খলীফা। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের একজন, জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবীদের মধ্যে একজন এবং তিনি বালকদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। তিনি মাত্র দশ বছর বয়সে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো ভাই এবং বিশ্বের সমস্ত নারীদের সর্দার ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কন্যা ফাতিমার স্বামী। তিনি রাসূলের দুই নাতী ও জান্নাতী যুবকদের সর্দার হাসান ও হুসাইনের পিতা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভালবাসতেন এবং তিনি তার মারা যাওয়ার সময়ে তার উপরে খুশি ছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মূসার কাছে হারূনের যে মর্যাদা ছিল, সেই মর্যাদা দান করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে বলেন: “তুমি কি এতে খুশি হবে না যে, তুমি আমার কাছে তেমন, মূসার কাছে হারূন যেমন? তবে পার্থক্য এটুকু যে, আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না।” [বুখারী ও মুসলিম]। উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত আছে যে , তিনি বলেন: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি: “যে আলীকে ভালবাসল, সে আমাকেই ভালবাসল। আর যে আমাকে ভালো বাসল সে আল্লাহকেই ভালো বাসল। আর যে আলীর সাথে শত্রুতা করল, সে আমার সাথেই শত্রুতা করল। আর যে আমার সাথে শত্রুতা করবে, সে তো আল্লাহর সাথেও শত্রুতা করল।” তিনি ৪০ হিজরীতে নিহত হন।
তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আল-মুসতাউরিদ ইবন শাদ্দাদ ইবন আমর আল-কুরাইশী আল-ফিহরী। তিনি এবং তার পিতা উভয়ই সাহাবী ছিলেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর সময়ে তিনি বালক ছিলেন। তিনি মিসর বিজয়ে অংশগ্রহণ করেন। আলেকজান্দ্রিয়াতে তিনি ৪৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আল-মিসওয়ার ইবন মাখরামাহ ইবন নাওফেল ইবন উহাইব আল-কুরাইশী আয-যুহরী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সাহাবী ও হাদীস বর্ণনার সৌভাগ্য লাভ করেছেন। নু‘মান ইবনু বাশীর ও ইবনুয যুবায়েরের মত তিনি ছোট সাহাবীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি উমারের সহচর্য লাভ করেছিলেন। এবং তার কাছ থেকে হিফয করেছেন। হিজরতের দু বছর পরে তিনি মক্কাতে জন্মগ্রহণ করেন। ৬৪ হিজরীর রবিউল আখেরের শুরুতে তিনি মক্কাতে মৃত্যুবরণ করেন।
মু‘আয ইবন জাবাল ইবন আমর আল-আনসারী আল-খাযরাজী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি ফকীহদের ইমাম, আলিমদের (ইলমের) খনি বা ভান্ডার, হালাল ও হারামের ব্যাপারে উম্মাতের সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আকাবা ও বদরসহ অন্যান্য যুদ্ধতে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তিনি দানশীলতা, লজ্জাবোধ ও স্থিরচিত্তের দিক থেকে আনসারদের সবচেয়ে উত্তম যুবক ছিলেন। তার মর্যাদার ব্যাপারে কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
