তাকফীর হলো, কোনো মুসলিমকে কুফরের দোষে দোষী করা এবং তার দীন থেকে বের হয়ে যাওয়া। এটি বলা হয় যখন কোন ব্যক্তি ইসলাম ভঙ্গকারী কোন একটিতে লিপ্ত হয়। তাকফীর এটি একটি শরয়ী বিধান যা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। যেমন, হালাল করা, হারাম করা, ওয়াজিব করা। যত প্রকার কথা বা কর্মকে কুফর বলে আখ্যায়িত করা হয় তা সবই বড় কুফর নয়। আর যতজন কুফরে পতিত হয়, তাদের সকলের উপর কুফরের হুকুম বর্তায় না। তবে যদি তার মধ্যে কুফুরের কারণ, শর্তসমূহ পাওয়া যায় এবং তাকে কাফির বলতে কোনো বাঁধা-নিষেধ না থাকে তখন সে কাফির।সুতরাং এখানে কর্মের উপর কুফরের হুকুম দেয়া ও আমলকারীর ওপর কুফরের হুকুম দেয়ার মধ্যে প্রার্থক্য আছে। কোন ব্যক্তিকে কুফরের দোষে দোষারোপ করার অর্থ হলো, তার মধ্যে কাফেরের অন্তরের আবরণ রয়েছে। কারো ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া ছাড়া কুফরের হুকুম দেয়াতে মারাত্মক ক্ষতি ও মহা হুমকি রয়েছে।
কুফর হয়ত শুরু থেকে থাকবে, যেমন ইতোপূর্বে যে ইসলাম গ্রহণ করেনি তার কুফর অথবা কুফর পরবর্তীতে আসবে, যেমন যে আগে ইসলাম গ্রহণ করেছে তার কুফর। আর উভয়টি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। প্রথম: বড় কুফর। আর তা হলো এমনসব কথা বা কর্ম বা বিশ্বাস যা একজন মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। এটি কখনো অন্তর দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়, অথবা অন্তরের আমল হয়, যেমন আল্লাহ তাআলা বা তার আয়াত বা তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা। আবার কখনো তা প্রকাশ্য কথা দ্বারা হয়, যেমন আল্লাহকে গাল দেয়া। আবার কখনো প্রকাশ্য আমল দ্বারা হয়, যেমন মুর্তিকে সেজদা করা, গাইরুল্লাহর জন্য যবেহ করা। আর বড় কুফর বিভিন্ন ভাগে ভাগ হয়, তন্মধ্যে কতক: 1- অস্বীকার ও মিথ্যারোপ করার কুফরী: এ প্রকারের কুফরী কখনো অন্তরের মিথ্যারোপ দ্বারা হয়, আর কখনো মুখ অথবা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্বারা মিথ্যারোপ করার ফলে হয়। আর এটি হয় অন্তরে জানা ও ইলম থাকা সত্বেও হককে গোপন করা ও প্রকাশ্যে তার আনুগত্য না করার দ্বারা। যেমন, ইয়াহুদীদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অস্বীকার করা। 2- অহংকারের কুফর: অর্থাৎ সত্যকে না শিখে ও তার ওপর আমল না করে ছেড়ে দেওয়া। চাই তা কথার মাধ্যমে হোক বা আমল করার মাধ্যমে হোক বা বিশ্বাসের মাধ্যমে হোক। যেমন, ইবলিশের কুফর। 3- নিফাকের কুফর: আর তা হলো, অন্তরে বিশ্বাস ও আমল না করে প্রকাশ্যে অনুগত করা। 4-সন্দেহ ও সংশয়ের কুফর: আর তা হলো, হকের অনুসরণে দ্বিধা-সংশয়ে থাকা বা তা হক হওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হীনতায় থাকা। কারণ, ঈমানের দাবি হচ্ছে, দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করা যে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা নিয়ে এসেছেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। দ্বিতীয়: ছোট কুফর, আর তা হলো এমন গুনাহ ও অপরাধ যাকে শরীআত কুফর বলে নাম করণ করেছেন। তা কোন ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বের করবে না এবং সে বড় কুফর পর্যন্ত পৌঁছবে না। নেয়ামতের অস্বীকার করাও এ কুফরের অর্ন্তভুক্ত। একে কুফরের থেকে ছোট কুফর বলে। যেমন, একজন মুসলিমের তার অপর মুসলিমের সঙ্গে যুদ্ধ করা। গাইরুল্লাহর নামে শপথ করা এবং মৃত ব্যক্তির জন্য কান্নাকাটি করা।