মা‘কিল ইবন ইয়াসার ইবন আব্দুল্লাহ আল-মুযানী আল-বাসরী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সুলহে হুদাইবিয়ার আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বাই‘আতুর রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন। আবূ বাকর এর খিলাফাত আমলে তিনি রিদ্দাহর যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেন। সা‘দ ইবন আবী ওয়াক্কাসের নেতৃত্বে যে সৈন্যবাহিনী পারস্য জয় করেছিল, তিনি তাদের সাথে ছিলেন। উমারের শাসনামলে তিনি আরো অন্যান্য যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন। উমার তাকে বসরার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি সেখানেই বাস করতেন। মু‘আবিয়ার খিলাফাতের শেষ দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মু‘আইকীব ইবন আবী ফাতিমাহ আদ-দাউসী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। মক্কাতে প্রথম পর্যায়েই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি হাবশাতে দ্বিতীয়বারে হিজরত করেন। তারপরে তিনি মদীনাতেও হিজরত করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আংটি (মোহর) রক্ষক ছিলেন। আবূ বাকর তাকে বিনা যুদ্ধে লব্ধ সম্পত্তির উপরে দায়িত্ব প্রদান করেন। উমার তাকে বাইতুল মালের দায়িত্ব দেন। উসমানের খিলাফাতের শেষ দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কেউ কেউ বলেছেন: বরং তিনি আলীর খিলাফাতের শেষ দিকে ৪০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আল-মুগীরাহ ইবন শু‘বাহ ইবন আবী আমির আস-সাকাফী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি সাহাবীদের মধ্যে অত্যন্ত বীরত্ব, কৌশলগত বিচক্ষণতার অধিকারী ও নেতৃবর্গের অন্যতম ছিলেন। তিনি খন্দকের যুদ্ধের বছরে ইসলাম গ্রহণ করেন। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খন্দক পরবর্তী সকল যুদ্ধেই তিনি অংশগ্রহণ করেন। তিনি বাই‘আতুর রিদওয়ানে অংশগ্রহণকারী ছিলেন। তাকে ‘মুগীরাতুর রায়’ বা ‘সিদ্ধান্ত প্রদানকারী মুগীরাহ’ বলা হয়। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মু‘আবিয়ার খিলাফাত আমলে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ আব্দুর রহমান মু‘আবিয়াহ ইবন আবী সুফিয়ান সখর ইবন হারব ইবন উমাইয়্যাহ আল-কুরাইশী আল-উমাভী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। আমীরুল মু’মিনীন। বলা হয়, তিনি উমরাতুল কাযার সময়ে, তার পিতার আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তবে তিনি তার পিতার কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে মিলিত হতে ভয় পেতেন। তবে তিনি মক্কা বিজয়ের পরে তিনি তার ইসলামের কথা প্রকাশ করেন। তিনি একজন কাতিবে অহী (অহী লেখক) ছিলেন। যখন আবূ বাকর আস-সিদ্দীক খিলাফাতে আসলেন, তখন তিনি তাকে তার ভাই ইয়াযিদ ইবন আবী সুফিয়ানের অধীনে সেনাধ্যক্ষ নিযুক্ত করেন। তিনি জুবাইল, ইরক্বাহ ও বৈরুত বিজয়ে সম্মুখসারীতে ছিলেন। এরপরে যখন উমার খিলাফাতে আসলেন, তখন তিনি তাকে প্রথমে জর্ডানে এবং পরবর্তীতে দামেশকের আমীর ও তার ভাই ইয়াযিদ মারা যাওয়ার পরে তাকে দামেশকে গভর্নর হিসেবে প্রেরণ করেন। এরপরে উসমান ইবন আফফান তাকে সমগ্র সিরিয়ার ব্যাপারে দায়িত্ব প্রদান করেন এবং সিরিয়ার অন্যান্য শহরের আমীরদেরকে তার অধিনস্ত হিসেবে আদেশ জারী করেন। এরপরে উসমানের হত্যাকাণ্ডের পরে, আলী ইবন আবী তালেব খলীফা হন এবং উসমান হত্যার পরবর্তী আবশ্যক পদক্ষেপের ব্যাপারে তার মধ্যে ও মু‘আবিয়ার মধ্যে দ্বন্দের সূত্রপাত হয়। এটা চলতেই থাকে, যতক্ষণ না খারেজী ইবন মুলজিম আলীকে হত্যা করে ফেলে। তারপরে আলীর পুত্র হাসান খলীফা নিযুক্ত হন। এরপরে তিনি ৪১ হিজরীতে তাদের মধ্যকার একটি চুক্তির ভিত্তিতে মু‘আবিয়াকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে খিলাফাত থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এরপরে দুটি দল এখান থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়, একটি দল মু‘আবিয়ার ভালোবাসা ও তাকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে পড়ে, আর অপরদিকে আরেক দল তাকে ঘৃণা-অপছন্দ করা ও তার থেকে সতর্ক করার দিক থেকে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হয়ে যায়। এমনকি তারা মু‘আবিয়াকে কুফর ও নিফাকের হুকুম আরোপ করতে থাকে। ইবনু হাযম বলেন: “এরপরে হাসানের বাই‘আত সম্পন্ন হয়, এরপরে তিনি মু‘আবিয়ার কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। আর সে সময় অনেক সাহাবী এমন ছিলেন, যারা সর্বসম্মতিক্রমে তাদের উভয়ের থেকে উত্তম ছিলেন, যাদের মধ্যে মক্কা বিজয়ের আগে যারা দান করেছেন এবং যুদ্ধ করেছেন, তারাও ছিলেন। তাদের প্রত্যেকেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মু‘আবিয়ার কাছে বাই‘আত নেন। তার নেতৃত্বের উপরে ইজমা করেন। তারপূর্বে এই ইজমা হয় যে, সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তির বর্তমানে অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ব্যক্তির ইমাম হওয়া বৈধ। এটা এমন নিশ্চিত ইজমা, যাতে কোনো সন্দেহ নেই।” তিনি ৬০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আল-মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ আল-কিনদী। তিনি হচ্ছেন আল-মিকদাদ ইবন আমর ইবন ছা‘লাবাহ ইবন মালিক ইবন রাবী‘আহ ইবন আমির ইবন মাত্বরূদ আল-বাহরানী, কেউ কেউ বলেছেন: আল-হাদ্বরামী। তিনি আল-আসওয়াদ ইবনু আবদে ইয়াগূছের বাড়ীতে লালিত-পালিত হন, এবং সেদিকেই তাকে নিসবত (সম্পৃক্ত) করা হয়। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। প্রথম দিকেই তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচাতো বোন দুবা‘আহ বিনত যুবায়ের ইবন আবদিল মুত্তালিবকে বিবাহ করেছিলেন। তিনি দুটি হিজরতেই অংশগ্রহণ করেন। তিনি বদরের যুদ্ধসহ পরবর্তী যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেন। তিনি বদরের যুদ্ধে ঘোড়সওয়ার ছিলেন। তিনি ৩৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
মাইমূনাহ বিনতুল হারিছ আল-হিলালিয়্যাহ আল-আমিরিয়্যাহ। উম্মুল মু’মিনীন। তিনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী ছিলেন। সপ্তম হিজরীর যুল কা‘দাহ মাসে তিনি তাকে বিবাহ করেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেষ স্ত্রী ছিলেন। তিনি ৫১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ বারযাহ আল-আসলামী, তার নামের ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে, কেউ বলেছেন: নাধলাহ ইবন উবায়েদ, এটিই বিশুদ্ধ। কেউ কেউ বলেছেন: নাধলাহ ইবন আমর। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি মক্কা বিজয়ের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি সাতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ৬৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
সম্মানিত সাহাবী আন-নু‘মান ইবন বাশীর ইবন সা‘দ ইবন ছা‘লাবাহ আল-আনসারী আল-খাজরাযী। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর আট মাস আগে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি সম্ভ্রান্ত, দানশীল ও একজন কবি ছিলেন। তিনি মু‘আবিয়ার আমীর বা গভর্নরদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। তিনি তাকে কূফাতে কিছুদিন নিয়োগ দেন, তারপরে ফুদ্বালাহর পরে তাকে তিনি দামেশকের কাযী হিসেবে নিয়োগ দেন। এরপরে তাকে হেমসের আমীর হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তাকে দুইকূপের গ্রামে হত্যা করা হয়। তাকে খালিদ ইবন খালী নামক এক ব্যক্তি মারজে রাহিতের যুদ্ধের পরে হত্যা করে; কারণ তিনি হেমসের লোকদেরকে আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়েরের বাই‘আত গ্রহণের প্রতি আহবান করেছিলেন। এটি হিজরী ৬৪ সালে সংঘটিত হয়।
আবূ হানিফা নু‘মান ইবন ছাবিত ইবন যূতা আল-কূফী। তিনি দীনের একজন ফকীহ ও ইমাম ছিলেন। তিনি অত্যন্ত আল্লাহভীরু ও মুত্তাকী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আল্লাহ কর্তৃক হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হওয়া থেকে নিজেকে হেফাজত করতেন। তার সামনে দুনিয়া ও ধন-সম্পদকে পেশ করা হয়েছিল, তবে তিনি তা পিছনে ছুড়ে ফেলেছিলেন। এমনকি তাকে বাইতুল মাল অথবা বিচারকের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে চাবুকাঘাত করা হলেও তিনি তা নাকচ করে দেন। যাহাবী বলেন: “তার বর্ণাঢ্য জীবনী স্বতন্ত্র দুটি খণ্ডে আলোচনা করা যেতে পারে, আল্লাহ তার উপরে খুশি হোন এবং তাকে রহমত করুন।” আহমাদ তার ব্যাপারে বলেছেন: “আবূ হানীফা ইলম, আল্লাহভীরুতা, দুনিয়াত্যাগ ও আখেরাতমুখী হওয়ার ক্ষেত্রে এমন অবস্থানে ছিলেন, যা অন্য কারো কাছে পাওয়া যায় না। মনসূরের নিকটবর্তী হওয়ার জন্য তাকে চাবুকাঘাত করা হলেও তিনি তা করেননি। আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি তার প্রতি নাযিল হোক।” ইমাম শাফেয়ী বলেন: মালিক ইবন আনাসকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আপনি কী আবূ হানীফা ও তার বিতর্ক প্রত্যক্ষ করেছেন? তিনি বললেন: “হ্যাঁ, আমি এমন একটি ব্যক্তিকে দেখেছি, যদি সে এই পাথরের তৈরী খুঁটিটির দিকে তাকিয়ে বলে যে, এটি সোনার তৈরী, তবুও সে তার প্রমাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে যাবে বা প্রমাণ করেই ছাড়বে।” তিনি ১৫০ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
উম্মুল মু’মিনীন, উম্মু সালামাহ হিনদা বিনত আবী উমাইয়াহ হুযাইফাহ ইবনুল মুগীরাহ ইবন আব্দুল্লাহ আল- মাখযূমিয়্যাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ৪র্থ হিজরীর শাউওয়ালে বিবাহ করেন। কেউ কেউ বলেছেন: ৪র্থ হিজরীর আগে। তিনি প্রথম মহিলা হিজরতকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি মহিলাদের মধ্যে ফকীহ হিসেবে বিবেচিত হতেন। তিনি অত্যন্ত সুন্দরী ছিলেন। প্রায় নব্বই বছর জীবিত ছিলেন। তিনিই উম্মুল মু’মিনীনদের মধ্যে সর্বশেষে মারা গিয়েছিলেন। তিনি ৫৯ অথবা ৬৪ হিজরীতে মারা যান, কেউ কেউ অন্য মতও ব্যক্ত করেছেন।
আবূ আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবন উমার ইবনুল খাত্তাব আল-কুরাইশী আল-আদাভী। আদর্শ ইমাম ও একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি নবুওয়তের দুই বছর পরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার সাথে তিনি ছোট বয়সেই ইসলাম গ্রহণ করেন। সাবালক হওয়ার আগেই তিনি তার পিতার সাথে হিজরত করেন। উহুদ যুদ্ধে তাকে ছোট হিসেবে গণ্য করা হয়। তার প্রথম যুদ্ধ হচ্ছে খন্দকের যুদ্ধ। তিনি গাছের নিচে বাই‘আতে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতিটি চলাফেরা ও উঠাবসার অনুসরণ করতেন। তিনি একজন আল্লাহভীরু, দুনিয়াবিমুখ, দানশীল, সম্মানিত, ফকীহ ও ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ফিতনা থেকে দূরে অবস্থান করতেন, কোনো ফিতনাতেই তিনি জড়িয়ে পড়েননি। তিনি আল্লাহর রাস্তায় প্রচুর দান-সদকা করতেন। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরেই তিনি অধিক হাদীস বর্ণনাকারী ছিলেন। তিনি ৭৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ওয়ারাকাহ ইবন নাওফেল ইবন আসাদ ইবন আব্দুল উযযা ইবন কুসাই আল-কুরাইশী আল-আসাদী। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী খাদিজাহর চাচাতো ভাই ছিলেন। তার সাহাবী হওয়ার বিষয়টি বিতর্কিত। আলিমদের একটি দল তাকে সাহাবীদের ভেতর উল্লেখ করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন: তাবারী, বাগাভী, ইবনু কানি‘ এবং ইবনুস সাকানসহ আরো অনেকে। আবার আরেক দল রয়েছেন, যারা তাকে সাহাবী মনে করেননি, তবে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে ঈমান এনেছিলেন আর ‘ফাতরাতুল অহী’ বা অহী বন্ধ থাকা অবস্থায় মারা যান। ইবন হাজার বলেছেন: ‘এটাই স্পষ্ট যে, তিনি তার নবুওয়তের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। তবে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আগেই তিনি মারা গিয়েছিলেন। আর এ কারণে তিনি বুহাইরার মতই ছিলেন। তার সাহাবী সাব্যস্ত হওয়ার ব্যাপারটি প্রশ্নবিদ্ধ।” আবার আলিমদের অনেকে রয়েছেন, যারা মতভেদ উল্লেখ করে তার ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। কিরমানী বলেছেন: “যদি আমাকে বলা হয় যে, ওয়ারাকাহর ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? তার ঈমান ছিল, এ কথা কি বলা যাবে? তাহলে আমি বলব: তিনি ঈসা আলাইহিস সালামের উপরে ঈমান এনেছিলেন, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। আর আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপরে ঈমানের ব্যাপারটি হচ্ছে, এ ব্যাপারে জানা যায়নি যে, তার মৃত্যুর সময়ে ঈসা আলাইহিস সালামের দীন মানসূখ (রহিত) হয়েছিল কিনা। যদি সাব্যস্ত হয় যে, ঐ সময়ে তা রহিত বা মানসূখ হয়েছিল, তবে বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, ঈমান হচ্ছে সত্যায়ন করা, আর তিনি রাসূলকে সত্যায়ন করেছেন এবং এর বিপরীত কিছুই উল্লেখ করেননি।” প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হচ্ছে -আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন- তিনি একজন মু’মিন ও তাওহীদপন্থী ছিলেন। কিন্তু তিনি নবুওয়তের পরে ‘ফাতরাতুল অহী’ বা অহী বন্ধ থাকা অবস্থায় তিনি মারা যাওয়ায়, তাকে সাহাবীদের মধ্যে গণ্য করা হবে না।
‘ইতবান ইবন মালিক ইবন আমর ইবনুল আজলান আল-আনসারী আল-খাযরাজী আস-সালেমী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। উমার ইবনুল খত্তাবের সাথে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। তিনি বদর, উহুদ ও খন্দকের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগেই তার দৃষ্টিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। মু‘আবিয়া ইবন আবী সুফিয়ানের খিলাফাতের মাঝামাঝি সময়ে তিনি মারা যান। তার কোনো বংশধর ছিল না।
আব্দুল্লাহ ইবন হুযাফাহ ইবন কায়েস আল-কুরাইশী আস-সাহামী। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি প্রথম ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে একজন ছিলেন। বলা হয়: তিনি বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তার মানাকিবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, উমার রোম সম্রাটের কাছে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন, যার মধ্যে আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহ ছিলেন, তাদেরকে রোমানরা গ্রেপ্তার করেছিল। এরপরে তাকে রোমান সম্রাট বলল: তুমি নাসারা (খ্রীষ্টান) হয়ে যাও, আমি তোমাকে আমার রাজত্বের অংশীদারিত্ব দেব, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করলেন। তখন তাকে আদেশক্রমে শুলে চড়ানো হল, তারপরে তীর নিক্ষেপের আদেশ দেওয়া হল, কিন্ত তিনি একটুও ভয় পেলেন না। তখন তাকে নামানো হল, এবং একটি হাড়ি নিয়ে আসার আদেশ দেওয়া হল, এরপরে তাতে পানি ভর্তি করা হল, এবং টগবগ করে ফোটানো হল। এরপরে একজন কয়েদীকে তার মধ্যে ছেড়ে দেওয়ার আদেশ দেওয়া হল, (তা করা হলে) তার হাড়গুলো বেরিয়ে স্পষ্ট হয়ে গেল। এরপরে আব্দুল্লাহ বিন হুযাফাহকে তাতে নিক্ষেপ করার আদেশ দেওয়া হল, যদি সে নাসারা না হয়। যথন তারা তাকে সেখানে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি কাঁদতে লাগলেন। তখন সম্রাট বললেন: তাকে আমার কাছে নিয়ে আস। সে তখন জিজ্ঞাসা করল: কেন কাঁদছ? তিনি বলল: আমার আকাংখা হচ্ছে- আমার যদি একশত প্রাণ থাকত, আর তা যদি এভাবে আল্লাহর পথে (ফুটন্ত পানির মধ্যে) নিক্ষেপ করা হত! তখন রোমান সম্রাট অবাক হয়ে বলল: আমার মাথায় একটি চুমু দিলে আমি তোমাকে মুক্ত করে দেব। তখন তিনি বললেন: মুসলিমদের সকল বন্দীদেরকেও কি ছেড়ে দেবেন? সে বলল: হ্যাঁ, তখন সে তার মাথায় চুমু দিলে তাদেরকে মুক্ত করে দেওয়া হল। তাদেরকে নিয়ে উমারের কাছে আগমণ করলে, তিনি দাঁড়িয়ে তার মাথায় চুমু দিলেন। তিনি ৩৩ হিজরীর দিকে মারা যান।
আবূ নুজাইদ ইমরান ইবনুল হুসাইন ইবন উবায়েদ ইবন খলফ আল-খুযা‘ঈ। তিনি একজন সম্মানিত সাহাবী ছিলেন। তিনি খায়বারের বছরে ইসলাম গ্রহণ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি যু্দ্ধে অংশগ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের দিনে তিনি খুযা‘আহ গোত্রের পতাকা বহনকারী ছিলেন। তার বেশ কয়েকটি হাদীস রয়েছে। তিনি ফকীহ ও বিদ্বান সাহাবীদের একজন ছিলেন। তাকে বসরার গভর্নর নিযুক্ত করা হয়েছিল। তার ব্যাপারে ইবন সীরীন বলেছেন: যারা বসরাতে আগমন করেছিলেন, তাদের মধ্যে ইমরান ও আবূ বাকরাহ থেকে আর কেউ অধিক মর্যাদার অধিকারী ছিলেন না। হাসান আল-বাসরী কসম করে বলতেন যে, ইমরানের থেকে বসরাতে আর ভালো কারো আগমণ ঘটেনি। ইমরান ৫২ অথবা কারো কারো মতে ৫৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবন মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আত-তাহির ইবন মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আশ-শাজিল্লী ইবন আবদিল কাদির ইবন মাহমাদ (মীমে ফাতহা দিয়ে) ইবন ‘আশূর। বেশ কয়েকটি শাস্ত্রে তিনি পাণ্ডিত্য অর্জন করেন এবং তাতে পরিপক্কতা হাসিল করেন, যেমন: ইলমুশ শারী‘আহ, ভাষা ও সাহিত্য। তিনি ফরাসী ভাষাতে খুব পারদর্শী ছিলেন। তিনি দামেশক ও কায়রোর আরবী ভাষা একাডেমির একজন সংবাদদাতা সদস্য ছিলেন। তিনি ইফতা (ফাতওয়া প্রদান), বিচার-ফয়সালা ও অধ্যাপনার মত বিভিন্ন ইলমী দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি জামিউয যাইতুনিয়্যাহতে শাইখ হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। তিনি অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে: তার তাফসীর “আত-তাহরীর ওয়াত তানভীর”, “মাকাসিদুশ শারী‘আহ” এবং অন্যান্য। তার বন্ধুবর শাইখ মুহাম্মাদ আল-খদির হুসাইন তার সম্পর্কে বলেন: “উস্তাযের (ইবনু আশূরের) ছিল- ভাষার বিশুদ্ধতা, পাণ্ডিত্যপূর্ণ বর্ণনা ক্ষমতা, এছাড়াও তার প্রকৃতিগত জ্ঞান ও শক্তিশালী দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তিনি যোগ করেছিলেন: সুষ্ঠ রুচিবোধ, সাহিত্য ভান্ডারে অবগাহন,… আমি তার মধ্যে একটি ভাষা প্রত্যক্ষ করতাম, যার পদ্ধতি নির্ভেজাল, … তার সাহসিকতা আকাশছোয়া … কার্যক্ষেত্রে এমন এক প্রচেষ্টা, যাকে ক্লান্তি স্পর্শ করে না। দীনের আবশ্যক কাজ ও শিষ্টাচারের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল … এক কথায়, তার চরিত্রের হৃদয়গ্রাহী আলোচ্ছটা ও শিষ্টাচারের মহত্ব তার জ্ঞানগত প্রতিভার চেয়ে কোনো অংশে কম বিস্ময়ের নয়। তিনি ১৩৯৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
আবূ বাকর আল-জাযায়েরী, আবূ বাকর জাবির ইবন মূসা ইবন আব্দুল কাদির ইবন জাবির আল-জাযায়েরী। চল্লিশ বছরেরও বেশী সময় যাবত তিনি মাসজিদে নববীর শিক্ষক ছিলেন। তার অনেকগুলো গ্রন্থ রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে: “মিনহাজুল মুসলিম”, “আকীদাতুল মু’মিন”, “আইসারুত তাফাসীর” এবং অন্যান্য। এ ছাড়াও তিনি অসংখ্য ইলমী ও দাওয়াতী সমাবেশে অংশগ্রহণ করেছেন। তিনি ৯৭ বছর বেঁচে ছিলেন। তিনি ০৪/১২/১৪৩৯ হিজরীতে মৃত্যবরণ করেন।
মুহাম্মাদ আল-আমীন ইবন মুহাম্মাদ আল-মুখতার ইবন আবদুল কাদির ইবন মুহাম্মাদ আল-জাকনী আশ-শানকীতী। তিনি ১৩২৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন। সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য, মাসজিদে নববীর শিক্ষক এবং মদীনা মুনওয়ারার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় বোর্ডের সদস্য ছিলেন। তার অনেক লেখনী রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম: “আদওয়াউল বায়ান লি-তাফসীরিল কুরআন বিল-কুরআন”, “আদাবুল বাহছি ওয়াল মুনাযারাহ”, “মুযাককিরাতুন ফী উসূলিল ফিকহ” এবং “দাফ‘ঊ ঈহামিল ইদতিরাব ‘আন আ-য়িল কিতাব”। তার গ্রন্থাবলী ১৯ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম: “আছারুশ শাইখ আল-আল্লামাহ মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকীতী”। তিনি ১৩৯৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।